ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভালো ফলন হওয়ায় সুদিন ফিরেছে গমচাষীদের

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৪৫:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩
  • / ৪০ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক:
২০১৬ সালে ব্লাস্টের আক্রমণে গম চাষে লোকসানের মুখে পড়েন মেহেরপুর জেলার চাষীরা। গত কয়েক বছরে লোকসানের মুখে গম চাষে আগ্রহ হারান কৃষকরা। তারপর থেকে গত ছয় মৌসুমে একাধারে হুইট ব্লাস্টের আক্রমণে দিশাহারা ছিল এ জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আটটি জেলা। দীর্ঘ ছয় বছর পর মেহেরপুরের কৃষকরা ব্লাস্টমুক্ত গম ঘরে তুলছেন। ভালো ফলন ও বাজারমূল্য থাকায় লাভবান হচ্ছেন তাঁরা। তবে হুইট ব্লাস্ট ভাইরাস একেবারে নির্মূল না হলেও চলতি মৌসুমে তার প্রভাব পড়েনি গম খেতে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার কৃষকরা অর্থকরী ফসল হিসেবে গম চাষ করে আসছিলেন। এর মাধ্যমে নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে নগদ অর্থও পাওয়া যেত। কিন্তু ২০১৬ সালে ব্লাস্টের আক্রমণে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয় গম চাষে। কৃষি বিভাগের কথা না শুনে যারা গম চাষ করেছিলেন, তারা বারবার লোকসানের মুখে পড়েন। একসময় তারাও এ চাষ থেকে সরে আসেন। ২০১৯-২০ মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কয়েকটি জাতের গমের আবাদ করে কিছুটা লোকসান কম হয় কৃষকদের। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ মৌসুমেও লাভের মুখ দেখতে থাকেন জেলার গমচাষীরা।
গত মৌসুমে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সেই জাতগুলোর গম চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে নানামুখী প্রচারণা চালানো হয়। ফলে চলতি মৌসুমে দীর্ঘ ছয় বছর পর মেহেরপুরের কৃষকরা ব্লাস্টমুক্ত গম ঘরে তুলছেন। গম চাষে আবারও সুদিন ফিরছে এ জেলার চাষীদের।
২০১৯-২০ মৌসুমে একেবারে শূন্য থেকে অনেক বেশি ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছিল। ২০২০-২১ মৌসুমে ১১ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। সে মৌসুমেও খুব ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারেননি কৃষকরা। হুইট ব্লাস্টের দাপট কমলেও অধিকাংশ জমিতেই দেখা যায় এর প্রভাব। ২০২১-২২ মৌসুমে লাভের মুখ দেখেন কৃষকরা। ওই মৌসুমে সাড়ে বারো হাজার হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়। ব্লাস্টের প্রভাব থাকলেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। কিছুটা লাভের মুখ দেখা দেওয়ায় ২০২২-২৩ মৌসুমে ১২ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। পাশাপাশি চলতি মৌসুমে অধিকাংশ কৃষকই কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত বারি-৩০ ও ৩৩ গম চাষ করেন। ফলে একদিকে যেমন বেড়েছে গমের চাষ, অন্যদিকে দীর্ঘদিন পর গম চাষে আতঙ্ক ছাড়াই লাভের মুখ দেখছেন চাষীরা।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কৃষক শিপন বলেন, ‘এ বছর আমার তিন বিঘা জমিতে গম আছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর খুবই ভালো ফলন হবে। আগের বছরগুলোয় গমে অনেক রোগ ছিল। কিন্তু এ বছর কোনো রোগ নেই। গত বছর আমার দেড় বিঘা গমের আবাদ ছিল। কিন্তু আমি খুব লাভবান হতে পারিনি। আশা করছি এ বছর ভালো লাভবান হব।’ একই এলাকার কৃষক সালাউদ্দীন বলেন, ‘আমার দেড় বিঘা গম আছে। গমের চেহারা খুবই সুন্দর হয়েছে। খেতে গেলেই মনটা খুশিতে ভরে যাচ্ছে। শুধু আমার নয় আমাদের এলাকার সবার গম ভালো হয়েছে।’
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিকদার মোহাম্মদ মোহাইমেন আক্তার বলেন, ‘গাংনী উপজেলায় ২০১৭-১৮ সালের দিকে গমের আবাদ অনেকটাই শূন্যের কোটায় চলে যায়। সে পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছে, যা গত বছর ছিল সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ বেশি হয়েছে। এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের কৃষকরা আবারও গম চাষে এগিয়ে এসেছেন। গত বছর গমের দাম ভালো ছিল। চলতি বছর গমের দাম ভালো পাবে। আবহাওয়া ভালো আছে, কোনো প্রকার রোগবালাই নেই। ব্লাস্টের কথা যদি বলি একেবারে নেই বললে চলে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, ‘২০১৬ সালে জেলায় প্রথম ব্লাস্ট শনাক্ত হয়। তখন চাষীদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও উচ্চফলনশীল বারি ৩৩-৩০ এবং গম গবেষণা ইনস্টিটিউট ডব্লিউএমআরআই ১, ২ ও ৩ জাতের গম আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ভালো ফলন হওয়ায় সুদিন ফিরেছে গমচাষীদের

আপলোড টাইম : ০৭:৪৫:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদক:
২০১৬ সালে ব্লাস্টের আক্রমণে গম চাষে লোকসানের মুখে পড়েন মেহেরপুর জেলার চাষীরা। গত কয়েক বছরে লোকসানের মুখে গম চাষে আগ্রহ হারান কৃষকরা। তারপর থেকে গত ছয় মৌসুমে একাধারে হুইট ব্লাস্টের আক্রমণে দিশাহারা ছিল এ জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আটটি জেলা। দীর্ঘ ছয় বছর পর মেহেরপুরের কৃষকরা ব্লাস্টমুক্ত গম ঘরে তুলছেন। ভালো ফলন ও বাজারমূল্য থাকায় লাভবান হচ্ছেন তাঁরা। তবে হুইট ব্লাস্ট ভাইরাস একেবারে নির্মূল না হলেও চলতি মৌসুমে তার প্রভাব পড়েনি গম খেতে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার কৃষকরা অর্থকরী ফসল হিসেবে গম চাষ করে আসছিলেন। এর মাধ্যমে নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে নগদ অর্থও পাওয়া যেত। কিন্তু ২০১৬ সালে ব্লাস্টের আক্রমণে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয় গম চাষে। কৃষি বিভাগের কথা না শুনে যারা গম চাষ করেছিলেন, তারা বারবার লোকসানের মুখে পড়েন। একসময় তারাও এ চাষ থেকে সরে আসেন। ২০১৯-২০ মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কয়েকটি জাতের গমের আবাদ করে কিছুটা লোকসান কম হয় কৃষকদের। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ মৌসুমেও লাভের মুখ দেখতে থাকেন জেলার গমচাষীরা।
গত মৌসুমে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সেই জাতগুলোর গম চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে নানামুখী প্রচারণা চালানো হয়। ফলে চলতি মৌসুমে দীর্ঘ ছয় বছর পর মেহেরপুরের কৃষকরা ব্লাস্টমুক্ত গম ঘরে তুলছেন। গম চাষে আবারও সুদিন ফিরছে এ জেলার চাষীদের।
২০১৯-২০ মৌসুমে একেবারে শূন্য থেকে অনেক বেশি ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছিল। ২০২০-২১ মৌসুমে ১১ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। সে মৌসুমেও খুব ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারেননি কৃষকরা। হুইট ব্লাস্টের দাপট কমলেও অধিকাংশ জমিতেই দেখা যায় এর প্রভাব। ২০২১-২২ মৌসুমে লাভের মুখ দেখেন কৃষকরা। ওই মৌসুমে সাড়ে বারো হাজার হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়। ব্লাস্টের প্রভাব থাকলেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। কিছুটা লাভের মুখ দেখা দেওয়ায় ২০২২-২৩ মৌসুমে ১২ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। পাশাপাশি চলতি মৌসুমে অধিকাংশ কৃষকই কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত বারি-৩০ ও ৩৩ গম চাষ করেন। ফলে একদিকে যেমন বেড়েছে গমের চাষ, অন্যদিকে দীর্ঘদিন পর গম চাষে আতঙ্ক ছাড়াই লাভের মুখ দেখছেন চাষীরা।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কৃষক শিপন বলেন, ‘এ বছর আমার তিন বিঘা জমিতে গম আছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর খুবই ভালো ফলন হবে। আগের বছরগুলোয় গমে অনেক রোগ ছিল। কিন্তু এ বছর কোনো রোগ নেই। গত বছর আমার দেড় বিঘা গমের আবাদ ছিল। কিন্তু আমি খুব লাভবান হতে পারিনি। আশা করছি এ বছর ভালো লাভবান হব।’ একই এলাকার কৃষক সালাউদ্দীন বলেন, ‘আমার দেড় বিঘা গম আছে। গমের চেহারা খুবই সুন্দর হয়েছে। খেতে গেলেই মনটা খুশিতে ভরে যাচ্ছে। শুধু আমার নয় আমাদের এলাকার সবার গম ভালো হয়েছে।’
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিকদার মোহাম্মদ মোহাইমেন আক্তার বলেন, ‘গাংনী উপজেলায় ২০১৭-১৮ সালের দিকে গমের আবাদ অনেকটাই শূন্যের কোটায় চলে যায়। সে পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছে, যা গত বছর ছিল সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ বেশি হয়েছে। এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের কৃষকরা আবারও গম চাষে এগিয়ে এসেছেন। গত বছর গমের দাম ভালো ছিল। চলতি বছর গমের দাম ভালো পাবে। আবহাওয়া ভালো আছে, কোনো প্রকার রোগবালাই নেই। ব্লাস্টের কথা যদি বলি একেবারে নেই বললে চলে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, ‘২০১৬ সালে জেলায় প্রথম ব্লাস্ট শনাক্ত হয়। তখন চাষীদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও উচ্চফলনশীল বারি ৩৩-৩০ এবং গম গবেষণা ইনস্টিটিউট ডব্লিউএমআরআই ১, ২ ও ৩ জাতের গম আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়।’