ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে অবৈধভাবে মাটির ব্যবসার ফলে ধ্বংস হচ্ছে সরকারি রাস্তা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:১৯:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ এপ্রিল ২০২২
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদক, ডাকবাংলা:

কিছু অসাধু লোকজন অবৈধভাবে মাটির ব্যবসা ও বালু উত্তোলনের ফলে ঝিনাইদহ জেলার সার্বিক অবস্থার উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে। ঝিনাইদহ জেলার কয়েকটি উপজেলায় দেখা যায়, কৃষিজমি নষ্ট করে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে রমরমা মাটির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন কৃষি জমি ধ্বংস হচ্ছে অন্যদিকে রাস্তা দিয়ে ভারি মাটি বোঝাই ট্রাক্টর চলাচলের কারণে সরকারি পাকা ও কাঁচা রাস্তা গুলো ভেঙে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় সাধারণ জনগণ।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালিচরনপুর, সাগান্না, পোড়াহাটি, মধুহাটি, সাধুহাটি, পাগলাকানা এবং হরিনাকুÐু উপজেলার চাঁদপুর, কাপাশাটিয়া ইউনিয়নের অনেক জায়গায় আবাদী জমি নষ্ট করে মাটি টানার ফলে কোথাও কোথাও দুই থেকে পাঁচ কিলোমিটার সরকারি রাস্তা ধুলোয় মিশে গিয়েছে। ভুক্তভোগী এলাকাবাসীদের মতে কয়েক লাখ টাকার ব্যবসা করতে সরকারি কোটি টাকার রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘ পাঁচ বছার সাধনা করে এই রাস্তা পেয়েছি তারা এই ক্ষতি পূরণ করবে কিভাবে।

কখনও কখনও গভীর রাত পর্যন্ত চলছে মাটি কাটার কাজ। যার ফলে ভেকু এবং ট্রাক্টরের শব্দে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার যেমন ব্যাঘাত ঘটছে তেমনি নির্ঘুম রাত কাটছে ওই এলাকার জনগণের। দিনের বেলায় স্কুল, কলেজ চলাকালীন সময়েও রাস্তা দিয়ে প্রচন্ড গতিতে চলছে মাটি বোঝাই ট্রাক্টার। প্রচন্ড শব্দ এবং ধুলাবালির কারণে ট্রাক্টরের পাশ দিয়ে চলা স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের ও পথচারীদেও নাকমুখ ধুলাবালিতে বন্ধ হবার উপক্রম হয় প্রায়ই। তাছাড়া শব্দ দূষন ও বায়ুদূষনের ফলে কোমলমতি শিশুদের, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগ বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন।

সংকীর্ণ গ্রামীন রাস্তা দিয়ে বড় বড় ট্রাক্টর যাতায়াতের ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, ইতিমধ্যে ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ে অনেকের মৃত্যু ও ঘটেছে। অসাধু এসব মাটি ব্যবসার সাথে বড় বড় সিন্ডিকেট জড়িত আছে বলে সচেতন নাগরিকদের ধারনা। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের  সাথে কথা বলে জানা যায় এর সাথে স্হানীয় জনপ্রতিনিধিরা জড়িত। তাদের ভাষায় ভোট দিয়ে প্রতিনিধি তৈরি করলাম এলাকার রাস্তাঘাট ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য আর তারাই অবৈধ মাটিকাটা ব্যবসা করে সরকারি রাস্তা ধ্বংস  করছে, আমরা তাদের ভয়ে কিছু বলতে পারিনা। কখনও কখনও একই এলাকায় দুইটা তিনটা সিন্ডিকেট থাকায় অবৈধ মাটির ব্যবসা ও বালু উত্তলন নিয়ে   আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চলছে চরম উত্তেজনা কে ব্যবসা করবে কে করবেনা।

ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ধুলাবালি বাতাসে মিশে শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরিরে ঢুকে বাচ্চাদের নিউমোনিয়া এমনকি বড়দেরও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। বর্তমান সময়ে এ ধরণের রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।’

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস এম শাহীন বলেন, ‘যারা এসকল অবৈধ মাটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং সরকারে বিনা অনুমতিতে কৃষি জমি ধ্বংস করে পুকুর কাটছে তাদের তদারকি করার জন্য স্ব স্ব ইউনিয়নের তহশিলদারদের দায়িত্ব দেওয়া  হয়েছে। তারা কোন সমস্যা মনে করলে আমাকে জানালে সেখানে আমি সরাসরি গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও অনেক জায়গায় নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি এবং আগামী দিনগুলোতে আরও কঠোরভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহে অবৈধভাবে মাটির ব্যবসার ফলে ধ্বংস হচ্ছে সরকারি রাস্তা

আপলোড টাইম : ০৮:১৯:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ এপ্রিল ২০২২

প্রতিবেদক, ডাকবাংলা:

কিছু অসাধু লোকজন অবৈধভাবে মাটির ব্যবসা ও বালু উত্তোলনের ফলে ঝিনাইদহ জেলার সার্বিক অবস্থার উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে। ঝিনাইদহ জেলার কয়েকটি উপজেলায় দেখা যায়, কৃষিজমি নষ্ট করে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে রমরমা মাটির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন কৃষি জমি ধ্বংস হচ্ছে অন্যদিকে রাস্তা দিয়ে ভারি মাটি বোঝাই ট্রাক্টর চলাচলের কারণে সরকারি পাকা ও কাঁচা রাস্তা গুলো ভেঙে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় সাধারণ জনগণ।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালিচরনপুর, সাগান্না, পোড়াহাটি, মধুহাটি, সাধুহাটি, পাগলাকানা এবং হরিনাকুÐু উপজেলার চাঁদপুর, কাপাশাটিয়া ইউনিয়নের অনেক জায়গায় আবাদী জমি নষ্ট করে মাটি টানার ফলে কোথাও কোথাও দুই থেকে পাঁচ কিলোমিটার সরকারি রাস্তা ধুলোয় মিশে গিয়েছে। ভুক্তভোগী এলাকাবাসীদের মতে কয়েক লাখ টাকার ব্যবসা করতে সরকারি কোটি টাকার রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘ পাঁচ বছার সাধনা করে এই রাস্তা পেয়েছি তারা এই ক্ষতি পূরণ করবে কিভাবে।

কখনও কখনও গভীর রাত পর্যন্ত চলছে মাটি কাটার কাজ। যার ফলে ভেকু এবং ট্রাক্টরের শব্দে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার যেমন ব্যাঘাত ঘটছে তেমনি নির্ঘুম রাত কাটছে ওই এলাকার জনগণের। দিনের বেলায় স্কুল, কলেজ চলাকালীন সময়েও রাস্তা দিয়ে প্রচন্ড গতিতে চলছে মাটি বোঝাই ট্রাক্টার। প্রচন্ড শব্দ এবং ধুলাবালির কারণে ট্রাক্টরের পাশ দিয়ে চলা স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের ও পথচারীদেও নাকমুখ ধুলাবালিতে বন্ধ হবার উপক্রম হয় প্রায়ই। তাছাড়া শব্দ দূষন ও বায়ুদূষনের ফলে কোমলমতি শিশুদের, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগ বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন।

সংকীর্ণ গ্রামীন রাস্তা দিয়ে বড় বড় ট্রাক্টর যাতায়াতের ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, ইতিমধ্যে ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ে অনেকের মৃত্যু ও ঘটেছে। অসাধু এসব মাটি ব্যবসার সাথে বড় বড় সিন্ডিকেট জড়িত আছে বলে সচেতন নাগরিকদের ধারনা। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের  সাথে কথা বলে জানা যায় এর সাথে স্হানীয় জনপ্রতিনিধিরা জড়িত। তাদের ভাষায় ভোট দিয়ে প্রতিনিধি তৈরি করলাম এলাকার রাস্তাঘাট ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য আর তারাই অবৈধ মাটিকাটা ব্যবসা করে সরকারি রাস্তা ধ্বংস  করছে, আমরা তাদের ভয়ে কিছু বলতে পারিনা। কখনও কখনও একই এলাকায় দুইটা তিনটা সিন্ডিকেট থাকায় অবৈধ মাটির ব্যবসা ও বালু উত্তলন নিয়ে   আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চলছে চরম উত্তেজনা কে ব্যবসা করবে কে করবেনা।

ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ধুলাবালি বাতাসে মিশে শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরিরে ঢুকে বাচ্চাদের নিউমোনিয়া এমনকি বড়দেরও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। বর্তমান সময়ে এ ধরণের রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।’

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস এম শাহীন বলেন, ‘যারা এসকল অবৈধ মাটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং সরকারে বিনা অনুমতিতে কৃষি জমি ধ্বংস করে পুকুর কাটছে তাদের তদারকি করার জন্য স্ব স্ব ইউনিয়নের তহশিলদারদের দায়িত্ব দেওয়া  হয়েছে। তারা কোন সমস্যা মনে করলে আমাকে জানালে সেখানে আমি সরাসরি গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও অনেক জায়গায় নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি এবং আগামী দিনগুলোতে আরও কঠোরভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।’