ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পানি সংকটে প্রায় ৫০ হাজার টিউবওয়েল ‘অকেজো’

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৪:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৩০ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহের নতুন কোর্টপাড়া মাঠে ধানের সেচ কাজ তদারকি করেন মহিউদ্দীন। দুই মাস আগেও তাঁর সেচ পাম্পে পর্যাপ্ত পানি উঠত। তবে দিন যতই যাচ্ছে, পাম্পে পানি কম উঠছে। ভারি বৃষ্টি না হলে মহিউদ্দীনের মতো ঝিনাইদহের হাজারো কৃষক জমিতে সেচ নিয়ে বিপাকে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে ফারাক্কা ও অনাবৃষ্টির কারণে ঝিনাইদহে প্রায় ৫০ হাজার টিউবওয়েলে কম পানি উঠছে। পানির স্তর ২০ থেকে ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, ইরি ধানের সেচ কাজে মাত্রাতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বেশির ভাগ বিল-ঝিল, জলাশয় ও পুকুর-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। বিশেষ করে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১০ নদী ও দুটি নদের প্রায় ৮০ শতাংশ পানি শুকিয়ে গেছে। এসব নদীর তলদেশে কৃষকেরা এখন ধানচাষ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ছয় উপজেলায় প্রায় অর্ধলক্ষাধিক নলকূপে পানি কম উঠছে। সাধারণত ২০ থেকে ৩০ ফুট নিচে পানির স্তর পাওয়া যায়। কিন্তু এখন ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচেও পানির লেয়ার মিলছে না। জেলা কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বলছে, তাদের অনুমতি নিয়ে জেলায় ১৭০টির মতো গভীর এবং ৭ হাজার ৯২১টি অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। তবে অনুমতি ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েক হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। এসব নলকূপ থেকে নিয়ম না মেনে পানি উত্তোলন করায় স্তর নেমে যাচ্ছে।

জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএডিসি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় ৮ মাস বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎসগুলো ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে। জেলার শৈলকুপাতেই রয়েছে ৩৭ হাজার ৫০০ নলকূপ। এর বেশিরভাগ নলকূপে এখন পানি কম উঠছে। আবার অনেক টিউবওয়েল পানি না ওঠায় অকেজো হয়ে পড়েছে। অথচ উপজেলায় সরকারি নলকূপ রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫০০টি।

টিউবয়েল ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, তাঁদের শ্রমিকেরা গ্রামাঞ্চলে নলকূপ বসিয়ে থাকেন। সাধারণত ২০ থেকে ২৪ ফুট মাটির নিচে পানির  লেয়ার পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩২ থেকে ৪০ ফুট নিচে পানির লেয়ার মিলছে। তারপরও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না।

জেলার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মদ সঞ্জু বলেন, দেশের মধ্যে চরম ক্ষরাপ্রবণ এলাকা এই ঝিনাইদহসহ আশপাশের অঞ্চল। গবেষণা বলছে, মরু এলাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এটি। তাছাড়া দেশের অন্য এলাকা থেকে জলাশয়ও কম। এক কিলোমিটারের মধ্যে গভীর নলকূপ না বসানোর নিয়ম থাকলেও কেউ মানছে না। পানি প্রবাহের উৎস নদ-নদী ভরাট করে দখল হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখন পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে নদী খনন করতে হবে। নিয়ম মেনে গভীর নলকূপ স্থাপনে নজরদারি করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলাজুড়ে কত হাজার  বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপ রয়েছে, তা আমাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারিভাবে জেলায় ১৬ হাজার গভীর ও ১৭ হাজার অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে। তিনি জানান, বিভিন্ন ফোরামে বা সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহলে তারা জানিয়েছেন, যেন ডিজাইনমাফিক নলকূপ স্থাপনের আইন পাশ হয়। প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলকূপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমবে।

ঝিনাইদহ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) সামিউল পারভেজ বলেন, সময়টা এখন শুষ্ক এবং উষ্ণকাল। এসময় নদ-নদীর পানি কমে আসে। যে কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা নেমে যায়। তাই এসময় পানি ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিয়ম মেনে পাম্প স্থাপন করলে সমস্যা কিছুটা কমবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

পানি সংকটে প্রায় ৫০ হাজার টিউবওয়েল ‘অকেজো’

আপলোড টাইম : ১০:২৪:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহের নতুন কোর্টপাড়া মাঠে ধানের সেচ কাজ তদারকি করেন মহিউদ্দীন। দুই মাস আগেও তাঁর সেচ পাম্পে পর্যাপ্ত পানি উঠত। তবে দিন যতই যাচ্ছে, পাম্পে পানি কম উঠছে। ভারি বৃষ্টি না হলে মহিউদ্দীনের মতো ঝিনাইদহের হাজারো কৃষক জমিতে সেচ নিয়ে বিপাকে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে ফারাক্কা ও অনাবৃষ্টির কারণে ঝিনাইদহে প্রায় ৫০ হাজার টিউবওয়েলে কম পানি উঠছে। পানির স্তর ২০ থেকে ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, ইরি ধানের সেচ কাজে মাত্রাতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বেশির ভাগ বিল-ঝিল, জলাশয় ও পুকুর-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। বিশেষ করে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১০ নদী ও দুটি নদের প্রায় ৮০ শতাংশ পানি শুকিয়ে গেছে। এসব নদীর তলদেশে কৃষকেরা এখন ধানচাষ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ছয় উপজেলায় প্রায় অর্ধলক্ষাধিক নলকূপে পানি কম উঠছে। সাধারণত ২০ থেকে ৩০ ফুট নিচে পানির স্তর পাওয়া যায়। কিন্তু এখন ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচেও পানির লেয়ার মিলছে না। জেলা কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বলছে, তাদের অনুমতি নিয়ে জেলায় ১৭০টির মতো গভীর এবং ৭ হাজার ৯২১টি অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। তবে অনুমতি ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েক হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। এসব নলকূপ থেকে নিয়ম না মেনে পানি উত্তোলন করায় স্তর নেমে যাচ্ছে।

জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএডিসি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় ৮ মাস বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎসগুলো ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে। জেলার শৈলকুপাতেই রয়েছে ৩৭ হাজার ৫০০ নলকূপ। এর বেশিরভাগ নলকূপে এখন পানি কম উঠছে। আবার অনেক টিউবওয়েল পানি না ওঠায় অকেজো হয়ে পড়েছে। অথচ উপজেলায় সরকারি নলকূপ রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫০০টি।

টিউবয়েল ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, তাঁদের শ্রমিকেরা গ্রামাঞ্চলে নলকূপ বসিয়ে থাকেন। সাধারণত ২০ থেকে ২৪ ফুট মাটির নিচে পানির  লেয়ার পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩২ থেকে ৪০ ফুট নিচে পানির লেয়ার মিলছে। তারপরও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না।

জেলার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মদ সঞ্জু বলেন, দেশের মধ্যে চরম ক্ষরাপ্রবণ এলাকা এই ঝিনাইদহসহ আশপাশের অঞ্চল। গবেষণা বলছে, মরু এলাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এটি। তাছাড়া দেশের অন্য এলাকা থেকে জলাশয়ও কম। এক কিলোমিটারের মধ্যে গভীর নলকূপ না বসানোর নিয়ম থাকলেও কেউ মানছে না। পানি প্রবাহের উৎস নদ-নদী ভরাট করে দখল হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখন পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে নদী খনন করতে হবে। নিয়ম মেনে গভীর নলকূপ স্থাপনে নজরদারি করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলাজুড়ে কত হাজার  বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপ রয়েছে, তা আমাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারিভাবে জেলায় ১৬ হাজার গভীর ও ১৭ হাজার অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে। তিনি জানান, বিভিন্ন ফোরামে বা সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহলে তারা জানিয়েছেন, যেন ডিজাইনমাফিক নলকূপ স্থাপনের আইন পাশ হয়। প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলকূপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমবে।

ঝিনাইদহ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) সামিউল পারভেজ বলেন, সময়টা এখন শুষ্ক এবং উষ্ণকাল। এসময় নদ-নদীর পানি কমে আসে। যে কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা নেমে যায়। তাই এসময় পানি ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিয়ম মেনে পাম্প স্থাপন করলে সমস্যা কিছুটা কমবে।