ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হত্যা মামলার আসামি পুলিশের হ্যান্ডমাইকে দিলেন বক্তব্য!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪০:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০২২
  • / ৩২ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

হত্যা মামলার আসামির এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিজ্ঞ আদালত। এরপর কারাগার থেকে থানা পুলিশ রিমান্ডের আসামিকে প্রাইভেটে নিয়ে আসেন  শৈলকুপা থানায়। থানায় পৌঁছানোর পর পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে সমর্থকদের উদ্দেশে দিলেন বক্তব্য। এসময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমি আইনের আওতায় আছি। এই খুনের সঙ্গে আমি জড়িত নয়।’ এই দৃশ্য আবার স্যোশাল মিডিয়াতে লাইভ সম্প্রচার করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার। আর এমন সৌভাগ্যবান আসামি হলেন- শৈলকুপা উপজেলার ১০ নম্বর বগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের  চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শিমুল। তিনি বড়বাড়ি বগুরা গ্রামের কুবাদ আলীর ছেলে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলে গত ৮ জানুয়ারি খুন হয় কল্লোল খন্দকার। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার বাদী হয়ে গত ১২ জানুয়ারি ৮২ জনকে আসামি করে শৈলকুপা থানায় একটি হত্যা মামলা (মামলা নম্বর ৩) দায়ের করেন। এই মামলায় মামলায় নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শিমুলকে হুকুমের আসামি করা হয়। গত ২ মার্চ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ ৫ জন আত্মসমর্পন করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তৌফিক আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড চাইলে বিজ্ঞ আদালত তাঁদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। হুকুমের আসামি যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ ৫ জন গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রিমান্ডে নেয়।

স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পরপরই রিমান্ডের আসামিদের পুলিশের গাড়ির পরিবর্তে প্রাইভেট কারে শৈলকুপা থানায় আনা হয়। সংবর্ধনার স্টাইলে আসামিদের কর্মী-সমর্থকরা আগ থেকেই থানার মধ্যে ও বাইরে ভিড় জমায়। থানার মধ্যে ঢুকে তাঁরা স্লোগানও দেয়। এসময় শৈলকুপা থানার ওসি (তদন্ত) মহসীন হোসেনসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা টহল দিলেও কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করেননি বলে অভিযোগ। এক পর্যায়ে ওসি (তদন্ত) মহসীন হোসেনের হাতে থাকা হ্যান্ডমাইক তুলে দেন রিমান্ডে থাকা আসামি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলের হাতে। তিনি পুলিশ বক্সে দাঁড়িয়ে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।

এদিকে রিমান্ডের আসামিদের নিয়ে পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হত্যা মামলার বাদী নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার। তিনি বলেন, এমন ঘটনা নজিরবিহীন। এ ঘটনায় আমরা ন্যায়বিচার পাব বলে মনে করছি না। বিষয়টি নিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তৌফিক জানান, আসামিদের কারো ব্যক্তিগত গাড়িতে আনা হয়নি, গাড়িগুলো ভাড়া করা। পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে বক্তব্য দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ওসি তদন্ত এবং থানা পুলিশ বলতে পারে।

শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, ‘রিমান্ডের আসামি এভাবে বক্তব্য দিতে পারে না। আমি থানায় ছিলাম না। ঢাকা থেকে সকালে এসেছি। তবে যতটুকু শুনেছি তিনি তার এলাকার লোকদের শান্তÍ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি থানায় এসেছেন পুলিশের গাড়িতে।’

ঝিনাইদহ জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. ইসমাইল হোসেন বলেন, রিমান্ডের কোনো আসামির স্বজনদের সাথে দেখা করতে পারলেও অন্য কারো সঙ্গে দেখা করার বিধান নেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

হত্যা মামলার আসামি পুলিশের হ্যান্ডমাইকে দিলেন বক্তব্য!

আপলোড টাইম : ০৮:৪০:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস:

হত্যা মামলার আসামির এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিজ্ঞ আদালত। এরপর কারাগার থেকে থানা পুলিশ রিমান্ডের আসামিকে প্রাইভেটে নিয়ে আসেন  শৈলকুপা থানায়। থানায় পৌঁছানোর পর পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে সমর্থকদের উদ্দেশে দিলেন বক্তব্য। এসময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমি আইনের আওতায় আছি। এই খুনের সঙ্গে আমি জড়িত নয়।’ এই দৃশ্য আবার স্যোশাল মিডিয়াতে লাইভ সম্প্রচার করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার। আর এমন সৌভাগ্যবান আসামি হলেন- শৈলকুপা উপজেলার ১০ নম্বর বগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের  চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শিমুল। তিনি বড়বাড়ি বগুরা গ্রামের কুবাদ আলীর ছেলে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলে গত ৮ জানুয়ারি খুন হয় কল্লোল খন্দকার। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার বাদী হয়ে গত ১২ জানুয়ারি ৮২ জনকে আসামি করে শৈলকুপা থানায় একটি হত্যা মামলা (মামলা নম্বর ৩) দায়ের করেন। এই মামলায় মামলায় নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শিমুলকে হুকুমের আসামি করা হয়। গত ২ মার্চ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ ৫ জন আত্মসমর্পন করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তৌফিক আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড চাইলে বিজ্ঞ আদালত তাঁদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। হুকুমের আসামি যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ ৫ জন গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রিমান্ডে নেয়।

স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পরপরই রিমান্ডের আসামিদের পুলিশের গাড়ির পরিবর্তে প্রাইভেট কারে শৈলকুপা থানায় আনা হয়। সংবর্ধনার স্টাইলে আসামিদের কর্মী-সমর্থকরা আগ থেকেই থানার মধ্যে ও বাইরে ভিড় জমায়। থানার মধ্যে ঢুকে তাঁরা স্লোগানও দেয়। এসময় শৈলকুপা থানার ওসি (তদন্ত) মহসীন হোসেনসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা টহল দিলেও কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করেননি বলে অভিযোগ। এক পর্যায়ে ওসি (তদন্ত) মহসীন হোসেনের হাতে থাকা হ্যান্ডমাইক তুলে দেন রিমান্ডে থাকা আসামি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলের হাতে। তিনি পুলিশ বক্সে দাঁড়িয়ে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।

এদিকে রিমান্ডের আসামিদের নিয়ে পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হত্যা মামলার বাদী নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার। তিনি বলেন, এমন ঘটনা নজিরবিহীন। এ ঘটনায় আমরা ন্যায়বিচার পাব বলে মনে করছি না। বিষয়টি নিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তৌফিক জানান, আসামিদের কারো ব্যক্তিগত গাড়িতে আনা হয়নি, গাড়িগুলো ভাড়া করা। পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে বক্তব্য দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ওসি তদন্ত এবং থানা পুলিশ বলতে পারে।

শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, ‘রিমান্ডের আসামি এভাবে বক্তব্য দিতে পারে না। আমি থানায় ছিলাম না। ঢাকা থেকে সকালে এসেছি। তবে যতটুকু শুনেছি তিনি তার এলাকার লোকদের শান্তÍ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি থানায় এসেছেন পুলিশের গাড়িতে।’

ঝিনাইদহ জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. ইসমাইল হোসেন বলেন, রিমান্ডের কোনো আসামির স্বজনদের সাথে দেখা করতে পারলেও অন্য কারো সঙ্গে দেখা করার বিধান নেই।