ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জীবননগরে নাক-কান কাটা অবস্থায় যুবকের লাশ উদ্ধার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৭:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩
  • / ৪৮ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর অফিস:
জীবননগর সীমান্ত থেকে নাক ও কান কাটা অবস্থায় পান্না ভাংগি (৩০) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ভোরে উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের হরিহরনগর মাঠ থেকে (ভারতীয় সীমান্ত এলাকা) তাঁর লাশ উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ, বিজিবি, পিবিআই ও সিআইডির সদস্যরা। বিকেল চারটার দিকে পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠায়। পান্না একই গ্রামের ভাংগিপাড়ার মো. আতিয়ার রহমান ভাংগির ছেলে। তিনি চিহ্নিত মাদক চোরাকারবারি বলে জানা গেছে।

পুলিশ পান্নার মৃত্যুর বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও বিজিবি বলছে, মাদক নিয়ে দ্বন্দ্বে তাকে হত্যা করা হতে পারে। কারণ জিরো পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশের ৭০০ গজ ভেতরে এসে বিএসএফ গুলি করবে না। তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, গত রোববার রাতে পান্নাসহ কয়েকজন মাদক চোরাকারবারি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। এসময় ভারতের পুটেখালি এলাকায় কর্মরত বিএসএফ সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। সবাই পালিয়ে আসলেও বিএসএফ-এর হাতে আটক হন পান্না। ভোরে জিরো পয়েন্ট থেকে ৭০০ গজ ভেতরে (বাংলাদেশের সীমানা) হরিহরনগর গ্রামের সবুর মোল্লার সেগুন বাগান থেকে পরিবারের সদস্যরা পান্নার লাশ উদ্ধার করে।
পান্নার মা লেকজান বলেন, ‘আমার ছেলে গত রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাড়ির পাশের দোকানে চা খেতে গিয়েছিল। রাতে তার সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। ভোরে আমি বাড়িতে কান্নাকাটি শুনে ঘুম থেকে উঠি। তখন নাতজামাই আমাকে বলে আমার ছেলে মরে গেছে। তার নাক ও কান কেটে নেওয়া হয়েছে। পেটে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

সীমান্ত ইউপি সদস্য মো. আরজাম আলী বলেন, পান্নার শরীরে একটা ছিদ্র আছে। ধারণা করা হচ্ছে এটি গুলির চিহ্ন। তাছাড়া তার একটা কান ও নাক বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকায় রাতে কোনো গুলির শব্দ শোনা যায়নি।

জীবননগর থানার সেকেন্ড অফিসার (এসআই) কেরামত আলী লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, ‘লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কাল মঙ্গলবার (আজ) ময়নাতদন্ত করা হবে। পান্নার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে এটি গুলি না অন্য কিছু, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের পর এ বিষয়ে সঠিকভাবে বলা যাবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। জিডিমূলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।’
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন মৃধা বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। গত রোববার রাতের কোনো এক সময় পান্নার মৃত্যু হতে পারে। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে ময়নাতদন্তে প্রতিবেদন পাওয়ার পর। সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘পান্নার মৃত্যুর কারণ এখনো জানা যায়নি। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে সময় লাগবে।’

এ বিষয়ে মহেশপুর-৫৮ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল মাসুদ পারভেজ রানা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মাদক নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে হত্যা করেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পান্নার মরদেহ পরিবারের সদস্যরা জিরো পয়েন্টের ৭০০ গজ ভেতর থেকে উদ্ধার করেছে। বিএসএফ তো বাংলাদেশের এত ভেতরে এসে কাউকে গুলি করবে না।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে মাদক নিয়ে দ্বন্দ্বে বিজিবির কথিত সোর্স সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের বাসিন্দা তারিক হোসেনকে (৪০) খুন করা হয়। এছাড়া গত এপ্রিল মাসে জীবননগর পৌর এলাকায় আবু সাঈদ নামের (২৭) নামের এক যুবককে হত্যা করা হয়। পুলিশের ধারণা, মাদক ও চোরাচালান নিয়ে দ্বন্দ্বে তাকে খুন করা হয়েছে। তবে এখনো ওই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবননগরে নাক-কান কাটা অবস্থায় যুবকের লাশ উদ্ধার

আপলোড টাইম : ০৮:২৭:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩

জীবননগর অফিস:
জীবননগর সীমান্ত থেকে নাক ও কান কাটা অবস্থায় পান্না ভাংগি (৩০) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ভোরে উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের হরিহরনগর মাঠ থেকে (ভারতীয় সীমান্ত এলাকা) তাঁর লাশ উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ, বিজিবি, পিবিআই ও সিআইডির সদস্যরা। বিকেল চারটার দিকে পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠায়। পান্না একই গ্রামের ভাংগিপাড়ার মো. আতিয়ার রহমান ভাংগির ছেলে। তিনি চিহ্নিত মাদক চোরাকারবারি বলে জানা গেছে।

পুলিশ পান্নার মৃত্যুর বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও বিজিবি বলছে, মাদক নিয়ে দ্বন্দ্বে তাকে হত্যা করা হতে পারে। কারণ জিরো পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশের ৭০০ গজ ভেতরে এসে বিএসএফ গুলি করবে না। তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, গত রোববার রাতে পান্নাসহ কয়েকজন মাদক চোরাকারবারি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। এসময় ভারতের পুটেখালি এলাকায় কর্মরত বিএসএফ সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। সবাই পালিয়ে আসলেও বিএসএফ-এর হাতে আটক হন পান্না। ভোরে জিরো পয়েন্ট থেকে ৭০০ গজ ভেতরে (বাংলাদেশের সীমানা) হরিহরনগর গ্রামের সবুর মোল্লার সেগুন বাগান থেকে পরিবারের সদস্যরা পান্নার লাশ উদ্ধার করে।
পান্নার মা লেকজান বলেন, ‘আমার ছেলে গত রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাড়ির পাশের দোকানে চা খেতে গিয়েছিল। রাতে তার সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। ভোরে আমি বাড়িতে কান্নাকাটি শুনে ঘুম থেকে উঠি। তখন নাতজামাই আমাকে বলে আমার ছেলে মরে গেছে। তার নাক ও কান কেটে নেওয়া হয়েছে। পেটে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

সীমান্ত ইউপি সদস্য মো. আরজাম আলী বলেন, পান্নার শরীরে একটা ছিদ্র আছে। ধারণা করা হচ্ছে এটি গুলির চিহ্ন। তাছাড়া তার একটা কান ও নাক বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকায় রাতে কোনো গুলির শব্দ শোনা যায়নি।

জীবননগর থানার সেকেন্ড অফিসার (এসআই) কেরামত আলী লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, ‘লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কাল মঙ্গলবার (আজ) ময়নাতদন্ত করা হবে। পান্নার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে এটি গুলি না অন্য কিছু, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের পর এ বিষয়ে সঠিকভাবে বলা যাবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। জিডিমূলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।’
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন মৃধা বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। গত রোববার রাতের কোনো এক সময় পান্নার মৃত্যু হতে পারে। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে ময়নাতদন্তে প্রতিবেদন পাওয়ার পর। সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘পান্নার মৃত্যুর কারণ এখনো জানা যায়নি। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে সময় লাগবে।’

এ বিষয়ে মহেশপুর-৫৮ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল মাসুদ পারভেজ রানা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মাদক নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে হত্যা করেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পান্নার মরদেহ পরিবারের সদস্যরা জিরো পয়েন্টের ৭০০ গজ ভেতর থেকে উদ্ধার করেছে। বিএসএফ তো বাংলাদেশের এত ভেতরে এসে কাউকে গুলি করবে না।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে মাদক নিয়ে দ্বন্দ্বে বিজিবির কথিত সোর্স সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের বাসিন্দা তারিক হোসেনকে (৪০) খুন করা হয়। এছাড়া গত এপ্রিল মাসে জীবননগর পৌর এলাকায় আবু সাঈদ নামের (২৭) নামের এক যুবককে হত্যা করা হয়। পুলিশের ধারণা, মাদক ও চোরাচালান নিয়ে দ্বন্দ্বে তাকে খুন করা হয়েছে। তবে এখনো ওই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।