ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৌরসভার প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৩০:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৩১ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহিনুর রহমান রিণ্টুর বিরুদ্ধে নিয়োগে দুর্নীতি, পৌর ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ ও সচিবের স্বাক্ষর জালসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি দুর্নীতির ১০টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছে। অন্যদিকে সাবেক এই মেয়র ও তাঁর চাচাতো ভগ্নিপতি কনজারভেটিভ ইন্সপেক্টর হাবিবুরের বিরুদ্ধে আদালতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন কনজারভেটিভ ইন্সপেক্টর হাবিবুর।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে সাবেক মেয়র শাহিনুর রহমান রিণ্টু দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৭ মে ১৫৭৪ নম্বর স্মারকে চিঠি পেয়ে ঝিনাইদহ স্থানীয় সরকার বিভাগের (ডিডিএলজি) উপ-পরিচালক আবু ইউসুফ রেজাউর রহমান তদন্ত করেন। তিনি ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ৩৩৩ নম্বর স্মারকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট মতামত না থাকায় ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট ১০০০ নম্বর স্মারকে আবারও জেলা প্রশাসকের বরাবর চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম চিঠি পেয়ে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ ৭০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন ১৯৫ স্মারকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠিয়ে দেন। জেলা প্রশাসকের পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক মেয়র শাহিনুর রহমান রিণ্টু একাধিক দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৌরসভায় ৭টি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে পৌরসভার মাসিক সভায় অনুমোদন গ্রহণ করা হয়নি। নিয়োগের ছাড়পত্র গ্রহণের সময় পৌর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বকেয়া থাকার পরও বেতন পরিশোধের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি ও সচিবের স্বাক্ষর জাল করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। চাকরি প্রদানের নামে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করার সত্যতা মেলে। এডিপির অর্থ দিয়ে পৌরকর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হতো। পৌর মার্কেটের ভাড়ার টাকা ও হাট-বাজারের টাকা যথাযথ খাতে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। যোগ্যতা না থাকার পরও মেয়র শাহিনুর রহমান রিণ্টুর আত্মীয়-স্বজনদের বিধি বহির্ভূতভাবে চাকরি প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে, পৌরসভার প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে নিজের অ্যাকাউন্টে নেওয়ায় শাহিনুর রহমান রিণ্টুর বিরুদ্ধে টাকা উদ্ধারের মামলা হয়েছে। বর্তমান মেয়র ফারুক হোসেন বাদী হয়ে এই মামলা করেন। মামলাটি ঝিনাইদহের একটি আদালতে চলমান রয়েছে। এছাড়া কনজারভেটিভ ইন্সপেক্টর হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধেও আরেকটি মামলা হয়েছে। তিনি বিভিন্ন খাতের ৮ লাখ টাকা রশিদের মাধ্যমে আদায় করলেও পৌরসভায় জমা না দিয়ে পকেটস্থ করেন। মামলা দায়েরের পর কনজারভেটিভ ইন্সপেক্টর হাবিব চাকরি ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন।

হরিণাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র ফারুক হোসেন এ খবর নিশ্চিত করে জানান, সাবেক মেয়র রিণ্টু পৌরসভার ৪০ লাখ টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে রেখে খরচ করেন। টাকার জন্য তাগাদা দেওয়া হলে তিনি দুই মাস ও ছয় মাস মেয়াদী দুটি চেক দেন। কিন্তু তাঁর দেয়া ব্যাংকের চেকে টাকা ছিল না। এই সময়ে তিনি টাকা না দিলে শাহিনুর রহমান রিণ্টুর বরাবর উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। সাড়া না পেয়ে মামলা করি। মামলাটি এখন চার্জ গঠনের পথে বলেও মেয়র ফারুক হোসেন জানান।

আদালতে মামলা ও দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহিনুর রহমান রিণ্টু বলেন, অভিযোগ সবই মিথ্যা। নিয়োগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক নিজেই প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন। তিনি কোনো দুর্নীতি বা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নন। তিনি বলেন, বর্তমান মেয়র তাঁর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় তিনিই এসব মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন বলে মনে করেন।

 

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

পৌরসভার প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ

আপলোড টাইম : ০৪:৩০:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ এপ্রিল ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহিনুর রহমান রিণ্টুর বিরুদ্ধে নিয়োগে দুর্নীতি, পৌর ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ ও সচিবের স্বাক্ষর জালসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি দুর্নীতির ১০টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছে। অন্যদিকে সাবেক এই মেয়র ও তাঁর চাচাতো ভগ্নিপতি কনজারভেটিভ ইন্সপেক্টর হাবিবুরের বিরুদ্ধে আদালতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন কনজারভেটিভ ইন্সপেক্টর হাবিবুর।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে সাবেক মেয়র শাহিনুর রহমান রিণ্টু দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৭ মে ১৫৭৪ নম্বর স্মারকে চিঠি পেয়ে ঝিনাইদহ স্থানীয় সরকার বিভাগের (ডিডিএলজি) উপ-পরিচালক আবু ইউসুফ রেজাউর রহমান তদন্ত করেন। তিনি ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ৩৩৩ নম্বর স্মারকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট মতামত না থাকায় ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট ১০০০ নম্বর স্মারকে আবারও জেলা প্রশাসকের বরাবর চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম চিঠি পেয়ে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ ৭০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন ১৯৫ স্মারকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠিয়ে দেন। জেলা প্রশাসকের পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক মেয়র শাহিনুর রহমান রিণ্টু একাধিক দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৌরসভায় ৭টি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে পৌরসভার মাসিক সভায় অনুমোদন গ্রহণ করা হয়নি। নিয়োগের ছাড়পত্র গ্রহণের সময় পৌর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বকেয়া থাকার পরও বেতন পরিশোধের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি ও সচিবের স্বাক্ষর জাল করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। চাকরি প্রদানের নামে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করার সত্যতা মেলে। এডিপির অর্থ দিয়ে পৌরকর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হতো। পৌর মার্কেটের ভাড়ার টাকা ও হাট-বাজারের টাকা যথাযথ খাতে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। যোগ্যতা না থাকার পরও মেয়র শাহিনুর রহমান রিণ্টুর আত্মীয়-স্বজনদের বিধি বহির্ভূতভাবে চাকরি প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে, পৌরসভার প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে নিজের অ্যাকাউন্টে নেওয়ায় শাহিনুর রহমান রিণ্টুর বিরুদ্ধে টাকা উদ্ধারের মামলা হয়েছে। বর্তমান মেয়র ফারুক হোসেন বাদী হয়ে এই মামলা করেন। মামলাটি ঝিনাইদহের একটি আদালতে চলমান রয়েছে। এছাড়া কনজারভেটিভ ইন্সপেক্টর হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধেও আরেকটি মামলা হয়েছে। তিনি বিভিন্ন খাতের ৮ লাখ টাকা রশিদের মাধ্যমে আদায় করলেও পৌরসভায় জমা না দিয়ে পকেটস্থ করেন। মামলা দায়েরের পর কনজারভেটিভ ইন্সপেক্টর হাবিব চাকরি ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন।

হরিণাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র ফারুক হোসেন এ খবর নিশ্চিত করে জানান, সাবেক মেয়র রিণ্টু পৌরসভার ৪০ লাখ টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে রেখে খরচ করেন। টাকার জন্য তাগাদা দেওয়া হলে তিনি দুই মাস ও ছয় মাস মেয়াদী দুটি চেক দেন। কিন্তু তাঁর দেয়া ব্যাংকের চেকে টাকা ছিল না। এই সময়ে তিনি টাকা না দিলে শাহিনুর রহমান রিণ্টুর বরাবর উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। সাড়া না পেয়ে মামলা করি। মামলাটি এখন চার্জ গঠনের পথে বলেও মেয়র ফারুক হোসেন জানান।

আদালতে মামলা ও দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহিনুর রহমান রিণ্টু বলেন, অভিযোগ সবই মিথ্যা। নিয়োগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক নিজেই প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন। তিনি কোনো দুর্নীতি বা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নন। তিনি বলেন, বর্তমান মেয়র তাঁর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় তিনিই এসব মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন বলে মনে করেন।