ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাংনীতে হনুমানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২২:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

হনুমানের খাবারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে : জেলা ফরেস্টার জাফর উল্লাহ

সমীকরণ প্রতিবেদন:

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে দলছুট হনুমানের দেখা মিলছে প্রায়ই। হনুমানের লাফালাফি ও নানা কার্যকলাপ ছেলে-মেয়েদের ভালো লাগলেও বিপত্তি ঘটেছে কৃষকদের কাছে। গাংনীর সহড়াতলা গ্রামে বাচ্চা দিয়েছে অন্তত ২০টি মা হনুমান। হনুমানের অত্যাচারে এখন অতিষ্ঠ তারা। হনুমানের দল নষ্ট করছে খেতের ফসল। মাঝে মধ্যে মানুষের ওপরও আক্রমণ করছে। বন-জঙ্গল না থাকায় গাংনীতে হনুমানের কোনো আবাসস্থল নেই। গত বছর থেকে গাংনী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা মেলে দলছুট হনুমানের। এতগুলো হনুমান দেখে স্থানীয়রা প্রথমে খুশি হলেও হনুমানের অত্যাচারে এখন অতিষ্ঠ গ্রামের কৃষকরা।

এরই মধ্যে বাচ্চা দিয়েছে মা হনুমানগুলো। দলবেধে ছুটছে এগাছ থেকে ওগাছ। পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় হনুমানের দল এখন ক্ষতি করছে ফসলের মাঠে। বাঁশবাগান অথবা বড় গাছে অবস্থান নিলেও ক্ষুধা পেলে সুযোগ বুঝে খেতের কলা, ভুট্টা, পেয়ারা, বরইসহ বিভিন্ন খেতে হানা দিচ্ছে হনুমানের দল। খাওয়ার পাশাপাশি নষ্ট করছে অনেক ফসল। ফসল রক্ষার্থে কৃষকরা তীর-ধনুক ও গুলতি ব্যবহার করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। স্থানীয়দের দাবি, করোনা মহামারির সময় খাবার সংকটের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও ভারত থেকে এসব হনুমান এখানে এসে বংশবিস্তার করেছে।

উপজেলার সহড়াতলা গ্রামের লাট্টু মেম্বার জানান, হনুমানের দল তাঁর ভুট্টা খেতের অর্ধেক ভুট্টা নষ্ট করেছে। তাছাড়া বাড়ির আঙিনায় থাকা পেঁপে-পেয়ারাসহ নানা ধরনের ফল খেয়ে নষ্ট করেছে। রাতে ঘরের টিনের চালেও এসে লাফালাফি করে। অবলা প্রাণি, তাই কিছু বলার থাকে না। একই কথা জানালেন কুঞ্জনগরের কলাচাষি রবিউল ও রশিদ। তাঁরা জানান, গ্রামের ছেলে মেয়েরা হনুমান দেখে খাবার দেয়। কিন্তু হনুমান এসব খাবার অর্ধেক খেয়ে নষ্ট করে রাখে, আবার গাছে উঠে ফল ফলাদি নষ্ট করছে। এদের খাবারের ব্যবস্থা করলে হয়তো খেতের ফসল নষ্টের হাত থেকে বাঁচতো।

এদিকে একটি সূত্র জানায়, গাংনীর বিভিন্ন স্থানে হনুমান রয়েছে। তারপরও সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম এবং ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্কে এদের সংখ্যা বেশি। গেল বছর মেহেরপুর জেলায় ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। এবছর ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। সদর ও মুজিবনগর উপজেলায় হনুমানের খাবারের ব্যবস্থা করা হলেও গাংনী এলাকায় হনুমানদের জন্য কোনো খাবার দেওয়া হয় না। ফলে এ এলাকার হনুমানের দল বেপরোয়া। তাছাড়া জেলায় কয়টি হনুমান রয়েছে, তার পরিসংখ্যানও বন বিভাগের কাছে নেই।

মেহেরপুর জেলা ফরেস্টার জাফর উল্লাহ জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে হনুমান এসেছে এবং বংশবিস্তার করে সংখ্যায় বাড়ছে। ফলে জেলায় কতটি হনুমান আছে, তার পরিসংখ্যান করা মুশকিল। তবুও এক জরিপে জেলায় পাওয়া গেছে পাঁচ শতাধিক হনুমান। প্রথমে ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। চলতি অর্থবছরে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতঃমধ্যে জেলা সদর ও মুজিবনগরে একটি কমিটি করে টেন্ডারের মাধ্যমে হনুমানের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গাংনীতে একটি কমিটি করে খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আরও জানান, ‘স্থানীয় কৃষকদের ফসলের ক্ষতি করছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেহেতু বন্যপ্রাণি আমরা হত্যা করতে পারি না। সে জন্য স্থানীয় জনসাধরণকে সতর্কতামূলক অবস্থান করে এবং যাতে কম সংখ্যক ফসলের ক্ষতি হয়, সেজন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ বন বিভাগের কাছে আবেদন করলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।’ সূত্র- জাগোনিউজ

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গাংনীতে হনুমানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

আপলোড টাইম : ০৯:২২:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২

হনুমানের খাবারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে : জেলা ফরেস্টার জাফর উল্লাহ

সমীকরণ প্রতিবেদন:

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে দলছুট হনুমানের দেখা মিলছে প্রায়ই। হনুমানের লাফালাফি ও নানা কার্যকলাপ ছেলে-মেয়েদের ভালো লাগলেও বিপত্তি ঘটেছে কৃষকদের কাছে। গাংনীর সহড়াতলা গ্রামে বাচ্চা দিয়েছে অন্তত ২০টি মা হনুমান। হনুমানের অত্যাচারে এখন অতিষ্ঠ তারা। হনুমানের দল নষ্ট করছে খেতের ফসল। মাঝে মধ্যে মানুষের ওপরও আক্রমণ করছে। বন-জঙ্গল না থাকায় গাংনীতে হনুমানের কোনো আবাসস্থল নেই। গত বছর থেকে গাংনী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা মেলে দলছুট হনুমানের। এতগুলো হনুমান দেখে স্থানীয়রা প্রথমে খুশি হলেও হনুমানের অত্যাচারে এখন অতিষ্ঠ গ্রামের কৃষকরা।

এরই মধ্যে বাচ্চা দিয়েছে মা হনুমানগুলো। দলবেধে ছুটছে এগাছ থেকে ওগাছ। পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় হনুমানের দল এখন ক্ষতি করছে ফসলের মাঠে। বাঁশবাগান অথবা বড় গাছে অবস্থান নিলেও ক্ষুধা পেলে সুযোগ বুঝে খেতের কলা, ভুট্টা, পেয়ারা, বরইসহ বিভিন্ন খেতে হানা দিচ্ছে হনুমানের দল। খাওয়ার পাশাপাশি নষ্ট করছে অনেক ফসল। ফসল রক্ষার্থে কৃষকরা তীর-ধনুক ও গুলতি ব্যবহার করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। স্থানীয়দের দাবি, করোনা মহামারির সময় খাবার সংকটের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও ভারত থেকে এসব হনুমান এখানে এসে বংশবিস্তার করেছে।

উপজেলার সহড়াতলা গ্রামের লাট্টু মেম্বার জানান, হনুমানের দল তাঁর ভুট্টা খেতের অর্ধেক ভুট্টা নষ্ট করেছে। তাছাড়া বাড়ির আঙিনায় থাকা পেঁপে-পেয়ারাসহ নানা ধরনের ফল খেয়ে নষ্ট করেছে। রাতে ঘরের টিনের চালেও এসে লাফালাফি করে। অবলা প্রাণি, তাই কিছু বলার থাকে না। একই কথা জানালেন কুঞ্জনগরের কলাচাষি রবিউল ও রশিদ। তাঁরা জানান, গ্রামের ছেলে মেয়েরা হনুমান দেখে খাবার দেয়। কিন্তু হনুমান এসব খাবার অর্ধেক খেয়ে নষ্ট করে রাখে, আবার গাছে উঠে ফল ফলাদি নষ্ট করছে। এদের খাবারের ব্যবস্থা করলে হয়তো খেতের ফসল নষ্টের হাত থেকে বাঁচতো।

এদিকে একটি সূত্র জানায়, গাংনীর বিভিন্ন স্থানে হনুমান রয়েছে। তারপরও সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম এবং ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্কে এদের সংখ্যা বেশি। গেল বছর মেহেরপুর জেলায় ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। এবছর ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। সদর ও মুজিবনগর উপজেলায় হনুমানের খাবারের ব্যবস্থা করা হলেও গাংনী এলাকায় হনুমানদের জন্য কোনো খাবার দেওয়া হয় না। ফলে এ এলাকার হনুমানের দল বেপরোয়া। তাছাড়া জেলায় কয়টি হনুমান রয়েছে, তার পরিসংখ্যানও বন বিভাগের কাছে নেই।

মেহেরপুর জেলা ফরেস্টার জাফর উল্লাহ জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে হনুমান এসেছে এবং বংশবিস্তার করে সংখ্যায় বাড়ছে। ফলে জেলায় কতটি হনুমান আছে, তার পরিসংখ্যান করা মুশকিল। তবুও এক জরিপে জেলায় পাওয়া গেছে পাঁচ শতাধিক হনুমান। প্রথমে ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। চলতি অর্থবছরে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতঃমধ্যে জেলা সদর ও মুজিবনগরে একটি কমিটি করে টেন্ডারের মাধ্যমে হনুমানের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গাংনীতে একটি কমিটি করে খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আরও জানান, ‘স্থানীয় কৃষকদের ফসলের ক্ষতি করছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেহেতু বন্যপ্রাণি আমরা হত্যা করতে পারি না। সে জন্য স্থানীয় জনসাধরণকে সতর্কতামূলক অবস্থান করে এবং যাতে কম সংখ্যক ফসলের ক্ষতি হয়, সেজন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ বন বিভাগের কাছে আবেদন করলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।’ সূত্র- জাগোনিউজ