ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসাদাহে স্বতস্ত্র প্রার্থী ও ছেলের ওপর হামলা!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৩৫:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ ২০২৩
  • / ৫৪ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:

জীবননগর উপজেলার ৬ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনের ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে, ততই সহিংসতার আশঙ্কা দেখছেন স্থানীয় ভোটাররা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন, নির্বাচনী প্রচারে তাঁদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। ছেড়া হচ্ছে তাদের পোস্টার-ব্যানার। প্রতিনিয়তই নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যাওয়ার জন্য দেওয়া হচ্ছে হুমকি। এরই মধ্যে মনোহরপুর, বাঁকা ও হাসাদাহে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন , এসব হামলার ঘটনায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও থানায় অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না।

স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জানান, আগামী ১৬ মার্চ উপজেলার ৬ ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আবার তারা নিজেরা নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারে বাধা দিচ্ছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে বাঁকা, হাসাদাহ ও মনোহরপুর ইউপিতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের দ্বারা হুমকি ও প্রচারে বাধা পেয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় হাসাদাহ ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইসরাইল হোসেন ও তাঁর ছেলে নাহিদ হোসেনের ওপর আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকেরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ইসরাইল হোসেন বাদী হয়ে জীবননগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল খালেক বলেন, দুই পার্টি (পক্ষ) মুখোমুখি হওয়ায় একটু গন্ডগোল হয়েছে। এ ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওসি।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইসরাইল হোসেন বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচনী প্রচার শেষ করে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক সাগর আলী ও আলামীন হোসেনের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের দিকে ছুটে এসে গালিগালাজ করে। তিনি প্রতিবাদ করলে সাগর আলী তার মাথায় আঘাত করে। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে গেলে তাঁর ছেলে ঠেকাতে আসে। এসময় আলামীন তার মাথায় আঘাত করে। পরে সাগর ও আলামীনের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন তাদের এলোপাতাড়ি মারতে থাকে এবং মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসলে স্থানীয় বাসিন্দা ও কর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়। তারা চলে গেলে পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহাবুদ্দিন মালিতা বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের পর আমরা জোরেসোরে গণসংযোগ শুরু করি। কিন্তু নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল কাদের প্রধানের লোকজন আমার কর্মী-সমর্থকদের এবং প্রচারে বাঁধাগ্রস্ত করে আসছে। তাছাড়া কয়েকদিন আগে সুটিয়ায় আমার এবং অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়। সেখানে শুধু নৌকার প্রতীক ছিল আর কোনো প্রতীক ছিল না। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কমী-সমর্থকদের এমন আচরণের কারণে আমাদের প্রচার-প্রচারণা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।’

হাসাদাহ ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সামসুল আলম বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের কমী-সমর্থকেরা নির্বাচন শুরুর পর থেকেই নানাভাবে আমাদের নেতা-কমী, সমর্থক ও ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। কয়েকদিন আগে চাকলা মোড়ে আওয়ামী লীগের প্রার্র্থীর কর্মীরা আমার প্রচার গাড়ি থামিয়ে ভাঙচুর করে। গাড়ির চালক রাজিবুল ও কর্মী শামীম হোসেনকে মারপিট করে।’ তিনি বলেন, ‘ঘটনার ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম। ওসি সাহেব আমাকে আশ্বস্ত করেছেন এমন ঘটনা আর ঘটবে না।’ রাজিবুল ও শামীম হোসেন বলেন, ‘ঘটনার সময় গ্রামের মহিলার ছুটে এসে না ঠেকালে তারা আমাদের মেরে ফেলত।’ একই ইউনিয়নের আরেক স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমরা নৌকা প্রতীকের কমী-সমর্থকদের দ্বারা প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকির শিকার হচ্ছি। এ ব্যাপারে আমরা নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষা ভূমিকা আশা করছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জীবননগর থানার ওসি আব্দুল খালেক বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠে আমাদের পুলিশ তৎপর আছে। এরমধ্যে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও আমরা দ্রুতই সেসব স্থানে অ্যাকশনে গিয়েছি। নির্বাচন আসলেই দু-একটি ঘটনা ঘটেই থাকে। তবে সব ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।’

জীবননগর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. মেজর আহম্মেদ বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ আমরা পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলছি। ২-৩ দিনের মধ্যে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা পুলিশকে বলেছি।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

হাসাদাহে স্বতস্ত্র প্রার্থী ও ছেলের ওপর হামলা!

আপলোড টাইম : ০৭:৩৫:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদন:

জীবননগর উপজেলার ৬ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনের ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে, ততই সহিংসতার আশঙ্কা দেখছেন স্থানীয় ভোটাররা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন, নির্বাচনী প্রচারে তাঁদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। ছেড়া হচ্ছে তাদের পোস্টার-ব্যানার। প্রতিনিয়তই নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যাওয়ার জন্য দেওয়া হচ্ছে হুমকি। এরই মধ্যে মনোহরপুর, বাঁকা ও হাসাদাহে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন , এসব হামলার ঘটনায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও থানায় অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না।

স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জানান, আগামী ১৬ মার্চ উপজেলার ৬ ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আবার তারা নিজেরা নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারে বাধা দিচ্ছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে বাঁকা, হাসাদাহ ও মনোহরপুর ইউপিতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের দ্বারা হুমকি ও প্রচারে বাধা পেয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় হাসাদাহ ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইসরাইল হোসেন ও তাঁর ছেলে নাহিদ হোসেনের ওপর আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকেরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ইসরাইল হোসেন বাদী হয়ে জীবননগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল খালেক বলেন, দুই পার্টি (পক্ষ) মুখোমুখি হওয়ায় একটু গন্ডগোল হয়েছে। এ ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওসি।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইসরাইল হোসেন বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচনী প্রচার শেষ করে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক সাগর আলী ও আলামীন হোসেনের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের দিকে ছুটে এসে গালিগালাজ করে। তিনি প্রতিবাদ করলে সাগর আলী তার মাথায় আঘাত করে। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে গেলে তাঁর ছেলে ঠেকাতে আসে। এসময় আলামীন তার মাথায় আঘাত করে। পরে সাগর ও আলামীনের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন তাদের এলোপাতাড়ি মারতে থাকে এবং মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসলে স্থানীয় বাসিন্দা ও কর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়। তারা চলে গেলে পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহাবুদ্দিন মালিতা বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের পর আমরা জোরেসোরে গণসংযোগ শুরু করি। কিন্তু নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল কাদের প্রধানের লোকজন আমার কর্মী-সমর্থকদের এবং প্রচারে বাঁধাগ্রস্ত করে আসছে। তাছাড়া কয়েকদিন আগে সুটিয়ায় আমার এবং অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়। সেখানে শুধু নৌকার প্রতীক ছিল আর কোনো প্রতীক ছিল না। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কমী-সমর্থকদের এমন আচরণের কারণে আমাদের প্রচার-প্রচারণা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।’

হাসাদাহ ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সামসুল আলম বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের কমী-সমর্থকেরা নির্বাচন শুরুর পর থেকেই নানাভাবে আমাদের নেতা-কমী, সমর্থক ও ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। কয়েকদিন আগে চাকলা মোড়ে আওয়ামী লীগের প্রার্র্থীর কর্মীরা আমার প্রচার গাড়ি থামিয়ে ভাঙচুর করে। গাড়ির চালক রাজিবুল ও কর্মী শামীম হোসেনকে মারপিট করে।’ তিনি বলেন, ‘ঘটনার ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম। ওসি সাহেব আমাকে আশ্বস্ত করেছেন এমন ঘটনা আর ঘটবে না।’ রাজিবুল ও শামীম হোসেন বলেন, ‘ঘটনার সময় গ্রামের মহিলার ছুটে এসে না ঠেকালে তারা আমাদের মেরে ফেলত।’ একই ইউনিয়নের আরেক স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমরা নৌকা প্রতীকের কমী-সমর্থকদের দ্বারা প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকির শিকার হচ্ছি। এ ব্যাপারে আমরা নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষা ভূমিকা আশা করছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জীবননগর থানার ওসি আব্দুল খালেক বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠে আমাদের পুলিশ তৎপর আছে। এরমধ্যে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও আমরা দ্রুতই সেসব স্থানে অ্যাকশনে গিয়েছি। নির্বাচন আসলেই দু-একটি ঘটনা ঘটেই থাকে। তবে সব ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।’

জীবননগর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. মেজর আহম্মেদ বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ আমরা পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলছি। ২-৩ দিনের মধ্যে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা পুলিশকে বলেছি।’