ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিয়ে পাগল মিজানুরের বিরুদ্ধে দুই স্ত্রীর চার মামলা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৫:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

Render illustration of Warrants title on Legal Documents

প্রতিবেদক, গাংনী:

মেহেরপুরের গাংনীর বিয়ে পাগল মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছেন তাঁর দুই স্ত্রী। যৌতুক, নারী নির্যাতন ও পর্নগ্রাফি আইনে মেহেরপুর আদালতে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে যৌতুক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। মামলার আসামি মিজানুর রহমান বামন্দী ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস আলীর ছেলে। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুর প্রবাসী।

মিজানুর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী মোহাম্মদপুর গ্রামের সোহেলী আক্তার বলেন, প্রথম বিয়ের তথ্য গোপন করে মিজানুর রহমান ২০২১ সালের গত ৫ সেপ্টেম্বর ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের পর যৌতুক হিসেবে ২ লাখ টাকা, সোনার চেন ও আঙটি দেওয়া হয়। সংসার চলাকালীন সময়ে আরও ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় মারধর ও নানাভাবে নির্যাতন করতেন মিজানুর। নির্যাতন সইতে না পেরে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে স্বামী মিজানুর রহমান, শাশুড়ী জাহানারা খাতুন, শ্বশুর আব্দুল কুদ্দুস ও ননদ কুসুমের বিরুদ্ধে যৌতুক এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলা নম্বর ১৫৭ ও ৩৭৮/২১। এর মধ্যে যৌতুক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা জামানকে তদন্ত করার নির্দেশনা দেন আদালত।

মিজানুর রহমানের তৃতীয় স্ত্রী বাওট গ্রামের ঝর্ণা খাতুন বলেন, পূর্বে দুটি বিয়ের কথা গোপন রেখে মিজানুর রহমার গত ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর পারিবারিকভাবে ১ লাখ টাকা দেনমোহরে আমার সাথে বিবাহ করে। পরে আমাদের বিয়ের বিষয়টি ২য় স্ত্রী সোহেলী আক্তার জানতে পেরে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলাটি মীমাংসার জন্য আমার বাবার কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হলেও আরও ১ লাখ টাকার জন্য মারধর ও নির্যাতন করার পাশাপাশি শ্বাষরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এছাড়া ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর রাতে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে মোহাম্মদপুর গ্রামের সোহেল চেয়ারম্যানের বাড়িতে আশ্রয় নিই। নির্যাতনের প্রতিকার পেতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে স্বামী মিজানুর রহমান, শাশুড়ী জাহানারা খাতুন, শ্বশুর আব্দুল কুদ্দুস ও ননদ কুসুমের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলা নম্বর সিআর ১৭০/২১। আদালত মামলাটি গাংনী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

ঝর্ণা খাতুন আরও বলেন, ‘আমাদের স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে আমার বড় বোনের মোবাইল ফোনে পাঠায় এবং ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার নামে হুমকি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এ কারণে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে পর্ণগ্রাফি আইনে মেহেরপুর আদালতে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঝর্ণা খাতুন বলেন, পূর্বের একটি বিয়ের তথ্য গোপন করে ৪৫ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিয়ে করেন মিজানুর রহমান। ইতঃপূর্বে দৌলৎপুর উপজেলার ডাংমড়কা গ্রামের মিলি নামের এক মেয়ের সাথে প্রথম বিয়ে হয়। বিয়ের পর যৌতুকসহ নানা অত্যাচারের কারণে ডিভোর্স হয়।

ঝর্ণা খাতুনের আইনজীবী একেএম শফিকুল আলম বলেন, পর্ণগ্রাফি আইনে মামলাটি সিআইডি ও নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাটি গাংনী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে তদন্তের দিয়েছে আদালত।

গাংনী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন জানান, ঝর্ণা খাতুনের মামলাটি তদন্তের জন্য এসেছে। মামলার ১ নম্বর আসামি মিজানুর রহমানসহ অন্য বিবাদীদের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) উভয় পক্ষের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। তবে মামলার ১ নম্বর আসামি মিজানুর রহমান হাজিরা দিতে আসেনি। মামলাটি দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

সোহেলী আক্তারের আইনজীবী ইব্রাহিম শাহিন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঝর্ণার বড় বোন বন্যা খাতুন বলেন, মামলার পর থেকে মিজানুরের পরিবারের সদস্যরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এ কারণে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মামলার ১ নম্বর আসামি মিজানুর রহমান সিঙ্গাপুরে থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ঝর্ণা খাতুনের আন্ত্রীয় বাওট গ্রামের সাহাবুল ইসলাম বলেন, মিজানুর রহমান বারবার প্রতারণা করে বিয়ে করেন। তাঁকে এলাকায় প্রতারক বিয়ে পাগল বলেই চেনে। বিয়ের পর যৌতুক দাবি করে মারধর করায় তাঁর কাজ। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। মিজানুরের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বিয়ে পাগল মিজানুরের বিরুদ্ধে দুই স্ত্রীর চার মামলা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

আপলোড টাইম : ০৮:৫৫:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২

প্রতিবেদক, গাংনী:

মেহেরপুরের গাংনীর বিয়ে পাগল মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছেন তাঁর দুই স্ত্রী। যৌতুক, নারী নির্যাতন ও পর্নগ্রাফি আইনে মেহেরপুর আদালতে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে যৌতুক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। মামলার আসামি মিজানুর রহমান বামন্দী ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস আলীর ছেলে। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুর প্রবাসী।

মিজানুর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী মোহাম্মদপুর গ্রামের সোহেলী আক্তার বলেন, প্রথম বিয়ের তথ্য গোপন করে মিজানুর রহমান ২০২১ সালের গত ৫ সেপ্টেম্বর ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের পর যৌতুক হিসেবে ২ লাখ টাকা, সোনার চেন ও আঙটি দেওয়া হয়। সংসার চলাকালীন সময়ে আরও ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় মারধর ও নানাভাবে নির্যাতন করতেন মিজানুর। নির্যাতন সইতে না পেরে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে স্বামী মিজানুর রহমান, শাশুড়ী জাহানারা খাতুন, শ্বশুর আব্দুল কুদ্দুস ও ননদ কুসুমের বিরুদ্ধে যৌতুক এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলা নম্বর ১৫৭ ও ৩৭৮/২১। এর মধ্যে যৌতুক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা জামানকে তদন্ত করার নির্দেশনা দেন আদালত।

মিজানুর রহমানের তৃতীয় স্ত্রী বাওট গ্রামের ঝর্ণা খাতুন বলেন, পূর্বে দুটি বিয়ের কথা গোপন রেখে মিজানুর রহমার গত ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর পারিবারিকভাবে ১ লাখ টাকা দেনমোহরে আমার সাথে বিবাহ করে। পরে আমাদের বিয়ের বিষয়টি ২য় স্ত্রী সোহেলী আক্তার জানতে পেরে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলাটি মীমাংসার জন্য আমার বাবার কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হলেও আরও ১ লাখ টাকার জন্য মারধর ও নির্যাতন করার পাশাপাশি শ্বাষরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এছাড়া ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর রাতে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে মোহাম্মদপুর গ্রামের সোহেল চেয়ারম্যানের বাড়িতে আশ্রয় নিই। নির্যাতনের প্রতিকার পেতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে স্বামী মিজানুর রহমান, শাশুড়ী জাহানারা খাতুন, শ্বশুর আব্দুল কুদ্দুস ও ননদ কুসুমের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলা নম্বর সিআর ১৭০/২১। আদালত মামলাটি গাংনী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

ঝর্ণা খাতুন আরও বলেন, ‘আমাদের স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে আমার বড় বোনের মোবাইল ফোনে পাঠায় এবং ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার নামে হুমকি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এ কারণে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে পর্ণগ্রাফি আইনে মেহেরপুর আদালতে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঝর্ণা খাতুন বলেন, পূর্বের একটি বিয়ের তথ্য গোপন করে ৪৫ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিয়ে করেন মিজানুর রহমান। ইতঃপূর্বে দৌলৎপুর উপজেলার ডাংমড়কা গ্রামের মিলি নামের এক মেয়ের সাথে প্রথম বিয়ে হয়। বিয়ের পর যৌতুকসহ নানা অত্যাচারের কারণে ডিভোর্স হয়।

ঝর্ণা খাতুনের আইনজীবী একেএম শফিকুল আলম বলেন, পর্ণগ্রাফি আইনে মামলাটি সিআইডি ও নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাটি গাংনী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে তদন্তের দিয়েছে আদালত।

গাংনী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন জানান, ঝর্ণা খাতুনের মামলাটি তদন্তের জন্য এসেছে। মামলার ১ নম্বর আসামি মিজানুর রহমানসহ অন্য বিবাদীদের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) উভয় পক্ষের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। তবে মামলার ১ নম্বর আসামি মিজানুর রহমান হাজিরা দিতে আসেনি। মামলাটি দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

সোহেলী আক্তারের আইনজীবী ইব্রাহিম শাহিন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঝর্ণার বড় বোন বন্যা খাতুন বলেন, মামলার পর থেকে মিজানুরের পরিবারের সদস্যরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এ কারণে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মামলার ১ নম্বর আসামি মিজানুর রহমান সিঙ্গাপুরে থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ঝর্ণা খাতুনের আন্ত্রীয় বাওট গ্রামের সাহাবুল ইসলাম বলেন, মিজানুর রহমান বারবার প্রতারণা করে বিয়ে করেন। তাঁকে এলাকায় প্রতারক বিয়ে পাগল বলেই চেনে। বিয়ের পর যৌতুক দাবি করে মারধর করায় তাঁর কাজ। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। মিজানুরের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।