ব্লকেড চলবে, বাধা এলে প্রতিরোধ : কোটাবিরোধীদের ঘোষণা
- আপলোড টাইম : ০৮:৪৬:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪
- / ৭৫ বার পড়া হয়েছে
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে শুরু হওয়া ব্লকেড কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার রাত ৮টার দিকে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক সার্জিস আলম এ ঘোষণা দেন। এর আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আন্দোলনকারীদের চার সমন্বয়ককে আলোচনার জন্য নিয়ে যায় পুলিশ। সেখান থেকে ফিরে এ ঘোষণা দেন তারা। এছাড়াও আন্দোলনে কোনো ধরনের বাধা দেয়ার চেষ্টা হলে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া দেয়া হয়। সমন্বয়ক সার্জিস আলম বলেন, কোটা সংবিধানে বাধ্যতামূলক নয়। এটি দিতে বাধ্য করা সংবিধানবিরোধী। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এই আন্দোলন যৌক্তিক নয়। বঙ্গবন্ধুর পাশে কিন্তু মোস্তাক ছিল। আমাদের সন্দেহ প্রধানমন্ত্রীর পাশে কিছু মোস্তাক আছে।
আমাদের প্রাণের দাবিগুলো তার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন না। আমরা আজ শাহবাগ থেকে বলতে চাই, পুরো বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আপনি সংবিধান অনুসারে কোটা বিলুপ্ত করুন। পিছিয়ে পড়াদের জন্য কিছু কোটা থাকতে পারবে। যেদিন আমাদের দাবি আদায় হবে সেদিন আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যাব।
আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আগামীকাল থেকে আমাদের এক দাবি। আমাদের দাবিটি হচ্ছে সব গ্রেডে অযৌক্তিক বৈষম্যমূলক সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটা ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করতে হবে। আগামী দিনের কর্মসূচির বিষয়ে নাহিদ বলেন, আমাদের বলা হচ্ছে এটা আদালতের বিষয়। ৫০ বছর অপেক্ষা করেছি। আমাদের দাবি যদি যৌক্তিক মনে না হয় তাহলে আপনারা কোটা ১০০% করে দিন।
এদিকে, এতদিন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে কোটা বৈষম্য নিরসনের দাবি জানালেও এবার সব গ্রেডে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটা ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা সংস্কার করতে হবে। আন্দোলনের সমন্ব^য়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এবার ১ম ও ২য় শ্রেণীতে নয়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীতেও কোটার যৌক্তিক সংস্কার চাই আমরা। আমাদের বারবার আদালত দেখানো হচ্ছে। আমরা তাদের সংবিধান দেখাচ্ছি। তিনি বলেন, কোটার বিষয়ে রাজপথ থেকেই ফায়সালা হবে। আলাপের দিন শেষ হয়ে গেছে। আমরা আলোচনা করেছিলাম ২০১৮ সালে। বিনিময়ে আমরা পেয়েছি প্রহসন।
সমন্ব^য়ক সার্জিস আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আমাদের ভয় হয়। ১৯৭৫ সালের আগে বঙ্গবন্ধুর সাথেও বন্ধুরূপে মোশতাক ছিল। প্রধানমন্ত্রীর পাশেও কিছু মোশতাক রয়েছে, যারা শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন তার কানে পৌঁছে দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ছাত্র সমাজ প্রধানমন্ত্রীর দিকে চেয়ে আছে। সংবিধান অনুসারে যৌক্তিক সংস্কার করুন। নাতি-পুতি কোটা আমরা মানি না। একটি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা হতে পারে না। সমম্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, কোটা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। আমরা মেধাভিত্তিক প্রশাসন গড়তে চাই। এটা একই সাথে কৃষক-শ্রমিকের আন্দোলন।
গতকাল বেলা ৩টা থেকে রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, নীলক্ষেত, চাঁনখারপুল, বাংলা মোটর, আগারগাঁও, পরীবাগ, হাতিরপুল মোড় এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বাংলা ব্লকড কর্মসূচি পালিত হয়। ৬ ঘণ্টাব্যাপী শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিটি চলে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা বলেন, আমাদের আন্দোলন চার দফা দাবি নিয়ে শুরু হয়েছিল। আগামীকাল থেকে আমরা এক দফা দাবি নিয়ে আমরা কর্মসূচি পালন করব। এক দফা দাবিটি হলো, সরকারি চাকরিতে সব ধরনের অযোক্তিক কোটা (প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী কোটা ছাড়া) বাতিল করতে হবে। দাবি মানা না হলে বাংলা ব্লকডের সারা দেশ অচল করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে শিক্ষার্থী সমাজ।
কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক শারজিস আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা নাকি দেখছেন না। আমরা বলতে চাই, জাতীয় সংসদে ৩৫০টি আসনের মধ্যে সংক্ষরিত আসন ১৪ শতাংশ মাত্র। সংসদে যদি আসন বৈষম্য না হয় তাহলে সরকারিতে চাকরিতে কোটা বৈষম্য থাকবে কেন। সাংবিধানিকভাবে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সর্বমোট ৫৬ শতাংশ কোটা অযৌক্তিক। আপনি ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছেন। মেধাবীদের উপেক্ষা করে সেটার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
আগামী কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে কোটা আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, কোটা আন্দোলনের যৌক্তিকতা ছিল সেটা আমরা ২০১৮ সালে প্রমাণ করে দিয়েছি। এ জন্যই কোটা বাতিলে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। কিন্তু ছয় বছর পর আবারো কেন কোটা পুনর্বহাল হলো। আমরা শিক্ষার্থী সমাজ শুধু কোটা বাতিল নয়, সংবিধান রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছি। আমরা আমাদের দাবি আদায় না করে রাজপথ ছাড়ব না। কোটা সংস্কার আন্দোলনের আমরা যে বাংলা ব্লকড কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছি, সেটা আরো জোরদার করা হবে। আজ সোমবার থেকে দেশের জেলা-উপজেলার শিক্ষার্থীদের বাংলা ব্লকড আন্দোলনের অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানান তিনি।
চট্টগ্রামে বাংলা ব্লকেডে সড়কে স্থবিরতা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহাল রাখার দাবিসহ চার দফা দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছে। গতকাল রোববার বিকেল ৪টার দিকে নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় জড়ো হয়ে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বহদ্দারহাটের দিকে যেতে চাইলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে মিছিলের গতিপথ পরিবর্তন করে লালখান বাজারে এসে জড়ো হয়। ফলে চট্টগ্রামের প্রধান এই সড়কে যানবাহন চলাচলে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে গতকাল ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ও বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করেন ববি শিক্ষার্থীরা। এরপর দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালের সামনের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করেন ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন প্লাকার্ড নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেন।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জাহাঙ্গীরনগর বিশবিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের (ডেইরি গেট) সামনে গতকাল কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীরা ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষার্থীদের অবরোধে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ বিকেল ৪টায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সাড়ে ৫টার দিকে চর পাথালিয়া এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধ ছিল ঢাকার সাথে সংযুক্ত দেশের অন্যতম ব্যস্ততম সড়কটি। এ সময় ঢাকা ও খুলনা অঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা শত শত বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন আটকা পড়ে। তবে অ্যাম্বুলেন্স, অসুস্থ রোগী বহনকারী গাড়ি ও জরুরি অন্যান্য গাড়ি ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা। রাস্তা অবরোধ করে এ সময় ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।