ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

যৌতুকের টাকা দিতে না পারাই গৃহবধূকে ঘরবন্দি করে নির্যাতন

জীবননগর অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৬:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ১১৫ বার পড়া হয়েছে

যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় গৃহবধূকে পাঁচ দিন ঘরবন্দি করে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। পরে দর্শনা থানা পুলিশের সহযোগিতায় গত শনিবার বিকেলে দর্শনা থানার কুন্দিপুর বেলেমাঠ গ্রাম থেকে অসুস্থ গৃহবধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নির্যাতিত গৃহবধূ সাবিনা (২০) দর্শনা থানার গড়াইটুপি ইউনিয়নের গোবরগাড়া গ্রামের মৃত মোফাজ্জেল হোসেনের মেয়ে।

প্রত্যাক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের প্রথম দিকে পারিবারিকভাবে সাবিনার সঙ্গে দর্শনা থানার কুন্দিপুর বেলেমাঠ গ্রামের দেলোয়ারের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই মাস পর দেলোয়ার একটি দোকান দেওয়ার জন্য সাবিনার ভাইয়ের নিকট থেকে যৌতুক হিসেবে এক লাখ টাকা দাবি করলে তারা সেই দাবি মেনে নিয়ে নগদ এক লাখ টাকা দেয়। পরবর্তীতে আবার এক লাখ টাকা দাবি করলে সেই টাকা দিতে অপরাগতা জানান সাবিনা। সেই থেকে কারণে-অকারণে তাঁকে মারধর করতে থাকেন দেলোয়ার। সাবিনার বাবার মৃত্যুর পর থেকে তার সমস্থ দায়ভার পড়ে ভাইয়ের ওপর। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে সাবিনা টাকা আনতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে পাঁচ দিন ঘরের মধ্যে আটকে রাখে এবং খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। সংবাদ শুনে সাবিনার ভাই শিপন গত শনিবার দর্শনা থানা পুলিশের সহযোগিতায় ওই বাড়ি থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় সাবিনাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

গৃহবধূ সাবিনা অভিযোগ করে বলেন, তাঁর স্বামী দেলোয়ার যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তিনি টাকা আনতে অপরাগতা জানালে তাঁকে তার স্বামী ও তাঁর ভাই ওসমান মিলে মারধর করে এবং খাবার না দিয়ে ঘরের মধ্যে পাঁচ দিন যাবৎ আটকিয়ে রাখে।

নির্যাতিত গৃহবধূ সাবিনার ভাই শিপন বলেন, ‘বিয়ের সময় তার কোনো দাবি ছিল না। পরে টাকার জন্য আমার বোনকে মারধর করে। বোনের সুখের জন্য আমরা কষ্ট করে তাকে যৌতুক হিসেবে নগদ ১ লাখ টাকা দিয়েছি। আবার সে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় আমার বোনকে খাবার না দিয়ে ঘরের মধ্যে আটকিয়ে রাখে। এ খবর শুনে আমি দর্শনা থানায় যেয়ে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে আমার বোনকে সেখান থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য জীবননগর হাসপাতালে ভর্তি করি।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি কোনো টাকা চাইনি এবং তারাও আমাকে কোনো টাকা দেয়নি। আমার স্ত্রী প্রায়ই তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। আমি নিষেধ করলে সে গলাই দঁড়ি দিতে যায়। আমি তার বাবার বাড়িতে যেতে মানা করা সত্ত্বেও যখন সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল তখন তাকে আমি একটা চড় মেরেছি। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে যৌতুক নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. হেলেনা আক্তার নিপা বলেন, সাবিনার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন।

দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লুৎফর কবির বলেন, যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে নির্যাতন করেছে, এমন কোনো অভিযোগ থানায় এখন পর্যন্ত কেউ করেনি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

যৌতুকের টাকা দিতে না পারাই গৃহবধূকে ঘরবন্দি করে নির্যাতন

আপলোড টাইম : ০৯:০৬:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২১

যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় গৃহবধূকে পাঁচ দিন ঘরবন্দি করে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। পরে দর্শনা থানা পুলিশের সহযোগিতায় গত শনিবার বিকেলে দর্শনা থানার কুন্দিপুর বেলেমাঠ গ্রাম থেকে অসুস্থ গৃহবধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নির্যাতিত গৃহবধূ সাবিনা (২০) দর্শনা থানার গড়াইটুপি ইউনিয়নের গোবরগাড়া গ্রামের মৃত মোফাজ্জেল হোসেনের মেয়ে।

প্রত্যাক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের প্রথম দিকে পারিবারিকভাবে সাবিনার সঙ্গে দর্শনা থানার কুন্দিপুর বেলেমাঠ গ্রামের দেলোয়ারের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই মাস পর দেলোয়ার একটি দোকান দেওয়ার জন্য সাবিনার ভাইয়ের নিকট থেকে যৌতুক হিসেবে এক লাখ টাকা দাবি করলে তারা সেই দাবি মেনে নিয়ে নগদ এক লাখ টাকা দেয়। পরবর্তীতে আবার এক লাখ টাকা দাবি করলে সেই টাকা দিতে অপরাগতা জানান সাবিনা। সেই থেকে কারণে-অকারণে তাঁকে মারধর করতে থাকেন দেলোয়ার। সাবিনার বাবার মৃত্যুর পর থেকে তার সমস্থ দায়ভার পড়ে ভাইয়ের ওপর। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে সাবিনা টাকা আনতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে পাঁচ দিন ঘরের মধ্যে আটকে রাখে এবং খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। সংবাদ শুনে সাবিনার ভাই শিপন গত শনিবার দর্শনা থানা পুলিশের সহযোগিতায় ওই বাড়ি থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় সাবিনাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

গৃহবধূ সাবিনা অভিযোগ করে বলেন, তাঁর স্বামী দেলোয়ার যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তিনি টাকা আনতে অপরাগতা জানালে তাঁকে তার স্বামী ও তাঁর ভাই ওসমান মিলে মারধর করে এবং খাবার না দিয়ে ঘরের মধ্যে পাঁচ দিন যাবৎ আটকিয়ে রাখে।

নির্যাতিত গৃহবধূ সাবিনার ভাই শিপন বলেন, ‘বিয়ের সময় তার কোনো দাবি ছিল না। পরে টাকার জন্য আমার বোনকে মারধর করে। বোনের সুখের জন্য আমরা কষ্ট করে তাকে যৌতুক হিসেবে নগদ ১ লাখ টাকা দিয়েছি। আবার সে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় আমার বোনকে খাবার না দিয়ে ঘরের মধ্যে আটকিয়ে রাখে। এ খবর শুনে আমি দর্শনা থানায় যেয়ে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে আমার বোনকে সেখান থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য জীবননগর হাসপাতালে ভর্তি করি।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি কোনো টাকা চাইনি এবং তারাও আমাকে কোনো টাকা দেয়নি। আমার স্ত্রী প্রায়ই তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। আমি নিষেধ করলে সে গলাই দঁড়ি দিতে যায়। আমি তার বাবার বাড়িতে যেতে মানা করা সত্ত্বেও যখন সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল তখন তাকে আমি একটা চড় মেরেছি। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে যৌতুক নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. হেলেনা আক্তার নিপা বলেন, সাবিনার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন।

দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লুৎফর কবির বলেন, যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে নির্যাতন করেছে, এমন কোনো অভিযোগ থানায় এখন পর্যন্ত কেউ করেনি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।