ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রবাসীর স্ত্রীর নিকট থেকে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৫৬:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
ঘটনা ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর। গভীর রাতে মোবাইলের শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় ঝিনাইদহ শহরের খাজুরা মাঝেরপাড়ার প্রবাসী শাহ আলমের স্ত্রী রেনুকা খাতুনের। মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে ‘মা’ ডাক দিয়ে হাদিস কোরআনের বানী শোনাতে থাকে। সঙ্গে ভৌতিক শব্দ। কানে ভেসে আসে হা হা, হি হি, এইবার তোকে খাব, বহুদিন তাজা রক্ত খায়নি। রেনুকার চোখ থেকে ঘুম ছুটে যায়। রেনুকা তখনও জানেন না তিনি জ্বিনের বাদশা নামক প্রতারকের খপ্পরে পড়তে যাচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ আলাপচারিতায় প্রতারক চক্রটি বলে ‘আল্লাহর তরফ থেকে হুকুম হয়েছে, তোকে ৭ হাড়ি কাঁচা স্বর্ণ দেওয়া হবে।’ এ কথা বলে প্রতারকচক্র প্রথমে রেনুকার নিকট থেকে একটি জায়নামাজ হাদিয়া চাই এবং ৫৬০ টাকা দাবি করে। ৭ হাড়ি সোনার লোভ সামলাতে না পেরে রেনুকা বেগম বিকাশ একাউন্টে ৫৬০ টাকা পাঠায়। গত ৫ নভেম্বর জ্বিনের বাদশা দলের প্রতারকরা আবারো রেনুকা খাতুনের কাছে ফোন করে জানায় ৭ হাড়ি স্বর্ণ পেতে হলে তোমার বাড়ির কিছু স্বর্ণ দিতে হবে। রেনুকা ঘটনার দিন রাতে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর ডাচবাংলা ব্যাংকের বিপরীতে একটি গাছের নিচে দুই লাখ আশি হাজার টাকা মূল্যের প্রায় চার ভরি স্বর্ণ রেখে আসে। স্বর্ণ রেখে আসার সময় তিনি দেখতে পান সেখানে একটি সোনা সাদৃশ্য মূর্তি রয়েছে। রেনুকার বিশ্বাস আরো বেড়ে যায়। এভাবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারক চক্রটি রেনুকার কাছ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। রেনুকা প্রতারিত হওয়ার পর গত শুক্রবার (২৫ ফেব্রয়ারি ২০২২) ঝিনাইদহ সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। যার নম্বর-৩৪। মামলাটি রেকর্ডের পর ঝিনাইদহ সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল মামলাটির তদন্তভার পায়। ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার সাঈদ ও ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশারের তত্বাবধানে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন। শুক্রবার রাতেই এসআই রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার একটি বিলের মধ্য থেকে প্রতারক চক্রের সদস্য বিশ্বনাথপুর গ্রামের মিন্টু পোদ্দারের ছেলে রায়হান ও তার ভাই তুহিন, একই গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে বিকাশ এজেন্ট জিয়াউর রহমান ও শাকপালা গ্রামের শ্রী নারায়ন দাসের ছেলে মিলন দাসকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, একটি ছুরি ও পিতলের মূর্তি উদ্ধার করে। গতকাল শনিবার দুপুরে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে গণমাধ্যমকর্মীদের নিকট এক প্রেসব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতে সোপর্দ করে আসামিদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।
ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার জানান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে রায়হানের নেতৃত্বে এই প্রতারকচক্র খুপড়িঘর বেধে ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘জ্বিনের বাদশা’ পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

প্রবাসীর স্ত্রীর নিকট থেকে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে

আপলোড টাইম : ০২:৫৬:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস:
ঘটনা ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর। গভীর রাতে মোবাইলের শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় ঝিনাইদহ শহরের খাজুরা মাঝেরপাড়ার প্রবাসী শাহ আলমের স্ত্রী রেনুকা খাতুনের। মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে ‘মা’ ডাক দিয়ে হাদিস কোরআনের বানী শোনাতে থাকে। সঙ্গে ভৌতিক শব্দ। কানে ভেসে আসে হা হা, হি হি, এইবার তোকে খাব, বহুদিন তাজা রক্ত খায়নি। রেনুকার চোখ থেকে ঘুম ছুটে যায়। রেনুকা তখনও জানেন না তিনি জ্বিনের বাদশা নামক প্রতারকের খপ্পরে পড়তে যাচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ আলাপচারিতায় প্রতারক চক্রটি বলে ‘আল্লাহর তরফ থেকে হুকুম হয়েছে, তোকে ৭ হাড়ি কাঁচা স্বর্ণ দেওয়া হবে।’ এ কথা বলে প্রতারকচক্র প্রথমে রেনুকার নিকট থেকে একটি জায়নামাজ হাদিয়া চাই এবং ৫৬০ টাকা দাবি করে। ৭ হাড়ি সোনার লোভ সামলাতে না পেরে রেনুকা বেগম বিকাশ একাউন্টে ৫৬০ টাকা পাঠায়। গত ৫ নভেম্বর জ্বিনের বাদশা দলের প্রতারকরা আবারো রেনুকা খাতুনের কাছে ফোন করে জানায় ৭ হাড়ি স্বর্ণ পেতে হলে তোমার বাড়ির কিছু স্বর্ণ দিতে হবে। রেনুকা ঘটনার দিন রাতে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর ডাচবাংলা ব্যাংকের বিপরীতে একটি গাছের নিচে দুই লাখ আশি হাজার টাকা মূল্যের প্রায় চার ভরি স্বর্ণ রেখে আসে। স্বর্ণ রেখে আসার সময় তিনি দেখতে পান সেখানে একটি সোনা সাদৃশ্য মূর্তি রয়েছে। রেনুকার বিশ্বাস আরো বেড়ে যায়। এভাবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারক চক্রটি রেনুকার কাছ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। রেনুকা প্রতারিত হওয়ার পর গত শুক্রবার (২৫ ফেব্রয়ারি ২০২২) ঝিনাইদহ সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। যার নম্বর-৩৪। মামলাটি রেকর্ডের পর ঝিনাইদহ সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল মামলাটির তদন্তভার পায়। ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার সাঈদ ও ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশারের তত্বাবধানে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন। শুক্রবার রাতেই এসআই রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার একটি বিলের মধ্য থেকে প্রতারক চক্রের সদস্য বিশ্বনাথপুর গ্রামের মিন্টু পোদ্দারের ছেলে রায়হান ও তার ভাই তুহিন, একই গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে বিকাশ এজেন্ট জিয়াউর রহমান ও শাকপালা গ্রামের শ্রী নারায়ন দাসের ছেলে মিলন দাসকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, একটি ছুরি ও পিতলের মূর্তি উদ্ধার করে। গতকাল শনিবার দুপুরে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে গণমাধ্যমকর্মীদের নিকট এক প্রেসব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতে সোপর্দ করে আসামিদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।
ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার জানান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে রায়হানের নেতৃত্বে এই প্রতারকচক্র খুপড়িঘর বেধে ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘জ্বিনের বাদশা’ পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল।