ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

বখাটের উৎপাতে মাদ্রাসাছাত্রীর আত্মহত্যা!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ মার্চ ২০২২
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চুয়াডাঙ্গায় বখাটের উৎপাতে ও পরিবারের বঞ্চনায় অভিমান করে মাসুমা আক্তার (১৭) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার বিকেল চারটার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হকপাড়ায় নিজ ঘরে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে। আত্মহত্যাকারী মাসুমা আক্তার হকপাড়ার চা বিক্রেতা আমিনুল ইসলামের মেয়ে ও চুয়াডাঙ্গা রেলবাজার আলিয়া মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে বিকেলেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপতাল ও ঘটনাস্থল পরিবদর্শন করেন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন। এসময় তিনি মাসুমার পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন ও ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত শোনেন।

আত্মহত্যাকারী মাসুমার পিতা আমিনুল ইসলাম কলেন, ‘আমার মেয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি আমার সকল কাজে সাহায্য করত। গত শুক্রবার সকালে সে আমার চায়ের দোকান খুলে চা তৈরির ব্যবস্থা করছিল। এসময় একজন ক্রেতা চা-খাওয়ার জন্য দোকানে আসে। ঠিক সেসময় আরামপাড়ার মোবার ছেলে কালাম (২৫) দোকানে ঢুকে ওই ক্রেতা ও আমার মেয়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে। আমার মেয়ে তাকে নিষেধ করলে সে মাসুমাকে চড় মারে ও একটি হাতুড়ি দিয়ে তাকে আঘাত করার চেষ্টা করে। এসময় মাসুমা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে মোবাইলফোনের মাধ্যমে ঘটনা জানতে পেরে আমি মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যায়। এসময় বখাটে কালাম তাকে কীভাবে উৎপাত করে মাসুমা তা আমাকে খুলে বলে। আমি ঘটনাটি মাছপট্টি ও গমপট্টি বাজার কমিটিকেও জানায়। এদিকে দোকানে গেলে লোকজন মাসুমাকে কালাম কেন থাপ্পড় মেরেছে সে বিষয়ে জানতে চায়। আজ (গতকাল) দুপুরের পরে আমি দোকান থেকে বাড়িতে এসে সেসব বিষয় নিয়ে আমার স্ত্রীকে বকাবকি করি। মাসুমা এসময় নিজ ঘরেই ছিল। পরে বড় মেয়ের বাড়িতে আটা দেওয়ার জন্য আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। এর পূর্বে দোকানের জন্য একটি ব্যাগে খড়ি ভরে রাখতে মাসুমাকে বলে যায়। বিকেল চারটার দিকে আমি বাড়ি ফিরে দেখি ব্যাগে খড়ি গোছানো রয়েছে। এসময় মেয়ের নাম ধরে ডাকলেও কোনো সাড়া পায়নি। মেয়ে ঘুমিয়ে আছে কি না সেটা দেখতে ওর ঘরের পর্দা সরাতেই দেখি সে আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছে। এসময় আমি মেয়ের পা জড়িয়ে ধরে উচু করে তার মাকে ডাকি। মেয়ের মা বটি দিয়ে ওড়না কেটে নিচে নামালে মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’

নিহত মাসুমার সেজ দুলাভাই সাকিব বলেন, ‘চার বোনের মধ্যে মাসুমা সবার ছোট। সে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার পাশাপাশি বাড়ির সকল কাজ করত। বছর খানেক পূর্বে আরামপাড়ার কালাম নামের এক ছেলের সঙ্গে মাসুমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে কালাম অন্যত্র বিয়ে করায় মাসুমার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপরও কালাম মাসুমার পিছু ছাড়েনি। মাঝেমধ্যেই কালাম চায়ের দোকানে এসে মাসুমাকে বিরক্ত করতো। মাসুমা এসব কথা আমাকে ও আমার স্ত্রীকে জানালে আমরা পারিবারিকভাকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি ও ভালো পাত্র পেলে তার বিয়ের দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। তবে কালামের স্ত্রী থাকা সত্বেও সে মাসুমার পিছনে ঘুরত ও তার দোকানে আসা পছন্দ করত না। এরই মধ্যে পবিত্র শবে-বরাতের দিন জানতে পারি কালাম মাসুমাকে থাপ্পড় মেরেছে। আজ (গতকাল) মোবাইলফোনে জানতে পারি মাসুমা নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. উৎপলা বিশ্বাস বলেন, ‘বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পরিবারের সদস্যরা মেয়েটিকে জরুরি বিভাগে নেয়। পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকে জানতে পারি সে গলায় ফাঁস দিয়েছিল। তবে জরুরি বিভাগে আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত হলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হবে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, বিকেলে সদর থানাধীন হকপাড়ায় এক মাদ্রাসাছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নিহতের লাশটি সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে আগামীকাল (আজ) সোমবার সদর হাসপাতাল মর্গে নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষ পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত মাসুমার লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাপসাতালের লাশঘরে রাখা ছিল। আজ ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ দাফনের জন্য পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বখাটের উৎপাতে মাদ্রাসাছাত্রীর আত্মহত্যা!

আপলোড টাইম : ০৮:০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ মার্চ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চুয়াডাঙ্গায় বখাটের উৎপাতে ও পরিবারের বঞ্চনায় অভিমান করে মাসুমা আক্তার (১৭) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার বিকেল চারটার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হকপাড়ায় নিজ ঘরে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে। আত্মহত্যাকারী মাসুমা আক্তার হকপাড়ার চা বিক্রেতা আমিনুল ইসলামের মেয়ে ও চুয়াডাঙ্গা রেলবাজার আলিয়া মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে বিকেলেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপতাল ও ঘটনাস্থল পরিবদর্শন করেন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন। এসময় তিনি মাসুমার পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন ও ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত শোনেন।

আত্মহত্যাকারী মাসুমার পিতা আমিনুল ইসলাম কলেন, ‘আমার মেয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি আমার সকল কাজে সাহায্য করত। গত শুক্রবার সকালে সে আমার চায়ের দোকান খুলে চা তৈরির ব্যবস্থা করছিল। এসময় একজন ক্রেতা চা-খাওয়ার জন্য দোকানে আসে। ঠিক সেসময় আরামপাড়ার মোবার ছেলে কালাম (২৫) দোকানে ঢুকে ওই ক্রেতা ও আমার মেয়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে। আমার মেয়ে তাকে নিষেধ করলে সে মাসুমাকে চড় মারে ও একটি হাতুড়ি দিয়ে তাকে আঘাত করার চেষ্টা করে। এসময় মাসুমা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে মোবাইলফোনের মাধ্যমে ঘটনা জানতে পেরে আমি মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যায়। এসময় বখাটে কালাম তাকে কীভাবে উৎপাত করে মাসুমা তা আমাকে খুলে বলে। আমি ঘটনাটি মাছপট্টি ও গমপট্টি বাজার কমিটিকেও জানায়। এদিকে দোকানে গেলে লোকজন মাসুমাকে কালাম কেন থাপ্পড় মেরেছে সে বিষয়ে জানতে চায়। আজ (গতকাল) দুপুরের পরে আমি দোকান থেকে বাড়িতে এসে সেসব বিষয় নিয়ে আমার স্ত্রীকে বকাবকি করি। মাসুমা এসময় নিজ ঘরেই ছিল। পরে বড় মেয়ের বাড়িতে আটা দেওয়ার জন্য আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। এর পূর্বে দোকানের জন্য একটি ব্যাগে খড়ি ভরে রাখতে মাসুমাকে বলে যায়। বিকেল চারটার দিকে আমি বাড়ি ফিরে দেখি ব্যাগে খড়ি গোছানো রয়েছে। এসময় মেয়ের নাম ধরে ডাকলেও কোনো সাড়া পায়নি। মেয়ে ঘুমিয়ে আছে কি না সেটা দেখতে ওর ঘরের পর্দা সরাতেই দেখি সে আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছে। এসময় আমি মেয়ের পা জড়িয়ে ধরে উচু করে তার মাকে ডাকি। মেয়ের মা বটি দিয়ে ওড়না কেটে নিচে নামালে মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’

নিহত মাসুমার সেজ দুলাভাই সাকিব বলেন, ‘চার বোনের মধ্যে মাসুমা সবার ছোট। সে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার পাশাপাশি বাড়ির সকল কাজ করত। বছর খানেক পূর্বে আরামপাড়ার কালাম নামের এক ছেলের সঙ্গে মাসুমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে কালাম অন্যত্র বিয়ে করায় মাসুমার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপরও কালাম মাসুমার পিছু ছাড়েনি। মাঝেমধ্যেই কালাম চায়ের দোকানে এসে মাসুমাকে বিরক্ত করতো। মাসুমা এসব কথা আমাকে ও আমার স্ত্রীকে জানালে আমরা পারিবারিকভাকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি ও ভালো পাত্র পেলে তার বিয়ের দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। তবে কালামের স্ত্রী থাকা সত্বেও সে মাসুমার পিছনে ঘুরত ও তার দোকানে আসা পছন্দ করত না। এরই মধ্যে পবিত্র শবে-বরাতের দিন জানতে পারি কালাম মাসুমাকে থাপ্পড় মেরেছে। আজ (গতকাল) মোবাইলফোনে জানতে পারি মাসুমা নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. উৎপলা বিশ্বাস বলেন, ‘বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পরিবারের সদস্যরা মেয়েটিকে জরুরি বিভাগে নেয়। পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকে জানতে পারি সে গলায় ফাঁস দিয়েছিল। তবে জরুরি বিভাগে আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত হলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হবে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, বিকেলে সদর থানাধীন হকপাড়ায় এক মাদ্রাসাছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নিহতের লাশটি সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে আগামীকাল (আজ) সোমবার সদর হাসপাতাল মর্গে নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষ পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত মাসুমার লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাপসাতালের লাশঘরে রাখা ছিল। আজ ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ দাফনের জন্য পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হবে।