ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

সাধারণ মানুষ জিম্মি করাই রানা-বিশার কাজ!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৫৯:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জুন ২০২২
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক: ‘ওরা আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে প্রতরণা করেছে। আমি দুই মাস ঘুমাতে পারিনি। আমি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পাচ্ছি। ওরা আমাকে মারার হুমকি দিয়েছে। পরিবারে আমি ছাড়া উপার্জনের কোনো মানুষ নেই। বিষয়টি জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও জানেন।’ গত মঙ্গলবাল এসব কথা বলেন মো. কামাল। তিনি চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর গ্রামের বাসিন্দা। ব্যবসা করেন জীবননগর বাজারে। তিনি বলেন, ‘তেতুলিয়া গ্রামের একজন তাঁকে জানান বাঁকায় ভালো জমি বিক্রি হবে। এ জন্য তিনি দলিল লেখক রানা ও বিশাকে আমার দোকানে নিয়ে আসেন। তাঁদের সঙ্গে ব্যবসার খাতিরে আগেই কিছুটা পরিচয় ছিল। এরপর থেকে রানা ও বিশা নিয়মিত আমার দোকানে যাতায়াত শুরু করেন। আমাদের বন্ধুত্ব হয়। তাঁরা মাঝেমধ্যে আমাকে নাস্তা করাতো, আমিও তাঁদের খেতে দিতাম।’

কামাল বলেন, ‘রানা ও বিশা বাঁকায় ১৫ লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনে দেয়। রেজিস্ট্রির দিন জমির মালিকদের মধ্যে একজনও উপস্থিত ছিলেন না। তবে অন্য মালিকসহ রানা ও বিশারা বলেছিলেন তাঁর বউ নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সে পরে জমি রেজিস্ট্রি করে দেবে। এবিষয়ে কোনো ঝামেলা হবে না। রেজিস্ট্রির পর দলিলে জমির দাম ১০ লাখ টাকা লেখা দেখে রানা ও বিশাকে প্রশ্ন করলে তাঁরা বলেন, আরও ৫ লাখ টাকা বেশি লিখলে আপনার রেজিস্ট্রি খরচ বেশি লাগত। টাকা বাঁচিয়ে দিলাম দোকানে মাল তোলেন।’ কামাল বলেন, ‘সবকিছু ভালোই যাচ্ছিল। ২১দিনের মাথাই কোট থেকে নোটিশ পাই, জমির যে অংশীদার সে দিন রেজিস্ট্রি করে দেননি তিনি কোর্টে সাড়ে ১২ লাখ টাকা দিয়ে জমি ফেরত নিয়েছেন। এ কথা শুনেই আমার মাথাই হাত পড়ে। ছুটে যাই রানা ও বিশার কাছে। তবে তাঁরা এবং তাদের সহযোগীরা আমাকে কথা বলার কোনো সুযোগ দেয়নি।’ সবাই মিলে হুমকি দিয়ে তারা বলেন, ‘জমি কিনেছেন ১৫ লাখ টাকায় আর রেজেস্ট্রি করেছেন ১০ লাখ টাকায়। জানাজানি হলে আপনার নামে মামলা হবে। তাড়াতাড়ি পালিয়ে যান। পরে যানতে পারি আমার কাছ থেকে ফেরত নিয়ে সেই জমি একজনের কাছে ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন রানা-বিশা চক্র।’ কামাল আরও বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ইউএনও অফিসে অভিযোগ করেছিলাম। পরে তারা আমাকে টাকা কম দিয়ে সেটা মিমাংশা করার জন্য চাপ দেয়। তাদের ভয়ে আমি বাধ্য হয়ে অভিযোগপত্র তুলে নিই। একটি জিনিস ভেবে অবাক হচ্ছি, রেজিস্ট্রির খরচ হিসেবে রানা-বিশাকে প্রথমে ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। পরে রানা এসে একদিন ১৪ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। তবে সে তাঁদের হিসাবের খাতায় ১৩ হাজার টাকা লিখে রেখেছে। তাঁরা সুযোগে পেলে সহযোগীদের সঙ্গেও প্রতারণা করেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রানা-বিশা একটি চক্র পরিচালনা করেন। এই চক্রটি বাকা গ্রামের মান্নানের সাথেও প্রতারণা করে। মান্নান জীবিত থাকা অবস্থায় আজিজুল নামের এক ব্যক্তির নিকট জমি বিক্রি করে। এরপর মান্নান একটি সড়ক দুঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর রানা-বিশা চক্রটি মান্নানের ছেলেদের সাথে কথা বলে তাদের নামে একটি ভুয়া দলিল করে ১ লাখ টাকা হাতিয়ে পরবর্তীতে মান্নানের ছেলেরা বিষয়টি জানতে পারে তার বাবা জীবিত অবস্থায় জমি বিক্রি করেছে। পরে রানা-বিশার নিকট টাকা ফেরত চাইলে টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো তাদের হুমকি ধামকি প্রদান করে।

তথ্যনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, রানা-বিশার দলে কাজ করেন ১০ জনের মতো লোক। তাঁরা বন্ধুত্ব করে প্রতারণা করেন। এছাড়া জমি রেজিস্ট্রি করতে হাতিয়ে নেন অতিরিক্ত টাকা। এছাড়া সাব-রেজিষ্টারের স্বাক্ষর ও সীল জাল করে নিজেরাই দলিল রেজিস্ট্রি করে থাকেন। শুধু তাই নয়, জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন ব্যাংকে লোনের জন্য ভুয়া দলিলও করে দেন এই চক্রটি ।

এবিষয়ে জানতে চাইলে রানা বলেন, ‘আমার স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি আমি এখন কোন কথা বলবো না।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশা বলেন, ‘আমি কালাম বা মান্নানের কাছ থেকে কোনো টাকা গ্রহণ করিনি এবং আমার বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছেও কেউ কোনোদিন অভিযোগ দেয়নি। যারা এসব বলছে, তারা মিথ্যা বলছে।’

জীবননগর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মো. নুরুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘রানা-বিশারত ওরফে বিশার বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।’ এসময় জমি রেজিস্ট্রির সময় অতিরিক্ত টাকার নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রানা এবং বিশারত ওরফে বিশার বিরুদ্ধে কালাম নামের একজন একটা অভিযোগ করেছিলেন। তবে পরবতীতে সেই  বিষয়টি মিমাংশা করা হয়েছে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

সাধারণ মানুষ জিম্মি করাই রানা-বিশার কাজ!

আপলোড টাইম : ০২:৫৯:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জুন ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদক: ‘ওরা আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে প্রতরণা করেছে। আমি দুই মাস ঘুমাতে পারিনি। আমি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পাচ্ছি। ওরা আমাকে মারার হুমকি দিয়েছে। পরিবারে আমি ছাড়া উপার্জনের কোনো মানুষ নেই। বিষয়টি জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও জানেন।’ গত মঙ্গলবাল এসব কথা বলেন মো. কামাল। তিনি চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর গ্রামের বাসিন্দা। ব্যবসা করেন জীবননগর বাজারে। তিনি বলেন, ‘তেতুলিয়া গ্রামের একজন তাঁকে জানান বাঁকায় ভালো জমি বিক্রি হবে। এ জন্য তিনি দলিল লেখক রানা ও বিশাকে আমার দোকানে নিয়ে আসেন। তাঁদের সঙ্গে ব্যবসার খাতিরে আগেই কিছুটা পরিচয় ছিল। এরপর থেকে রানা ও বিশা নিয়মিত আমার দোকানে যাতায়াত শুরু করেন। আমাদের বন্ধুত্ব হয়। তাঁরা মাঝেমধ্যে আমাকে নাস্তা করাতো, আমিও তাঁদের খেতে দিতাম।’

কামাল বলেন, ‘রানা ও বিশা বাঁকায় ১৫ লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনে দেয়। রেজিস্ট্রির দিন জমির মালিকদের মধ্যে একজনও উপস্থিত ছিলেন না। তবে অন্য মালিকসহ রানা ও বিশারা বলেছিলেন তাঁর বউ নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সে পরে জমি রেজিস্ট্রি করে দেবে। এবিষয়ে কোনো ঝামেলা হবে না। রেজিস্ট্রির পর দলিলে জমির দাম ১০ লাখ টাকা লেখা দেখে রানা ও বিশাকে প্রশ্ন করলে তাঁরা বলেন, আরও ৫ লাখ টাকা বেশি লিখলে আপনার রেজিস্ট্রি খরচ বেশি লাগত। টাকা বাঁচিয়ে দিলাম দোকানে মাল তোলেন।’ কামাল বলেন, ‘সবকিছু ভালোই যাচ্ছিল। ২১দিনের মাথাই কোট থেকে নোটিশ পাই, জমির যে অংশীদার সে দিন রেজিস্ট্রি করে দেননি তিনি কোর্টে সাড়ে ১২ লাখ টাকা দিয়ে জমি ফেরত নিয়েছেন। এ কথা শুনেই আমার মাথাই হাত পড়ে। ছুটে যাই রানা ও বিশার কাছে। তবে তাঁরা এবং তাদের সহযোগীরা আমাকে কথা বলার কোনো সুযোগ দেয়নি।’ সবাই মিলে হুমকি দিয়ে তারা বলেন, ‘জমি কিনেছেন ১৫ লাখ টাকায় আর রেজেস্ট্রি করেছেন ১০ লাখ টাকায়। জানাজানি হলে আপনার নামে মামলা হবে। তাড়াতাড়ি পালিয়ে যান। পরে যানতে পারি আমার কাছ থেকে ফেরত নিয়ে সেই জমি একজনের কাছে ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন রানা-বিশা চক্র।’ কামাল আরও বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ইউএনও অফিসে অভিযোগ করেছিলাম। পরে তারা আমাকে টাকা কম দিয়ে সেটা মিমাংশা করার জন্য চাপ দেয়। তাদের ভয়ে আমি বাধ্য হয়ে অভিযোগপত্র তুলে নিই। একটি জিনিস ভেবে অবাক হচ্ছি, রেজিস্ট্রির খরচ হিসেবে রানা-বিশাকে প্রথমে ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। পরে রানা এসে একদিন ১৪ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। তবে সে তাঁদের হিসাবের খাতায় ১৩ হাজার টাকা লিখে রেখেছে। তাঁরা সুযোগে পেলে সহযোগীদের সঙ্গেও প্রতারণা করেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রানা-বিশা একটি চক্র পরিচালনা করেন। এই চক্রটি বাকা গ্রামের মান্নানের সাথেও প্রতারণা করে। মান্নান জীবিত থাকা অবস্থায় আজিজুল নামের এক ব্যক্তির নিকট জমি বিক্রি করে। এরপর মান্নান একটি সড়ক দুঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর রানা-বিশা চক্রটি মান্নানের ছেলেদের সাথে কথা বলে তাদের নামে একটি ভুয়া দলিল করে ১ লাখ টাকা হাতিয়ে পরবর্তীতে মান্নানের ছেলেরা বিষয়টি জানতে পারে তার বাবা জীবিত অবস্থায় জমি বিক্রি করেছে। পরে রানা-বিশার নিকট টাকা ফেরত চাইলে টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো তাদের হুমকি ধামকি প্রদান করে।

তথ্যনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, রানা-বিশার দলে কাজ করেন ১০ জনের মতো লোক। তাঁরা বন্ধুত্ব করে প্রতারণা করেন। এছাড়া জমি রেজিস্ট্রি করতে হাতিয়ে নেন অতিরিক্ত টাকা। এছাড়া সাব-রেজিষ্টারের স্বাক্ষর ও সীল জাল করে নিজেরাই দলিল রেজিস্ট্রি করে থাকেন। শুধু তাই নয়, জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন ব্যাংকে লোনের জন্য ভুয়া দলিলও করে দেন এই চক্রটি ।

এবিষয়ে জানতে চাইলে রানা বলেন, ‘আমার স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি আমি এখন কোন কথা বলবো না।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশা বলেন, ‘আমি কালাম বা মান্নানের কাছ থেকে কোনো টাকা গ্রহণ করিনি এবং আমার বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছেও কেউ কোনোদিন অভিযোগ দেয়নি। যারা এসব বলছে, তারা মিথ্যা বলছে।’

জীবননগর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মো. নুরুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘রানা-বিশারত ওরফে বিশার বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।’ এসময় জমি রেজিস্ট্রির সময় অতিরিক্ত টাকার নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রানা এবং বিশারত ওরফে বিশার বিরুদ্ধে কালাম নামের একজন একটা অভিযোগ করেছিলেন। তবে পরবতীতে সেই  বিষয়টি মিমাংশা করা হয়েছে।’