ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোজার মাসে আগুন ঝরা গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৪৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ এপ্রিল ২০২৩
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

মেহেরাব:

চুয়াডাঙ্গায় টানা ৭ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ৩টায় এ জেলায় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত রোববার (২ এপ্রিল) থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত টানা ৭ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। যা চলতি মৌসুমে সারাদেশেরও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রোজাদারসহ এ জেলার মানুষের জনজীবন। আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সব জিনিসপত্রই তেঁতে উঠেছে। ঘরের ট্যাপ দিয়ে বের হচ্ছে ফুটন্ত পানি। বাতাসের আদ্রতা বেশি থাকায় মাথার ওপরে ফ্যানটাও দিচ্ছে গরম বাতাস। আবহাওয়া অফিস বলছে, এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে মাঝারি ধরণের তাপপ্রবাহ।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গাতে। গত রোববার (২ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার (৩ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার (৫ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্রবারও দেশের সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়া তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড হয়। গতকাল শনিবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিস বলছে, তাপমাত্রার পারদ আরও বেশি বাড়তে পারে। মার্চ-এপ্রিল-মে এই তিন মাস কালবৈশাখীর মৌসুম। তবে এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। এই সময়ে বৃষ্টি হলে কালবৈশাখী ঝড় হয়। বৃষ্টিপাত না হলে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।

এদিকে, আগুন ঝরা আবহাওয়ায় হাঁসফাঁস করছে চুয়াডাঙ্গার মানুষ। স্বস্তিতে নেই পশু-পাখিও। তীব্র গরম থেকে মুক্তির কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না! কাঠফাঁটা গরমে সবার যেন নাভিশ্বাস উঠেছে। এতে অস্থির হয়ে পড়ছে জনজীবন। বিশেষ করে শহুরে মানুষরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় মানুষ মাত্রাতিরিক্ত ঘামছেন। বাইরে বের হলেই রোজাদাররাও কাহিল হয়ে পড়ছেন। গরমের কারণে বিভিন্ন স্থানে গাছের ছায়ায় অনেকেই বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। আর পথচারীরা ইফতারের আগে ভিড় করছেন ফুটপাতের শরবত এবং ডাব বিক্রেতাদের কাছে।

চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্টপাড়ার বাসিন্দা সেলিমুল হাবিব বলেন, ‘গরমের কারণে ছাতা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। গরমে ঘরেও থাকা যায় না, আবার বাইরেও প্রচণ্ড তাপ। রোজার মাসে এমন গরম আগে দেখিনি। একটু কাজ করতে গেলে মনে হয় কলিজাটা শুকিয়ে যাচ্ছে। বেশিক্ষণ কাজ করা যাচ্ছে না।’

বড় বাজারের তরমুজ ব্যবসায়ী আছির উদ্দীন বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকাও কঠিন হয়ে পড়েছে। একটা পাখিও উড়তে দেখছি না। বেচা-কেনা কম।’ ভ্যানচালক নিয়ামত আলী বলেন, ‘ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এমনিতে রমজান মাস। তারপর আবার গরমে রাস্তায় মানুষ কম। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না। ভাড়া পাচ্ছি না।’ ভ্রাম্যমাণ ডাব বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করি। চুয়াডাঙ্গায় মোটামুটি ৬০ থেকে ১০০ টাকায় ডাব বিক্রি করছি। তবে দিনের বেলায় ক্রেতা কম। ইফতারের আগে ও সন্ধ্যার পর কিছুটা বিক্রি হচ্ছে।’

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, এ জেলার ওপর দিয়ে টানা তিন দিন মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাওয়ার পর তা মাঝারি তাপ প্রবাহে রুপ নেয়। এ ধারা আরও কিছুদিন অব্যহত থাকবে। গতকাল শনিবার বিকেল বেলা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এসময় বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ ছিল ১৫ শতাংশ। এটি এ জেলার এই মৌসুমেরও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। টানা ৭ দিন ধরে এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গরমের মৌসুমে একটানা এতদিন ধরে এক জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়া বিরল।

তিনি আরও জানান, গত বছরের সাথে এবছর গরমের তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে এবছর গরমের তীব্রতা অনেক বেশি। গত বছর জানুয়ারি মাস থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ বছর এপ্রিল মাস চলে আসলেও বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টিপাত না থাকার কারণে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ কমে গেছে। আবার আর্দ্রতা কম থাকার কারণে মেঘ তৈরি কম হচ্ছে। যার ফলে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় ছাড়া সাধারণ বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। পূর্বাভাস অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

রোজার মাসে আগুন ঝরা গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা

আপলোড টাইম : ০৪:৪৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ এপ্রিল ২০২৩

মেহেরাব:

চুয়াডাঙ্গায় টানা ৭ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ৩টায় এ জেলায় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত রোববার (২ এপ্রিল) থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত টানা ৭ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। যা চলতি মৌসুমে সারাদেশেরও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রোজাদারসহ এ জেলার মানুষের জনজীবন। আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সব জিনিসপত্রই তেঁতে উঠেছে। ঘরের ট্যাপ দিয়ে বের হচ্ছে ফুটন্ত পানি। বাতাসের আদ্রতা বেশি থাকায় মাথার ওপরে ফ্যানটাও দিচ্ছে গরম বাতাস। আবহাওয়া অফিস বলছে, এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে মাঝারি ধরণের তাপপ্রবাহ।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গাতে। গত রোববার (২ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার (৩ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার (৫ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্রবারও দেশের সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়া তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড হয়। গতকাল শনিবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিস বলছে, তাপমাত্রার পারদ আরও বেশি বাড়তে পারে। মার্চ-এপ্রিল-মে এই তিন মাস কালবৈশাখীর মৌসুম। তবে এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। এই সময়ে বৃষ্টি হলে কালবৈশাখী ঝড় হয়। বৃষ্টিপাত না হলে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।

এদিকে, আগুন ঝরা আবহাওয়ায় হাঁসফাঁস করছে চুয়াডাঙ্গার মানুষ। স্বস্তিতে নেই পশু-পাখিও। তীব্র গরম থেকে মুক্তির কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না! কাঠফাঁটা গরমে সবার যেন নাভিশ্বাস উঠেছে। এতে অস্থির হয়ে পড়ছে জনজীবন। বিশেষ করে শহুরে মানুষরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় মানুষ মাত্রাতিরিক্ত ঘামছেন। বাইরে বের হলেই রোজাদাররাও কাহিল হয়ে পড়ছেন। গরমের কারণে বিভিন্ন স্থানে গাছের ছায়ায় অনেকেই বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। আর পথচারীরা ইফতারের আগে ভিড় করছেন ফুটপাতের শরবত এবং ডাব বিক্রেতাদের কাছে।

চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্টপাড়ার বাসিন্দা সেলিমুল হাবিব বলেন, ‘গরমের কারণে ছাতা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। গরমে ঘরেও থাকা যায় না, আবার বাইরেও প্রচণ্ড তাপ। রোজার মাসে এমন গরম আগে দেখিনি। একটু কাজ করতে গেলে মনে হয় কলিজাটা শুকিয়ে যাচ্ছে। বেশিক্ষণ কাজ করা যাচ্ছে না।’

বড় বাজারের তরমুজ ব্যবসায়ী আছির উদ্দীন বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকাও কঠিন হয়ে পড়েছে। একটা পাখিও উড়তে দেখছি না। বেচা-কেনা কম।’ ভ্যানচালক নিয়ামত আলী বলেন, ‘ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এমনিতে রমজান মাস। তারপর আবার গরমে রাস্তায় মানুষ কম। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না। ভাড়া পাচ্ছি না।’ ভ্রাম্যমাণ ডাব বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করি। চুয়াডাঙ্গায় মোটামুটি ৬০ থেকে ১০০ টাকায় ডাব বিক্রি করছি। তবে দিনের বেলায় ক্রেতা কম। ইফতারের আগে ও সন্ধ্যার পর কিছুটা বিক্রি হচ্ছে।’

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, এ জেলার ওপর দিয়ে টানা তিন দিন মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাওয়ার পর তা মাঝারি তাপ প্রবাহে রুপ নেয়। এ ধারা আরও কিছুদিন অব্যহত থাকবে। গতকাল শনিবার বিকেল বেলা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এসময় বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ ছিল ১৫ শতাংশ। এটি এ জেলার এই মৌসুমেরও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। টানা ৭ দিন ধরে এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গরমের মৌসুমে একটানা এতদিন ধরে এক জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়া বিরল।

তিনি আরও জানান, গত বছরের সাথে এবছর গরমের তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে এবছর গরমের তীব্রতা অনেক বেশি। গত বছর জানুয়ারি মাস থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ বছর এপ্রিল মাস চলে আসলেও বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টিপাত না থাকার কারণে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ কমে গেছে। আবার আর্দ্রতা কম থাকার কারণে মেঘ তৈরি কম হচ্ছে। যার ফলে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় ছাড়া সাধারণ বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। পূর্বাভাস অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।