ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘সুদখোরদের’ জুলুমে এলাকা ছাড়া হচ্ছে গরিব ও অসহায় মানুষ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩২:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক:

মেহেরপুরের গাংনী ও মুজিবনগরে পৃথক অভিযান চালিয়ে তিন সুদ কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ব্লাঙ্ক চেক, সাদা স্ট্যাম্প, মোটরসাইকেল ও স্বর্ণের অলংকার উদ্ধার করা হয়। গত শনিবার রাতে গাংনী শহরের উত্তরপাড়া ও মুজিবনগরের বলরামপুরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদেরকে আটক করে।

গাংনী:

গাংনী শহরের উত্তরপাড়া থেকে দুই সুদ কারবারিকে আটক করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ব্লাঙ্ক চেক, ৬৬৯টি সাদা স্ট্যাম্প, ১৩টি টালি খাতা, পাঁচটি মোটরসাইকেল ও স্বর্ণের অলংকার জব্দ করা হয়। গত শনিবার রাত ৯টার দিকে তাদের আটক করা হয়। এসময় পালিয়ে যায় সুদ কারবারি আনিসুর রহমান। আটক ব্যক্তিরা হলেন- ছমির উদ্দীনের ছেলে আবু হানিফ (৪৫) ও ইউনুস আলীর ছেলে আনারুল ইসলাম (৫৫)। গতকাল রোববার তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, মিনারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি মোটরসাইকেল জিম্মায় রেখে সুদ কারবারি আবু হানিফের কাছে থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিলেন। সুদ বেড়ে সেটি দুই লাখ ২০ হাজার টাকা হয়। মিনারুল টাকা ফেরত দিতে দেরি করলে আবু হানিফ মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে দেন। এ ঘটনায় মিনারুল থানায় অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গাংনী থানা-পুলিশ অভিযান চালিয়ে আবু হানিফেরর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ ব্লাঙ্ক চেক, স্ট্যাম্প, মোটরসাইকেল, স্বর্ণের অলংকার উদ্ধার করে। এ ঘটনায় থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে পেনাল কোর্ড ৩৪/৪০৬/৪২০/৪২৩/৪২৩/৪২৪ ধারায় একটি মামলা করেন। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

স্থানীয়রা জানান, বিপদে পড়ে সহযোগিতা চাইলে সুদ কারবারিরা টাকা দেওয়ার সময় ব্লাঙ্ক চেক ও সাদা স্ট্যাম্প স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এরপর থেকেই শুরু হয় সুদ কারবারিদের জুলুম। চড়া সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে দেওয়া হয় চেক প্রতরণার মামলা। এতে অনেকেই বসতভিটা বিক্রি করে এলাকা ছেড়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, শুধু আবু হানিফ ও আনারুল ইসলাম নয়, গাংনীতে অনেকেই এমন সুদের টাকা ছেড়ে এনজিও নামে চালাচ্ছে।

মুজিবনগর:

এদিকে মুজিবনগরে সুদের ফাঁদে ফেলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে বলরামপুরে অভিযান চালিয়েছে থানা-পুলিশের একটি দল। এসময় সুদ কারবারি দিবাস্তিন মন্ডলকে (৪৮) আটক করা হয়। তিনি বাগোয়ান ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের খোকন মন্ডলের ছেলে।

পুলিশ জানায়, দিবাস্তিন গরিব ও অসহায় লোকজনকে ফাঁদে ফেলে চেক ও সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে সুদে টাকা দিত। পরে চেক এবং স্ট্যাম্পে ইচ্ছামত টাকার অংক বসিয়ে প্রতারণা করত। তার প্রতরণার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ গত শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। এসময় তার বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে ৪৪টি স্ট্যাম্প, ২৭টি ব্লাঙ্ক ব্যাংকের চেক এবং ৩টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

মুজিবনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদি রাসেল জানান, দিবাস্তিন মানুষকে স্ট্যাম্প ও সাদা ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর করিয়ে চড়া সুদে টাকা দিত। কেউ টাকা পরিশোধ করতে না পারলে তাদের স্বর্ণের অলংকার ও মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য মালামাল কেড়ে নিত। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার রাতে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

‘সুদখোরদের’ জুলুমে এলাকা ছাড়া হচ্ছে গরিব ও অসহায় মানুষ

আপলোড টাইম : ০৮:৩২:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদক:

মেহেরপুরের গাংনী ও মুজিবনগরে পৃথক অভিযান চালিয়ে তিন সুদ কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ব্লাঙ্ক চেক, সাদা স্ট্যাম্প, মোটরসাইকেল ও স্বর্ণের অলংকার উদ্ধার করা হয়। গত শনিবার রাতে গাংনী শহরের উত্তরপাড়া ও মুজিবনগরের বলরামপুরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদেরকে আটক করে।

গাংনী:

গাংনী শহরের উত্তরপাড়া থেকে দুই সুদ কারবারিকে আটক করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ব্লাঙ্ক চেক, ৬৬৯টি সাদা স্ট্যাম্প, ১৩টি টালি খাতা, পাঁচটি মোটরসাইকেল ও স্বর্ণের অলংকার জব্দ করা হয়। গত শনিবার রাত ৯টার দিকে তাদের আটক করা হয়। এসময় পালিয়ে যায় সুদ কারবারি আনিসুর রহমান। আটক ব্যক্তিরা হলেন- ছমির উদ্দীনের ছেলে আবু হানিফ (৪৫) ও ইউনুস আলীর ছেলে আনারুল ইসলাম (৫৫)। গতকাল রোববার তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, মিনারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি মোটরসাইকেল জিম্মায় রেখে সুদ কারবারি আবু হানিফের কাছে থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিলেন। সুদ বেড়ে সেটি দুই লাখ ২০ হাজার টাকা হয়। মিনারুল টাকা ফেরত দিতে দেরি করলে আবু হানিফ মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে দেন। এ ঘটনায় মিনারুল থানায় অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গাংনী থানা-পুলিশ অভিযান চালিয়ে আবু হানিফেরর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ ব্লাঙ্ক চেক, স্ট্যাম্প, মোটরসাইকেল, স্বর্ণের অলংকার উদ্ধার করে। এ ঘটনায় থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে পেনাল কোর্ড ৩৪/৪০৬/৪২০/৪২৩/৪২৩/৪২৪ ধারায় একটি মামলা করেন। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

স্থানীয়রা জানান, বিপদে পড়ে সহযোগিতা চাইলে সুদ কারবারিরা টাকা দেওয়ার সময় ব্লাঙ্ক চেক ও সাদা স্ট্যাম্প স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এরপর থেকেই শুরু হয় সুদ কারবারিদের জুলুম। চড়া সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে দেওয়া হয় চেক প্রতরণার মামলা। এতে অনেকেই বসতভিটা বিক্রি করে এলাকা ছেড়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, শুধু আবু হানিফ ও আনারুল ইসলাম নয়, গাংনীতে অনেকেই এমন সুদের টাকা ছেড়ে এনজিও নামে চালাচ্ছে।

মুজিবনগর:

এদিকে মুজিবনগরে সুদের ফাঁদে ফেলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে বলরামপুরে অভিযান চালিয়েছে থানা-পুলিশের একটি দল। এসময় সুদ কারবারি দিবাস্তিন মন্ডলকে (৪৮) আটক করা হয়। তিনি বাগোয়ান ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের খোকন মন্ডলের ছেলে।

পুলিশ জানায়, দিবাস্তিন গরিব ও অসহায় লোকজনকে ফাঁদে ফেলে চেক ও সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে সুদে টাকা দিত। পরে চেক এবং স্ট্যাম্পে ইচ্ছামত টাকার অংক বসিয়ে প্রতারণা করত। তার প্রতরণার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ গত শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। এসময় তার বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে ৪৪টি স্ট্যাম্প, ২৭টি ব্লাঙ্ক ব্যাংকের চেক এবং ৩টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

মুজিবনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদি রাসেল জানান, দিবাস্তিন মানুষকে স্ট্যাম্প ও সাদা ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর করিয়ে চড়া সুদে টাকা দিত। কেউ টাকা পরিশোধ করতে না পারলে তাদের স্বর্ণের অলংকার ও মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য মালামাল কেড়ে নিত। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার রাতে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।