ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজন

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় রঙের উৎসবে বর্ষবরণ
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

পুরানোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপিত হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। ‘বাংলা নববর্ষ-১৪২৬’কে বরণ করে নিতে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশব্যাপী ছিল নানা আয়োজন। বাঙালি চেতনার ধারক মঙ্গল শোভাযাত্রা, গান, নাচ, বৈশাখী মেলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। এদিকে নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে বাণী দেন। বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। নববর্ষ বরণ উপলক্ষে সারা দেশজুড়ে ছিল সাজ সাজ রব। সারা বাংলা ভেসেছে বিপুল উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনায়। সাধারণ মানুষের পোশাকে ছিল লাল-সাদার সমাহার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেজেছে ঢোল, ডুগডুগি। পথে পথে বসেছিল বাতাসা, মুড়ি-মুড়কি, মাটির জিনিস, পাটের জিনিস, বাঁশি ও খেলনার দোকান। দিনভর প্রখর রোদ থাকা স্বত্বেও ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানের তালে তালে মানুষ বিভিন্ন উৎসবে যোগ দেয়।

চুয়াডাঙ্গা:

চুয়াডাঙ্গায় মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন ও ১৪২৯ বাংলা নতুন বছরকে বরণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে নয়টায় চুয়াডাঙ্গা চাঁদমারী মাঠ থেকে এক বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। জেলা প্রশাসক মোহম্মদ আমিনুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি শহরের কোর্ট মোড়, কোর্ট রোড, কলেজ রোড হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদিক্ষণ করে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে এসে শেষ হয়। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বাঙালি জাতির বিভিন্ন কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে বিভিন্ন সাজ-পোশাকে বয়ো-বৃদ্ধ, বর-বউ, কৃষক-কৃষাণী, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। পরে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গনে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছাবিনিময় করে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বৈশাখ শুধু উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আত্মবিকাশ ও বেড়ে ওঠার প্রেরণা। পহেলা বৈশাখ আমাদের উদার হতে শিক্ষা দেয় এবং জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত হয়ে বিশ্বমানবের সঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়। এই উদারনৈতিক চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আদর্শ এবং রাষ্ট্রভাষা চেতনার বহ্নিশিখা অন্তরে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ হোক আজকের দিনে সকলের অঙ্গীকার। সকল অশুভ ও অসুন্দরের ওপর সত্য ও সুন্দরের জয় হোক। ফেলে আসা বছরের সব শোক-দুঃখ-জরা দূর হোক, নতুন বছর নিয়ে আসুক সুখ ও সমৃদ্ধি।

নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগত বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রেজাউল করিম। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেক, চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আজিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাজিয়া আফরিন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত রহমান, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল হাসান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামিম ভূঁইয়া, জেলা এনএসআইর-এর উপ-পরিচালক জিএম জামিল সিদ্দিক, জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমানসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক-ছাত্র ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

পরে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে তিনটি গ্রুপে এক আনন্দঘন পরিবেশে ‘বাংলা নববর্ষ ও বঙ্গবন্ধু’ বিষয়ে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। যেমন খুশি তেমন সাজো ও কুইজ প্রতিযোগিতায় তিনটি গ্রুপে বিজয়ী ১০ জন করে মোট ৩০ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খানসহ অতিথিরা।

আলমডাঙ্গা:

আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্ণিল আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা মঞ্চে এসে শেষ হয়। পরে বর্ষবরণ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রনি আলম নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আইয়ুব হোসেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. সালমুন আহম্মেদ ডন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজাহান নিতু, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি অফিসার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহিল কাফি, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সোহেল রানা, মৎস্য কর্মকর্তা ফাতেমা কামরুন্নাহার আঁখি, আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম সরোয়ার, মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আশুরা খাতুন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামসুজ্জোহা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা দেওয়ান জাহাঙ্গীর আলম, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারি ও উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল বারী।

আলমডাঙ্গা উপজেলা বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামিম রেজার উপস্থাপনায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাস্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনদ্দিন, ইউআরসি জামাল হোসেন, সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান, মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারেজ উদ্দিন, আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নশির উদ্দিন এ্যাটোম, এরশাদপুর একাডেমির প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ আলম মণ্টু, সাধারণ সম্পাদক খ. হামিদুল ইসলাম আজম, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাকসুরা জান্নাত, বিআরডিবি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন, মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল মালেক প্রমুখ।

দর্শনা:

বাঙালীর গৌরবময় ইতিহাস ও শিল্পের ঐতিহ্যকে ধারণ করে দর্শনা অনির্বাণ বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ বরণ করতে বৈশাখী গান ও কবিতা পাঠের আয়োজন করে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় নাসরীন সুরুভী মেধা ও সামিহা কাওছার রাইছার উপস্থাপনায় দর্শনা অনির্বাণ থিয়েটার মঞ্চে গানে গানে বর্ষবরণ ও কবিতা পাঠের আসরে অংশ নেয় দর্শনা আনন্দধাম ও অনির্বাণ থিয়েটারের কর্মীরা। ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের সাথে সাথে পুরাতন দিনের সকল গ্লানী মুছে ফেলে নব জাগরণের দলীয় সংগীত এবং কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও রবিন্দ্রনাথ ঠাকাকুরের কবিতা দিয়ে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান শেষ করেন।

অনিবার্ণ থিয়েটার বাংলা ১৪০০ সাল থেকে নববর্ষকে বরণ করতে দর্শনার সাংস্কৃতিক সংগঠণ, থিয়েটার গ্রুপ, পেশাজীবি সংগঠন, স্কুল- কলেজসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালী, সাতদিন ব্যাপী একুশে মেলাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। তবে এ বছর পবিত্র মাহে রমজানের কারণে বাংলা বছরকে বরণ করতে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান করা হয়েছে। এ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেয় অনির্বাণ থিয়েটারের কবিরুল হক লিপু, প্রভাষক মিল্টন কুমার সাহা, মামুন আল রাজি, আব্দুর রহমান, মোস্তাক আহম্মেদ মনা এবং আনন্দ ধামের শিল্পীদের মধ্যে অংশ নেয়, উপসনা দেব নাথ, উৎসব, অন্যন্যা, পূজা, পলাশ, আবু তাহের, পর্না ও শহিদ। কবিতা আবৃতি করেন সানন্দিতা হালদার, সর্বসাহা, প্রিয়াসী ও শাহিনা আসাদ স্বপ্না প্রমুখ।

গাংনী:

মেহেরপুরের গাংনীতে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ উদ্যাপন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে গাংনী উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে উপজেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে নেতৃত্ব প্রদান করেন গাংনী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক ও গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম। এসময় উপস্থিত ছিলেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

পরে বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সংক্ষিপ্ত আলােচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মৌসুমী খানম। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গাংনী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সিরাজুল ইসলাম, মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য  মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকনের প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান আতু, গাংনী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন ও গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাক্তার আব্দুল-আল মারুফ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন গাংনী উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মনিরুল ইসলাম, গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম, গাংনী (বাঁশবাড়ীয়া) টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজের আবুল কালাম আজাদ স্বপন, গাংনী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন, গাংনী সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুজ্জামান লালুসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজন

আপলোড টাইম : ০৯:০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২

পুরানোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপিত হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। ‘বাংলা নববর্ষ-১৪২৬’কে বরণ করে নিতে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশব্যাপী ছিল নানা আয়োজন। বাঙালি চেতনার ধারক মঙ্গল শোভাযাত্রা, গান, নাচ, বৈশাখী মেলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। এদিকে নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে বাণী দেন। বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। নববর্ষ বরণ উপলক্ষে সারা দেশজুড়ে ছিল সাজ সাজ রব। সারা বাংলা ভেসেছে বিপুল উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনায়। সাধারণ মানুষের পোশাকে ছিল লাল-সাদার সমাহার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেজেছে ঢোল, ডুগডুগি। পথে পথে বসেছিল বাতাসা, মুড়ি-মুড়কি, মাটির জিনিস, পাটের জিনিস, বাঁশি ও খেলনার দোকান। দিনভর প্রখর রোদ থাকা স্বত্বেও ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানের তালে তালে মানুষ বিভিন্ন উৎসবে যোগ দেয়।

চুয়াডাঙ্গা:

চুয়াডাঙ্গায় মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন ও ১৪২৯ বাংলা নতুন বছরকে বরণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে নয়টায় চুয়াডাঙ্গা চাঁদমারী মাঠ থেকে এক বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। জেলা প্রশাসক মোহম্মদ আমিনুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি শহরের কোর্ট মোড়, কোর্ট রোড, কলেজ রোড হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদিক্ষণ করে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে এসে শেষ হয়। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বাঙালি জাতির বিভিন্ন কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে বিভিন্ন সাজ-পোশাকে বয়ো-বৃদ্ধ, বর-বউ, কৃষক-কৃষাণী, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। পরে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গনে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছাবিনিময় করে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বৈশাখ শুধু উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আত্মবিকাশ ও বেড়ে ওঠার প্রেরণা। পহেলা বৈশাখ আমাদের উদার হতে শিক্ষা দেয় এবং জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত হয়ে বিশ্বমানবের সঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়। এই উদারনৈতিক চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আদর্শ এবং রাষ্ট্রভাষা চেতনার বহ্নিশিখা অন্তরে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ হোক আজকের দিনে সকলের অঙ্গীকার। সকল অশুভ ও অসুন্দরের ওপর সত্য ও সুন্দরের জয় হোক। ফেলে আসা বছরের সব শোক-দুঃখ-জরা দূর হোক, নতুন বছর নিয়ে আসুক সুখ ও সমৃদ্ধি।

নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগত বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রেজাউল করিম। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেক, চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আজিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাজিয়া আফরিন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত রহমান, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল হাসান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামিম ভূঁইয়া, জেলা এনএসআইর-এর উপ-পরিচালক জিএম জামিল সিদ্দিক, জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমানসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক-ছাত্র ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

পরে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে তিনটি গ্রুপে এক আনন্দঘন পরিবেশে ‘বাংলা নববর্ষ ও বঙ্গবন্ধু’ বিষয়ে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। যেমন খুশি তেমন সাজো ও কুইজ প্রতিযোগিতায় তিনটি গ্রুপে বিজয়ী ১০ জন করে মোট ৩০ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খানসহ অতিথিরা।

আলমডাঙ্গা:

আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্ণিল আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা মঞ্চে এসে শেষ হয়। পরে বর্ষবরণ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রনি আলম নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আইয়ুব হোসেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. সালমুন আহম্মেদ ডন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজাহান নিতু, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি অফিসার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহিল কাফি, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সোহেল রানা, মৎস্য কর্মকর্তা ফাতেমা কামরুন্নাহার আঁখি, আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম সরোয়ার, মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আশুরা খাতুন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামসুজ্জোহা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা দেওয়ান জাহাঙ্গীর আলম, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারি ও উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল বারী।

আলমডাঙ্গা উপজেলা বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামিম রেজার উপস্থাপনায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাস্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনদ্দিন, ইউআরসি জামাল হোসেন, সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান, মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারেজ উদ্দিন, আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নশির উদ্দিন এ্যাটোম, এরশাদপুর একাডেমির প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ আলম মণ্টু, সাধারণ সম্পাদক খ. হামিদুল ইসলাম আজম, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাকসুরা জান্নাত, বিআরডিবি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন, মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল মালেক প্রমুখ।

দর্শনা:

বাঙালীর গৌরবময় ইতিহাস ও শিল্পের ঐতিহ্যকে ধারণ করে দর্শনা অনির্বাণ বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ বরণ করতে বৈশাখী গান ও কবিতা পাঠের আয়োজন করে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় নাসরীন সুরুভী মেধা ও সামিহা কাওছার রাইছার উপস্থাপনায় দর্শনা অনির্বাণ থিয়েটার মঞ্চে গানে গানে বর্ষবরণ ও কবিতা পাঠের আসরে অংশ নেয় দর্শনা আনন্দধাম ও অনির্বাণ থিয়েটারের কর্মীরা। ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের সাথে সাথে পুরাতন দিনের সকল গ্লানী মুছে ফেলে নব জাগরণের দলীয় সংগীত এবং কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও রবিন্দ্রনাথ ঠাকাকুরের কবিতা দিয়ে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান শেষ করেন।

অনিবার্ণ থিয়েটার বাংলা ১৪০০ সাল থেকে নববর্ষকে বরণ করতে দর্শনার সাংস্কৃতিক সংগঠণ, থিয়েটার গ্রুপ, পেশাজীবি সংগঠন, স্কুল- কলেজসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালী, সাতদিন ব্যাপী একুশে মেলাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। তবে এ বছর পবিত্র মাহে রমজানের কারণে বাংলা বছরকে বরণ করতে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান করা হয়েছে। এ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেয় অনির্বাণ থিয়েটারের কবিরুল হক লিপু, প্রভাষক মিল্টন কুমার সাহা, মামুন আল রাজি, আব্দুর রহমান, মোস্তাক আহম্মেদ মনা এবং আনন্দ ধামের শিল্পীদের মধ্যে অংশ নেয়, উপসনা দেব নাথ, উৎসব, অন্যন্যা, পূজা, পলাশ, আবু তাহের, পর্না ও শহিদ। কবিতা আবৃতি করেন সানন্দিতা হালদার, সর্বসাহা, প্রিয়াসী ও শাহিনা আসাদ স্বপ্না প্রমুখ।

গাংনী:

মেহেরপুরের গাংনীতে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ উদ্যাপন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে গাংনী উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে উপজেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে নেতৃত্ব প্রদান করেন গাংনী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক ও গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী খানম। এসময় উপস্থিত ছিলেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

পরে বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সংক্ষিপ্ত আলােচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মৌসুমী খানম। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গাংনী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সিরাজুল ইসলাম, মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য  মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকনের প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান আতু, গাংনী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন ও গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাক্তার আব্দুল-আল মারুফ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন গাংনী উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মনিরুল ইসলাম, গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম, গাংনী (বাঁশবাড়ীয়া) টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজের আবুল কালাম আজাদ স্বপন, গাংনী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন, গাংনী সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুজ্জামান লালুসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ।