ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিত্রা নদী এখন সরু খাল!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

দখলবাজদের অত্যাচারে ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী চিত্রা নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে। কোথাও নদীর পাড় আবার কোথাও তলদেশ দখল করা হয়েছে। নদী পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বড় বড় ভবন। নদীর মধ্যে কাটা হয়েছে পুকুর। কোথাও নদীর তলদেশে চলছে চাষাবাদ। প্রভাবশালী দখলদাররা এভাবে চিত্রা নদীটি প্রায় গ্রাস করে ফেলেছে। এখন দেখলে মনে হবে একটা সরু খাল। কয়েক দশকে চিত্রা নদীর ঝিনাইদহ অংশের বেশিরভাগ জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। প্রকাশ্যে নদী দখলের এই প্রতিযোগিতা চলে আসলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। নদী দখলের খবর সাধারণ মানুষ মোবাইলে জানালে বলা হয় লিখিত অভিযোগ দেন। অথচ এই জমির মালিক খোদ প্রশাসন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় দখল হিসেবে চিত্রা নদীর ঝিনাইদহ অংশে ৮টি পুকুর উল্লেখ রয়েছে, যা হাস্যকর। পানি উন্নয়ন বোর্ডও চিত্রা নদীর রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ।

তথ্যমতে, ঝিনাইদহ জেলার দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহি চিত্রা নদী। এই নদীটি চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার নিম্নস্থল থেকে উৎপত্তি হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ঝিনাইদহে প্রবেশ করেছে। নদীটি আরও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ হয়ে মাগুরার শালিখায় গিয়ে নবগঙ্গা নদীতে মিশেছে। ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটির ঝিনাইদহ অংশ রয়েছে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার। এক সময় নদীতে লঞ্চ-স্টিমার চলতো। ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে চিত্রা নদী ব্যবহার হতো। নদীর ঘাটকে ঘিরে গড়ে ওঠে কালীগঞ্জ শহর, গান্না, চাপরাইল, মঙ্গলপোতাসহ ছোট ছোট বেশ কয়েকটি বাজার। বর্তমানে নদীটি দখল হয়ে অনেক স্থানে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। নদী এলাকায় দেখা গেছে, কোটচাঁদপুরের তালসার থেকে কালীগঞ্জের শালিখা পর্যন্ত নদীর দুই পাড় অসংখ্য পুকুর কাটা হয়েছে। যেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে।

কালীগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসরাম জানান, নদীর বিভিন্ন স্থানে মাত্র ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও নদীর প্রবল স্রোত ছিল, কিন্তু এখন মৃত খাল। সদর উপজেলার গান্না এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি জনতা ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আবেদ আলী গান্না বাজারের নিচে নদীর মধ্যে একটি পুকুর কাটেন। তিনি মারা যাবার পর পরিবারের দখলে আছে। এই বাজারে মহিউদ্দিন, আলতাফ হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তির পুকুর রয়েছে। কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিনা এলাকায় নদীর পাড়ে পুকুর আছে শাহজাহান আলী, রওশন আলীসহ কয়েকজনের। অবশ্য রওশন আলীর দাবি, এগুলো তাঁদের মালিকানা জায়গা। ইকড়া সেতুর কাছে পুকুর কেটেছেন আব্দুল হামিদ। সদরের কাশিমপুর ও কোটচাঁদপুরের জালালপুর এলকায় নদীর মধ্যে বেশ কয়েকটি পুকুর রয়েছে। সদর উপজেলার সুতি গ্রামের টিপু মণ্ডলের একটি পুকুর রয়েছে নদীর পাড়ে। কালীগঞ্জ উপজেলার সিংদহ গ্রামের মতিয়ার রহমান, ইসাহক আলী, সিরাজুল ইসলাম, লিয়াকত আলী, মিজানুর রহমান, মফিজ উদ্দিন, আফসার আলী ও মো. আব্দুলের ৮টি পুকুর আছে নদীর জায়গায়। কোটচাঁদপুরের তালসার এলাকায় দেখা গেছে, জনৈক আব্দুল মালেক নদীর মধ্যে ধান চাষ করছেন। উপরের জমির মালিক তিনি তাই নিচের জমিও তারই দখলে।

চিত্রা বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক শিবুপদ বিশ্বাস জানান, চিত্রায় অসংখ্য পুকুর আর ভবন রয়েছে। অথচ সরকারের দখলের তালিকায় এসেছে মাত্র ৮টি পুকুর।

ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজিবুল ইসলাম খান জানান, চিত্রা নদীর অবৈধ দখলদারের একটা তালিকা তৈরি হয়েছে। এগুলো উচ্ছেদের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে, কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য এতোদিন করা সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুতই তারা উচ্ছেদ অভিযানে নামবেন বলে জানান।

পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের পরিচালক হারুন-অর রশীদ জানান, পুকুর ভরাট, জলাশয় ভরাট, নদী ভরাট আইনগত নিষিদ্ধ। বিশেষ করে নদী ভরাট করলে নদী তার নাব্যতা হারিয়ে ফেলে। নদীর স্রোত বাঁধাগ্রস্ত হয়। এতে নদীতে থাকা নানা প্রজাতির মাছ ধংস হয়ে। জীব বৈচিত্র হারিয়ে যাওয়ায় পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ে। তিনি বলেন, এগুলো বন্ধ হওয়া প্রয়োজন, তারাও এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চিত্রা নদী এখন সরু খাল!

আপলোড টাইম : ০৮:৫৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস:

দখলবাজদের অত্যাচারে ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী চিত্রা নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে। কোথাও নদীর পাড় আবার কোথাও তলদেশ দখল করা হয়েছে। নদী পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বড় বড় ভবন। নদীর মধ্যে কাটা হয়েছে পুকুর। কোথাও নদীর তলদেশে চলছে চাষাবাদ। প্রভাবশালী দখলদাররা এভাবে চিত্রা নদীটি প্রায় গ্রাস করে ফেলেছে। এখন দেখলে মনে হবে একটা সরু খাল। কয়েক দশকে চিত্রা নদীর ঝিনাইদহ অংশের বেশিরভাগ জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। প্রকাশ্যে নদী দখলের এই প্রতিযোগিতা চলে আসলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। নদী দখলের খবর সাধারণ মানুষ মোবাইলে জানালে বলা হয় লিখিত অভিযোগ দেন। অথচ এই জমির মালিক খোদ প্রশাসন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় দখল হিসেবে চিত্রা নদীর ঝিনাইদহ অংশে ৮টি পুকুর উল্লেখ রয়েছে, যা হাস্যকর। পানি উন্নয়ন বোর্ডও চিত্রা নদীর রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ।

তথ্যমতে, ঝিনাইদহ জেলার দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহি চিত্রা নদী। এই নদীটি চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার নিম্নস্থল থেকে উৎপত্তি হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ঝিনাইদহে প্রবেশ করেছে। নদীটি আরও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ হয়ে মাগুরার শালিখায় গিয়ে নবগঙ্গা নদীতে মিশেছে। ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটির ঝিনাইদহ অংশ রয়েছে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার। এক সময় নদীতে লঞ্চ-স্টিমার চলতো। ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে চিত্রা নদী ব্যবহার হতো। নদীর ঘাটকে ঘিরে গড়ে ওঠে কালীগঞ্জ শহর, গান্না, চাপরাইল, মঙ্গলপোতাসহ ছোট ছোট বেশ কয়েকটি বাজার। বর্তমানে নদীটি দখল হয়ে অনেক স্থানে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। নদী এলাকায় দেখা গেছে, কোটচাঁদপুরের তালসার থেকে কালীগঞ্জের শালিখা পর্যন্ত নদীর দুই পাড় অসংখ্য পুকুর কাটা হয়েছে। যেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে।

কালীগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসরাম জানান, নদীর বিভিন্ন স্থানে মাত্র ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও নদীর প্রবল স্রোত ছিল, কিন্তু এখন মৃত খাল। সদর উপজেলার গান্না এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি জনতা ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আবেদ আলী গান্না বাজারের নিচে নদীর মধ্যে একটি পুকুর কাটেন। তিনি মারা যাবার পর পরিবারের দখলে আছে। এই বাজারে মহিউদ্দিন, আলতাফ হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তির পুকুর রয়েছে। কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিনা এলাকায় নদীর পাড়ে পুকুর আছে শাহজাহান আলী, রওশন আলীসহ কয়েকজনের। অবশ্য রওশন আলীর দাবি, এগুলো তাঁদের মালিকানা জায়গা। ইকড়া সেতুর কাছে পুকুর কেটেছেন আব্দুল হামিদ। সদরের কাশিমপুর ও কোটচাঁদপুরের জালালপুর এলকায় নদীর মধ্যে বেশ কয়েকটি পুকুর রয়েছে। সদর উপজেলার সুতি গ্রামের টিপু মণ্ডলের একটি পুকুর রয়েছে নদীর পাড়ে। কালীগঞ্জ উপজেলার সিংদহ গ্রামের মতিয়ার রহমান, ইসাহক আলী, সিরাজুল ইসলাম, লিয়াকত আলী, মিজানুর রহমান, মফিজ উদ্দিন, আফসার আলী ও মো. আব্দুলের ৮টি পুকুর আছে নদীর জায়গায়। কোটচাঁদপুরের তালসার এলাকায় দেখা গেছে, জনৈক আব্দুল মালেক নদীর মধ্যে ধান চাষ করছেন। উপরের জমির মালিক তিনি তাই নিচের জমিও তারই দখলে।

চিত্রা বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক শিবুপদ বিশ্বাস জানান, চিত্রায় অসংখ্য পুকুর আর ভবন রয়েছে। অথচ সরকারের দখলের তালিকায় এসেছে মাত্র ৮টি পুকুর।

ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজিবুল ইসলাম খান জানান, চিত্রা নদীর অবৈধ দখলদারের একটা তালিকা তৈরি হয়েছে। এগুলো উচ্ছেদের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে, কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য এতোদিন করা সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুতই তারা উচ্ছেদ অভিযানে নামবেন বলে জানান।

পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের পরিচালক হারুন-অর রশীদ জানান, পুকুর ভরাট, জলাশয় ভরাট, নদী ভরাট আইনগত নিষিদ্ধ। বিশেষ করে নদী ভরাট করলে নদী তার নাব্যতা হারিয়ে ফেলে। নদীর স্রোত বাঁধাগ্রস্ত হয়। এতে নদীতে থাকা নানা প্রজাতির মাছ ধংস হয়ে। জীব বৈচিত্র হারিয়ে যাওয়ায় পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ে। তিনি বলেন, এগুলো বন্ধ হওয়া প্রয়োজন, তারাও এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।