ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘আল-কারিম ফাউন্ডেশন’ কোটি টাকা নিয়ে উধাও!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ মার্চ ২০২২
  • / ৩৪ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু থেকে গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে আল-কারিম ফাউন্ডেশন নামে একটি ভুঁইফোড় এনজিও। বছরে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে ৯৯ জন গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা হাতিয়েছে তারা। এ ক্ষেত্রে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানটি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের প্ররোচিত করে টাকা সংগ্রহ করে। প্রতিকার পেতে প্রতারিত গ্রাহকরা কথিত ওই প্রতিষ্ঠানের ফিল্ড অফিসারের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো ফল পাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক, সমবায় অধিদপ্তর বা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ২০০৯ সাল থেকে উপজেলার রামনগর, ভবানিপুর এলাকায় ডিপিএস ও এফডিয়ারের নামে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু করে আল-কারিম ফাউন্ডেশন। গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে প্রথমে কুষ্টিয়া, যশোরসহ কয়েকটি শাখা অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। পরে শুরু হয় টাকা আদায়ের কাজ। এক, দুই বা তিন বছর মেয়াদী এফডিআর এবং মাসিক কিস্তিতে নেওয়া হতো ডিপিএসের নামে টাকা। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের দেখানো হতো বছরে এককালীন জমার দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার লোভনীয় অফার।

রামনগর গ্রামের আমিরুল ইসলাম নামে এক রিকশা চালক জানান, তিনি ২০১৯ সালে এককালীন তিন লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। তিন বছর পর দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। এছাড়া এই তিন বছরে তিনি আরও একটি ডিপিএসের মাধ্যমে এক লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। তাঁর জমার টাকা না দিয়ে ভুইঁফোড় প্রতিষ্ঠানটি পালিয়ে গেছে। সোহেল রানা নামে একই গ্রামের এক ফার্মেসি মালিক জানান, তিনি ২০১৮ সালে তিন বছর মেয়াদী দুটি ডিপিএস খোলেন। একটিতে প্রতিমাসে দুই হাজার এবং অন্যটিতে তিন শ করে টাকা জমা দিতেন। তিনি প্রায় এক লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও টাকা ফেরত দিচ্ছে না। পরিচালকদের নামে মামলা করেছি বলে মাঠকর্মীরা আমাদের ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এমন প্রতারণার শিকার ওই এলাকার আলমসাধু চালক টুটুল, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাইজাল হোসেন, সজিব, পান ব্যবসায়ী আবুল কাসেম, রাজু আহম্মেদ, মোটর ম্যাকানিক আক্কাস আলী, স্বামী পরিত্যক্ত রোজিনা খাতুন, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী পান্নু আহাম্মেদসহ ৯৯ জন অসহায় মানুষ এখন টাকা পাচ্ছেন না। তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৬০ হাজার থেকে শুরু করে ৪ লাখ পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমদাদুল হক রিপন নামে স্থানীয় এক মসজিদের সভাপতির কাছে এই টাকা জমা দিয়েছিলেন ভুক্তভোগীরা।

জানতে চাইলে এমদাদুল হক রিপন বলেন, ‘কোম্পানি আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। মাঠকর্মীরা পরিচালকদের নামে মামলা করেছে। সারা দেশে কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার।’

হরিণাকুণ্ডু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি প্রতারণার মামলা হয়েছিল। বর্তমানে ঝিনাইদহ পিবিআই মামলাটির তদন্ত করছে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘চক্রটি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের এজেন্ট নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমে টাকা নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, দ্রুত এই প্রতারক চক্র আইনের আওতায় আসবে।’ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিউলী রানী জানান, এই নামে তাদের দপ্তর থেকে ঢাকা বা জেলা থেকে কোনো নিবন্ধন নেই। প্রতিষ্ঠানটি ভুইঁফোড় বলে মনে হচ্ছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

‘আল-কারিম ফাউন্ডেশন’ কোটি টাকা নিয়ে উধাও!

আপলোড টাইম : ১০:০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ মার্চ ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু থেকে গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে আল-কারিম ফাউন্ডেশন নামে একটি ভুঁইফোড় এনজিও। বছরে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে ৯৯ জন গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা হাতিয়েছে তারা। এ ক্ষেত্রে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানটি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের প্ররোচিত করে টাকা সংগ্রহ করে। প্রতিকার পেতে প্রতারিত গ্রাহকরা কথিত ওই প্রতিষ্ঠানের ফিল্ড অফিসারের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো ফল পাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক, সমবায় অধিদপ্তর বা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ২০০৯ সাল থেকে উপজেলার রামনগর, ভবানিপুর এলাকায় ডিপিএস ও এফডিয়ারের নামে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু করে আল-কারিম ফাউন্ডেশন। গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে প্রথমে কুষ্টিয়া, যশোরসহ কয়েকটি শাখা অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। পরে শুরু হয় টাকা আদায়ের কাজ। এক, দুই বা তিন বছর মেয়াদী এফডিআর এবং মাসিক কিস্তিতে নেওয়া হতো ডিপিএসের নামে টাকা। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের দেখানো হতো বছরে এককালীন জমার দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার লোভনীয় অফার।

রামনগর গ্রামের আমিরুল ইসলাম নামে এক রিকশা চালক জানান, তিনি ২০১৯ সালে এককালীন তিন লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। তিন বছর পর দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। এছাড়া এই তিন বছরে তিনি আরও একটি ডিপিএসের মাধ্যমে এক লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। তাঁর জমার টাকা না দিয়ে ভুইঁফোড় প্রতিষ্ঠানটি পালিয়ে গেছে। সোহেল রানা নামে একই গ্রামের এক ফার্মেসি মালিক জানান, তিনি ২০১৮ সালে তিন বছর মেয়াদী দুটি ডিপিএস খোলেন। একটিতে প্রতিমাসে দুই হাজার এবং অন্যটিতে তিন শ করে টাকা জমা দিতেন। তিনি প্রায় এক লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও টাকা ফেরত দিচ্ছে না। পরিচালকদের নামে মামলা করেছি বলে মাঠকর্মীরা আমাদের ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এমন প্রতারণার শিকার ওই এলাকার আলমসাধু চালক টুটুল, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাইজাল হোসেন, সজিব, পান ব্যবসায়ী আবুল কাসেম, রাজু আহম্মেদ, মোটর ম্যাকানিক আক্কাস আলী, স্বামী পরিত্যক্ত রোজিনা খাতুন, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী পান্নু আহাম্মেদসহ ৯৯ জন অসহায় মানুষ এখন টাকা পাচ্ছেন না। তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৬০ হাজার থেকে শুরু করে ৪ লাখ পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমদাদুল হক রিপন নামে স্থানীয় এক মসজিদের সভাপতির কাছে এই টাকা জমা দিয়েছিলেন ভুক্তভোগীরা।

জানতে চাইলে এমদাদুল হক রিপন বলেন, ‘কোম্পানি আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। মাঠকর্মীরা পরিচালকদের নামে মামলা করেছে। সারা দেশে কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার।’

হরিণাকুণ্ডু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি প্রতারণার মামলা হয়েছিল। বর্তমানে ঝিনাইদহ পিবিআই মামলাটির তদন্ত করছে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘চক্রটি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের এজেন্ট নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমে টাকা নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, দ্রুত এই প্রতারক চক্র আইনের আওতায় আসবে।’ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিউলী রানী জানান, এই নামে তাদের দপ্তর থেকে ঢাকা বা জেলা থেকে কোনো নিবন্ধন নেই। প্রতিষ্ঠানটি ভুইঁফোড় বলে মনে হচ্ছে।