ইপেপার । আজ সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

লেবু চাষ করে বিপাকে চাষি!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৬:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০২২
  • / ৩০ বার পড়া হয়েছে

আকিমুল ইসলাম, তিতুদহ:
থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ রঙের ভাতে খাওয়া লেবু, যা দেখতে সুন্দর ও অধিক ফলনশীল মনে হলেও কৃষকদের কাছে এ বছর লাভ যেন মরীচিকা। লেবুর দাম নিম্নমুখী হওয়ায় বিপাকে পড়েছে গড়াইটুপি ও তিতুদহের লেবু চাষিরা। উৎপাদন বেশি কিন্তু বাজারে ক্রেতা সংকটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। হালিতে বিক্রি হওয়া লেবু এখন বিক্রি হচ্ছে কেজির ওজনে। এক কেজি লেবুর খুচরা মূল্য পাঁচ টাকা ও পিস প্রতি পড়ছে ১০ পয়সা। গত এক সপ্তাহ ধরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত গড়াইটুপি ও তিতুদহ ইউনিয়নের আড়িয়া, বড়শলুয়া, ছোটশলুয়া, বলদিয়া, তিতুদহ, গোবরগাড়া, সড়াবাড়িয়া, গহেরপুর, বাটিকাডাঙ্গা, বিত্তিরদাড়িসহ আশেপাশের কয়েকটি মাঠ ও বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। গত রমজান মাসে অধিকমূল্যে লেবু বিক্রি করতে পেরে লাভবান হলেও হঠাৎ মূল্য হ্রসে অনেক বাগানের মালিক বাগান কেটে অন্য ফসল ফলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতিমধ্যে ।

আড়িয়া গ্রামের লেবু চাষী মূসার সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘চলতি মৌসুমে তার বাগানে বেশ লেবু এসেছে। লেবু উত্তোলন করে বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। প্রতি কেজি দুই টাকা বলায় সেখানে না দিয়ে আস্তে আস্তে হাটে হাটে বিক্রি করছেন। তবে এখন আর কেউ লেবু কিনতে চাচ্ছে না। এতে বেশির ভাগ লেবু নষ্ট হচ্ছে বাগানেই। আগে প্রতি পিচ লেবু ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন হাটে প্রতি কেজি ৫ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। যেখানে প্রতি পিস প্রতি গড়ে ১০ পয়সা। ফলে জমি থেকে লেবু বাজারজাত ও শ্রমিক খরচ না ওঠাই গাছের লেবু গাছেই থাকছে এবং ঝরে পড়লেও তার দিকে নজর দিচ্ছে না কেউ। ইতিমধ্যে দাম কম পাওয়ায় লেবু চাষ বাদ দিয়ে অন্য চাষে ঝুকছেন চাষীরা।’
অন্য এক লেবু চাষী তওহিদ জানান, তার নিজের তিন বিঘা জমিতে লেবু বাগান রয়েছে। এলাচি ও চায়না থ্রি জাতের লেবু চাষ করেছেন তিনি। বাগানে বিপুল পরিমাণে লেবু ধরেছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। বাইরে থেকেও তেমন ক্রেতা এ অঞ্চলে আসছেন না। ফলে গাছ থেকে উত্তোলন না করায় বাগানের মাটিতে পড়ে পঁচে যাচ্ছে এসব লেবু।

চুয়াডাঙ্গা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তারিফুজ্জামান বলেন, ‘এবছর প্রচুর পরিমানে লেবুর উৎপাদন হয়েছে তবে হঠাৎ লেবুর দাম না থাকায় সবাই বাগান সরিয়ে নিচ্ছে। এবছর কাগজি, বাউ কাগজি, পাতি লেবুসহ কয়েকটি চায়না জাতের অন্তত ১০০ বিঘার অধিক জমিতে ভাতে খাওয়ার এসব জাতের লেবুর চাষ করেছে কৃষকেরা।

এবিষয়ে সরোজগঞ্জ বাজারের কয়েকজন লেবু ব্যাপারীর সাথে কথা হলে তারা জানান, চলতি মৌসুমে লেবু বিক্রি করে পরিবহণ খরচই উঠছে না। সংগ্রহ ও শ্রমিকের খরচ দিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অন্যান্য সবজিসহ প্রায় সব জিনিসের দামই বাড়ছে। কিন্তু লেবুর দাম দিন দিন কমে যাচ্ছে। এজন্য সরকারিভাবে লেবু সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবী জানান তারা। না হলে ভবিষ্যৎতে বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষে আগ্রহ হারাবেন কৃষকরা। বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষ ছাড়াও বাগানের ছায়াতে কিংবা জমির আইলে সাথি ফসল হিসাবেও কৃষকরা লেবু চাষ করছেন। তাতে করে চলতি মৌসুমে এই এলাকায় ১০০ বিঘার অধিক জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। বাজারে আমদানি বেশি হওয়ার কারণে লেবুর দাম বর্তমানে কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অনেকে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

লেবু চাষ করে বিপাকে চাষি!

আপলোড টাইম : ০৯:১৬:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ অক্টোবর ২০২২

আকিমুল ইসলাম, তিতুদহ:
থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ রঙের ভাতে খাওয়া লেবু, যা দেখতে সুন্দর ও অধিক ফলনশীল মনে হলেও কৃষকদের কাছে এ বছর লাভ যেন মরীচিকা। লেবুর দাম নিম্নমুখী হওয়ায় বিপাকে পড়েছে গড়াইটুপি ও তিতুদহের লেবু চাষিরা। উৎপাদন বেশি কিন্তু বাজারে ক্রেতা সংকটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। হালিতে বিক্রি হওয়া লেবু এখন বিক্রি হচ্ছে কেজির ওজনে। এক কেজি লেবুর খুচরা মূল্য পাঁচ টাকা ও পিস প্রতি পড়ছে ১০ পয়সা। গত এক সপ্তাহ ধরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত গড়াইটুপি ও তিতুদহ ইউনিয়নের আড়িয়া, বড়শলুয়া, ছোটশলুয়া, বলদিয়া, তিতুদহ, গোবরগাড়া, সড়াবাড়িয়া, গহেরপুর, বাটিকাডাঙ্গা, বিত্তিরদাড়িসহ আশেপাশের কয়েকটি মাঠ ও বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। গত রমজান মাসে অধিকমূল্যে লেবু বিক্রি করতে পেরে লাভবান হলেও হঠাৎ মূল্য হ্রসে অনেক বাগানের মালিক বাগান কেটে অন্য ফসল ফলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতিমধ্যে ।

আড়িয়া গ্রামের লেবু চাষী মূসার সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘চলতি মৌসুমে তার বাগানে বেশ লেবু এসেছে। লেবু উত্তোলন করে বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। প্রতি কেজি দুই টাকা বলায় সেখানে না দিয়ে আস্তে আস্তে হাটে হাটে বিক্রি করছেন। তবে এখন আর কেউ লেবু কিনতে চাচ্ছে না। এতে বেশির ভাগ লেবু নষ্ট হচ্ছে বাগানেই। আগে প্রতি পিচ লেবু ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন হাটে প্রতি কেজি ৫ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। যেখানে প্রতি পিস প্রতি গড়ে ১০ পয়সা। ফলে জমি থেকে লেবু বাজারজাত ও শ্রমিক খরচ না ওঠাই গাছের লেবু গাছেই থাকছে এবং ঝরে পড়লেও তার দিকে নজর দিচ্ছে না কেউ। ইতিমধ্যে দাম কম পাওয়ায় লেবু চাষ বাদ দিয়ে অন্য চাষে ঝুকছেন চাষীরা।’
অন্য এক লেবু চাষী তওহিদ জানান, তার নিজের তিন বিঘা জমিতে লেবু বাগান রয়েছে। এলাচি ও চায়না থ্রি জাতের লেবু চাষ করেছেন তিনি। বাগানে বিপুল পরিমাণে লেবু ধরেছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। বাইরে থেকেও তেমন ক্রেতা এ অঞ্চলে আসছেন না। ফলে গাছ থেকে উত্তোলন না করায় বাগানের মাটিতে পড়ে পঁচে যাচ্ছে এসব লেবু।

চুয়াডাঙ্গা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তারিফুজ্জামান বলেন, ‘এবছর প্রচুর পরিমানে লেবুর উৎপাদন হয়েছে তবে হঠাৎ লেবুর দাম না থাকায় সবাই বাগান সরিয়ে নিচ্ছে। এবছর কাগজি, বাউ কাগজি, পাতি লেবুসহ কয়েকটি চায়না জাতের অন্তত ১০০ বিঘার অধিক জমিতে ভাতে খাওয়ার এসব জাতের লেবুর চাষ করেছে কৃষকেরা।

এবিষয়ে সরোজগঞ্জ বাজারের কয়েকজন লেবু ব্যাপারীর সাথে কথা হলে তারা জানান, চলতি মৌসুমে লেবু বিক্রি করে পরিবহণ খরচই উঠছে না। সংগ্রহ ও শ্রমিকের খরচ দিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অন্যান্য সবজিসহ প্রায় সব জিনিসের দামই বাড়ছে। কিন্তু লেবুর দাম দিন দিন কমে যাচ্ছে। এজন্য সরকারিভাবে লেবু সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবী জানান তারা। না হলে ভবিষ্যৎতে বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষে আগ্রহ হারাবেন কৃষকরা। বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষ ছাড়াও বাগানের ছায়াতে কিংবা জমির আইলে সাথি ফসল হিসাবেও কৃষকরা লেবু চাষ করছেন। তাতে করে চলতি মৌসুমে এই এলাকায় ১০০ বিঘার অধিক জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। বাজারে আমদানি বেশি হওয়ার কারণে লেবুর দাম বর্তমানে কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অনেকে।’