ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুকিয়ে যাচ্ছে ধানখেত, দিশাহারা চাষীরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:৪৯:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৩১ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ধানের নেক ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবে ধানের শীষ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কয়েকদিনের ব্যবধানে এসব খেতের ধানে এ রোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে ব্রি—৬৩ ধানে এ রোগ বেশি দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু ২৮ ধানের খেতেও এ রোগ মিলছে। অনেক কৃষক ঋণের টাকায় চাষ করছেন। ধান নষ্ট হয়ে যাওয়া তাঁরা এখন দিশেহারা। তবে ধানে নেক ব্লাস্ট প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে কিছুই জানেন না সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

জানা গেছে, চলতি ইরি মৌসুমে কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৫ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি—৬৩ চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। তবে এ রোগ দেখা দিলে ট্রাইসাইক্লাজল গ্রুপের ট্রুপার স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের খামারমুন্দিয়া গ্রামের মাঠে তরিকুল ইসলামের এক বিঘা, দলিল উদ্দীনের এক বিঘা ও মোমিন উদ্দীনের দুই বিঘাসহ ওই এলাকার বেশকিছু জমির ধান হঠাৎ শুকিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে ইউনিয়নের রায়গ্রামের মাঠে তপন কুমার মন্ডলের ৮ শতক ও পরিতোষ ঘোষের এক একর জমির ধান শুকিয়ে গেছে। শিমলা—রোকনপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের মনজের আলীর দুই বিঘা ধান শুকিয়ে যাচ্ছে।

তবে কী কারণে এমনটি হচ্ছে এ বিষয়ে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তর্ার সাথে কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে কৃষকরা তাঁদের চেনেন না বলে উল্লেখ করেন। রায়গ্রাম ইউনিয়নের খামারমুন্দিয়া গ্রামের কৃষক দলিল উদ্দীন জানান, ‘চলতি ইরি মৌসুমে আমি দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। এর মধ্যে এক বিঘা জমিতে ব্রি—৬৩ ধান ছিল। গত কয়েকদিন আগে মাঠে গিয়ে দেখি কিছু কিছু ধানের শীষ সাদা হয়ে যাচ্ছে। এসময় স্থানীয় কীটনাশক ও সার ব্যবসায়ীর পরামর্শে ওষুধ স্প্রে করি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। কয়েকদিনে মধ্যে জমির সব ধান সাদা হয়ে গেছে। এখন ওই জমিতে একটি ধানও আর হবে না।’ কৃষি কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে তাঁকে চেনেন না এবং তাঁকে কখনো মাঠে আসতে দেখেননি বলে জানান তিনি।
কৃষক লালন হোসেন জানান, ‘আমার এক বিঘা জমির ধান হঠাৎ শীষে পচন ধরে নষ্ট হয়ে গেছে।’ পাশ^বতীর্ মনোহরপুর গ্রামের কৃষক মনজের আলী বলেন, ‘এ বছর আমি দুই বিঘা জমিতে ২৮ ও ৬৩ ধানের চাষ করেছিলাম। গত কয়েকদিনে হঠাৎ ধানের শীষের গলায় পচন ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জমির অর্ধেকের বেশি ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।’ কৃষি অফিসাররাও তাঁদের কোনো খেঁাজখবর নেয় না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
একই ইউনিয়নের মেগুরুখদ্দা গ্রামের কৃষক ইমদাদ হোসেন জানান, ‘আমার জমির পাশে তপন কুমার মন্ডল নামে এক কৃষক ৮ শতক জমিতে ২৮ ধান করেছিল। গত কয়েকদিনে জমির সব ধান লাল রঙ হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রায়গ্রাম ইউনিয়নের উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তর্া জাকারিয়া রায়হান জানান, ‘আমি এখন মিটিংয়ে আছি। অতিরিক্ত গরমের কারণে ধানের এমন হচ্ছে। আমি কাল বিষয়টি দেখব।’ কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি জানান, কোনো কৃষক আমাদের এখনো জানায়নি। তবে গরমের কারণে এমনটি হতে পারে অথবা ছত্রাকের কারণেও ধানে পচন ধরে শুকিয়ে যেতে পারে। পচন রোগ দেখা দিলে ট্রাইসাইক্লাজল গ্রুপের ট্রুপার স্প্রে করার পরামর্শ দেন তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

শুকিয়ে যাচ্ছে ধানখেত, দিশাহারা চাষীরা

আপলোড টাইম : ০১:৪৯:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ধানের নেক ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবে ধানের শীষ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কয়েকদিনের ব্যবধানে এসব খেতের ধানে এ রোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে ব্রি—৬৩ ধানে এ রোগ বেশি দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু ২৮ ধানের খেতেও এ রোগ মিলছে। অনেক কৃষক ঋণের টাকায় চাষ করছেন। ধান নষ্ট হয়ে যাওয়া তাঁরা এখন দিশেহারা। তবে ধানে নেক ব্লাস্ট প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে কিছুই জানেন না সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

জানা গেছে, চলতি ইরি মৌসুমে কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৫ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি—৬৩ চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। তবে এ রোগ দেখা দিলে ট্রাইসাইক্লাজল গ্রুপের ট্রুপার স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের খামারমুন্দিয়া গ্রামের মাঠে তরিকুল ইসলামের এক বিঘা, দলিল উদ্দীনের এক বিঘা ও মোমিন উদ্দীনের দুই বিঘাসহ ওই এলাকার বেশকিছু জমির ধান হঠাৎ শুকিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে ইউনিয়নের রায়গ্রামের মাঠে তপন কুমার মন্ডলের ৮ শতক ও পরিতোষ ঘোষের এক একর জমির ধান শুকিয়ে গেছে। শিমলা—রোকনপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের মনজের আলীর দুই বিঘা ধান শুকিয়ে যাচ্ছে।

তবে কী কারণে এমনটি হচ্ছে এ বিষয়ে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তর্ার সাথে কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে কৃষকরা তাঁদের চেনেন না বলে উল্লেখ করেন। রায়গ্রাম ইউনিয়নের খামারমুন্দিয়া গ্রামের কৃষক দলিল উদ্দীন জানান, ‘চলতি ইরি মৌসুমে আমি দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। এর মধ্যে এক বিঘা জমিতে ব্রি—৬৩ ধান ছিল। গত কয়েকদিন আগে মাঠে গিয়ে দেখি কিছু কিছু ধানের শীষ সাদা হয়ে যাচ্ছে। এসময় স্থানীয় কীটনাশক ও সার ব্যবসায়ীর পরামর্শে ওষুধ স্প্রে করি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। কয়েকদিনে মধ্যে জমির সব ধান সাদা হয়ে গেছে। এখন ওই জমিতে একটি ধানও আর হবে না।’ কৃষি কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে তাঁকে চেনেন না এবং তাঁকে কখনো মাঠে আসতে দেখেননি বলে জানান তিনি।
কৃষক লালন হোসেন জানান, ‘আমার এক বিঘা জমির ধান হঠাৎ শীষে পচন ধরে নষ্ট হয়ে গেছে।’ পাশ^বতীর্ মনোহরপুর গ্রামের কৃষক মনজের আলী বলেন, ‘এ বছর আমি দুই বিঘা জমিতে ২৮ ও ৬৩ ধানের চাষ করেছিলাম। গত কয়েকদিনে হঠাৎ ধানের শীষের গলায় পচন ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জমির অর্ধেকের বেশি ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।’ কৃষি অফিসাররাও তাঁদের কোনো খেঁাজখবর নেয় না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
একই ইউনিয়নের মেগুরুখদ্দা গ্রামের কৃষক ইমদাদ হোসেন জানান, ‘আমার জমির পাশে তপন কুমার মন্ডল নামে এক কৃষক ৮ শতক জমিতে ২৮ ধান করেছিল। গত কয়েকদিনে জমির সব ধান লাল রঙ হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রায়গ্রাম ইউনিয়নের উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তর্া জাকারিয়া রায়হান জানান, ‘আমি এখন মিটিংয়ে আছি। অতিরিক্ত গরমের কারণে ধানের এমন হচ্ছে। আমি কাল বিষয়টি দেখব।’ কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি জানান, কোনো কৃষক আমাদের এখনো জানায়নি। তবে গরমের কারণে এমনটি হতে পারে অথবা ছত্রাকের কারণেও ধানে পচন ধরে শুকিয়ে যেতে পারে। পচন রোগ দেখা দিলে ট্রাইসাইক্লাজল গ্রুপের ট্রুপার স্প্রে করার পরামর্শ দেন তিনি।