ইপেপার । আজ সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

৩ শ টাকার এক্স-রে করিয়ে বৃদ্ধকে গুনতে হলো ১ হাজার টাকা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কথিত স্বেচ্ছাসেবক সাঈদের বিরুদ্ধে রোগী ভাগিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি রোগী ও স্বজনদের নিকট নিজেকে সদর হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক পরিচয় দিয়ে আসছেন। সরল বিশ্বাসে রোগীরা সাঈদের মিষ্টি কথার ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা দীর্ঘদিনের। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল চত্বর থেকে রোগী ভাগিয়ে তার পছন্দের ‘গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে’ নিয়ে যান এবং সেখান থেকে নেন মোটা অংকের কমিশন। সাঈদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে দীর্ঘ কয়েক বছরে হাসপাতাল চত্বরে অনেককে বুকফাঁটা আর্তনাদ করতে দেখা গেছে। গতকাল সোমবার সকালে এমনই এক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন তিনি।

নজরুল ইসলাম নামের এক বৃদ্ধ রোগীকে ভুলিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যান সাঈদ। চিকিৎসকের লেখা এক্স-রে হাসপাতালের বাইরে ভালো হবে বলে রোগীকে নিয়ে যান গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে। যে এক্স-রে জন্য হাসপাতালের সরকারি খরচ নেওয়া হয় সাড়ে ৩ শ টাকা, সেখানে গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টার থেকে একই এক্স-রে করিয়ে নজরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রীকে গুনতে হয়েছে ১ হাজার টাকা। বিষয়টি বুঝতে পেরে হাসপাতাল চত্বরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন ভুক্তভোগী নজরুল ইসলামের স্ত্রী।

জানা যায়, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কয়রা গ্রামের উঠতি পাড়ার মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে নজরুল ইসলাম। তিনি কিছুদিন পূর্বে মাঠে কাজ করার সময় অসাবধানতায় পড়ে গিয়ে ডান কাঁধে আঘাতপ্রাপ্ত হন। গতকাল সোমবার সকালে পরিবারের লোকজন চিকিৎসার জন্য তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। এসময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. উৎপলা বিশ্বাস রোগ নির্ণয়ের জন্য এক্স-রে করাতে বলেন। এক্স-রে লিখে দেওয়া চিকিৎসাপত্রটি নিয়ে জরুরি বিভাগের বাইরে বের হতেই সাঈদ নিজেকে হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক পরিচয় দিয়ে রোগী ও তাঁর স্বজনকে নিয়ে যান গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে। সেখানে এক্স-রে করিয়ে রোগীর স্বজনের কাছ থেকে এক হাজার টাকা গ্রহণ করেন।

অসুস্থ নজরুল ইসলামের স্ত্রী নাছিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘সাঈদ আমাকে বলে এই ধরনের পরীক্ষা হাসপাতালে হয় না। আমি আপনাকে আমার পরিচিত স্থানে নিয়ে কম খরচে এক্স-রে করিয়ে দিবো। একপর্যায়ে সে আমাকে জোর করে গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে এক্স-রে করিয়ে ১ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। আমি কম দিতে চাইলে তারা আমাকে বলে, ৪টা এক্স-রে করিয়েছি, সে কারণে টাকা বেশি লাগবে।’ তবে ৪টা এক্স-রে করানোর কথা বললেও গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারের করানো এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায়, দুইটা ফিল্মে ৪টা এক্স-রে করানো হয়েছে, যা সদর হাসপাতাল থেকে করালে অনেক কমে করানো যেত।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের রেডিওলজিস্ট সেলিম হোসেন বলেন, ‘দুই ফিল্মে ৪টা এক্স-রে করাতে আমাদের এখানে সাড়ে ৩ শ টাকা নেওয়া হয়।’ এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী বলেন, ‘হাসপাতালে গ্রামের সাধারণ রোগীরা চিকিৎসার জন্য বেশি আসেন। তাদের সরলতার সুযোগে কিছু দালাল শ্রেণির লোক বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে অতিরিক্ত টাকা ঠকিয়ে নিচ্ছে। যা আসলেই দুঃখজনক। এরা স্বেচ্ছাসেবক নামধারী এক ধরনের দালাল। এদের প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। নিরীহ রোগী ও স্বজনদের অনেকে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী বিক্রি করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের এভাবে হয়রানি করা এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি করা খুবই অন্যায়। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

৩ শ টাকার এক্স-রে করিয়ে বৃদ্ধকে গুনতে হলো ১ হাজার টাকা

আপলোড টাইম : ০৯:০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কথিত স্বেচ্ছাসেবক সাঈদের বিরুদ্ধে রোগী ভাগিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি রোগী ও স্বজনদের নিকট নিজেকে সদর হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক পরিচয় দিয়ে আসছেন। সরল বিশ্বাসে রোগীরা সাঈদের মিষ্টি কথার ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা দীর্ঘদিনের। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল চত্বর থেকে রোগী ভাগিয়ে তার পছন্দের ‘গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে’ নিয়ে যান এবং সেখান থেকে নেন মোটা অংকের কমিশন। সাঈদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে দীর্ঘ কয়েক বছরে হাসপাতাল চত্বরে অনেককে বুকফাঁটা আর্তনাদ করতে দেখা গেছে। গতকাল সোমবার সকালে এমনই এক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন তিনি।

নজরুল ইসলাম নামের এক বৃদ্ধ রোগীকে ভুলিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যান সাঈদ। চিকিৎসকের লেখা এক্স-রে হাসপাতালের বাইরে ভালো হবে বলে রোগীকে নিয়ে যান গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে। যে এক্স-রে জন্য হাসপাতালের সরকারি খরচ নেওয়া হয় সাড়ে ৩ শ টাকা, সেখানে গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টার থেকে একই এক্স-রে করিয়ে নজরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রীকে গুনতে হয়েছে ১ হাজার টাকা। বিষয়টি বুঝতে পেরে হাসপাতাল চত্বরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন ভুক্তভোগী নজরুল ইসলামের স্ত্রী।

জানা যায়, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কয়রা গ্রামের উঠতি পাড়ার মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে নজরুল ইসলাম। তিনি কিছুদিন পূর্বে মাঠে কাজ করার সময় অসাবধানতায় পড়ে গিয়ে ডান কাঁধে আঘাতপ্রাপ্ত হন। গতকাল সোমবার সকালে পরিবারের লোকজন চিকিৎসার জন্য তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। এসময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. উৎপলা বিশ্বাস রোগ নির্ণয়ের জন্য এক্স-রে করাতে বলেন। এক্স-রে লিখে দেওয়া চিকিৎসাপত্রটি নিয়ে জরুরি বিভাগের বাইরে বের হতেই সাঈদ নিজেকে হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক পরিচয় দিয়ে রোগী ও তাঁর স্বজনকে নিয়ে যান গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে। সেখানে এক্স-রে করিয়ে রোগীর স্বজনের কাছ থেকে এক হাজার টাকা গ্রহণ করেন।

অসুস্থ নজরুল ইসলামের স্ত্রী নাছিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘সাঈদ আমাকে বলে এই ধরনের পরীক্ষা হাসপাতালে হয় না। আমি আপনাকে আমার পরিচিত স্থানে নিয়ে কম খরচে এক্স-রে করিয়ে দিবো। একপর্যায়ে সে আমাকে জোর করে গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে এক্স-রে করিয়ে ১ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। আমি কম দিতে চাইলে তারা আমাকে বলে, ৪টা এক্স-রে করিয়েছি, সে কারণে টাকা বেশি লাগবে।’ তবে ৪টা এক্স-রে করানোর কথা বললেও গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারের করানো এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায়, দুইটা ফিল্মে ৪টা এক্স-রে করানো হয়েছে, যা সদর হাসপাতাল থেকে করালে অনেক কমে করানো যেত।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের রেডিওলজিস্ট সেলিম হোসেন বলেন, ‘দুই ফিল্মে ৪টা এক্স-রে করাতে আমাদের এখানে সাড়ে ৩ শ টাকা নেওয়া হয়।’ এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী বলেন, ‘হাসপাতালে গ্রামের সাধারণ রোগীরা চিকিৎসার জন্য বেশি আসেন। তাদের সরলতার সুযোগে কিছু দালাল শ্রেণির লোক বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে অতিরিক্ত টাকা ঠকিয়ে নিচ্ছে। যা আসলেই দুঃখজনক। এরা স্বেচ্ছাসেবক নামধারী এক ধরনের দালাল। এদের প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। নিরীহ রোগী ও স্বজনদের অনেকে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী বিক্রি করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের এভাবে হয়রানি করা এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি করা খুবই অন্যায়। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’