ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
হাটে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় হলেও নামমাত্র রাজস্ব জমা

পর্ব-২: ছেলুন-টোটন জোয়ার্দ্দারের পর এবার নয়মাইল হাটের দখল নিল বিএনপি নেতা-কর্মীরা

দশমাইল পশুহাটের নেই অনুমোদন, সরকারি কোষাগারে টাকাও দেন না হাটের নিয়ন্ত্রণকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১০:৫৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৮৭ বার পড়া হয়েছে

নানা অনিয়ম, অসঙ্গতি, আর ছেলুন-টোটনের ত্রাসেই চলছিল সদর উপজেলার নয়মাইল বাজারের ভুলটিয়া পশুহাট। ৫ তারিখে স্বৈরাচারী হাসিনার দেশ থেকে পালানোর পর এই হাটের চিত্রও বদলে যায়। শুরু হয় নতুন দখলদারিত্বের খেলা। ১০ আগস্ট শনিবারে যথারীতি ভুলটিয়া পশুহাট বসে। ওই দিন স্থানীয় বিএনপির লোকজন, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা, তহশিলদার ও কিছু শিক্ষার্থীও এই হাটের নিয়ন্ত্রণে যায়। তবে বিপত্তি বাঁধে বিএনপির আরেকটি গ্রুপ নিয়ে। নয়মাইল থেকে মাত্র এক মাইলের দূরত্বে দীর্ঘদিনের পুরোনো জায়গা দশমাইল বাজারে পুনরায় বসানো হয় আরেকটি পশুহাট। দুটি হাটই একই দিনে বসে। তৈরি হয় নতুন কোন্দলের। এর মধ্যে জেলা বিএনপির নেতারা হাট দখলের অভিযোগ ওঠায় সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে অব্যহতি দেয়।

বদরগঞ্জ ও নয়মাইল ভুলটিয়া হাট নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান করে জানা যায়, বর্তমানে নয়মাইল ভুলটিয়া পশুহাট নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা ও কুতুবপুর ইউনিয়ন তহশিলদার অফিস। এর সাথে সরাসরি যুক্ত আছেন ইউনিয়ন পরিষদের ১২ জন মেম্বার, সদর থানা যুবদল নেতা কুতুবপুর গ্রামের সোহাগ, সিন্দুরিয়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আমির, বোয়ালিয়া গ্রামের যুবদল নেতা হাসিয়ার, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মজনু, বোয়ালিয়া গ্রামের বিএনপি নেতা রহিম, জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মোহাম্মদজুম্মা গ্রামের আশিক, কুতুবপুর বোয়ালিয়া গ্রামের মোসারফ, শাহপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার ফারুক, শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির প্রচার সম্পাদক যুগিরহুদা গ্রামের আমিন মাস্টার, কুতুবপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা আক্তার, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সাঈদ, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা নাসির মাস্টার, কুতুবপুর যুবদল নেতা নাসির মাস্টার, বোয়ালিয়া গ্রামের যুবদল নেতা মোফি, কুতুবপুর ইউপি সদস্য কল্পনা খাতুন, জেসমিন আক্তার, মালেকা খাতুন, রেজাউল হক, জামাত আলী মণ্ডল, বিল্লাল হোসেন, নূর ইসলাম, আফাঙ্গির হোসেন, এলাহী মোল্লা, হাসানুজ্জামান, মো. আব্দুল হালিম, হাসানুজ্জামান, ছাত্রদল নেতা মাহাবুব, রাশিদুল, আরাফাত প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
গত আগস্ট মাসে তিন সপ্তাহে তিনটি হাট বসেছে। ওই মাসে মাত্র ২০ হাজার টাকা ও সেপ্টেম্বর মাসে ৩টা হাট বসেছে। এ মাসে মাত্র ৫০ হাজার টাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে।

দশমাইল পশুহাটের নিয়ন্ত্রণকারীদের অন্যতম কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম। তার সাথে এই হাটে আরও আছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা মিণ্টু, জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি সাইফুল প্রমুখ। তবে এই হাটে এখনো আওয়ামী লীগের কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে গুঞ্জন আছে। তাদের মধ্যে কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন টাইগার ও আওয়ামী লীগ নেতা লায়নের নাম উল্লেখযোগ্য। অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের সাথে লিয়াজুর মাধ্যমেই হাটটির নিয়ন্ত্রণ রেখেছেন বিএনপি নেতারা। আগস্টে তিনটি এবং সেপ্টেম্বরে তিনটি হাট বসেছে। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে দেয়া হয়নি একটি টাকাও। হাট নিয়ন্ত্রণকারীরা বলছেন, ইউএনও’র সাথে কথা হয়েছে। খাতা-কলমে হাট না থাকায় টাকা জমা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেই টাকা হাটের উন্নয়নমূলকাজে ব্যয় করা হচ্ছে।
কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সালে ট্রাস্ট থেকে বদরগঞ্জ হাটের নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চলে যায়। ২০১৯ সালে নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য এটিকে নয়মাইলে নিয়ে যায় কিছু লোকজন। যাওয়ার পর অত্র এলাকার যেসব লিল্লাহ বোর্ডিং ছিল, গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে লেখাপড়ার পরিবেশ ধরে রাখা হতো, এগুলো একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়ল। যেহেতু একটি দুঃশাসন, একটি অপরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের স্বৈরাচারী সরকার। আবার এমপি ছেলুন জোয়ায়ার্দ্দার ও তার ছোট ভাই টোটন জোয়ার্দ্দারের নেতৃত্বে হাটটি নয়মাইলে চলু করা হয়। কুতুবপুর ইউনিয়নের মানিক চেয়ারম্যানরা সব এতে যুক্ত ছিল। দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলো, অধিকার আদায়ের সুযোগ তৈরি হওয়ায় এলাকার মানুষ ১০ আগস্ট এখানে (বদরগঞ্জে) পুনরায় হাট চালু করে। বদরগঞ্জে একটি সবজির হাটের অনুমোদন আছে। এই বাজারে প্রায় ৭শ দোকানদার। সকলের দাবিতে এলাকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মতিতে হাটটি চালু হয়।

সাবেক এমপি ছেলুন ও তার ভাইয়ের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি

তিনি বলেন, এখন যেহেতু নয়মাইলে শনিবার, এখানেও যদি শনিবারে থাকে, পাশাপাশি দুই হাট। প্রশাসন মনে করে এটি একটি জটিলতা। ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) পরিদর্শন করে গেছেন। উনি বলেছেন, পশুহাটের জন্য একটি স্বতন্ত্র সম্পত্তি সরকারকে দিতে হবে। সেটির জন্য একটি সম্মতি দেয়া হয়েছে। ওনারা নির্দেশনা দিলেই জমি রেজিস্ট্রি হবে এবং শনিবার এই হাট নাকি ওই হাট বসবে, সেটি নিয়ে ভাবা হবে।

সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম আরও বলেন, জেলার রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরাও মনে করেন দুটি হাটই চলমান থাকলে এই অঞ্চলের উন্নয়ন হবে। এখন একটি সমন্বয় করতে হবে ইনশাল্লাহ। হাটটি একবার ঝিনাইদহ সাধুহাটি ইউনিয়নের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। হাটটি এখান থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হলে এই অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা শোচনীয় হয়ে যাবে। ফলে এই এলাকার গরিব মানুষের ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ায় সমস্যা হবে। লিল্লাহ বোর্ডিং হোক, মাদ্রাসা হোক এগুলোর অর্থের উৎস থাকবে না।

সাধুহাটি ইউনিয়নের সামনে হাটটি প্রায় বছর খানেক ছিল। পরে মানিক চেয়ারম্যানরা গোপনে একটি রেসিও দিয়ে এটি নয়মাইলে নিয়ে যায়। এখান থেকে হাটটি নিয়ে যাওয়া হলে চুয়াডাঙ্গা রাজস্ব হারাবে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় অর্থের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অত্র এলাকার গরিব মানুষের বড় ক্ষতি হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, ইউএনও সাহেব বলেছেন, যেহেতু এখানে সরকারের হাটই নেই। আমরা এই টাকা রিসিভিও করতে পারব না। আমরা যতদ্রুত সম্ভব, এটির একটি সিদ্ধান্ত দেব। জমি দিলে এখানে একটি হাট হবে। না দিলে একটি হাটই থাকবে নয়মাইলে। আর আপাতত এই হাটের অর্থ আমরা হাটের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করছি। মাদ্রাসার সভাপতি জেলা প্রশাসক। তিনি প্রমাণ পেয়েছিলেন, এই হাটের অর্থ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হচ্ছিলো। তাই উনিও চাচ্ছিলেন এর সাথে প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্ত থাক। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠাতা বা কমিটির সদস্যদের প্রতিনিধিরা আমাদের সাথে আছেন। এই হাটে ওয়াক্ত স্টেটের একজন সদস্য আছেন। এখানকার যত প্রতিষ্ঠান, যেমন বদর উদ্দীন মিয়া, আজিবার মিয়া বা আমার পিতা প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এই পরিবারগুলোর একজন প্রতিনিধি হিসেবে তিনি আছেন। তিনি মাদ্রাসার এবং ওয়াক্ত স্টেটেরও একজন সদস্য। সবকিছু যেন ঠিক থাকে, সে জন্য ওই প্রতিনিধিকেও নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলেই এই হাটের সাথে যুক্ত আছেন। নয়মাইল হাটে জমিজমা সংক্রান্ত একটি মামলা করে রাখা হয়েছিল। যাতে ইজারা না হয়। হাটটি হাতে রাখার একটি কৌশল ছিল।
নয়মাইল ভুলটিয়া হাট কমিটির সদস্য কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কল্পনা মেম্বার বলেন, নয়মাইলের হাটটি এখন মেম্বাররাই চালাচ্ছেন। মেম্বাররা থেকে সবাই মিল-তাল করে থাক। সবাই মিলে করে খাক।’

সদর উপজেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাহবুব বলেন, ৫ তারিখের পর হাট দুই ভাগ করে ফেলা হয়েছে। ব্যাপারি নেই। হাট উন্নয়নের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, এখন তাও নেই। হাটটি টেকানোর জন্য খরচ কমানো হলেও টেকানো যাচ্ছে না। হাট বুঝে ইউএনও অফিসে টাকা দেয়া হয়। সব মেম্বার, ইউএনও অফিস, এসিল্যান্ড অফিস, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় জনগণ এখন হাটটি নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে আপাতত কোনো ছাত্র প্রতিনিধি নেই। প্রথমে ছাত্র প্রতিনিধি ছিল। ওরা যে বেজ্জতি কাজ করেছে। সব মেম্বারদের পকেট চেক করেছে, তহশিলদারের পকেট চেক করেছে। ১৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছিলো প্রথম দিন। এই টাকা ওরা কী কাজে লাগাবে? তারপরের হাটেও এসেছে। তারপরের হাটে বলছে, ওরা ডিউটি দিবে না, ওদেরকে টাকা দিতে হবে। প্রথম দিন রাকিব ছিল। পরের দিন জুবায়েররা এসেছিল। পরের দিন আমরা ওদেরকে চলে যেতে বলেছিলাম।

সাবেক এমপি ছেলুন ও তার ভাইয়ের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি

মাহবুব আরও বলেন, দেশে আইনের শাসন ছিল না। পুরাতন দাবি বাস্তবায়নে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হাটটি দুই ভাগ করা হচ্ছে। সক্রিয় সকলে নয়মাইল হাটের সাথে আছে। বদরগঞ্জের হাটটিও থাক। তবে আমাদের দাবি, ওনারা দিনটি পরিবর্তন করুক।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী জুবায়ের বলেন, একই স্থানে যখন দুটি হাট হয়, তখন মানুষ তো ভাবেই কোন হাটে যাবো, কোন হাটে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। আমরা মনেই করি না, হাটে যাওয়ার আমাদের প্রয়োজন আছে। হাটটিতে সরকারের ডাক হয়নি। বিগত চেয়ারম্যান মানিক দশমাইল থেকে নয়মাইলে হাটটি নিয়ে আসেন। ওনারাই নিয়ন্ত্রণ করেন। নয়মাইলের হাটটি এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ডাক হয়নি। প্রথম দিনে হয়ত দু-একজন ছাত্র বা আমাদের প্রতিনিধি গিয়েছিল, কী হচ্ছে বা কোনো ঝামেলা যাতে না হয়, সে জন্য। ওইদিন ছাত্ররা কাজও করেছে। হয়ত পারিশ্রমিক দুই’শ বা তিন’শ করে নিয়েছে। ওই এক দিনই। সরোজগঞ্জের ছাত্ররা ওই দিকে যায় না। ওইদিকের যারা আছে, তারা হয়ত দু-একজন গেলেও যেতে পারে। তবে এটা আমরা জানি না। পড়াশোনা করলেই তো সবাই ছাত্র।

কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জামাত আলী বলেন, নয়মাইল হাট সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। যারা হাটে যায় তারা বলতে পারবে। আমরা দুই-তিন হাট যায়নি। কী করছে না করছে, ওরাই ভালো জানে। ওত নাম-টাম জানি না। গ্রামের লোকজন আছে। তহশিলদার ভালো বলতে পারবে। তিনিই সব জানেন। মেম্বারদের মধ্যে হাটের সদস্য কল্পনা। তহশীলদার, ইউনিয়ন পরিষদ, সকলেই আছে। বোঝেন না দেশটা কী অবস্থায় আছে। প্রথমে আমাদের এক হাজার টাকা করে দিতো। এই দুই-তিন হাট আর দিচ্ছে না। প্রথম দিন ছাত্র সমাজ ছিল, এখন আছে কি না জানিনা। আমি কারো নাম বলতে পারব না, গেলেই দেখতে পাবেন।

তহশিলদার আশরাফুল ইসলাম বলেন, নয়মাইল হাটে খাস কালেকশন হয়। ২০১৯ সাল থেকে খাস কালেকশন হচ্ছে। সরকারের সাথে আব্দুর রহমান নামের একজনের মামলা হাটের জমি নিয়ে। প্রত্যেক হাটে গত মাসে সম্ভবত ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। এটি খুবই কম। দুই স্থানে হাট হয়ে যাচ্ছে তো। এখন কিছু ছেলেপিলেরা খাস কালেকশন করছে। আমাদের সরাসরি ওখানে যুক্ত হওয়ার এখন কোনো সুযোগ নেই। কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সাহেবরা আছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিল্লাল সাহেব, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সাহেব মিলে তুলে ইউএনও অফিসে জমা দেয়। ওখানে এখন আমাদের যাওয়ার কোনো পরিবেশ নেই। আর বদরগঞ্জের হাট আমাদের হাট নয়। ওটি বদর উদ্দীন ট্রাস্টের হাট। ওটা নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। ওখান থেকে সরকার কোনো রেভিনিউ পায় না।

সদর উপজেলা যুবদলের সদস্য সোহাগ বলেন, হাটের সভাপতি ইউএনও, হাটের সদস্যসচিব এসিল্যান্ড, ইউনিয়ন ভূমি অফিস সদস্য, স্থানীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিসহ এলাকার বাসিন্দারা হাটটি চালাচ্ছে। যে হাটে যেমন হয়, তেমনভাবে একটি অংশ ইউএনও অফিসে জমা করা হয়। একটি হাট চালাতে হলে কিছু লোকের প্রয়োজন হয়। সব ইউপি সদস্যরা এতে যুক্ত আছেন। দশমাইলের হাটটি সম্পর্কেও খোঁজখবর নেন। ওটা তো পুরোটাই অবৈধ।

তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যারা ছিল, এরা প্রথমে তিনটা হাট বা চারটা হাটে এসেছিল। শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তারা এখানে কাজ করতে এসেছিল। ওরা ২০-৫০ জন ছেলেপিলে নিরাপত্তার ভূমিকা পালন করেছে। একদিন মনে হয় ১২ হাজার, একদিন ৬ হাজার আরেকদিন ৭-৮ হাজার নিছিলো ওরা।

কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন টাইগার বলেন, আমার হাটের সাথে বর্তমানে কোনো সম্পর্ক নেই। আমার আব্বা হাজী বদর উদ্দীন যখন ওয়াক্ত স্ট্রেট গঠন করে, ওই সময় লিল্লাহ বোর্ডিংসহ বদরগঞ্জ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে। তখন সরকারি এমন পৃষ্ঠপোষকতা ছিলো না। মাদ্রাসা, গ্রামের মসজিদ ও গোরস্থানের জনহিতকর কাজের জন্য এলাকার মুরুব্বিদের সাথে নিয়ে একটি হাট বসে। জনহিতকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেউ কখনো নাড়াচাড়া করেনি। আমাদের সাবেক এমপি মহোদয় ছেলুন মিয়াকে এখান থেকে আয়ের অর্থের অর্ধেকেরও বেশি দেয়া হতো। তাও ওনার মন ভরতো না। উনি একটি কৌশল করে মানিক চেয়ারম্যানকে দিয়ে হাটটি নয় মাইল বাজারে হাটটি নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অবসান হওয়ার পর বিএনপিসহ স্থানীয়রা হাটটি চারু করেছে। এখানে সরকারকে একটু জমি দেওয়ারও কথা হচ্ছে। আমি বলেছি, ১০ শতক জমি তার দাম বর্তমানে প্রায় এক কোটি টাকা। তারপরও আমি বলেছি, আমরা জমি লিখে দিবো। এখন প্রতিহাটে ওয়াক্ত স্টেটে ওরা ১৫ হাজার টাকা দেয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজিবুল আলম বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। জেলা প্রশাসক স্যার হাটটি পরিদর্শন করতে বলেছিলেন। আমি সেখানে গিয়ে দুটি হাটের লোকজনের সাথেই কথা বলেছি। আসলে সমস্যাটা জটিল। আমি পূর্বের ইতিহাস সম্পর্কেও জেনেছি। বিষয়গুলো জেলা প্রশাসক স্যারকে জানাবো। তবে সেদিনই জেলা প্রশাসক স্যার বদলি হয়ে চলে যান। নবাগত জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে আমি হাটটি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করব। তবে নয়মাইল হাট থেকে খাস কালেকশনের মাধ্যমে সামান্য কিছু অর্থ সম্ভবত আমার দপ্তরে জমা হয়। বদরগঞ্জে আমাদের কোনো হাট নেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

হাটে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় হলেও নামমাত্র রাজস্ব জমা

পর্ব-২: ছেলুন-টোটন জোয়ার্দ্দারের পর এবার নয়মাইল হাটের দখল নিল বিএনপি নেতা-কর্মীরা

দশমাইল পশুহাটের নেই অনুমোদন, সরকারি কোষাগারে টাকাও দেন না হাটের নিয়ন্ত্রণকারীরা

আপলোড টাইম : ১০:৫৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নানা অনিয়ম, অসঙ্গতি, আর ছেলুন-টোটনের ত্রাসেই চলছিল সদর উপজেলার নয়মাইল বাজারের ভুলটিয়া পশুহাট। ৫ তারিখে স্বৈরাচারী হাসিনার দেশ থেকে পালানোর পর এই হাটের চিত্রও বদলে যায়। শুরু হয় নতুন দখলদারিত্বের খেলা। ১০ আগস্ট শনিবারে যথারীতি ভুলটিয়া পশুহাট বসে। ওই দিন স্থানীয় বিএনপির লোকজন, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা, তহশিলদার ও কিছু শিক্ষার্থীও এই হাটের নিয়ন্ত্রণে যায়। তবে বিপত্তি বাঁধে বিএনপির আরেকটি গ্রুপ নিয়ে। নয়মাইল থেকে মাত্র এক মাইলের দূরত্বে দীর্ঘদিনের পুরোনো জায়গা দশমাইল বাজারে পুনরায় বসানো হয় আরেকটি পশুহাট। দুটি হাটই একই দিনে বসে। তৈরি হয় নতুন কোন্দলের। এর মধ্যে জেলা বিএনপির নেতারা হাট দখলের অভিযোগ ওঠায় সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে অব্যহতি দেয়।

বদরগঞ্জ ও নয়মাইল ভুলটিয়া হাট নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান করে জানা যায়, বর্তমানে নয়মাইল ভুলটিয়া পশুহাট নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা ও কুতুবপুর ইউনিয়ন তহশিলদার অফিস। এর সাথে সরাসরি যুক্ত আছেন ইউনিয়ন পরিষদের ১২ জন মেম্বার, সদর থানা যুবদল নেতা কুতুবপুর গ্রামের সোহাগ, সিন্দুরিয়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আমির, বোয়ালিয়া গ্রামের যুবদল নেতা হাসিয়ার, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মজনু, বোয়ালিয়া গ্রামের বিএনপি নেতা রহিম, জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মোহাম্মদজুম্মা গ্রামের আশিক, কুতুবপুর বোয়ালিয়া গ্রামের মোসারফ, শাহপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার ফারুক, শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির প্রচার সম্পাদক যুগিরহুদা গ্রামের আমিন মাস্টার, কুতুবপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা আক্তার, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সাঈদ, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা নাসির মাস্টার, কুতুবপুর যুবদল নেতা নাসির মাস্টার, বোয়ালিয়া গ্রামের যুবদল নেতা মোফি, কুতুবপুর ইউপি সদস্য কল্পনা খাতুন, জেসমিন আক্তার, মালেকা খাতুন, রেজাউল হক, জামাত আলী মণ্ডল, বিল্লাল হোসেন, নূর ইসলাম, আফাঙ্গির হোসেন, এলাহী মোল্লা, হাসানুজ্জামান, মো. আব্দুল হালিম, হাসানুজ্জামান, ছাত্রদল নেতা মাহাবুব, রাশিদুল, আরাফাত প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
গত আগস্ট মাসে তিন সপ্তাহে তিনটি হাট বসেছে। ওই মাসে মাত্র ২০ হাজার টাকা ও সেপ্টেম্বর মাসে ৩টা হাট বসেছে। এ মাসে মাত্র ৫০ হাজার টাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে।

দশমাইল পশুহাটের নিয়ন্ত্রণকারীদের অন্যতম কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম। তার সাথে এই হাটে আরও আছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা মিণ্টু, জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি সাইফুল প্রমুখ। তবে এই হাটে এখনো আওয়ামী লীগের কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে গুঞ্জন আছে। তাদের মধ্যে কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন টাইগার ও আওয়ামী লীগ নেতা লায়নের নাম উল্লেখযোগ্য। অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের সাথে লিয়াজুর মাধ্যমেই হাটটির নিয়ন্ত্রণ রেখেছেন বিএনপি নেতারা। আগস্টে তিনটি এবং সেপ্টেম্বরে তিনটি হাট বসেছে। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে দেয়া হয়নি একটি টাকাও। হাট নিয়ন্ত্রণকারীরা বলছেন, ইউএনও’র সাথে কথা হয়েছে। খাতা-কলমে হাট না থাকায় টাকা জমা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেই টাকা হাটের উন্নয়নমূলকাজে ব্যয় করা হচ্ছে।
কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সালে ট্রাস্ট থেকে বদরগঞ্জ হাটের নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চলে যায়। ২০১৯ সালে নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য এটিকে নয়মাইলে নিয়ে যায় কিছু লোকজন। যাওয়ার পর অত্র এলাকার যেসব লিল্লাহ বোর্ডিং ছিল, গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে লেখাপড়ার পরিবেশ ধরে রাখা হতো, এগুলো একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়ল। যেহেতু একটি দুঃশাসন, একটি অপরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের স্বৈরাচারী সরকার। আবার এমপি ছেলুন জোয়ায়ার্দ্দার ও তার ছোট ভাই টোটন জোয়ার্দ্দারের নেতৃত্বে হাটটি নয়মাইলে চলু করা হয়। কুতুবপুর ইউনিয়নের মানিক চেয়ারম্যানরা সব এতে যুক্ত ছিল। দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলো, অধিকার আদায়ের সুযোগ তৈরি হওয়ায় এলাকার মানুষ ১০ আগস্ট এখানে (বদরগঞ্জে) পুনরায় হাট চালু করে। বদরগঞ্জে একটি সবজির হাটের অনুমোদন আছে। এই বাজারে প্রায় ৭শ দোকানদার। সকলের দাবিতে এলাকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মতিতে হাটটি চালু হয়।

সাবেক এমপি ছেলুন ও তার ভাইয়ের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি

তিনি বলেন, এখন যেহেতু নয়মাইলে শনিবার, এখানেও যদি শনিবারে থাকে, পাশাপাশি দুই হাট। প্রশাসন মনে করে এটি একটি জটিলতা। ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) পরিদর্শন করে গেছেন। উনি বলেছেন, পশুহাটের জন্য একটি স্বতন্ত্র সম্পত্তি সরকারকে দিতে হবে। সেটির জন্য একটি সম্মতি দেয়া হয়েছে। ওনারা নির্দেশনা দিলেই জমি রেজিস্ট্রি হবে এবং শনিবার এই হাট নাকি ওই হাট বসবে, সেটি নিয়ে ভাবা হবে।

সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম আরও বলেন, জেলার রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরাও মনে করেন দুটি হাটই চলমান থাকলে এই অঞ্চলের উন্নয়ন হবে। এখন একটি সমন্বয় করতে হবে ইনশাল্লাহ। হাটটি একবার ঝিনাইদহ সাধুহাটি ইউনিয়নের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। হাটটি এখান থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হলে এই অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা শোচনীয় হয়ে যাবে। ফলে এই এলাকার গরিব মানুষের ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ায় সমস্যা হবে। লিল্লাহ বোর্ডিং হোক, মাদ্রাসা হোক এগুলোর অর্থের উৎস থাকবে না।

সাধুহাটি ইউনিয়নের সামনে হাটটি প্রায় বছর খানেক ছিল। পরে মানিক চেয়ারম্যানরা গোপনে একটি রেসিও দিয়ে এটি নয়মাইলে নিয়ে যায়। এখান থেকে হাটটি নিয়ে যাওয়া হলে চুয়াডাঙ্গা রাজস্ব হারাবে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় অর্থের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অত্র এলাকার গরিব মানুষের বড় ক্ষতি হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, ইউএনও সাহেব বলেছেন, যেহেতু এখানে সরকারের হাটই নেই। আমরা এই টাকা রিসিভিও করতে পারব না। আমরা যতদ্রুত সম্ভব, এটির একটি সিদ্ধান্ত দেব। জমি দিলে এখানে একটি হাট হবে। না দিলে একটি হাটই থাকবে নয়মাইলে। আর আপাতত এই হাটের অর্থ আমরা হাটের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করছি। মাদ্রাসার সভাপতি জেলা প্রশাসক। তিনি প্রমাণ পেয়েছিলেন, এই হাটের অর্থ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হচ্ছিলো। তাই উনিও চাচ্ছিলেন এর সাথে প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্ত থাক। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠাতা বা কমিটির সদস্যদের প্রতিনিধিরা আমাদের সাথে আছেন। এই হাটে ওয়াক্ত স্টেটের একজন সদস্য আছেন। এখানকার যত প্রতিষ্ঠান, যেমন বদর উদ্দীন মিয়া, আজিবার মিয়া বা আমার পিতা প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এই পরিবারগুলোর একজন প্রতিনিধি হিসেবে তিনি আছেন। তিনি মাদ্রাসার এবং ওয়াক্ত স্টেটেরও একজন সদস্য। সবকিছু যেন ঠিক থাকে, সে জন্য ওই প্রতিনিধিকেও নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলেই এই হাটের সাথে যুক্ত আছেন। নয়মাইল হাটে জমিজমা সংক্রান্ত একটি মামলা করে রাখা হয়েছিল। যাতে ইজারা না হয়। হাটটি হাতে রাখার একটি কৌশল ছিল।
নয়মাইল ভুলটিয়া হাট কমিটির সদস্য কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কল্পনা মেম্বার বলেন, নয়মাইলের হাটটি এখন মেম্বাররাই চালাচ্ছেন। মেম্বাররা থেকে সবাই মিল-তাল করে থাক। সবাই মিলে করে খাক।’

সদর উপজেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাহবুব বলেন, ৫ তারিখের পর হাট দুই ভাগ করে ফেলা হয়েছে। ব্যাপারি নেই। হাট উন্নয়নের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, এখন তাও নেই। হাটটি টেকানোর জন্য খরচ কমানো হলেও টেকানো যাচ্ছে না। হাট বুঝে ইউএনও অফিসে টাকা দেয়া হয়। সব মেম্বার, ইউএনও অফিস, এসিল্যান্ড অফিস, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় জনগণ এখন হাটটি নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে আপাতত কোনো ছাত্র প্রতিনিধি নেই। প্রথমে ছাত্র প্রতিনিধি ছিল। ওরা যে বেজ্জতি কাজ করেছে। সব মেম্বারদের পকেট চেক করেছে, তহশিলদারের পকেট চেক করেছে। ১৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছিলো প্রথম দিন। এই টাকা ওরা কী কাজে লাগাবে? তারপরের হাটেও এসেছে। তারপরের হাটে বলছে, ওরা ডিউটি দিবে না, ওদেরকে টাকা দিতে হবে। প্রথম দিন রাকিব ছিল। পরের দিন জুবায়েররা এসেছিল। পরের দিন আমরা ওদেরকে চলে যেতে বলেছিলাম।

সাবেক এমপি ছেলুন ও তার ভাইয়ের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি

মাহবুব আরও বলেন, দেশে আইনের শাসন ছিল না। পুরাতন দাবি বাস্তবায়নে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হাটটি দুই ভাগ করা হচ্ছে। সক্রিয় সকলে নয়মাইল হাটের সাথে আছে। বদরগঞ্জের হাটটিও থাক। তবে আমাদের দাবি, ওনারা দিনটি পরিবর্তন করুক।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী জুবায়ের বলেন, একই স্থানে যখন দুটি হাট হয়, তখন মানুষ তো ভাবেই কোন হাটে যাবো, কোন হাটে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। আমরা মনেই করি না, হাটে যাওয়ার আমাদের প্রয়োজন আছে। হাটটিতে সরকারের ডাক হয়নি। বিগত চেয়ারম্যান মানিক দশমাইল থেকে নয়মাইলে হাটটি নিয়ে আসেন। ওনারাই নিয়ন্ত্রণ করেন। নয়মাইলের হাটটি এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ডাক হয়নি। প্রথম দিনে হয়ত দু-একজন ছাত্র বা আমাদের প্রতিনিধি গিয়েছিল, কী হচ্ছে বা কোনো ঝামেলা যাতে না হয়, সে জন্য। ওইদিন ছাত্ররা কাজও করেছে। হয়ত পারিশ্রমিক দুই’শ বা তিন’শ করে নিয়েছে। ওই এক দিনই। সরোজগঞ্জের ছাত্ররা ওই দিকে যায় না। ওইদিকের যারা আছে, তারা হয়ত দু-একজন গেলেও যেতে পারে। তবে এটা আমরা জানি না। পড়াশোনা করলেই তো সবাই ছাত্র।

কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জামাত আলী বলেন, নয়মাইল হাট সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। যারা হাটে যায় তারা বলতে পারবে। আমরা দুই-তিন হাট যায়নি। কী করছে না করছে, ওরাই ভালো জানে। ওত নাম-টাম জানি না। গ্রামের লোকজন আছে। তহশিলদার ভালো বলতে পারবে। তিনিই সব জানেন। মেম্বারদের মধ্যে হাটের সদস্য কল্পনা। তহশীলদার, ইউনিয়ন পরিষদ, সকলেই আছে। বোঝেন না দেশটা কী অবস্থায় আছে। প্রথমে আমাদের এক হাজার টাকা করে দিতো। এই দুই-তিন হাট আর দিচ্ছে না। প্রথম দিন ছাত্র সমাজ ছিল, এখন আছে কি না জানিনা। আমি কারো নাম বলতে পারব না, গেলেই দেখতে পাবেন।

তহশিলদার আশরাফুল ইসলাম বলেন, নয়মাইল হাটে খাস কালেকশন হয়। ২০১৯ সাল থেকে খাস কালেকশন হচ্ছে। সরকারের সাথে আব্দুর রহমান নামের একজনের মামলা হাটের জমি নিয়ে। প্রত্যেক হাটে গত মাসে সম্ভবত ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। এটি খুবই কম। দুই স্থানে হাট হয়ে যাচ্ছে তো। এখন কিছু ছেলেপিলেরা খাস কালেকশন করছে। আমাদের সরাসরি ওখানে যুক্ত হওয়ার এখন কোনো সুযোগ নেই। কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সাহেবরা আছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিল্লাল সাহেব, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সাহেব মিলে তুলে ইউএনও অফিসে জমা দেয়। ওখানে এখন আমাদের যাওয়ার কোনো পরিবেশ নেই। আর বদরগঞ্জের হাট আমাদের হাট নয়। ওটি বদর উদ্দীন ট্রাস্টের হাট। ওটা নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। ওখান থেকে সরকার কোনো রেভিনিউ পায় না।

সদর উপজেলা যুবদলের সদস্য সোহাগ বলেন, হাটের সভাপতি ইউএনও, হাটের সদস্যসচিব এসিল্যান্ড, ইউনিয়ন ভূমি অফিস সদস্য, স্থানীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিসহ এলাকার বাসিন্দারা হাটটি চালাচ্ছে। যে হাটে যেমন হয়, তেমনভাবে একটি অংশ ইউএনও অফিসে জমা করা হয়। একটি হাট চালাতে হলে কিছু লোকের প্রয়োজন হয়। সব ইউপি সদস্যরা এতে যুক্ত আছেন। দশমাইলের হাটটি সম্পর্কেও খোঁজখবর নেন। ওটা তো পুরোটাই অবৈধ।

তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যারা ছিল, এরা প্রথমে তিনটা হাট বা চারটা হাটে এসেছিল। শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তারা এখানে কাজ করতে এসেছিল। ওরা ২০-৫০ জন ছেলেপিলে নিরাপত্তার ভূমিকা পালন করেছে। একদিন মনে হয় ১২ হাজার, একদিন ৬ হাজার আরেকদিন ৭-৮ হাজার নিছিলো ওরা।

কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন টাইগার বলেন, আমার হাটের সাথে বর্তমানে কোনো সম্পর্ক নেই। আমার আব্বা হাজী বদর উদ্দীন যখন ওয়াক্ত স্ট্রেট গঠন করে, ওই সময় লিল্লাহ বোর্ডিংসহ বদরগঞ্জ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে। তখন সরকারি এমন পৃষ্ঠপোষকতা ছিলো না। মাদ্রাসা, গ্রামের মসজিদ ও গোরস্থানের জনহিতকর কাজের জন্য এলাকার মুরুব্বিদের সাথে নিয়ে একটি হাট বসে। জনহিতকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেউ কখনো নাড়াচাড়া করেনি। আমাদের সাবেক এমপি মহোদয় ছেলুন মিয়াকে এখান থেকে আয়ের অর্থের অর্ধেকেরও বেশি দেয়া হতো। তাও ওনার মন ভরতো না। উনি একটি কৌশল করে মানিক চেয়ারম্যানকে দিয়ে হাটটি নয় মাইল বাজারে হাটটি নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অবসান হওয়ার পর বিএনপিসহ স্থানীয়রা হাটটি চারু করেছে। এখানে সরকারকে একটু জমি দেওয়ারও কথা হচ্ছে। আমি বলেছি, ১০ শতক জমি তার দাম বর্তমানে প্রায় এক কোটি টাকা। তারপরও আমি বলেছি, আমরা জমি লিখে দিবো। এখন প্রতিহাটে ওয়াক্ত স্টেটে ওরা ১৫ হাজার টাকা দেয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজিবুল আলম বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। জেলা প্রশাসক স্যার হাটটি পরিদর্শন করতে বলেছিলেন। আমি সেখানে গিয়ে দুটি হাটের লোকজনের সাথেই কথা বলেছি। আসলে সমস্যাটা জটিল। আমি পূর্বের ইতিহাস সম্পর্কেও জেনেছি। বিষয়গুলো জেলা প্রশাসক স্যারকে জানাবো। তবে সেদিনই জেলা প্রশাসক স্যার বদলি হয়ে চলে যান। নবাগত জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে আমি হাটটি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করব। তবে নয়মাইল হাট থেকে খাস কালেকশনের মাধ্যমে সামান্য কিছু অর্থ সম্ভবত আমার দপ্তরে জমা হয়। বদরগঞ্জে আমাদের কোনো হাট নেই।