সমীকরণ প্রতিবেদন:
জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা ও দর্শনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার পৃথক আয়োজনে এসব কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিকরা।
চুয়াডাঙ্গা:
সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের আয়োজনে প্রেসক্লাব মিলনায়তেন এ প্রতিবাদ সভা ও ক্লাব প্রাঙ্গনে সড়কের পাশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল-আমিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচির উপস্থাপনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন স্থানীয় সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদের আহ্বায়ক আজাদ মালিতা, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সভাপতি নাজমুল হক স্বপন, সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. রফিকুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সনি, প্রবীণ সাংবাদিক এম এম আলাউদ্দীন, সাংবাদিক এম এ মামুন, সাংবাদিক হুসাইন মালিক প্রমুখ।

প্রতিবাদ সভায় জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলা হয়, অতীতেও অনেক সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন, যাদের বিচার এখনো হয়নি। সত্যের পক্ষে লিখতে গিয়ে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের হত্যাকাণ্ড সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতার উদাহরণ। বক্তারা সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার পরিপন্থী। ফলে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যায় জড়িত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে দেশে আর একজন সাংবাদিককে নৃশংসতার শিকার হতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে যেসকল সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছে, ওইসব হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে গোলাম রব্বানীকে এভাবে প্রাণ হারাতে হতো না।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাথাটিয়ায় পৌঁছালে ১০ থেকে ১২ জন দুর্বৃত্ত সাংবাদিক নাদিমকে পিটিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এরপর রাত ১২টায় সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে তিনি মারা যান। নাদিম হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুলকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লে¬খসহ অজ্ঞাত ২৫ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

দর্শনা:
সাংবাদিক নাদিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে দর্শনার সংবাদকর্মীরা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দর্শনা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির আয়োজনে দর্শনার পৌর শহরের রেলবাজার বটতলা চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

মাননববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে কুপিয়ে নৃশংস হত্যা সংবাদকর্মীদের জন্য হুমকি। প্রভাবশালীরা সাংবাদিক নির্যাতন করেও বারবার পার পেয়ে যায়, বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটানোর ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। অবিলম্বে নাদিম হত্যাকারীদের ফাঁসি দিতে হবে। যাতে পরবর্তীতে আর কেউ সাংবাদিক নির্যাতনের সাহস না পায়। বক্তারা আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার প্রধান অস্ত্র। দুর্নীতিবাজদের উস্কে দিচ্ছে এই আইন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন করতে হবে।

দর্শনা প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা উদীচীর সভাপতি হাবিবি জহির রায়হান, ডিবিসি টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি কামরুজ্জামান সেলিম, দর্শনা গণগ্রন্থগারের পরিচালক আবু সুফিয়ান, জীবননগর প্রেসক্লাবের সহসভাপতি নারায়ণ ভৌমিক, দর্শনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হানিফ মন্ডল, দর্শনা সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইকরামুল হক পিপুল, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব মামুন, সংগঠনিক সম্পাদক হাসমত আলী, দর্শনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান ধীরু, মো. আওয়াল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী প্রমুখ।