ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

বিসিক শিল্পনগরীতে উদ্যোক্তা ও সাংবাদিক লাঞ্ছিত!

প্রতিবেদক, মেহেরপুর:
  • আপলোড টাইম : ০৩:৩৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী ২০২২
  • / ৪২ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুর বিসিক শিল্পনগরীতে করোনা প্যাকেজের লোনের আবেদনের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন তিন শিল্প উদ্যোক্তা। এসময় মেহেরপুর তাঁতী লীগের সহসভাপতি মালেকুল ইসলাম টিটোনের নেতৃত্বে একটি বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী বিসিক এলাকায় ঢুকে ওই তিন উদ্যোক্তাকে লাঞ্ছিত করেন।  এসময় দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রতিনিধি ও এশিয়ান টিভির জেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমান জনিকেও লাঞ্ছিত করেন তিনি। লাঞ্ছিত উদ্যোক্তারা হলেন- মেহেরপুর স্কয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও ভাই ভাই স্টিল গ্যালারির পরিচালক মো.ফিরোজ। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বিসিক শিল্পনগরীতে এ ঘটনা ঘটে।

শিল্প উদ্যোক্তা স্কয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে সরকারের শিল্প উদ্যোক্তাদের বিসিকের মাধ্যমে বিশেষ ঋণ দেওয়া চালু রয়েছে। সেই ঋণের আবেদনের বিষয়ে আমিসহ চারজন উদ্যোক্তা খোঁজ নিতে গেলে মেহেরপুর বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তারা প্রথমে ঘাড় ধরে বের করে দেয়। পরে আমরা এর প্রতিবাদ করলে তাঁতী লীগের নেতা মালেকুল ইসলাম টিটোনসহ কয়েকজন আমাদের এসে হুমকি-ধামকি দেন।

তাঁতী লীগের সহসভাপতি মালেকুল ইসলাম টিটোন উচ্চ গলায় বলেন, ‘এটা একটি সরকারি পতিষ্ঠান। আমি এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। এটা দেখার দায়িত্ব দিয়েছে আমাকে। এ প্রতিষ্ঠান কে ঢুকবে না ঢুকবে আমি দেখব। আর সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকরা কেন? ক্যামেরা বন্ধ কর। না হলে অসুবিধা আছে। শিল্প উদ্যোক্তা আবুল কালাম আজাদকে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, এই তোকে কে ধাক্কা মেরেছে। তোকে কে লোন দেবে? আর তুই কীভাবে লোন নিস, আমি দেখে নেব।’

এসময় সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদ করলে টিটোন বলেন, ‘আমি এভাবে বলিনি। আপনারাতো আমাদেরই।’ তাঁতী লীগ নেতা সরকারি অফিসে কেন, এমন প্রশ্ন জবাবে বলেন, ‘এখানে আমার ভগ্নিপতি আসাদুল ইসলাম চাকরি করে। সে আমাকে ফোন দিয়ে ডেকেছে। তাই আমি এসেছি বিষয়টি দেখতে।’

তাঁতী লীগের সভাপতি নুর ইসলাম সুবাদ মুঠোফোনে বলেন, ‘বিসিকে সে কেন যাবে? সে বিভিন্ন সময় তাঁতী লীগের সভাপতিরও পরিচয় দেয়। আমি অসুস্থ, তাই এর প্রতিবাদ করতে পারি না। এভাবে তাঁতী লীগের পরিচয় দিয়ে যেখানে সেখানে হুমকি-ধামকি দেবে এটা ঠিক না। বিষয়টা আমরা দেখছি। তবে এটা নিয়ে নিউজ করেন না।’

পরে তাঁতী লীগের সহসভাপতি মালেকুল ইসলাম টিটোন মেহেরপুর রিপোর্টাস ক্লাবের সভাপতিকে ফোন করে বলেন, ‘বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি তাঁতী লীগের কেউ নয়। আমি কৃষক লীগের সদর থানার সহসভাপতি। তাছাড়া আমি একজন শ্রমিক। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দেশের প্রতি আমার ভালোবাসা আছে। তাই বিসিকে গিয়েছিলাম। সাংবাদিকরা ভুল বুঝেছে।’

মেহেরপুর বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক মো. আশানুজ্জামান বলেন, ‘কাকে ঋণ দেব আর না দেব, সেটা আমাদের বিষয়। এ বিষয়ে আমরা জবাব দিতে বাধ্য নয়। তাছাড়া মেহেরপুর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক লিখন আমার আত্মীয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আবুল কালাম আমাদের হুমকি-ধামকি দিলে তাকে আমাদের কর্মচারীরা ঘাড় ধরে বের করে দেন। আর টিটোন আমাদের কর্মকর্তা আসাদুলের আত্মীয়। তার ডাকে সে এসেছে।’

বিসিক শিল্পনগরী খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক তাহেরা নাসরিন বলেন, লোন দেবার কিছুু নিয়ম আছে। এই নিয়মের মধ্যে যারা পড়বে, তারা লোন পাবেন। তবে বহিরাগত সন্ত্রাসীকে ডেকে যদি কাউকে হেনস্তা করা হয়, তাহলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বিসিক শিল্পনগরীতে উদ্যোক্তা ও সাংবাদিক লাঞ্ছিত!

আপলোড টাইম : ০৩:৩৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী ২০২২

মেহেরপুর বিসিক শিল্পনগরীতে করোনা প্যাকেজের লোনের আবেদনের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন তিন শিল্প উদ্যোক্তা। এসময় মেহেরপুর তাঁতী লীগের সহসভাপতি মালেকুল ইসলাম টিটোনের নেতৃত্বে একটি বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী বিসিক এলাকায় ঢুকে ওই তিন উদ্যোক্তাকে লাঞ্ছিত করেন।  এসময় দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রতিনিধি ও এশিয়ান টিভির জেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমান জনিকেও লাঞ্ছিত করেন তিনি। লাঞ্ছিত উদ্যোক্তারা হলেন- মেহেরপুর স্কয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও ভাই ভাই স্টিল গ্যালারির পরিচালক মো.ফিরোজ। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বিসিক শিল্পনগরীতে এ ঘটনা ঘটে।

শিল্প উদ্যোক্তা স্কয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে সরকারের শিল্প উদ্যোক্তাদের বিসিকের মাধ্যমে বিশেষ ঋণ দেওয়া চালু রয়েছে। সেই ঋণের আবেদনের বিষয়ে আমিসহ চারজন উদ্যোক্তা খোঁজ নিতে গেলে মেহেরপুর বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তারা প্রথমে ঘাড় ধরে বের করে দেয়। পরে আমরা এর প্রতিবাদ করলে তাঁতী লীগের নেতা মালেকুল ইসলাম টিটোনসহ কয়েকজন আমাদের এসে হুমকি-ধামকি দেন।

তাঁতী লীগের সহসভাপতি মালেকুল ইসলাম টিটোন উচ্চ গলায় বলেন, ‘এটা একটি সরকারি পতিষ্ঠান। আমি এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। এটা দেখার দায়িত্ব দিয়েছে আমাকে। এ প্রতিষ্ঠান কে ঢুকবে না ঢুকবে আমি দেখব। আর সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকরা কেন? ক্যামেরা বন্ধ কর। না হলে অসুবিধা আছে। শিল্প উদ্যোক্তা আবুল কালাম আজাদকে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, এই তোকে কে ধাক্কা মেরেছে। তোকে কে লোন দেবে? আর তুই কীভাবে লোন নিস, আমি দেখে নেব।’

এসময় সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদ করলে টিটোন বলেন, ‘আমি এভাবে বলিনি। আপনারাতো আমাদেরই।’ তাঁতী লীগ নেতা সরকারি অফিসে কেন, এমন প্রশ্ন জবাবে বলেন, ‘এখানে আমার ভগ্নিপতি আসাদুল ইসলাম চাকরি করে। সে আমাকে ফোন দিয়ে ডেকেছে। তাই আমি এসেছি বিষয়টি দেখতে।’

তাঁতী লীগের সভাপতি নুর ইসলাম সুবাদ মুঠোফোনে বলেন, ‘বিসিকে সে কেন যাবে? সে বিভিন্ন সময় তাঁতী লীগের সভাপতিরও পরিচয় দেয়। আমি অসুস্থ, তাই এর প্রতিবাদ করতে পারি না। এভাবে তাঁতী লীগের পরিচয় দিয়ে যেখানে সেখানে হুমকি-ধামকি দেবে এটা ঠিক না। বিষয়টা আমরা দেখছি। তবে এটা নিয়ে নিউজ করেন না।’

পরে তাঁতী লীগের সহসভাপতি মালেকুল ইসলাম টিটোন মেহেরপুর রিপোর্টাস ক্লাবের সভাপতিকে ফোন করে বলেন, ‘বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি তাঁতী লীগের কেউ নয়। আমি কৃষক লীগের সদর থানার সহসভাপতি। তাছাড়া আমি একজন শ্রমিক। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দেশের প্রতি আমার ভালোবাসা আছে। তাই বিসিকে গিয়েছিলাম। সাংবাদিকরা ভুল বুঝেছে।’

মেহেরপুর বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক মো. আশানুজ্জামান বলেন, ‘কাকে ঋণ দেব আর না দেব, সেটা আমাদের বিষয়। এ বিষয়ে আমরা জবাব দিতে বাধ্য নয়। তাছাড়া মেহেরপুর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক লিখন আমার আত্মীয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আবুল কালাম আমাদের হুমকি-ধামকি দিলে তাকে আমাদের কর্মচারীরা ঘাড় ধরে বের করে দেন। আর টিটোন আমাদের কর্মকর্তা আসাদুলের আত্মীয়। তার ডাকে সে এসেছে।’

বিসিক শিল্পনগরী খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক তাহেরা নাসরিন বলেন, লোন দেবার কিছুু নিয়ম আছে। এই নিয়মের মধ্যে যারা পড়বে, তারা লোন পাবেন। তবে বহিরাগত সন্ত্রাসীকে ডেকে যদি কাউকে হেনস্তা করা হয়, তাহলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’