ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

দামুড়হুদায় ১০ টাকার জন্য খুন হয় ৮ বছরের শিশু সন্তান

বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় মা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৪:২৩:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৮ বার পড়া হয়েছে

শিশু ইয়ামিন

মাত্র ১০ টাকার জন্য দামুড়হুদা উপজেলার ৮ বছর বয়সী শিশু ইয়ামিন হোসেনের চাঞ্চল্যকর হত্যার বিচারের দাবিতে অসহায় মা ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। প্রায় তিন বছর হতে এলেও এখনো কান্না থামেনি মায়ের। প্রভাব এবং অর্থের জোর খাটিয়ে পূর্ণ বয়স্ক আসামিকে চার্জশিটে কিশোর দেখানোর অভিযোগ তুলেছে নিহত ইয়ামিনের পরিবার। তাদের দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক।
জানা যায়, ২০২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় ইয়ামিন হোসেন নামের ৮ বছর বয়সী এক শিশুকে জবাই করে হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিহত শিশু ইয়ামিনের মা মোছা. রিনা খাতুন বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কানাইডাঙ্গা গ্রামের সাবেক মেম্বার ও গ্রাম্য চিকিৎসক আশাদুল ইসলামের ছেলে জাহিদ হাসানকে (১৬) প্রধান আসামি করে ৬ জনের নাম উল্লেখপূর্বক মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘ঘটনার দিন ১ নম্বর আসামি জাহিদ আমার শিশু পুত্র ইয়ামিন হাসান ও আমার প্রতিবেশী রবিউলের ছেলে জুনায়েদকে ২০ (বিশ) টাকা দিয়ে সিগারেট কিনে আনার জন্য বলে। তারা সিগারেট কেনার জন্য একই গ্রামের মুদি দোকানে গিয়ে সিগারেট না পেয়ে আমার শিশু পুত্র ইয়ামিন ও প্রতিবেশীর ছেলে জুনায়েদ ৮ টাকা দিয়ে ২ টাকা মূল্যের চার প্যাকেট জি-বিস্কুট কিনে এবং আমার শিশু পুত্র ইয়ামিন হাসান ও জুনায়েদ উভয়ই ৫ (পাঁচ) টাকা করে ভাগ করে নেয়। আসামি জাহিদকে বিস্কুট দেওয়ার জন্য বাড়ির নিকটবর্তী জনৈক মো. গিয়াস উদ্দিনের আমবাগানে যায়। ওই সময় জাহিদসহ অন্যান্য আসামিরা তাদের হাতে লোহার ধারালো হাসুয়া ও কাচি দিয়ে আমবাগানের আগাছা পরিস্কার করছিল। আমার শিশু পুত্র ইয়ামিন ও প্রতিবেশী রবিউলের ছেলে জুনায়েদ আসামি জাহিদকে ৪ প্যাকেট জি-বিস্কুটসহ ২ টাকা ফেরত দিলে আসামি জাহিদ আমার শিশু পুত্র ইয়ামিনকে গালিগালাজ করতে থাকে এবং আসামি জাহিদ রাগান্বিত হয়ে আমার শিশু পুত্র ইয়ামিন হাসানকে ১ নম্বর আসামি জাহিদসহ অন্য আসামিরা তাদের কাছে থাকা গামছা দিয়ে আমার শিশু পুত্র ইয়ামিন হাসানের হাত পা ও মুখ বাধতে থাকে। ওই সময় জুনায়েদ আমার বাড়িতে এসে চিৎকার দিয়ে আমাকে ঘটনার বিষয়ে জানায়। আমিসহ কয়েকজন সেখানে গিয়ে দেখি, আসামিরা আমার শিশু পুত্র ইয়ামিন হাসানকে হাত পা বেধে হত্যা করে লাশ আমবাগানের মধ্যে থাকা পাকা কবরের মধ্যে ফেলে দেয়। তাৎক্ষণিক আমিসহ আমার মা ও বোন হাওমাউ করে কাঁদতে থাকি এবং সকলে মিলে ১ নম্বর আসামি জাহিদকে রক্তমাখা হাসুয়াসহ জাপটে ধরে আমার শিশুপুত্র ইয়ামিন হাসানকে আসামি জাহিদসহ অন্যান্য আসামিরার মেরে ফেলেছে বলে চিৎকার করতে থাকি। ওই সময় আসামিরা তাৎক্ষণিকভাবে আমাকেসহ আমার মা ও বোনকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে সকলে পালিয়ে যায়।’
এই ঘটনায় প্রথমে দামুড়হুদা থানা তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। তবে নিহত ইয়ামিনের পরিবার ওই চার্জশিটে ‘না রাজি’ দিয়ে পুরনায় তদন্তের আবেদন করে। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআই ঝিনাইদহকে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই তদন্ত প্রতিবেদনেও হত্যাকারীর বয়স লুকানোর অভিযোগ তুলে ‘না রাজি’ জানায় ইয়ামিনের পরিবার। পরে আদালত তৃতীয়বারের মতো চুয়াডাঙ্গা সিআইডিকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয়। গত তিন বছর ধরেই নিহত ইয়ামিনের অসহায় মা বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ছেলের শোকে কাঁদতে কাঁদতে শোকে পাথর প্রায় এই মা। তার দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচার হোক। প্রায় তিন বছর পরও ইয়ামিনের মা রিনা খাতুন প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলেকে জাহিদ মেরে ফেলেছে। আমার মতো কোনো মায়ের কোল যেন, এভাবে আর খালি না হয়। তাই আমি এই জাহিদের ফাঁসি চাই।’ কথা শেষ করার আগেই তিনি আবারো মূর্ছা যান।
শিশু ইয়ামিনের মা রিনা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে যখন পেটে, তখন ওর আব্বা অন্যত্র চলে যায়। আমি আমার বাপের বাড়িতেই আছি। কত কষ্ট করে আমরা ছেলেটিকে মানুষ করছিলাম। আমার কলিজাটা কেটে নিয়েছে। জুনায়েদ আমার ছেলেকে ওইদিন ডেকে নিয়ে যায়। জুনায়েদের সাথে আমার দেখা হয়। আমি জানতে চাইলে সে বলে, বাগানে আমার ছেলে নাহিদ আর জাহিদ মিলে হাত পা বাঁধছে। জুনায়েদের সাথে গিয়ে দেখি ওরা আমার ছেলে জবাই করে কবরের মধ্যে ফেলে রেখে গেছে। জাহিদের বয়স ২০ বছর। আর ওকে দেখাচ্ছে ১২ বছর। জামিন নিয়ে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর বলে বেড়াচ্ছে কি হলো, কিছুই তো করতে পারলে না। কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না। আমি অসহায়, আমার কেউ নেই। আমি রাস্তায় রাস্তায় কেঁদে কেঁদে বেড়াচ্ছি। আমি সঠিক বিচার চাই। আমার সন্তানকে কেন হত্যা করা হলো। সঠিক তদন্তই হতে দিচ্ছে না। প্রথমে থানা থেকে যদি সঠিক চার্জশিট দিতো, তাহলে আমাদের এতো দৌঁড়ে বেড়াতে হতো না। আমরা কোনো বিচার পাচ্ছি না। তারা বলছে, কে কয় লাখ টাকা নেবে। সব দেব। বিচার হতে দেব না। তারিক, ফারুক, আসাদুল ওরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। সাক্ষী যেতে দেবে না, বিচার করতে দেবে না। ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশের রবিউল ইসলামের মেয়ে শান্তনার জাহিদের সাথে সম্পর্ক ছিল। এটি দেখে ফেলায় আমাদের সাথে রবিউলদের একটু কথা কাটাকাটি হয়। ওরা আমাদের খারাপ ভাষায় কথা বলে। এর কদিন পরেই জাহিদকে দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে খাওয়ায় রবিউল। তার এক সপ্তাহের মধ্যেই আমার ছেলেকে জাহিদ গলাকেটে হত্যা করে। আর আমার ছেলেকে তো বাড়ি থেকে রবিউলের ছেলে ডেকে নিয়ে যায়। রবিউল ওর মেয়েকে জাহিদের সাথে বিয়ে দেবে না। আমি তো এতো বুঝিনি। রবিউল পুরাতন শত্রুতা করে জাহিদকে দিয়ে এই খেলা করবে, কে জানে। এসবের পিছনে রবিউলই আছে। জাহিদ এরপরে রবিউলের মেয়ের পিছন থেকে সরে গেছে। রবিউলের মেয়ের বিয়েও দিয়েছে মনে মনে। আমরা জাহিদকে চিনি। একই গ্রামে বাড়ি। ওর বয়স ১২ বছর নয়। ২০ বছরের একটি ছেলেকে ১২ বছর বয়স দেখাচ্ছে চার্জশিটে। বুঝলামই না বিষয়টা। আমাদের কাছে জাহিদের টিকা কার্ডও আছে। সেই হিসেব করলেও জাহিদের বয়স ২০ বছরের বেশি।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই মা বলেন, এখন সিআইডির কাছে ৬-৭ মাস হলো তদন্ত ভার রয়েছে। এখনো চার্জশিট দেয়নি। আমাদের একটায় চাওয়া সঠিকভাবে তদন্ত হোক। সঠিক বয়স দিক। বিচার হোক।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দামুড়হুদায় ১০ টাকার জন্য খুন হয় ৮ বছরের শিশু সন্তান

বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় মা

আপলোড টাইম : ০৪:২৩:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

মাত্র ১০ টাকার জন্য দামুড়হুদা উপজেলার ৮ বছর বয়সী শিশু ইয়ামিন হোসেনের চাঞ্চল্যকর হত্যার বিচারের দাবিতে অসহায় মা ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। প্রায় তিন বছর হতে এলেও এখনো কান্না থামেনি মায়ের। প্রভাব এবং অর্থের জোর খাটিয়ে পূর্ণ বয়স্ক আসামিকে চার্জশিটে কিশোর দেখানোর অভিযোগ তুলেছে নিহত ইয়ামিনের পরিবার। তাদের দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক।
জানা যায়, ২০২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় ইয়ামিন হোসেন নামের ৮ বছর বয়সী এক শিশুকে জবাই করে হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিহত শিশু ইয়ামিনের মা মোছা. রিনা খাতুন বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কানাইডাঙ্গা গ্রামের সাবেক মেম্বার ও গ্রাম্য চিকিৎসক আশাদুল ইসলামের ছেলে জাহিদ হাসানকে (১৬) প্রধান আসামি করে ৬ জনের নাম উল্লেখপূর্বক মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘ঘটনার দিন ১ নম্বর আসামি জাহিদ আমার শিশু পুত্র ইয়ামিন হাসান ও আমার প্রতিবেশী রবিউলের ছেলে জুনায়েদকে ২০ (বিশ) টাকা দিয়ে সিগারেট কিনে আনার জন্য বলে। তারা সিগারেট কেনার জন্য একই গ্রামের মুদি দোকানে গিয়ে সিগারেট না পেয়ে আমার শিশু পুত্র ইয়ামিন ও প্রতিবেশীর ছেলে জুনায়েদ ৮ টাকা দিয়ে ২ টাকা মূল্যের চার প্যাকেট জি-বিস্কুট কিনে এবং আমার শিশু পুত্র ইয়ামিন হাসান ও জুনায়েদ উভয়ই ৫ (পাঁচ) টাকা করে ভাগ করে নেয়। আসামি জাহিদকে বিস্কুট দেওয়ার জন্য বাড়ির নিকটবর্তী জনৈক মো. গিয়াস উদ্দিনের আমবাগানে যায়। ওই সময় জাহিদসহ অন্যান্য আসামিরা তাদের হাতে লোহার ধারালো হাসুয়া ও কাচি দিয়ে আমবাগানের আগাছা পরিস্কার করছিল। আমার শিশু পুত্র ইয়ামিন ও প্রতিবেশী রবিউলের ছেলে জুনায়েদ আসামি জাহিদকে ৪ প্যাকেট জি-বিস্কুটসহ ২ টাকা ফেরত দিলে আসামি জাহিদ আমার শিশু পুত্র ইয়ামিনকে গালিগালাজ করতে থাকে এবং আসামি জাহিদ রাগান্বিত হয়ে আমার শিশু পুত্র ইয়ামিন হাসানকে ১ নম্বর আসামি জাহিদসহ অন্য আসামিরা তাদের কাছে থাকা গামছা দিয়ে আমার শিশু পুত্র ইয়ামিন হাসানের হাত পা ও মুখ বাধতে থাকে। ওই সময় জুনায়েদ আমার বাড়িতে এসে চিৎকার দিয়ে আমাকে ঘটনার বিষয়ে জানায়। আমিসহ কয়েকজন সেখানে গিয়ে দেখি, আসামিরা আমার শিশু পুত্র ইয়ামিন হাসানকে হাত পা বেধে হত্যা করে লাশ আমবাগানের মধ্যে থাকা পাকা কবরের মধ্যে ফেলে দেয়। তাৎক্ষণিক আমিসহ আমার মা ও বোন হাওমাউ করে কাঁদতে থাকি এবং সকলে মিলে ১ নম্বর আসামি জাহিদকে রক্তমাখা হাসুয়াসহ জাপটে ধরে আমার শিশুপুত্র ইয়ামিন হাসানকে আসামি জাহিদসহ অন্যান্য আসামিরার মেরে ফেলেছে বলে চিৎকার করতে থাকি। ওই সময় আসামিরা তাৎক্ষণিকভাবে আমাকেসহ আমার মা ও বোনকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে সকলে পালিয়ে যায়।’
এই ঘটনায় প্রথমে দামুড়হুদা থানা তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। তবে নিহত ইয়ামিনের পরিবার ওই চার্জশিটে ‘না রাজি’ দিয়ে পুরনায় তদন্তের আবেদন করে। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআই ঝিনাইদহকে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই তদন্ত প্রতিবেদনেও হত্যাকারীর বয়স লুকানোর অভিযোগ তুলে ‘না রাজি’ জানায় ইয়ামিনের পরিবার। পরে আদালত তৃতীয়বারের মতো চুয়াডাঙ্গা সিআইডিকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয়। গত তিন বছর ধরেই নিহত ইয়ামিনের অসহায় মা বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ছেলের শোকে কাঁদতে কাঁদতে শোকে পাথর প্রায় এই মা। তার দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচার হোক। প্রায় তিন বছর পরও ইয়ামিনের মা রিনা খাতুন প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলেকে জাহিদ মেরে ফেলেছে। আমার মতো কোনো মায়ের কোল যেন, এভাবে আর খালি না হয়। তাই আমি এই জাহিদের ফাঁসি চাই।’ কথা শেষ করার আগেই তিনি আবারো মূর্ছা যান।
শিশু ইয়ামিনের মা রিনা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে যখন পেটে, তখন ওর আব্বা অন্যত্র চলে যায়। আমি আমার বাপের বাড়িতেই আছি। কত কষ্ট করে আমরা ছেলেটিকে মানুষ করছিলাম। আমার কলিজাটা কেটে নিয়েছে। জুনায়েদ আমার ছেলেকে ওইদিন ডেকে নিয়ে যায়। জুনায়েদের সাথে আমার দেখা হয়। আমি জানতে চাইলে সে বলে, বাগানে আমার ছেলে নাহিদ আর জাহিদ মিলে হাত পা বাঁধছে। জুনায়েদের সাথে গিয়ে দেখি ওরা আমার ছেলে জবাই করে কবরের মধ্যে ফেলে রেখে গেছে। জাহিদের বয়স ২০ বছর। আর ওকে দেখাচ্ছে ১২ বছর। জামিন নিয়ে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর বলে বেড়াচ্ছে কি হলো, কিছুই তো করতে পারলে না। কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না। আমি অসহায়, আমার কেউ নেই। আমি রাস্তায় রাস্তায় কেঁদে কেঁদে বেড়াচ্ছি। আমি সঠিক বিচার চাই। আমার সন্তানকে কেন হত্যা করা হলো। সঠিক তদন্তই হতে দিচ্ছে না। প্রথমে থানা থেকে যদি সঠিক চার্জশিট দিতো, তাহলে আমাদের এতো দৌঁড়ে বেড়াতে হতো না। আমরা কোনো বিচার পাচ্ছি না। তারা বলছে, কে কয় লাখ টাকা নেবে। সব দেব। বিচার হতে দেব না। তারিক, ফারুক, আসাদুল ওরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। সাক্ষী যেতে দেবে না, বিচার করতে দেবে না। ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশের রবিউল ইসলামের মেয়ে শান্তনার জাহিদের সাথে সম্পর্ক ছিল। এটি দেখে ফেলায় আমাদের সাথে রবিউলদের একটু কথা কাটাকাটি হয়। ওরা আমাদের খারাপ ভাষায় কথা বলে। এর কদিন পরেই জাহিদকে দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে খাওয়ায় রবিউল। তার এক সপ্তাহের মধ্যেই আমার ছেলেকে জাহিদ গলাকেটে হত্যা করে। আর আমার ছেলেকে তো বাড়ি থেকে রবিউলের ছেলে ডেকে নিয়ে যায়। রবিউল ওর মেয়েকে জাহিদের সাথে বিয়ে দেবে না। আমি তো এতো বুঝিনি। রবিউল পুরাতন শত্রুতা করে জাহিদকে দিয়ে এই খেলা করবে, কে জানে। এসবের পিছনে রবিউলই আছে। জাহিদ এরপরে রবিউলের মেয়ের পিছন থেকে সরে গেছে। রবিউলের মেয়ের বিয়েও দিয়েছে মনে মনে। আমরা জাহিদকে চিনি। একই গ্রামে বাড়ি। ওর বয়স ১২ বছর নয়। ২০ বছরের একটি ছেলেকে ১২ বছর বয়স দেখাচ্ছে চার্জশিটে। বুঝলামই না বিষয়টা। আমাদের কাছে জাহিদের টিকা কার্ডও আছে। সেই হিসেব করলেও জাহিদের বয়স ২০ বছরের বেশি।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই মা বলেন, এখন সিআইডির কাছে ৬-৭ মাস হলো তদন্ত ভার রয়েছে। এখনো চার্জশিট দেয়নি। আমাদের একটায় চাওয়া সঠিকভাবে তদন্ত হোক। সঠিক বয়স দিক। বিচার হোক।’