ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে বজ্রপাতে দুটি মহিষ ও নারীর মৃত্যু

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:১৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ মে ২০২২
  • / ৩৪ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহে কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। অনেক এলাকা ঝড়ে লণ্ডলণ্ড হয়ে গেছে। কালীগঞ্জসহ বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বজ্রবৃষ্টিপাতের মধ্যে মাঠে কাজ করার সময়  শৈলকুপায় রুপসী বেগম নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। কালীগঞ্জে বজ্রপাতে ধানের ক্ষেত ভস্মিভূত হয়েছে। ঝড়ে ভেঙ্গে ও উপড়ে পড়েছে গাছপালা। বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে সদর উপজেলার ডেফলবাড়ি গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলামের ৬ লাখ টাকা মূল্যের দুইটি মহিষের। এছাড়া কালীগঞ্জ ও হরিণাকুণ্ডু এলাকায় ঝড়ে গাছপালা, ঘরবাড়ি ও উঠতি ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৬ টার হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় তাণ্ডবের এসব ছাপ রেখে যায়।

জানা যায়, গতকাল সকাল ৬ টার দিকে হঠাৎ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে ঝিনাইদহের আকাশ। এর কিছুক্ষনের মধ্যেই শুরু হয় তীব্র ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত। এসময় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কুলচারা গ্রামের মাঠে ক্ষেতে বেগুন তুলছিল রুপসী বেগম ও তার স্বামী গোলাম নবী। হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে স্বামী-স্ত্রী আহত হন। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ দমকল বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুপসী বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত স্বামী গোলাম নবীকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।

এদিকে তীব্র ঝড়ে ঝিনাইদহ সদরের গোয়ালপাড়া, ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন সড়ক, কালীগঞ্জে বারোবাজার, রঘুনাথপুর, কোটচাদপুরের এলাঙ্গীসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় ও রাস্তার পাশে ভেঙে পড়ে ছোটবড় প্রায় শতাধীক গাছ। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় ঝিনাইদহ-যশোর সড়কে যানবাহন চলাচল। এসময় ঝড়ের কবলে পড়ে আহত হয় আরো ৪ জন। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ ও কোটচাদপুর ফায়ার সার্ভিসের ৪ টি ইউনিট ঘটনা স্থলে পৌছে প্রায় ৪ ঘন্টা চেষ্টা করে গাছ কেটে অপসারণ করে। প্রায় ৪ ঘন্টা পর সকাল ১০ টা থেকে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঝড়ের সময় বজ্রপাতের আগুনে কালীগঞ্জ উপজেলার কাঠালিয়া মাঠে এক কৃষকের কেটে রাখা ধান ভস্মিভুত হয়। ঝড়ের সময় জেলা সদর ও কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙে ও তার ছিড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

উদ্ধারে অংশ নেওয়া কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শেখ মামুনুর রশিদ জানান, ঝড়ের পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে সড়কে গাছ ভেঙে পড়ার খবর আসে। সেসময় ঘটনা স্থলে গিয়ে গাছ কেটে রাস্তার পাশে সরিয়ে রাখা হয়। প্রায় চার ঘণ্টা কাজ শেষে সম্পূর্ণরুপে সড়কে ও গুরুত্বপুর্নস্থানে ভেঙেপড়া গাছ অপসারণ করা হয়। এরপরই সকল মহাসড়ক ও আঞ্চলিক গুরুত্বপুর্ণ সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

কালীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রথীন্দ্রনাথ বসাক বলেন, ‘ঝড়ে ৩৩ টি বিদ্যুতের পোল ভেঙ্গেছে। তাছাড়া ৩৩ কেভি লাইনের উপর গাছ পড়ে তার ছিড়ে গেছে। সব স্থানেই মেরামতের কাজ চলছে।’

ঝিনাইদহ ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার রাশিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ঝড়ে কিছু স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দ্রুত লাইন চালু করেরে। তবে কিছু কিছু এলাকায় বিকাল পর্যন্ত লাইন চালু করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, ঝড়ের পর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়। ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করছি। তালিকা শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্থরা যাতে সহযোগীতা পান সে ব্যাপারে মন্ত্রনালয়ে আবেদন করা হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহে বজ্রপাতে দুটি মহিষ ও নারীর মৃত্যু

আপলোড টাইম : ০৮:১৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ মে ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহে কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। অনেক এলাকা ঝড়ে লণ্ডলণ্ড হয়ে গেছে। কালীগঞ্জসহ বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বজ্রবৃষ্টিপাতের মধ্যে মাঠে কাজ করার সময়  শৈলকুপায় রুপসী বেগম নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। কালীগঞ্জে বজ্রপাতে ধানের ক্ষেত ভস্মিভূত হয়েছে। ঝড়ে ভেঙ্গে ও উপড়ে পড়েছে গাছপালা। বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে সদর উপজেলার ডেফলবাড়ি গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলামের ৬ লাখ টাকা মূল্যের দুইটি মহিষের। এছাড়া কালীগঞ্জ ও হরিণাকুণ্ডু এলাকায় ঝড়ে গাছপালা, ঘরবাড়ি ও উঠতি ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৬ টার হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় তাণ্ডবের এসব ছাপ রেখে যায়।

জানা যায়, গতকাল সকাল ৬ টার দিকে হঠাৎ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে ঝিনাইদহের আকাশ। এর কিছুক্ষনের মধ্যেই শুরু হয় তীব্র ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত। এসময় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কুলচারা গ্রামের মাঠে ক্ষেতে বেগুন তুলছিল রুপসী বেগম ও তার স্বামী গোলাম নবী। হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে স্বামী-স্ত্রী আহত হন। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ দমকল বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুপসী বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত স্বামী গোলাম নবীকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।

এদিকে তীব্র ঝড়ে ঝিনাইদহ সদরের গোয়ালপাড়া, ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন সড়ক, কালীগঞ্জে বারোবাজার, রঘুনাথপুর, কোটচাদপুরের এলাঙ্গীসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় ও রাস্তার পাশে ভেঙে পড়ে ছোটবড় প্রায় শতাধীক গাছ। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় ঝিনাইদহ-যশোর সড়কে যানবাহন চলাচল। এসময় ঝড়ের কবলে পড়ে আহত হয় আরো ৪ জন। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ ও কোটচাদপুর ফায়ার সার্ভিসের ৪ টি ইউনিট ঘটনা স্থলে পৌছে প্রায় ৪ ঘন্টা চেষ্টা করে গাছ কেটে অপসারণ করে। প্রায় ৪ ঘন্টা পর সকাল ১০ টা থেকে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঝড়ের সময় বজ্রপাতের আগুনে কালীগঞ্জ উপজেলার কাঠালিয়া মাঠে এক কৃষকের কেটে রাখা ধান ভস্মিভুত হয়। ঝড়ের সময় জেলা সদর ও কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙে ও তার ছিড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

উদ্ধারে অংশ নেওয়া কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শেখ মামুনুর রশিদ জানান, ঝড়ের পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে সড়কে গাছ ভেঙে পড়ার খবর আসে। সেসময় ঘটনা স্থলে গিয়ে গাছ কেটে রাস্তার পাশে সরিয়ে রাখা হয়। প্রায় চার ঘণ্টা কাজ শেষে সম্পূর্ণরুপে সড়কে ও গুরুত্বপুর্নস্থানে ভেঙেপড়া গাছ অপসারণ করা হয়। এরপরই সকল মহাসড়ক ও আঞ্চলিক গুরুত্বপুর্ণ সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

কালীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রথীন্দ্রনাথ বসাক বলেন, ‘ঝড়ে ৩৩ টি বিদ্যুতের পোল ভেঙ্গেছে। তাছাড়া ৩৩ কেভি লাইনের উপর গাছ পড়ে তার ছিড়ে গেছে। সব স্থানেই মেরামতের কাজ চলছে।’

ঝিনাইদহ ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার রাশিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ঝড়ে কিছু স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দ্রুত লাইন চালু করেরে। তবে কিছু কিছু এলাকায় বিকাল পর্যন্ত লাইন চালু করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, ঝড়ের পর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়। ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করছি। তালিকা শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্থরা যাতে সহযোগীতা পান সে ব্যাপারে মন্ত্রনালয়ে আবেদন করা হবে।’