ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালীগঞ্জে কলেজ থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের খাতা গায়েব!

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৮:০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২
  • / ২২ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজের গোডাউন থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৭ বস্তা মূল খাতা ও লুজ শিট গায়েব হয়ে গেছে। এই খাতা চুরির সাথে জড়িত সিন্ডিকেট চিহ্নিত হলেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড বা কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং এই খাতা চুরি নিয়ে সে সময়কার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ ম-ল দক্ষতার সঙ্গে ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন অনুষ্ঠিত ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শাখার বোর্ড পরীক্ষার পর অবশিষ্ট মূল খাতা ও লুজ শিট কলেজের গোডাউনে ছিল। এই খাতা ছাড়াও কয়েক বস্তা বই কলেজের দুই কর্মচারীর সহায়তায় ২০১৯ সালের রমজান মাসে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শাখার সাচিবিক বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রকিবুল ইসলাম মিল্টন নিজের বাড়ি নিয়ে যান।

কলেজের অফিস সহায়ক শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি কেবল স্যারের আদেশ মেনে খাতাগুলো তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেন। তারপরে আর কী হয়েছে, তা তিনি বলতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বেচে যাওয়া খাতার সঙ্গে বোর্ডের বইও ছিল ওই বস্তায়। সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজের আরেক অফিস সহায়ক আমির হোসেন জানান, খাতা নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি গেটে বাধা দেন। এসময় শরিফুল ইসলাম তাঁকে জানায় খাতাগুলো সাচিবিক বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রকিবুল ইসলাম মিল্টনের নির্দেশে তাঁর বাসায় তিনি নিয়ে যাচ্ছেন। আমির হোসেন খাতাগুলো গুনে ভ্যান ছেড়ে দেন। তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে সে সময় কলেজে হৈ চৈ হলেও খাতা চুরির কাহিনী ধামাচাপা পড়ে যায়।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সাচিবিক বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রকিবুল ইসলাম মিল্টন বহু কেলেঙ্কারীর হোতা। কলেজে ২০০০ সালের ১৯ অক্টোবর ও ২০০১ সালের ১৮ নভেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত হলে মিল্টনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কলেজ সরকারি হওয়ার পরও তিনি একই ধরণের অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই ছাত্র অভিযোগ করেন, মার্কশিটের ফটোকপি দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন মিল্টন স্যার। অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতেও টাকা নেন তিনি।

এ ব্যাপারে সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ ম-ল জানান, খাতা চুরির বিষয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করে সে সময় কী রিপোর্ট দিয়েছিল, তা তাঁর মনে নেই। এ বিষয়ে তিনি কলেজের হেড ক্লার্ক রজব আলীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। হেডক্লার্ক রজব আলী খাতা গায়েব হওয়া বা তদন্ত কমিটির বিষয়ে বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।

বিষয়টি নিয়ে রকিবুল ইসলাম মিল্টন অভিযোগ খ-ন করে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে কলেজের একটি চক্র মিথ্যা তথ্য নিয়ে ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, কলেজ থেকে তিনি তাঁর বিভাগের কিছু প্র্যাকটিক্যল খাতা ও বই নিয়ে গেছেন। সেগুলো কোনোভাবেই কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের খাতা ছিল না।

কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান খাতা গায়েবের বিষয়ে বলেন, ‘আমি সে সময় কলেজে অনুপস্থিত ছিলাম। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর কলেজে যোগদানের পর বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাটি সত্য হলে তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কালীগঞ্জে কলেজ থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের খাতা গায়েব!

আপলোড টাইম : ০৮:০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজের গোডাউন থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৭ বস্তা মূল খাতা ও লুজ শিট গায়েব হয়ে গেছে। এই খাতা চুরির সাথে জড়িত সিন্ডিকেট চিহ্নিত হলেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড বা কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং এই খাতা চুরি নিয়ে সে সময়কার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ ম-ল দক্ষতার সঙ্গে ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন অনুষ্ঠিত ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শাখার বোর্ড পরীক্ষার পর অবশিষ্ট মূল খাতা ও লুজ শিট কলেজের গোডাউনে ছিল। এই খাতা ছাড়াও কয়েক বস্তা বই কলেজের দুই কর্মচারীর সহায়তায় ২০১৯ সালের রমজান মাসে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শাখার সাচিবিক বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রকিবুল ইসলাম মিল্টন নিজের বাড়ি নিয়ে যান।

কলেজের অফিস সহায়ক শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি কেবল স্যারের আদেশ মেনে খাতাগুলো তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেন। তারপরে আর কী হয়েছে, তা তিনি বলতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বেচে যাওয়া খাতার সঙ্গে বোর্ডের বইও ছিল ওই বস্তায়। সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজের আরেক অফিস সহায়ক আমির হোসেন জানান, খাতা নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি গেটে বাধা দেন। এসময় শরিফুল ইসলাম তাঁকে জানায় খাতাগুলো সাচিবিক বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রকিবুল ইসলাম মিল্টনের নির্দেশে তাঁর বাসায় তিনি নিয়ে যাচ্ছেন। আমির হোসেন খাতাগুলো গুনে ভ্যান ছেড়ে দেন। তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে সে সময় কলেজে হৈ চৈ হলেও খাতা চুরির কাহিনী ধামাচাপা পড়ে যায়।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সাচিবিক বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রকিবুল ইসলাম মিল্টন বহু কেলেঙ্কারীর হোতা। কলেজে ২০০০ সালের ১৯ অক্টোবর ও ২০০১ সালের ১৮ নভেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত হলে মিল্টনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কলেজ সরকারি হওয়ার পরও তিনি একই ধরণের অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই ছাত্র অভিযোগ করেন, মার্কশিটের ফটোকপি দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন মিল্টন স্যার। অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতেও টাকা নেন তিনি।

এ ব্যাপারে সরকারি মাহতাব উদ্দীন কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ ম-ল জানান, খাতা চুরির বিষয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করে সে সময় কী রিপোর্ট দিয়েছিল, তা তাঁর মনে নেই। এ বিষয়ে তিনি কলেজের হেড ক্লার্ক রজব আলীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। হেডক্লার্ক রজব আলী খাতা গায়েব হওয়া বা তদন্ত কমিটির বিষয়ে বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।

বিষয়টি নিয়ে রকিবুল ইসলাম মিল্টন অভিযোগ খ-ন করে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে কলেজের একটি চক্র মিথ্যা তথ্য নিয়ে ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, কলেজ থেকে তিনি তাঁর বিভাগের কিছু প্র্যাকটিক্যল খাতা ও বই নিয়ে গেছেন। সেগুলো কোনোভাবেই কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের খাতা ছিল না।

কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান খাতা গায়েবের বিষয়ে বলেন, ‘আমি সে সময় কলেজে অনুপস্থিত ছিলাম। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর কলেজে যোগদানের পর বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাটি সত্য হলে তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’