ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছোট ভাইকে ফাঁসাতে গিয়ে বড় দুই ভাই জেলহাজতে

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৭:৫৯:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ মে ২০২২
  • / ৫১ বার পড়া হয়েছে

ছোট ভাইকে ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন বড় দুই ভাই। এরা হলেন- ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সলেমানপুর বাজারপাড়ার বাসিন্দা এটিএম মুসার ছেলে, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও কোটচাঁদপুর ওয়াকফ স্ট্রেটের সাবেক মোতোয়াল্লী মাসুদ রানা পলাশ (৫৪) ও আওয়ামী লীগ  নেতা সোহেল রানা (৫২)। তাঁদের ছোট ভাই হচ্ছেন পারভেজ রানা বাবু (৪০)। বড় দুই ভাই ছোট ভাই পারভেজ রানার বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা করেন। আদালতের বিচার শেষে সেই মামলা মিথ্যা প্রমাণ হয়। আর মিথ্যা মামলা করে ছোট ভাইকে হয়রানি অভিযোগে আদালতের নির্দেশে বড় দুই ভাইয়ের নামে পৃথক দুটি মামলা রুজু করা হয়েছে। যে মামলায় তারা দুইভাই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

ছোট ভাই পারভেজ রানা বাবু জানান, তাঁরা তিন ভাই আর দুই বোন। বড় ভাই মাসুদ রানা ব্যবসার প্রয়োজনে তাঁর নিকট থেকে ২০১৬ সালে ১৭ লাখ টাকা ধার হিসেবে গ্রহণ করেন। পাশাপাশি বড় ভাইয়ের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থে দুটি অ্যাকাউন্টের ৪টি চেকের পাতা নেন। শুধুমাত্র ব্যবসার প্রয়োজনে এই চেকের পাতা তিনি ব্যবহার করার কথা ছিল। ২০১৬ সালের ২ জুন তাদের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি ব্যবসায়িক চুক্তিও হয়। তিনি আরও জানান, তাদের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, সেখানে উল্লেখ ছিল এই চেকের পাতা বড় ভাই ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করবেন, ব্যবহার না হলে ফেরত দিবেন। আর ধারের টাকা দেড় বছর পর ফেরত দিবেন।

পারভেজ রানা জানান, তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে এই চুক্তি থাকার পরও বড় ভাই মাসুদ রানা ধারের ১৭ লাখ টাকা না দেওয়ার জন্য নানা ফন্দি আটতে শুরু করেন। প্রথমে টাকা ফেরত দেবেন না বলে নানা স্থানে প্রচার দেন। পরে ২০১৮ সালের ৩১ মে বড় ভাই মাসুদ রানা নিজে একটি চেকের পাতা ব্যবহার করে ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা পাওনা দেখিয়ে ও মেঝো ভাই সোহেল রানাকে দিয়ে আরেকটি চেকের পাতায় ৮ লাখ টাকা মোট ১৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা পাওনা দেখিয়ে ঝিনাইদহ আদালতে দুটি মামলা করেন। পারভেজ রানার বিরুদ্ধে করা দুটি মামলা চলাকালে বাদীপক্ষ আদালতে মিথ্যা সাক্ষী দেন এবং কিছু জাল কাগজপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে বিচার শেষে মামলা দুটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

ঝিনাইদহ যুগ্ম দায়রা জজ-১ এর বিচারক মো. মাসুদ আলী সম্প্রতি মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া ও জাল কাগজপত্র আদালতে দাখিলের অপরাধে আদালত বাদী হয়ে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। যে মামলা দুটিতে বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া আদালত ছোট ভাই পারভেজ রানার দায়ের করা মামলায় বড় ভাই মাসুদ রানার ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন।

পারভেজ রানা জানান, তাঁকে ফাঁসাতে গিয়ে বড় দুই ভাই নিজেরাই ফেঁসে গেছেন। এখন কারাগারে বসে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি ভাইদের হয়রানি করতে চাননি, তাদের হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে মামলা দায়ের করেছিলেন। সেই মামলায় বড় ভাইয়ের সাজা হয়েছে। কিন্তু তারা ছোট ভাইকে ফাঁসাতে যে মামলা করেছিল, সেই মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। তাদের জালিয়াতির কারণে আদালত নিজেই বাদী হয়ে দুই ভাইয়ের নামে দুটি মামলা করেছেন।

 

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ছোট ভাইকে ফাঁসাতে গিয়ে বড় দুই ভাই জেলহাজতে

আপলোড টাইম : ০৭:৫৯:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ মে ২০২২

ছোট ভাইকে ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন বড় দুই ভাই। এরা হলেন- ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সলেমানপুর বাজারপাড়ার বাসিন্দা এটিএম মুসার ছেলে, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও কোটচাঁদপুর ওয়াকফ স্ট্রেটের সাবেক মোতোয়াল্লী মাসুদ রানা পলাশ (৫৪) ও আওয়ামী লীগ  নেতা সোহেল রানা (৫২)। তাঁদের ছোট ভাই হচ্ছেন পারভেজ রানা বাবু (৪০)। বড় দুই ভাই ছোট ভাই পারভেজ রানার বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা করেন। আদালতের বিচার শেষে সেই মামলা মিথ্যা প্রমাণ হয়। আর মিথ্যা মামলা করে ছোট ভাইকে হয়রানি অভিযোগে আদালতের নির্দেশে বড় দুই ভাইয়ের নামে পৃথক দুটি মামলা রুজু করা হয়েছে। যে মামলায় তারা দুইভাই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

ছোট ভাই পারভেজ রানা বাবু জানান, তাঁরা তিন ভাই আর দুই বোন। বড় ভাই মাসুদ রানা ব্যবসার প্রয়োজনে তাঁর নিকট থেকে ২০১৬ সালে ১৭ লাখ টাকা ধার হিসেবে গ্রহণ করেন। পাশাপাশি বড় ভাইয়ের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থে দুটি অ্যাকাউন্টের ৪টি চেকের পাতা নেন। শুধুমাত্র ব্যবসার প্রয়োজনে এই চেকের পাতা তিনি ব্যবহার করার কথা ছিল। ২০১৬ সালের ২ জুন তাদের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি ব্যবসায়িক চুক্তিও হয়। তিনি আরও জানান, তাদের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, সেখানে উল্লেখ ছিল এই চেকের পাতা বড় ভাই ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করবেন, ব্যবহার না হলে ফেরত দিবেন। আর ধারের টাকা দেড় বছর পর ফেরত দিবেন।

পারভেজ রানা জানান, তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে এই চুক্তি থাকার পরও বড় ভাই মাসুদ রানা ধারের ১৭ লাখ টাকা না দেওয়ার জন্য নানা ফন্দি আটতে শুরু করেন। প্রথমে টাকা ফেরত দেবেন না বলে নানা স্থানে প্রচার দেন। পরে ২০১৮ সালের ৩১ মে বড় ভাই মাসুদ রানা নিজে একটি চেকের পাতা ব্যবহার করে ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা পাওনা দেখিয়ে ও মেঝো ভাই সোহেল রানাকে দিয়ে আরেকটি চেকের পাতায় ৮ লাখ টাকা মোট ১৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা পাওনা দেখিয়ে ঝিনাইদহ আদালতে দুটি মামলা করেন। পারভেজ রানার বিরুদ্ধে করা দুটি মামলা চলাকালে বাদীপক্ষ আদালতে মিথ্যা সাক্ষী দেন এবং কিছু জাল কাগজপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে বিচার শেষে মামলা দুটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়।

ঝিনাইদহ যুগ্ম দায়রা জজ-১ এর বিচারক মো. মাসুদ আলী সম্প্রতি মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া ও জাল কাগজপত্র আদালতে দাখিলের অপরাধে আদালত বাদী হয়ে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। যে মামলা দুটিতে বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া আদালত ছোট ভাই পারভেজ রানার দায়ের করা মামলায় বড় ভাই মাসুদ রানার ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন।

পারভেজ রানা জানান, তাঁকে ফাঁসাতে গিয়ে বড় দুই ভাই নিজেরাই ফেঁসে গেছেন। এখন কারাগারে বসে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি ভাইদের হয়রানি করতে চাননি, তাদের হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে মামলা দায়ের করেছিলেন। সেই মামলায় বড় ভাইয়ের সাজা হয়েছে। কিন্তু তারা ছোট ভাইকে ফাঁসাতে যে মামলা করেছিল, সেই মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। তাদের জালিয়াতির কারণে আদালত নিজেই বাদী হয়ে দুই ভাইয়ের নামে দুটি মামলা করেছেন।