ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে প্রকাশ্যে যুবলীগের দুই কর্র্মীকে কুপিয়ে হত্যা!

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪৯:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২
  • / ৩০ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর শহরের চৌগাছা বাসস্ট্যান্ডে বসা নতুন হাটের টোল আদায়কে কেন্দ্র করে শ্রমিক লীগ ও যুবলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে প্রকাশ্যে আক্তার হোসেন (২২) ও জীবন মিয়া (২১) নামে দুই যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। তাঁদেরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসময় সোহাগ ও সাব্বির নামে দুই যুবক গুরুতর আহত হন। নিহত জীবন কোটচাঁদপুর শহরের তালমিল পাড়ার ফিরোজ হোসেনের ছেলে। অন্যদিকে আক্তার হোসেন একই উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামের আবু তালেবের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় এমপি শফিকুল ইসলাম চঞ্চল সমর্থিত আওয়ামী লীগ নেতা শাহাজাহান ও  কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মেয়র গ্রুপের দুই কর্মী নিহত হন।

পুলিশ ও প্রত্যাক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা বাসস্ট্যান্ডের ওই কাঁচা বাজারের খাজনা ও যানবাহনের পৌর টোল মেয়র গ্রুপের ইমন হোসেন ডন ও তার লোকজন আদায় করে আসছিল। বাজারের টোল আদায়সহ নানা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে মতবিরোধ হওয়ায় কথিত জাতীয় পরিবহন শ্রমিক লীগের আশরাফুল, আমিরুল, সোহাগ ও মিঠু মেয়র গ্রুপ ত্যাগ করে এমপি চঞ্চলের স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখে। নতুন বছরেও হাটের ইজারা পান ইমন হোসেন ডন। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র গ্রুপের ইমন হোসেন ডন ও হাসানের সমর্থকরা সেখানে টোল আদায় করতে যায়। বাজারে জাতীয় পরিবহন শ্রমিক লীগের অফিসেই ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে অপেক্ষা করছিল প্রতিপক্ষ গ্রুপ। ডন ও হাসানের সমর্থকরা বাজারে ঢুকে টোল আদায় করার সময় কথিত শাহাজান গ্রুপের পরিচয় দিয়ে জাতীয় পরিবহন শ্রমিক লীগের আশরাফুল, আমিরুল, সোহাগ ও মিঠু ডাসা ও রামদা দিয়ে হামলা করে। রমজান মাসের পবিত্রতা ও বাংলা নতুন বছরের উৎসবকে ম্লান করে দিয়ে উভয় গ্রুপ ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় কোটচাঁদপুরের চৌগাছা বাসস্ট্যান্ড রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পাল্টাপাল্টি হামলায় উভয় গ্রুপের ৬ জন হতাহত হন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, জাতীয় পরিবহন শ্রমিক লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে সলেমানপুর গ্রামের তেঁতুলতলা পাড়ার আশরাফুল, আমিরুল, সোহাগ ও মিঠু এহেন কোনো কাজ নেই তারা করেন না। তাদের সমাজবিরোধী কর্মকা-ে কোটচাঁদপুরের মানুষ অতিষ্ঠ। এই গ্রুপটি মাদকসেবী ও মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত। কোটচাঁদপুর থানায় আশরাফুল ও আমিরুলের (সম্পর্কে চাচা ভাতিজা) নামে হত্যা ও ডাকাতি মামলা রয়েছে। আর এসবই চলে মূলত কোটচাঁদপুর আওয়ামী লীগের শাহজাহান গ্রুপের ছত্রছায়ায় জাতীয় পরিবহন শ্রমিক লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, আশরাফুল ও আমিরুল গ্রুপটি স্থানীয় পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিমের ছোট ভাই শাহিনের গ্রুপ করতো। কিন্তু গত বছর আম বাজারের ইজারা ও আম বাগান দখল নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে আশরাফুলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনার পর থেকে ওই গ্রুপটি মেয়রের পক্ষ ত্যাগ করে স্থানীয় এমপির নেতৃত্বাধীন কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহানের সেল্টারে অপকর্ম করতে থাকে।  কোটচাঁদপুরের চৌগাছা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জাতীয় পরিবহন শ্রমিক লীগের অফিসে শাহাজানের ছবিও টাঙানো রয়েছে। পুলিশ ওই অফিস থেকে দা, ছুরি ও রামদা উদ্ধার করেছে।

এদিকে কোটচাঁদপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইসরাত জাহান জেরিন জানান, সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হন জীবন। তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। তিনি আরও জানান, আহতদের মধ্যে আক্তার, সোহাগ ও সাব্বিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। যশোর হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা যান আক্তার হোসেন।

বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর সার্কেকেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমেনুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকার সমর্থক দুই গ্রুপের মধ্যে বাজারের টোল আদায় নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এতে দুইজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ডনসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে।

কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মঈন উদ্দিন জানান, এ ব্যাপারে এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি। ময়নাতদন্ত শেষে আক্তারের লাশ এলাঙ্গী গ্রামে দাফন করা হলেও জীবনের লাশ গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত দাফন হয়নি। তিনি বলেন, পুলিশ প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে। এদিকে র‌্যাব ও সরকারের বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত ও আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

সংঘর্ষের বিষয়ে পৌর মেয়র সহিদুজজামান সেলিম জানান, যারা নিহত হয়েছেন, তাঁদেরকে তিনি চিনেন না। তবে তারা ছাত্রলীগ বা যুবলীগের কর্মী হতে পারেন। তিনি বলেন, হামলাকারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক শাহাজানের লোক। কারণ শাহজাহান শ্রমিক লীগের ওই অফিসে বসেন এবং ওই সন্ত্রাসীদের নিয়ে বৈঠক করেন। তাদের ঘরে শাহজাহানের ছবিও টাঙানো আছে বলে মেয়র দাবি করেন।

এবিষয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক শাহাজান জানান, তিনি কাউকে চিনেন না। হামলাকারীরা তার দলের কেউ না। মেয়র তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন, তা মিথ্যা ও অসত্য।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে প্রকাশ্যে যুবলীগের দুই কর্র্মীকে কুপিয়ে হত্যা!

আপলোড টাইম : ০৮:৪৯:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর শহরের চৌগাছা বাসস্ট্যান্ডে বসা নতুন হাটের টোল আদায়কে কেন্দ্র করে শ্রমিক লীগ ও যুবলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে প্রকাশ্যে আক্তার হোসেন (২২) ও জীবন মিয়া (২১) নামে দুই যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। তাঁদেরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসময় সোহাগ ও সাব্বির নামে দুই যুবক গুরুতর আহত হন। নিহত জীবন কোটচাঁদপুর শহরের তালমিল পাড়ার ফিরোজ হোসেনের ছেলে। অন্যদিকে আক্তার হোসেন একই উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামের আবু তালেবের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় এমপি শফিকুল ইসলাম চঞ্চল সমর্থিত আওয়ামী লীগ নেতা শাহাজাহান ও  কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মেয়র গ্রুপের দুই কর্মী নিহত হন।

পুলিশ ও প্রত্যাক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা বাসস্ট্যান্ডের ওই কাঁচা বাজারের খাজনা ও যানবাহনের পৌর টোল মেয়র গ্রুপের ইমন হোসেন ডন ও তার লোকজন আদায় করে আসছিল। বাজারের টোল আদায়সহ নানা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে মতবিরোধ হওয়ায় কথিত জাতীয় পরিবহন শ্রমিক লীগের আশরাফুল, আমিরুল, সোহাগ ও মিঠু মেয়র গ্রুপ ত্যাগ করে এমপি চঞ্চলের স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখে। নতুন বছরেও হাটের ইজারা পান ইমন হোসেন ডন। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র গ্রুপের ইমন হোসেন ডন ও হাসানের সমর্থকরা সেখানে টোল আদায় করতে যায়। বাজারে জাতীয় পরিবহন শ্রমিক লীগের অফিসেই ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে অপেক্ষা করছিল প্রতিপক্ষ গ্রুপ। ডন ও হাসানের সমর্থকরা বাজারে ঢুকে টোল আদায় করার সময় কথিত শাহাজান গ্রুপের পরিচয় দিয়ে জাতীয় পরিবহন শ্রমিক লীগের আশরাফুল, আমিরুল, সোহাগ ও মিঠু ডাসা ও রামদা দিয়ে হামলা করে। রমজান মাসের পবিত্রতা ও বাংলা নতুন বছরের উৎসবকে ম্লান করে দিয়ে উভয় গ্রুপ ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় কোটচাঁদপুরের চৌগাছা বাসস্ট্যান্ড রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পাল্টাপাল্টি হামলায় উভয় গ্রুপের ৬ জন হতাহত হন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, জাতীয় পরিবহন শ্রমিক লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে সলেমানপুর গ্রামের তেঁতুলতলা পাড়ার আশরাফুল, আমিরুল, সোহাগ ও মিঠু এহেন কোনো কাজ নেই তারা করেন না। তাদের সমাজবিরোধী কর্মকা-ে কোটচাঁদপুরের মানুষ অতিষ্ঠ। এই গ্রুপটি মাদকসেবী ও মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত। কোটচাঁদপুর থানায় আশরাফুল ও আমিরুলের (সম্পর্কে চাচা ভাতিজা) নামে হত্যা ও ডাকাতি মামলা রয়েছে। আর এসবই চলে মূলত কোটচাঁদপুর আওয়ামী লীগের শাহজাহান গ্রুপের ছত্রছায়ায় জাতীয় পরিবহন শ্রমিক লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, আশরাফুল ও আমিরুল গ্রুপটি স্থানীয় পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিমের ছোট ভাই শাহিনের গ্রুপ করতো। কিন্তু গত বছর আম বাজারের ইজারা ও আম বাগান দখল নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে আশরাফুলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনার পর থেকে ওই গ্রুপটি মেয়রের পক্ষ ত্যাগ করে স্থানীয় এমপির নেতৃত্বাধীন কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহানের সেল্টারে অপকর্ম করতে থাকে।  কোটচাঁদপুরের চৌগাছা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জাতীয় পরিবহন শ্রমিক লীগের অফিসে শাহাজানের ছবিও টাঙানো রয়েছে। পুলিশ ওই অফিস থেকে দা, ছুরি ও রামদা উদ্ধার করেছে।

এদিকে কোটচাঁদপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইসরাত জাহান জেরিন জানান, সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হন জীবন। তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। তিনি আরও জানান, আহতদের মধ্যে আক্তার, সোহাগ ও সাব্বিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। যশোর হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা যান আক্তার হোসেন।

বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর সার্কেকেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমেনুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকার সমর্থক দুই গ্রুপের মধ্যে বাজারের টোল আদায় নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এতে দুইজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ডনসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে।

কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মঈন উদ্দিন জানান, এ ব্যাপারে এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি। ময়নাতদন্ত শেষে আক্তারের লাশ এলাঙ্গী গ্রামে দাফন করা হলেও জীবনের লাশ গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত দাফন হয়নি। তিনি বলেন, পুলিশ প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে। এদিকে র‌্যাব ও সরকারের বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত ও আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

সংঘর্ষের বিষয়ে পৌর মেয়র সহিদুজজামান সেলিম জানান, যারা নিহত হয়েছেন, তাঁদেরকে তিনি চিনেন না। তবে তারা ছাত্রলীগ বা যুবলীগের কর্মী হতে পারেন। তিনি বলেন, হামলাকারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক শাহাজানের লোক। কারণ শাহজাহান শ্রমিক লীগের ওই অফিসে বসেন এবং ওই সন্ত্রাসীদের নিয়ে বৈঠক করেন। তাদের ঘরে শাহজাহানের ছবিও টাঙানো আছে বলে মেয়র দাবি করেন।

এবিষয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক শাহাজান জানান, তিনি কাউকে চিনেন না। হামলাকারীরা তার দলের কেউ না। মেয়র তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন, তা মিথ্যা ও অসত্য।