ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে হঠাৎ ঝড়-শিলাবৃষ্টি, ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৩:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ৫১ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে হঠাৎ ঝড় ও শিলাবৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে মাঠের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গম, মসুর, ভুট্টা, পান ও আমের মুকুলের। গতকাল রোববার বেলা ৩টা ৭ মিনিট থেকে শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টি। এর তাণ্ডব চলে প্রায় ১৮ মিনিট।

চুয়াডাঙ্গা:

চুয়াডাঙ্গায় ব্যাপক ঝড়, ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। বেলা ৩টা ৭ মিনিট থেকে শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টি। পরে বৃষ্টির সাথে ঝরতে থাকে শিলা। শিলাবৃষ্টির তাণ্ডব চলে ৩টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত। ১৮ মিনিট ধরে চলে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। বড় বড় শিলার দলায় ঢেকে আবৃত হয়ে যায় মাটি। তবে শিলাবৃষ্টি থামলেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত অব্যহত ছিল এ জেলায়। সাথে ছিল দমকা হাওয়া। গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ায় রাস্তায় স্বাভাবিক চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটে। চুয়াডাঙ্গায় এমন শিলাবৃষ্টি এর আগে দেখননি বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক সামাদুল হক জানান, ১৮ মিনিট ধরে চলে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। গুঁড়ি গুঁড়ি থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়। সাথে দমকা হাওয়ার গতিবেগ ছিল প্রতিঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার।

এদিকে, হঠাৎ এমন শিলা ও ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের খেত। এতে প্রচুর লোকসানের আশঙ্কা কৃষকদের। এর আগেও গত বৃহস্পতিবার রাতে এক ঘণ্টার ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভুট্টা, ধান, পানসহ বিভিন্ন উঠতি ফসল।

চুয়াডাঙ্গা সদরের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ জিনজিরা খাতুন বলেন, ‘আমার জীবনে এতো ভয়ঙ্কর ও বুক কাঁপানো শিলাবৃষ্টি দেখিনি। আমার বাড়ির উঠানে যে শিল কুড়িয়ে পেয়েছি, সেগুলো অনেক বড় বড়।’

জেলা সদরের একই গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, গ্রীস্মকালীন তরমুজ লাভজনক আর এখন রোপণের সময়। ফসলটিতে শুরু থেকেই অনেক বেশি ব্যয় হয়। কিন্তু এবারে সব শেষ। কয়েকদিন হলো চারা রোপণ করেছিলাম। দুর্ভাগ্য, শিলাবৃষ্টিতে সব শেষ। এক বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে লোকসান, পুরোটাই ক্ষতি।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবায়ের মাসরুর বলেন, ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জমির প্রায় ৪০ শতাংশ ভুট্টার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া সদর উপজেলার কৃষকদের প্রায় ১ শ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনি।

মেহেরপুর:

মেহেরপুরে শিলাবৃষ্টিতে উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে বৃষ্টির সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে গম, মসুরি ও তামাক খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসূমে জেলায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বারি গম-৩৩, বারি গম ৩২ ও বারি গম ২৬ জাতের গমের আবাদ হয়েছে। ভুট্টার আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৮৩০ হেক্টর ও মসুরি আবাদ হয়েছে সাত হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে। চাষিদের আবাদি জমির গম এখন দানা বাঁধার সময়।

মেহেরপুর সদর উপজেলা আমঝুপি ইউনিয়নের কৃষক জাহেদুর রহমান জানান, দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছিলেন। শিলাবৃষ্টিতে গাছের পাতা ছিঁড়ে গেছে। হোসাইন সাগর নামের আরেক কৃষক জানান, এক বিঘা জমিতে গম ও ১০ কাঠা জমিতে মসুরি আবাদ করি। শিলাবৃষ্টিতে গম গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। মসুরি খেতের ফুল ঝরে গেছে। স্থানীয় কৃষকরা আরও জানান, শিলাবৃষ্টির ফলে রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ভুট্টা, গম, কলা, আমের মুকুল, লিচু, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, শিলাবৃষ্টিতে গম, ভুট্টা ও মসুরি গাছের ক্ষতি হয়েছে। হঠাৎ শিলাবৃষ্টি হলেও বর্তমানে আবহাওয়া ভালো। মাঠ পর্যায়ে লোক পাঠানো হয়েছে। ক্ষতি কমাতে চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বারাদী:

মেহেরপুর সদরের বারাদীসহ আশপাশের অঞ্চলে কয়েক মিনিটের ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে মাঠে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বারাদী অঞ্চলের রাজনগর, জুগিন্দা, কলাইডাঙ্গা, মোমিনপুর, পাটকেলপোতা, দরবেশপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,  কচু, আলু, গম, ভুট্টাসহ দণ্ডায়মান ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা পৌনে তিনটার দিকে আচমকা ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। ১৫-২০ মিনিটের স্থায়িত্বকালের এই শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

মেহেরপুর বীজ উৎপাদন খামারের (বিএডিসি) উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলাম জানান, চলতি অর্থবছরে অত্র খামারে ভুট্টা ৩.৭৫, গম ৬০ ও ২৬  একর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। যা বর্তমানে মাঠে দণ্ডায়মান। ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে খামারে আবাদকৃত ৩.৭৫ একর ভুট্টা ও গমের গাছ মাটিতে শুয়ে গেছে এবং ২৬ একর আলু হাম্পলিং পরবর্তী অবস্থায় থাকায় শিলাবৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে পচন লাগা শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।

কলাইডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মানিক জানান, ‘আমার দুই বিঘা জমির ভুট্টা গাছ ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে মাটিতে শুয়ে গেছে। যা থেকে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে না।’ মোমিনপুর গ্রামের কৃষক ইমাদুল জানান, তাঁর এক বিঘা জমির শশা গাছ শিলাবৃষ্টিতে পাতা ছিঁড়ে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।

ঝিনাইদহ:

একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝিনাইদহের কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাজ উঠেছে। দিনমজুর, সার, ডিজেল ও বিদ্যুতের দামসহ সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধির কারণে চাষ ছেড়ে দিচ্ছেন অনেক কৃষকরা। তাঁর ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। বছরজুড়েই চলছে দুর্যোগ। ঠিকমতো কোনো ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না।

এদিকে, গতকাল রোববার সন্ধ্যার দিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। প্রতিবছর জেলায় এসময় কলা, ছোলা মসুরি, পান, পেঁয়াজ, রসুন, ধান, শসাসহ নানা ফসলের আবাদ হয়। গত শুক্রবার অসময়ের ঝড়ে ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতির রেশ কাটতে না কাটতে গতকাল রোববার আবারো শিলাবৃষ্টির খড়গ নেমে আসে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। তাঁরা বলছেন, শীতের শেষ মৌসুমে এমন শিলাবৃষ্টি কখনো দেখেননি।

গতকাল রোববার সদর উপজেলার ডাকবাংলা, বংকিরা, বাজার গোপালপুর, পোতাহাটি, সাধুহাটিসহ জেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় শিলা খণ্ডের আঘাতে খেতের কলা, ধান, পান, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, গম, ভুট্টা, আম, লিচু গাছের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বংকিরা গ্রামের কৃষক এহছানুল বিশ্বাস ও আমিনুল ইসলাম জানান, গত শুক্রবার অসময়ের ঝড়ে কলাগাছ সব ভেঙে গেছে, তারপর আবার রোববার যে শিলাবৃষ্টি হয়েছে, তা জীবনে কখনো দেখিনি। এবার চাষাবাদে যা ব্যয় হয়েছে সে খরচও এখন উঠবে না মনে হয়। তাঁরা বলেন, ধার, দেনা করে অনেকে ফসল ফলিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজগর আলী বলেন, ক্ষণস্থায়ী শিলাবৃষ্টিতে ফসলের অনেক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে আলু, পেঁয়াজ, কলা ও পান বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমের মুকুলের অনেক ক্ষতি হতে পারে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা আগামীকাল (আজ) সোমবার জানা যাবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে হঠাৎ ঝড়-শিলাবৃষ্টি, ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি

আপলোড টাইম : ১০:৩৩:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন:

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে হঠাৎ ঝড় ও শিলাবৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে মাঠের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গম, মসুর, ভুট্টা, পান ও আমের মুকুলের। গতকাল রোববার বেলা ৩টা ৭ মিনিট থেকে শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টি। এর তাণ্ডব চলে প্রায় ১৮ মিনিট।

চুয়াডাঙ্গা:

চুয়াডাঙ্গায় ব্যাপক ঝড়, ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। বেলা ৩টা ৭ মিনিট থেকে শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টি। পরে বৃষ্টির সাথে ঝরতে থাকে শিলা। শিলাবৃষ্টির তাণ্ডব চলে ৩টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত। ১৮ মিনিট ধরে চলে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। বড় বড় শিলার দলায় ঢেকে আবৃত হয়ে যায় মাটি। তবে শিলাবৃষ্টি থামলেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত অব্যহত ছিল এ জেলায়। সাথে ছিল দমকা হাওয়া। গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ায় রাস্তায় স্বাভাবিক চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটে। চুয়াডাঙ্গায় এমন শিলাবৃষ্টি এর আগে দেখননি বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক সামাদুল হক জানান, ১৮ মিনিট ধরে চলে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। গুঁড়ি গুঁড়ি থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়। সাথে দমকা হাওয়ার গতিবেগ ছিল প্রতিঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার।

এদিকে, হঠাৎ এমন শিলা ও ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের খেত। এতে প্রচুর লোকসানের আশঙ্কা কৃষকদের। এর আগেও গত বৃহস্পতিবার রাতে এক ঘণ্টার ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভুট্টা, ধান, পানসহ বিভিন্ন উঠতি ফসল।

চুয়াডাঙ্গা সদরের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ জিনজিরা খাতুন বলেন, ‘আমার জীবনে এতো ভয়ঙ্কর ও বুক কাঁপানো শিলাবৃষ্টি দেখিনি। আমার বাড়ির উঠানে যে শিল কুড়িয়ে পেয়েছি, সেগুলো অনেক বড় বড়।’

জেলা সদরের একই গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, গ্রীস্মকালীন তরমুজ লাভজনক আর এখন রোপণের সময়। ফসলটিতে শুরু থেকেই অনেক বেশি ব্যয় হয়। কিন্তু এবারে সব শেষ। কয়েকদিন হলো চারা রোপণ করেছিলাম। দুর্ভাগ্য, শিলাবৃষ্টিতে সব শেষ। এক বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে লোকসান, পুরোটাই ক্ষতি।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবায়ের মাসরুর বলেন, ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জমির প্রায় ৪০ শতাংশ ভুট্টার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া সদর উপজেলার কৃষকদের প্রায় ১ শ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনি।

মেহেরপুর:

মেহেরপুরে শিলাবৃষ্টিতে উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে বৃষ্টির সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে গম, মসুরি ও তামাক খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসূমে জেলায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে বারি গম-৩৩, বারি গম ৩২ ও বারি গম ২৬ জাতের গমের আবাদ হয়েছে। ভুট্টার আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৮৩০ হেক্টর ও মসুরি আবাদ হয়েছে সাত হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে। চাষিদের আবাদি জমির গম এখন দানা বাঁধার সময়।

মেহেরপুর সদর উপজেলা আমঝুপি ইউনিয়নের কৃষক জাহেদুর রহমান জানান, দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছিলেন। শিলাবৃষ্টিতে গাছের পাতা ছিঁড়ে গেছে। হোসাইন সাগর নামের আরেক কৃষক জানান, এক বিঘা জমিতে গম ও ১০ কাঠা জমিতে মসুরি আবাদ করি। শিলাবৃষ্টিতে গম গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। মসুরি খেতের ফুল ঝরে গেছে। স্থানীয় কৃষকরা আরও জানান, শিলাবৃষ্টির ফলে রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ভুট্টা, গম, কলা, আমের মুকুল, লিচু, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, শিলাবৃষ্টিতে গম, ভুট্টা ও মসুরি গাছের ক্ষতি হয়েছে। হঠাৎ শিলাবৃষ্টি হলেও বর্তমানে আবহাওয়া ভালো। মাঠ পর্যায়ে লোক পাঠানো হয়েছে। ক্ষতি কমাতে চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বারাদী:

মেহেরপুর সদরের বারাদীসহ আশপাশের অঞ্চলে কয়েক মিনিটের ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে মাঠে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বারাদী অঞ্চলের রাজনগর, জুগিন্দা, কলাইডাঙ্গা, মোমিনপুর, পাটকেলপোতা, দরবেশপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,  কচু, আলু, গম, ভুট্টাসহ দণ্ডায়মান ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা পৌনে তিনটার দিকে আচমকা ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। ১৫-২০ মিনিটের স্থায়িত্বকালের এই শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

মেহেরপুর বীজ উৎপাদন খামারের (বিএডিসি) উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলাম জানান, চলতি অর্থবছরে অত্র খামারে ভুট্টা ৩.৭৫, গম ৬০ ও ২৬  একর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। যা বর্তমানে মাঠে দণ্ডায়মান। ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে খামারে আবাদকৃত ৩.৭৫ একর ভুট্টা ও গমের গাছ মাটিতে শুয়ে গেছে এবং ২৬ একর আলু হাম্পলিং পরবর্তী অবস্থায় থাকায় শিলাবৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে পচন লাগা শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।

কলাইডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মানিক জানান, ‘আমার দুই বিঘা জমির ভুট্টা গাছ ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে মাটিতে শুয়ে গেছে। যা থেকে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে না।’ মোমিনপুর গ্রামের কৃষক ইমাদুল জানান, তাঁর এক বিঘা জমির শশা গাছ শিলাবৃষ্টিতে পাতা ছিঁড়ে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।

ঝিনাইদহ:

একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝিনাইদহের কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাজ উঠেছে। দিনমজুর, সার, ডিজেল ও বিদ্যুতের দামসহ সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধির কারণে চাষ ছেড়ে দিচ্ছেন অনেক কৃষকরা। তাঁর ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। বছরজুড়েই চলছে দুর্যোগ। ঠিকমতো কোনো ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না।

এদিকে, গতকাল রোববার সন্ধ্যার দিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। প্রতিবছর জেলায় এসময় কলা, ছোলা মসুরি, পান, পেঁয়াজ, রসুন, ধান, শসাসহ নানা ফসলের আবাদ হয়। গত শুক্রবার অসময়ের ঝড়ে ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতির রেশ কাটতে না কাটতে গতকাল রোববার আবারো শিলাবৃষ্টির খড়গ নেমে আসে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। তাঁরা বলছেন, শীতের শেষ মৌসুমে এমন শিলাবৃষ্টি কখনো দেখেননি।

গতকাল রোববার সদর উপজেলার ডাকবাংলা, বংকিরা, বাজার গোপালপুর, পোতাহাটি, সাধুহাটিসহ জেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় শিলা খণ্ডের আঘাতে খেতের কলা, ধান, পান, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, গম, ভুট্টা, আম, লিচু গাছের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বংকিরা গ্রামের কৃষক এহছানুল বিশ্বাস ও আমিনুল ইসলাম জানান, গত শুক্রবার অসময়ের ঝড়ে কলাগাছ সব ভেঙে গেছে, তারপর আবার রোববার যে শিলাবৃষ্টি হয়েছে, তা জীবনে কখনো দেখিনি। এবার চাষাবাদে যা ব্যয় হয়েছে সে খরচও এখন উঠবে না মনে হয়। তাঁরা বলেন, ধার, দেনা করে অনেকে ফসল ফলিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজগর আলী বলেন, ক্ষণস্থায়ী শিলাবৃষ্টিতে ফসলের অনেক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে আলু, পেঁয়াজ, কলা ও পান বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমের মুকুলের অনেক ক্ষতি হতে পারে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা আগামীকাল (আজ) সোমবার জানা যাবে।