ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুর সীমান্তে কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে ভারতীয় কৃষকরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৬:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২
  • / ৩২ বার পড়া হয়েছে

আমরা খুবই সর্তক, ভবিষ্যতে আরও নজরদারি বাড়ানো হবে : লে. কর্নেল মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান

মিজানুর রহমান জনি, মেহেরপুর:

ভারত সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে মেহেরপুর সীমান্তের মধ্যে ঢুকে অবাধে মেলামেশা করে বিভিন্নভাবে সংস্পর্শে আসছেন ভারতীয় নাগরিকরা। মেহেরপুরে যখন করোনা সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে, ঠিক তখনই সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ভারতীয় ভেরিয়েন্ট আতঙ্ক বিরাজ করছে জনমনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নজরদারি না বাড়ালে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বাংলাদেশের জন্য।

জেলার ১১১ কিলোমিটার সীমান্তে এই ধরনের ৭৬টি পয়েন্ট আছে। মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ও শালিকা গ্রামের ওপারে পশ্চিমবঙ্গের সাহাপুর ও নবীননগর গ্রাম। সে দেশ থেকে একটি নির্দিষ্ট টাইমে কাটা তার পেরিয়ে অবাধে কৃষকরা আসছেন তাদের কৃষিজমি চাষ করতে। অবাধে মেলামেশা করছেন বাংলাদেশী কৃষকদের সাথে। নোমান্সল্যান্ডে নিজের জমিতে কাজ করছেন ঠিকই, কিন্তু বিভিন্ন গল্পে মাতছেন বাংলাদেশীদের সাথে। এমনকি ভারতের কৃষকরা জমি চাষের সুযোগে বেড়িয়ে যাচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি থেকেও। এমন বাস্তবতার চিত্রে আতঙ্ক বাড়ছে জনমনে।

ভারতের সাহপুর গ্রামের কৃষক সাবেক মেম্বার মুকুন্দরাম ঢালি জানান, ‘আমি তিন বিঘা জমিতে সবজি চাষ করতে এপারে আসি, আমাদের এদিকে ভেরিয়েন্ট কম।’ জমি চাষ করতে আসা আরেক ভারতীয় নাগরিক সাহপুরের সুনীল মণ্ডল জানান, ‘আমিও চাষ করতে এপারে আসি। আমাদের একটি নির্দিষ্ট টাইমে আইডি কার্ড জমা রেখে আসতে হয়, আবার নির্দিষ্ট টাইমে চলে যেতে হয়।’

মেহেরপুর সদর উপজেলার শালিকা গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক জানান, ‘ভারতীয়রা জমি চাষ করতে এপারে আসে। মাঠে তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে মেলামেশা করে। তারা আমাদের এখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যায়, তারাও নিয়ে আসে। তাদের অনেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও যাওয়া আসা করে, আবার টাইম মতো ফিরে যায়।’

বুড়িপোতা গ্রামের আলিনুর নেছা বলেন, ‘আমরাও ওপারে যায়, ওরাও আসে। আমাদের করোনাও হতে পারে।’ বুড়িপোতা গ্রামের আমিনুল বলেন, ‘ভয়তো লাগেই, আমরা যায়নি, ওরাই আসে। বিএসএফ আসলে ওরা এদিক দিয়ে পথে পথে চলে যায়। কিন্তু আমাদের কেউ ওপারে যেতে পারে না।’

সীমান্তবর্তী বুড়িপোতা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ‘আমাদের ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাহাপুর গ্রাম। তাদের সীমানার এপারে কৃষিজমি থাকায়, তারা জমি চাষের সুযোগে আমাদের গ্রামে প্রবেশ করে। যেহেতু ওমিক্রন ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে, তাই ভারতীয় ওমিক্রন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা আছে। ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আবু হাসান মোহাম্মদ ওয়াহেদ বলেন, ‘যেহেতু সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুরে তারকাটা পার হয়ে এসে অবাধে ভারতীয় নাগরিকরা আমাদের দেশের কৃষকের সাথে মেলামেশা করছে, সেহেতু ভারতের ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই তাদের মাধ্যমে যেন ওমিক্রন আমাদের দেশে ছড়াতে না পারে, তার জন্য বর্ডার বন্ধ বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নজরদারি বাড়ানো দরকার।’ চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান পিএসসি জানান, ‘তারা তাদের কার্ড জমা রেখে গেট দিয়ে এপারে আসছে জমি চাষ করতে, সেই সুযোগে তারা বিভিন্নভাবে গ্রামে ঢুকে পড়ে। আমরাও মাঝে মধ্যে এমনটা পেয়েছি। আমরা খুবই সর্তক, ভবিষ্যতে আরও নজরদারি বাড়ানো হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মেহেরপুর সীমান্তে কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে ভারতীয় কৃষকরা

আপলোড টাইম : ০৯:০৬:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২

আমরা খুবই সর্তক, ভবিষ্যতে আরও নজরদারি বাড়ানো হবে : লে. কর্নেল মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান

মিজানুর রহমান জনি, মেহেরপুর:

ভারত সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে মেহেরপুর সীমান্তের মধ্যে ঢুকে অবাধে মেলামেশা করে বিভিন্নভাবে সংস্পর্শে আসছেন ভারতীয় নাগরিকরা। মেহেরপুরে যখন করোনা সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে, ঠিক তখনই সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ভারতীয় ভেরিয়েন্ট আতঙ্ক বিরাজ করছে জনমনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নজরদারি না বাড়ালে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বাংলাদেশের জন্য।

জেলার ১১১ কিলোমিটার সীমান্তে এই ধরনের ৭৬টি পয়েন্ট আছে। মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ও শালিকা গ্রামের ওপারে পশ্চিমবঙ্গের সাহাপুর ও নবীননগর গ্রাম। সে দেশ থেকে একটি নির্দিষ্ট টাইমে কাটা তার পেরিয়ে অবাধে কৃষকরা আসছেন তাদের কৃষিজমি চাষ করতে। অবাধে মেলামেশা করছেন বাংলাদেশী কৃষকদের সাথে। নোমান্সল্যান্ডে নিজের জমিতে কাজ করছেন ঠিকই, কিন্তু বিভিন্ন গল্পে মাতছেন বাংলাদেশীদের সাথে। এমনকি ভারতের কৃষকরা জমি চাষের সুযোগে বেড়িয়ে যাচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি থেকেও। এমন বাস্তবতার চিত্রে আতঙ্ক বাড়ছে জনমনে।

ভারতের সাহপুর গ্রামের কৃষক সাবেক মেম্বার মুকুন্দরাম ঢালি জানান, ‘আমি তিন বিঘা জমিতে সবজি চাষ করতে এপারে আসি, আমাদের এদিকে ভেরিয়েন্ট কম।’ জমি চাষ করতে আসা আরেক ভারতীয় নাগরিক সাহপুরের সুনীল মণ্ডল জানান, ‘আমিও চাষ করতে এপারে আসি। আমাদের একটি নির্দিষ্ট টাইমে আইডি কার্ড জমা রেখে আসতে হয়, আবার নির্দিষ্ট টাইমে চলে যেতে হয়।’

মেহেরপুর সদর উপজেলার শালিকা গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক জানান, ‘ভারতীয়রা জমি চাষ করতে এপারে আসে। মাঠে তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে মেলামেশা করে। তারা আমাদের এখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যায়, তারাও নিয়ে আসে। তাদের অনেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও যাওয়া আসা করে, আবার টাইম মতো ফিরে যায়।’

বুড়িপোতা গ্রামের আলিনুর নেছা বলেন, ‘আমরাও ওপারে যায়, ওরাও আসে। আমাদের করোনাও হতে পারে।’ বুড়িপোতা গ্রামের আমিনুল বলেন, ‘ভয়তো লাগেই, আমরা যায়নি, ওরাই আসে। বিএসএফ আসলে ওরা এদিক দিয়ে পথে পথে চলে যায়। কিন্তু আমাদের কেউ ওপারে যেতে পারে না।’

সীমান্তবর্তী বুড়িপোতা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ‘আমাদের ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাহাপুর গ্রাম। তাদের সীমানার এপারে কৃষিজমি থাকায়, তারা জমি চাষের সুযোগে আমাদের গ্রামে প্রবেশ করে। যেহেতু ওমিক্রন ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে, তাই ভারতীয় ওমিক্রন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা আছে। ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আবু হাসান মোহাম্মদ ওয়াহেদ বলেন, ‘যেহেতু সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুরে তারকাটা পার হয়ে এসে অবাধে ভারতীয় নাগরিকরা আমাদের দেশের কৃষকের সাথে মেলামেশা করছে, সেহেতু ভারতের ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই তাদের মাধ্যমে যেন ওমিক্রন আমাদের দেশে ছড়াতে না পারে, তার জন্য বর্ডার বন্ধ বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নজরদারি বাড়ানো দরকার।’ চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান পিএসসি জানান, ‘তারা তাদের কার্ড জমা রেখে গেট দিয়ে এপারে আসছে জমি চাষ করতে, সেই সুযোগে তারা বিভিন্নভাবে গ্রামে ঢুকে পড়ে। আমরাও মাঝে মধ্যে এমনটা পেয়েছি। আমরা খুবই সর্তক, ভবিষ্যতে আরও নজরদারি বাড়ানো হবে।’