ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাংনীর হাড়াভাঙ্গাতে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে প্রবাসীর স্ত্রী ও মিস্ত্রিকে রাতভর নির্যাতন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৫:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক:

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা গ্রামে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে প্রবাসীর স্ত্রী এবং স্থানীয় এক হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী ও ইলেক্ট্রিশিয়ান মিস্ত্রিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার দিবাগত রাত ১০টা থেকে রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত তাদের হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। শুধু নির্যাতনই না, এমনকি খেতে দেওয়া হয়নি এবং বাথরুমেও যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী দুজন।

জানা গেছে, গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে সহড়াতলা গ্রামের ইন্তাজ মার্কেট এলাকার ইলেক্ট্রিশিয়ান মিস্ত্রি মিজানুর রহমান তাঁর দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় মার্কেটের পাশে জনৈক প্রবাসীর স্ত্রী তাঁর ঘরের বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করার জন্য ডাক দেন। মিজানুর রহমান বিদ্যুতের লাইনে কাজ শুরু করলে ওই নারীর ভাসুর নাসির উদ্দীন, আছেন উদ্দীনের ছেলে আব্দুল আলিম, ওহিল উদ্দীনের ছেলে ছমির উদ্দীন, আজমত আলী ফকিরের ছেলে শরিফুল ইসলাম হঠাৎ ওই প্রবাসীর বাড়ির ভেতরে অবৈধভাবে প্রবেশ করে তাঁদের মারধর শুরু করেন। তাঁরা ওই বাড়ির প্রধান দরজায় তালা মেরে দিয়ে মিজানুর রহমান ও ওই নারীর হাত পিছ মোড়া দিয়ে বেঁধে গণপিটুনি দেয়।

প্রবাসীর স্ত্রী জানান, ‘আমার বাড়িতে কেউ নেই। বাড়ির বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা ছিল। আমি মিস্ত্রি মিজানুর ভাইকে ডাক দিই। সে আমার বাড়িতে এসে লাইন ঠিক করতেই বাড়ির ভেতরে অবৈধভাবে প্রবেশ করে তারা। প্রথমে আমার ঘরের প্রধান গ্রিলের প্রবেশমুখ তালা মেরে দিয়ে আমাকে ও এবং মিস্ত্রিকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে আমাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে রেখে সেখানে মারপিট করে। আমাকে আব্দুল আলিম, ছমির উদ্দীন, নাসির উদ্দীন ও শরিফুল ইসলাম মারপিট করে।’ রাত থেকে দফায় দফায় মারপিট করে বলেও অভিযোগ করেন ওই নারী। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘শুধু মারপিট করেই ক্ষ্যান্ত হননি। আমাকে রাত থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ঘরে আটকিয়ে রেখে টয়লেট পর্যন্ত করতে দেয়নি।’

একই অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি ওই বাড়িতে প্রবেশ করতেই এসব লোকজন বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে আমাকে ও ওই বাড়ির গৃহবধূকে মারপিট শুরু করে।’

স্থানীয় কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলম হুসাইন বলেছেন, ‘ঘটনার পর অনেকেই আমাকে ফোন দিয়ে ডেকে নেন। আমি ঘটনাটি দেখে চলে আসি। তাদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে শুনেছি ছেলে-মেয়েকে বাঁধা অবস্থা থেকে ছেড়ে দিয়েছেন তারা।’

গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দুজনকে স্থানীয়রা আটকে রেখেছে, এমন সংবাদ পাওয়ার পর স্থানীয় কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করি। তাঁকে মীমাংসা করে দেওয়ার জন্যও বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে শুনেছি তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত লিখিতভাবে আমাকে কেউ জানায়নি। কেউ বাদী হলে আমি বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

এদিকে, হাত-পা বেঁধে প্রবাসীর স্ত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও ঘরে আটকিয়ে রাখা নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ তাদের অনৈতিকভাবে জড়িত থাকার প্রসঙ্গ তুললেও অনেকেই এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এনিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে নানা ধরনের জল্পনা। মিজানুর রহমান হাড়াভাঙ্গা গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে এবং ওই নারী সৌদী প্রবাসীর স্ত্রী।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গাংনীর হাড়াভাঙ্গাতে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে প্রবাসীর স্ত্রী ও মিস্ত্রিকে রাতভর নির্যাতন

আপলোড টাইম : ০৯:৩৫:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদক:

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা গ্রামে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে প্রবাসীর স্ত্রী এবং স্থানীয় এক হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী ও ইলেক্ট্রিশিয়ান মিস্ত্রিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার দিবাগত রাত ১০টা থেকে রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত তাদের হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। শুধু নির্যাতনই না, এমনকি খেতে দেওয়া হয়নি এবং বাথরুমেও যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী দুজন।

জানা গেছে, গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে সহড়াতলা গ্রামের ইন্তাজ মার্কেট এলাকার ইলেক্ট্রিশিয়ান মিস্ত্রি মিজানুর রহমান তাঁর দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় মার্কেটের পাশে জনৈক প্রবাসীর স্ত্রী তাঁর ঘরের বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করার জন্য ডাক দেন। মিজানুর রহমান বিদ্যুতের লাইনে কাজ শুরু করলে ওই নারীর ভাসুর নাসির উদ্দীন, আছেন উদ্দীনের ছেলে আব্দুল আলিম, ওহিল উদ্দীনের ছেলে ছমির উদ্দীন, আজমত আলী ফকিরের ছেলে শরিফুল ইসলাম হঠাৎ ওই প্রবাসীর বাড়ির ভেতরে অবৈধভাবে প্রবেশ করে তাঁদের মারধর শুরু করেন। তাঁরা ওই বাড়ির প্রধান দরজায় তালা মেরে দিয়ে মিজানুর রহমান ও ওই নারীর হাত পিছ মোড়া দিয়ে বেঁধে গণপিটুনি দেয়।

প্রবাসীর স্ত্রী জানান, ‘আমার বাড়িতে কেউ নেই। বাড়ির বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা ছিল। আমি মিস্ত্রি মিজানুর ভাইকে ডাক দিই। সে আমার বাড়িতে এসে লাইন ঠিক করতেই বাড়ির ভেতরে অবৈধভাবে প্রবেশ করে তারা। প্রথমে আমার ঘরের প্রধান গ্রিলের প্রবেশমুখ তালা মেরে দিয়ে আমাকে ও এবং মিস্ত্রিকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে আমাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে রেখে সেখানে মারপিট করে। আমাকে আব্দুল আলিম, ছমির উদ্দীন, নাসির উদ্দীন ও শরিফুল ইসলাম মারপিট করে।’ রাত থেকে দফায় দফায় মারপিট করে বলেও অভিযোগ করেন ওই নারী। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘শুধু মারপিট করেই ক্ষ্যান্ত হননি। আমাকে রাত থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ঘরে আটকিয়ে রেখে টয়লেট পর্যন্ত করতে দেয়নি।’

একই অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি ওই বাড়িতে প্রবেশ করতেই এসব লোকজন বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে আমাকে ও ওই বাড়ির গৃহবধূকে মারপিট শুরু করে।’

স্থানীয় কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলম হুসাইন বলেছেন, ‘ঘটনার পর অনেকেই আমাকে ফোন দিয়ে ডেকে নেন। আমি ঘটনাটি দেখে চলে আসি। তাদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে শুনেছি ছেলে-মেয়েকে বাঁধা অবস্থা থেকে ছেড়ে দিয়েছেন তারা।’

গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দুজনকে স্থানীয়রা আটকে রেখেছে, এমন সংবাদ পাওয়ার পর স্থানীয় কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করি। তাঁকে মীমাংসা করে দেওয়ার জন্যও বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে শুনেছি তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত লিখিতভাবে আমাকে কেউ জানায়নি। কেউ বাদী হলে আমি বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

এদিকে, হাত-পা বেঁধে প্রবাসীর স্ত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও ঘরে আটকিয়ে রাখা নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ তাদের অনৈতিকভাবে জড়িত থাকার প্রসঙ্গ তুললেও অনেকেই এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এনিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে নানা ধরনের জল্পনা। মিজানুর রহমান হাড়াভাঙ্গা গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে এবং ওই নারী সৌদী প্রবাসীর স্ত্রী।