ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৫৮:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৩৪ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদক, মুজিবনগর:
আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। এর আগে ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলায় অস্থায়ী সরকার শপথ নেয়।

শেখ মুজিবুর রহমান এই সরকারের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। কিন্তু তিনি তখন পাকিস্তানে কারাগারে বন্দী। তাঁর অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং দেশে ও বিদেশে এই যুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা ও সমর্থন আদায় করার ক্ষেত্রে এই সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সরকার গঠনের পর থেকে অগণিত মানুষ দেশকে মুক্ত করার জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ইতিহাসের সাক্ষী এই স্থানটিকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার এখানে গড়ে তুলেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা স্থাপনা।
সে সময় বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেমে পড়ে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হয় তৎকালীন মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায়। সরকারের শপথ গ্রহণের জন্য গ্রামবাসীদের সহায়তায় বর্তমান মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের স্থানে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে কয়েকটি চৌকি এনে একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়। ঐদিন রাতেই ভারতীয় ফোর্স এসে সেখানে অবস্থান নেয়। পরদিন সকালে ভারতের সীমানা পেরিয়ে বৈদ্যনাথতলায় আসেন জাতীয় চার নেতা। সাথে আসেন দেশি-বিদেশি সাংবাদিক। সেখানে জাতীয় চার নেতা শপথ নেন এবং ১২ আনসার সদস্যের সাথে গার্ড অব অনার নেন। এরপর গার্ড পরিদর্শন করে আবারও চলে যান। শপথ অনুষ্ঠানের পর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী হিসাবে ইতিহাসে স্থান করে নেয় মুজিবনগর।

মুজিবনগরের ইতিহাস সংরক্ষণ ও ছড়িয়ে দিতে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতি কমপ্লেক্স। এখন সেখানে শোভা পাচ্ছে ২৩টি স্তম্ভ, ১১টি সিড়ি, অঙ্কিত বহু বৃত্ত, থরে-থরে সাজানো অসংখ্য পাথর দিয়ে স্থাপিত স্মৃতিসৌধ। এছাড়াও নির্মাণ করা হয় বিশাল মানচিত্রে ৯ মাসের যুদ্ধের প্রতিটি দৃশ্যই ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পাশেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, আনছার সদস্যদের গার্ড অব অনার প্রদানের দৃশ্য, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, সেক্টর কমান্ডারদের বৈঠকসহ বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তান বাহিনীর নির্যাতনের দৃশ্য। প্রতিবছর দিবসটি জাতীয়ভাবে পালিত হয়। রাষ্ট্রীয় মূল অনুষ্ঠানটি পালিত হয় মুজিবনগরের আম্রকাননে।
আজ ১৭ই এপ্রিল এর আনুষ্ঠানিকতায় সরকারের মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেবেন। ইতঃমধ্যে দিবসটি পালনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে দিবসটি উদ্যাপনের জন্য ঐতিহাসিক আম্রকানন ও মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সসহ এর চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলায় আজ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

আপলোড টাইম : ১২:৫৮:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩

প্রতিবেদক, মুজিবনগর:
আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। এর আগে ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলায় অস্থায়ী সরকার শপথ নেয়।

শেখ মুজিবুর রহমান এই সরকারের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। কিন্তু তিনি তখন পাকিস্তানে কারাগারে বন্দী। তাঁর অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং দেশে ও বিদেশে এই যুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা ও সমর্থন আদায় করার ক্ষেত্রে এই সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সরকার গঠনের পর থেকে অগণিত মানুষ দেশকে মুক্ত করার জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ইতিহাসের সাক্ষী এই স্থানটিকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার এখানে গড়ে তুলেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা স্থাপনা।
সে সময় বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেমে পড়ে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হয় তৎকালীন মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায়। সরকারের শপথ গ্রহণের জন্য গ্রামবাসীদের সহায়তায় বর্তমান মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের স্থানে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে কয়েকটি চৌকি এনে একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়। ঐদিন রাতেই ভারতীয় ফোর্স এসে সেখানে অবস্থান নেয়। পরদিন সকালে ভারতের সীমানা পেরিয়ে বৈদ্যনাথতলায় আসেন জাতীয় চার নেতা। সাথে আসেন দেশি-বিদেশি সাংবাদিক। সেখানে জাতীয় চার নেতা শপথ নেন এবং ১২ আনসার সদস্যের সাথে গার্ড অব অনার নেন। এরপর গার্ড পরিদর্শন করে আবারও চলে যান। শপথ অনুষ্ঠানের পর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী হিসাবে ইতিহাসে স্থান করে নেয় মুজিবনগর।

মুজিবনগরের ইতিহাস সংরক্ষণ ও ছড়িয়ে দিতে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতি কমপ্লেক্স। এখন সেখানে শোভা পাচ্ছে ২৩টি স্তম্ভ, ১১টি সিড়ি, অঙ্কিত বহু বৃত্ত, থরে-থরে সাজানো অসংখ্য পাথর দিয়ে স্থাপিত স্মৃতিসৌধ। এছাড়াও নির্মাণ করা হয় বিশাল মানচিত্রে ৯ মাসের যুদ্ধের প্রতিটি দৃশ্যই ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পাশেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, আনছার সদস্যদের গার্ড অব অনার প্রদানের দৃশ্য, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, সেক্টর কমান্ডারদের বৈঠকসহ বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তান বাহিনীর নির্যাতনের দৃশ্য। প্রতিবছর দিবসটি জাতীয়ভাবে পালিত হয়। রাষ্ট্রীয় মূল অনুষ্ঠানটি পালিত হয় মুজিবনগরের আম্রকাননে।
আজ ১৭ই এপ্রিল এর আনুষ্ঠানিকতায় সরকারের মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেবেন। ইতঃমধ্যে দিবসটি পালনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে দিবসটি উদ্যাপনের জন্য ঐতিহাসিক আম্রকানন ও মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সসহ এর চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলায় আজ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।