ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্রমেই বাড়ছে তাপমাত্রা, চুয়াডাঙ্গা এখন ‘মরু অঞ্চল’

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৩৮:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

মেহেরাব:

চুয়াডাঙ্গায় কমছেই না গরমের প্রকোপ। প্রত্যেক দিন বেড়েই চলেছে তাপমাত্রা। একের পর এক রেকর্ড করে টানা ১১ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার জেলা এখন চুয়াডাঙ্গা। মজার ছলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এখন চুয়াডাঙ্গার ক্যাপশনে মরুভূমির ছবি দেওয়া হচ্ছে। গতকাল বুধবার বেলা তিনটায় এ জেলায় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা।

জানা গেছে, কর্কটক্রান্তি রেখার খুব কাছাকাছি এ জেলার অবস্থান হওয়ায় শীতের সময় শীত বেশি ও গরমের সময় বেশি গরম অনুভূত হয়। এ বছরও সেই রেকর্ড ধরে রেখেছে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা। গত শীতে যেমন সর্বনি¤œ তাপমাত্রার রেকর্ডের শীর্ষে ছিল এ জেলা। ঠিক তেমনি এপ্রিলের শুরু থেকেই চুয়াডাঙ্গায় টানা ১১ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে।

চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, এপ্রিলের শুরু থেকেই এ জেলায় তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। ২ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর থেকে প্রতিদিনই এ জেলার তাপমাত্রা বেড়েছে। ৩ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ এপ্রিল ও ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিপ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৮ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৯ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১১ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

এদিকে, অসহনীয় ভ্যাপসা গরমে চুয়াডাঙ্গার জনজীবনসহ প্রাণিকূল অতিষ্ঠ। আবার গরম নিয়ে মজারও ঘাটতি থাকছে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই মজার ছলে মরুভূমির ছবি পোস্ট দিয়ে লিখছেন ‘চুয়াডাঙ্গায় আসেন, মরুভূমির স্বাদ নিন, চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা মরুভূমির থেকে কম না।’ তবে এই গরম ব্যাঘাত ঘটিয়েছে চুয়াডাঙ্গার মানুষের জীবনযাত্রায়। স্বাভাবিক সময়ের মতো ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষ। জরুরি কাজ ছাড়া তীব্র রোদে পুড়তে আগ্রহী নন কেউ। তীব্র গরমে এদের জীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। হাসপাতালে প্রচ- ভিড় থাকায় রোগী দেখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তারদের। বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও হৃদরোগসহ নানা রোগ-ব্যধি। শিশু ও বৃদ্ধরা ব্যাপক হারে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ দিনে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৭৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে ৭ দিনে ভর্তি হয়েছে ২৮৪ জন শিশু।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এএসএম ফাতেহ্ আকরাম বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমের কারণে সব সময়ই হাসপাতালে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পায়। তবে এখন পর্যন্ত হাসপাতালের ডায়রিয়া ও মেডিসিন দুটি বিভাগের অবস্থা স্বাভাবিক আছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে স্যালাইন ও ওষুধের সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে।’

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘বুধবার বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ ছিল ১০ শতাংশ। এটি এ জেলার এবং দেশের এই মৌসুমেরও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। বৃষ্টিপাত না থাকার কারণে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ কমে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, টানা ১১ দিন ধরে এ জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। তার সাথে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে একটানা ৯ দিন ধরে।

ক্যাপশন: চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রাণকেন্দ্র কোর্ট মোড়ের দোয়েল চত্বর ফাঁকা। গরমে বাইরে কম বের হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

 

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ক্রমেই বাড়ছে তাপমাত্রা, চুয়াডাঙ্গা এখন ‘মরু অঞ্চল’

আপলোড টাইম : ০৭:৩৮:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

মেহেরাব:

চুয়াডাঙ্গায় কমছেই না গরমের প্রকোপ। প্রত্যেক দিন বেড়েই চলেছে তাপমাত্রা। একের পর এক রেকর্ড করে টানা ১১ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার জেলা এখন চুয়াডাঙ্গা। মজার ছলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এখন চুয়াডাঙ্গার ক্যাপশনে মরুভূমির ছবি দেওয়া হচ্ছে। গতকাল বুধবার বেলা তিনটায় এ জেলায় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা।

জানা গেছে, কর্কটক্রান্তি রেখার খুব কাছাকাছি এ জেলার অবস্থান হওয়ায় শীতের সময় শীত বেশি ও গরমের সময় বেশি গরম অনুভূত হয়। এ বছরও সেই রেকর্ড ধরে রেখেছে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা। গত শীতে যেমন সর্বনি¤œ তাপমাত্রার রেকর্ডের শীর্ষে ছিল এ জেলা। ঠিক তেমনি এপ্রিলের শুরু থেকেই চুয়াডাঙ্গায় টানা ১১ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে।

চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, এপ্রিলের শুরু থেকেই এ জেলায় তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। ২ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর থেকে প্রতিদিনই এ জেলার তাপমাত্রা বেড়েছে। ৩ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ এপ্রিল ও ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিপ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৮ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৯ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১১ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

এদিকে, অসহনীয় ভ্যাপসা গরমে চুয়াডাঙ্গার জনজীবনসহ প্রাণিকূল অতিষ্ঠ। আবার গরম নিয়ে মজারও ঘাটতি থাকছে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই মজার ছলে মরুভূমির ছবি পোস্ট দিয়ে লিখছেন ‘চুয়াডাঙ্গায় আসেন, মরুভূমির স্বাদ নিন, চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা মরুভূমির থেকে কম না।’ তবে এই গরম ব্যাঘাত ঘটিয়েছে চুয়াডাঙ্গার মানুষের জীবনযাত্রায়। স্বাভাবিক সময়ের মতো ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষ। জরুরি কাজ ছাড়া তীব্র রোদে পুড়তে আগ্রহী নন কেউ। তীব্র গরমে এদের জীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। হাসপাতালে প্রচ- ভিড় থাকায় রোগী দেখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তারদের। বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও হৃদরোগসহ নানা রোগ-ব্যধি। শিশু ও বৃদ্ধরা ব্যাপক হারে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ দিনে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৭৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে ৭ দিনে ভর্তি হয়েছে ২৮৪ জন শিশু।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এএসএম ফাতেহ্ আকরাম বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমের কারণে সব সময়ই হাসপাতালে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পায়। তবে এখন পর্যন্ত হাসপাতালের ডায়রিয়া ও মেডিসিন দুটি বিভাগের অবস্থা স্বাভাবিক আছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে স্যালাইন ও ওষুধের সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে।’

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘বুধবার বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ ছিল ১০ শতাংশ। এটি এ জেলার এবং দেশের এই মৌসুমেরও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। বৃষ্টিপাত না থাকার কারণে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ কমে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, টানা ১১ দিন ধরে এ জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। তার সাথে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে একটানা ৯ দিন ধরে।

ক্যাপশন: চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রাণকেন্দ্র কোর্ট মোড়ের দোয়েল চত্বর ফাঁকা। গরমে বাইরে কম বের হচ্ছে সাধারণ মানুষ।