ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘অন্যের নষ্ট খাবার পেলেও খেয়ে বেঁচে থাকতে পারতাম’

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:৪৭:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৪৩ বার পড়া হয়েছে

ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক, আলমডাঙ্গা:

অভাবের তাড়নায় কোনো রকম খেয়ে—না খেয়ে দিন পার করছেন প্রতিবন্ধী সুমাইয়া ও তার পরিবার। জন্ম থেকেই দুই হাত বিকলাঙ্গ, সাথে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় পায়ের ওপর নির্ভর করেই চলছে তার জীবন। খাবার খেতে সুমাইয়াকে ব্যবহার করতে হয় একমাত্র সম্বল দুটি পা। যা একজন মানুষের জন্য খুবই কষ্টের। বলছিলাম আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের পারকুলা গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বদিউল ইসলামের পরিবারের কথা। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বদিউল ইসলামের দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে সুমাইয়া। সে জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী।

বাবা—মেয়ে দুইজনই বুদ্ধি ও বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় একেবারেই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে তার পরিবারটি। পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি হলো সুমাইয়ার পিতা বদিউল ইসলাম। তিনি নিজেই একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। বদিউলকে প্রতিবেশীরা কাজের মাধ্যমে অল্প কিছু পারিশ্রমিক দিলেও অভাবের তাড়নায় প্রায় সময় তাদেরকে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। পাড়া—প্রতিবেশীদের সাহায্য—সহযোগিতার মাধ্যমে খুব কষ্টে দিন চলছে অসহায় এই পরিবারটির। অভাব যেন কোনোমতেই পিছু ছাড়ছে না তাদের। দুই মুঠো খাবারের জন্য অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় তাদের।

খেঁাজ নিয়ে জানা যায়, জরাজীর্ণ মাটির একটি কক্ষে চার সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন প্রতিবন্ধী বদিউল ইসলাম। তার এই দুঃখ—দুর্দশা নিয়ে বেশ কয়েকবার সংবাদ প্রকাশিত হলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতিবন্ধী সুমাইয়ার জন্য সামান্য কিছু ভাতার ব্যবস্থা হয়। যা অতি সামান্য হওয়ায় অভাব যেন পিছু ছাড়ছে না তার পরিবারের। বর্তমানে দেশে যেভাবে দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি হয়েছে, সে অনুযায়ী প্রতিদিনই ক্ষুধার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে সুমাইয়ার পরিবারের। এমতাবস্থায় সমাজের বিত্তশালীরা যদি তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায় এবং সরকার যদি তার পিতা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বদিউল ইসলামের ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে হয়ত চার সদস্যের পরিবারটি কিছুটা আলোর মুখ দেখত।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুমাইয়ার মা রেবেকা খাতুন বলেন, ‘আল্লাহ কি আমাদের কষ্ট দেখে না। এভাবে আর কত দিন বেঁচে থাকা যায়। আমার স্বামী কাজ করতে পারে না। দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে প্রতিবন্ধী। এই অবস্থায় আমি একা মানুষ অন্যের কাছে হাত পেতে আর কতদিন সংসারের ঘানি টানব। আল্লাহর কাছে এখন আমার মৃত্যু কামনা ছাড়া আর কোনো কিছুই ভালো লাগে না। একে তো আমার সংসারে উপার্জন করার কোনো মানুষ নাই, তার ওপর দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি আমি না খেয়ে আর কতদিন আমার সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকব। সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা প্রতিদিন অনেক খাবার নষ্ট করে ফেলে দেয়। নষ্ট খাবারগুলো পেলেও হয়ত আমরা আধ পেটা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারতাম। কিন্তু কে ভাবে কার কথা। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত আমার সন্তানদের মুখে বিষ তুলে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’

এ বিষয়ে কালিদাসপুর ইউপি চেয়ারম্যান আশাদুল হক মিকা বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই পরিরারটির পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে এসেছি এবং এখন পর্যন্ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। বদিউলের ভাতার বিষয়টি আমার মাথায় আছে, পরবর্তীতে সুযোগ হলে আমি ব্যবস্থা নেব।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

‘অন্যের নষ্ট খাবার পেলেও খেয়ে বেঁচে থাকতে পারতাম’

আপলোড টাইম : ০৩:৪৭:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ এপ্রিল ২০২৩

ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক, আলমডাঙ্গা:

অভাবের তাড়নায় কোনো রকম খেয়ে—না খেয়ে দিন পার করছেন প্রতিবন্ধী সুমাইয়া ও তার পরিবার। জন্ম থেকেই দুই হাত বিকলাঙ্গ, সাথে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় পায়ের ওপর নির্ভর করেই চলছে তার জীবন। খাবার খেতে সুমাইয়াকে ব্যবহার করতে হয় একমাত্র সম্বল দুটি পা। যা একজন মানুষের জন্য খুবই কষ্টের। বলছিলাম আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের পারকুলা গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বদিউল ইসলামের পরিবারের কথা। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বদিউল ইসলামের দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে সুমাইয়া। সে জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী।

বাবা—মেয়ে দুইজনই বুদ্ধি ও বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় একেবারেই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে তার পরিবারটি। পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি হলো সুমাইয়ার পিতা বদিউল ইসলাম। তিনি নিজেই একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। বদিউলকে প্রতিবেশীরা কাজের মাধ্যমে অল্প কিছু পারিশ্রমিক দিলেও অভাবের তাড়নায় প্রায় সময় তাদেরকে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। পাড়া—প্রতিবেশীদের সাহায্য—সহযোগিতার মাধ্যমে খুব কষ্টে দিন চলছে অসহায় এই পরিবারটির। অভাব যেন কোনোমতেই পিছু ছাড়ছে না তাদের। দুই মুঠো খাবারের জন্য অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় তাদের।

খেঁাজ নিয়ে জানা যায়, জরাজীর্ণ মাটির একটি কক্ষে চার সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন প্রতিবন্ধী বদিউল ইসলাম। তার এই দুঃখ—দুর্দশা নিয়ে বেশ কয়েকবার সংবাদ প্রকাশিত হলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতিবন্ধী সুমাইয়ার জন্য সামান্য কিছু ভাতার ব্যবস্থা হয়। যা অতি সামান্য হওয়ায় অভাব যেন পিছু ছাড়ছে না তার পরিবারের। বর্তমানে দেশে যেভাবে দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি হয়েছে, সে অনুযায়ী প্রতিদিনই ক্ষুধার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে সুমাইয়ার পরিবারের। এমতাবস্থায় সমাজের বিত্তশালীরা যদি তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায় এবং সরকার যদি তার পিতা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বদিউল ইসলামের ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে হয়ত চার সদস্যের পরিবারটি কিছুটা আলোর মুখ দেখত।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুমাইয়ার মা রেবেকা খাতুন বলেন, ‘আল্লাহ কি আমাদের কষ্ট দেখে না। এভাবে আর কত দিন বেঁচে থাকা যায়। আমার স্বামী কাজ করতে পারে না। দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে প্রতিবন্ধী। এই অবস্থায় আমি একা মানুষ অন্যের কাছে হাত পেতে আর কতদিন সংসারের ঘানি টানব। আল্লাহর কাছে এখন আমার মৃত্যু কামনা ছাড়া আর কোনো কিছুই ভালো লাগে না। একে তো আমার সংসারে উপার্জন করার কোনো মানুষ নাই, তার ওপর দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি আমি না খেয়ে আর কতদিন আমার সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকব। সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা প্রতিদিন অনেক খাবার নষ্ট করে ফেলে দেয়। নষ্ট খাবারগুলো পেলেও হয়ত আমরা আধ পেটা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারতাম। কিন্তু কে ভাবে কার কথা। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত আমার সন্তানদের মুখে বিষ তুলে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’

এ বিষয়ে কালিদাসপুর ইউপি চেয়ারম্যান আশাদুল হক মিকা বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই পরিরারটির পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে এসেছি এবং এখন পর্যন্ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। বদিউলের ভাতার বিষয়টি আমার মাথায় আছে, পরবর্তীতে সুযোগ হলে আমি ব্যবস্থা নেব।’