ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা এতো সম্পদ পেলেন কোথায়?

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২১:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহ পৌরসভার স্টোর কিপার থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বনে যাওয়া আসাদুজ্জামান চাঁন এখন নিজেই আলাদ্বীনের চেরাগ। শহরের চারদিকে নামে-বেনামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাঁর অঢেল সম্পদ। তবে এই সম্পদ তিনি কীভাবে অর্জন করলেন, তাঁর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই আয়কর অফিসে। পৌরসভার চেক জালিয়াতি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ঝিনাইদহ শহরবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন আসাদুজ্জামান চাঁন। তাঁর এই সম্পদের উৎস নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমেছে।

অন্যদিকে পৌরসভার প্রায় কোটি টাকার চেক জালিয়াতি, হাট-বাজার ইজারার টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ ও আয়করের টাকা নয়-ছয় করার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছেন মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিচালক ইয়ারুল ইসলাম। তিনি নিজেও এখন পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতঃমধ্যে তিনি বেশ কিছু ফাইল, ভাউচার ও চেক বই যাচাই-বাছাই করার জন্য নিয়ে গেছেন। প্রাথমিকভাবে চেক জালিয়াতির সত্যতাও মিলেছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, আসাদুজ্জামান চাঁন প্রথমে স্টোর কিপার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর তিনি প্রধান সহকারী ও পদোন্নতি পেয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই পদে নিয়োগ পেয়ে তিনি পৌরসভার হিসাব শাখায় ছড়ি ঘুরাতে থাকেন। সাবেক সচিব আজমল হোসেন ও নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দীনের সঙ্গে যোগসাজস করে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে একের পর এক পৌরসভার ফান্ড থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করতে থাকেন। কীভাবে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা যায়, সে বিষয়ে নিয়মিত অ্যাকাউন্টস সেকশনে এই চক্রের বৈঠক হতো। আর এভাবেই আসাদুজ্জামান চাঁন গড়ে তোলেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। নিবিড় অনুসন্ধান করলে তাঁর আরও সম্পদ ও জমানো টাকার সন্ধান মিলতে পারে বলে একাধিক পৌরসভার কাউন্সিলর মনে করেন।

এদিকে ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায় পৈত্রিক সূত্রে তিনতলা বাড়ির পাশাপাশি বাজার পাড়ায় জমি কিনে হাকিয়েছেন সাততলা বাড়ি। বাড়িটি এখন নির্মাণাধীন। এছাড়াও পাগলাকানাই পূজা মন্দিরের পাশে জমিসহ একটি বাড়ি ও পাগলাকানাই মোড়ে একটি পুকুর কিনেছেন। কাঞ্চনপুর মসজিদের পাশে রয়েছে জমি। শহরের বিভিন্ন স্থানে তাঁর একাধিক জমি ও বাড়ির সন্ধান মিলেছে। রয়েছে বেশ কয়েকটি বাস ও ট্রাক।

এদিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চাঁনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১২ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে উপ-সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন চিঠি দিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু ৫ মাস পার হলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং তাঁকে সচিব পদে পদোন্নতি প্রদানের একটি চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে মর্মে আসাদুজ্জামান চাঁন গণমাধ্যমকর্মীদের দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন। যে স্মারকে তিনি চিঠিটি দেখাচ্ছেন, সেই একই স্মারকে ২০২১ সালের ২৭ জুন পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিণ্টু আসাদুজ্জামান চাঁনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও অন্যত্র বদলির চিঠি দেন। এখন কোন চিঠি জাল ও কোন চিঠি আসল, তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আসাদুজ্জামান চাঁন বলেন, তাঁর পরিবার অনেক আগ থেকেই ধনবান ও সম্পদশালী। এই সম্পত্তি তাঁর পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া। তাছাড়া বাজারপাড়ার মধ্যে যে সুউচ্চ ভবন নির্মিত হচ্ছে, তা ফ্ল্যাট বিক্রি করে অগ্রিম টাকায়। তিনি বলেন, আগামীতে তিনি পাগলাকানাই ইউনিয়ন পরিষদে ভোট করবেন বলে একটি মহল তাঁর বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা রটনা করছে। তিনি পৌরসভার চেক জালিয়াতির বিষয়ে জানেন না বলেও জানান। 

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা এতো সম্পদ পেলেন কোথায়?

আপলোড টাইম : ০৯:২১:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহ পৌরসভার স্টোর কিপার থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বনে যাওয়া আসাদুজ্জামান চাঁন এখন নিজেই আলাদ্বীনের চেরাগ। শহরের চারদিকে নামে-বেনামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাঁর অঢেল সম্পদ। তবে এই সম্পদ তিনি কীভাবে অর্জন করলেন, তাঁর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই আয়কর অফিসে। পৌরসভার চেক জালিয়াতি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ঝিনাইদহ শহরবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন আসাদুজ্জামান চাঁন। তাঁর এই সম্পদের উৎস নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমেছে।

অন্যদিকে পৌরসভার প্রায় কোটি টাকার চেক জালিয়াতি, হাট-বাজার ইজারার টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ ও আয়করের টাকা নয়-ছয় করার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছেন মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিচালক ইয়ারুল ইসলাম। তিনি নিজেও এখন পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতঃমধ্যে তিনি বেশ কিছু ফাইল, ভাউচার ও চেক বই যাচাই-বাছাই করার জন্য নিয়ে গেছেন। প্রাথমিকভাবে চেক জালিয়াতির সত্যতাও মিলেছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, আসাদুজ্জামান চাঁন প্রথমে স্টোর কিপার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর তিনি প্রধান সহকারী ও পদোন্নতি পেয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই পদে নিয়োগ পেয়ে তিনি পৌরসভার হিসাব শাখায় ছড়ি ঘুরাতে থাকেন। সাবেক সচিব আজমল হোসেন ও নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দীনের সঙ্গে যোগসাজস করে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে একের পর এক পৌরসভার ফান্ড থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করতে থাকেন। কীভাবে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা যায়, সে বিষয়ে নিয়মিত অ্যাকাউন্টস সেকশনে এই চক্রের বৈঠক হতো। আর এভাবেই আসাদুজ্জামান চাঁন গড়ে তোলেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। নিবিড় অনুসন্ধান করলে তাঁর আরও সম্পদ ও জমানো টাকার সন্ধান মিলতে পারে বলে একাধিক পৌরসভার কাউন্সিলর মনে করেন।

এদিকে ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায় পৈত্রিক সূত্রে তিনতলা বাড়ির পাশাপাশি বাজার পাড়ায় জমি কিনে হাকিয়েছেন সাততলা বাড়ি। বাড়িটি এখন নির্মাণাধীন। এছাড়াও পাগলাকানাই পূজা মন্দিরের পাশে জমিসহ একটি বাড়ি ও পাগলাকানাই মোড়ে একটি পুকুর কিনেছেন। কাঞ্চনপুর মসজিদের পাশে রয়েছে জমি। শহরের বিভিন্ন স্থানে তাঁর একাধিক জমি ও বাড়ির সন্ধান মিলেছে। রয়েছে বেশ কয়েকটি বাস ও ট্রাক।

এদিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চাঁনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১২ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে উপ-সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন চিঠি দিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু ৫ মাস পার হলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং তাঁকে সচিব পদে পদোন্নতি প্রদানের একটি চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে মর্মে আসাদুজ্জামান চাঁন গণমাধ্যমকর্মীদের দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন। যে স্মারকে তিনি চিঠিটি দেখাচ্ছেন, সেই একই স্মারকে ২০২১ সালের ২৭ জুন পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিণ্টু আসাদুজ্জামান চাঁনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও অন্যত্র বদলির চিঠি দেন। এখন কোন চিঠি জাল ও কোন চিঠি আসল, তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আসাদুজ্জামান চাঁন বলেন, তাঁর পরিবার অনেক আগ থেকেই ধনবান ও সম্পদশালী। এই সম্পত্তি তাঁর পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া। তাছাড়া বাজারপাড়ার মধ্যে যে সুউচ্চ ভবন নির্মিত হচ্ছে, তা ফ্ল্যাট বিক্রি করে অগ্রিম টাকায়। তিনি বলেন, আগামীতে তিনি পাগলাকানাই ইউনিয়ন পরিষদে ভোট করবেন বলে একটি মহল তাঁর বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা রটনা করছে। তিনি পৌরসভার চেক জালিয়াতির বিষয়ে জানেন না বলেও জানান।