ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

নিখোঁজের পর মিলল বাবুর্চির লাশ!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪২:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ মে ২০২২
  • / ২২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় বাড়ি থেকে চা খেতে বেরিয়ে নিখোঁজ হন বৃদ্ধ রহমান হোসেন রমা (৭৫)। নিখোঁজের একদিন পর পরিত্যক্ত স্থান থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ পৌর এলাকার বনানীপাড়ার বেনাগাড়ির মাঠ সংলগ্ন একটি ঝোপের ভেতর থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। নিহত বৃদ্ধ চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বনানীপাড়ার মৃত মোগবার আলীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন বাবুর্চি ছিলেন। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আবু সাইদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘গত শনিবার সকাল থেকে রমা নিখোঁজ হন। বিকেলে রমার ছেলে ও ছেলের বউ বাড়িতে ফিরে পিতাকে না পেয়ে তাঁকে এলাকার আশেপাশে ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। রাত হয়ে এলেও রমা নিখোঁজ থাকে। পরে গতকাল সকালে রমার নিখোঁজের বিষয়ে তার ছেলে আসান আলী চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এদিকে, দুপুর ১২টার দিকে বেনাগাড়ি মাঠে স্থানীয় ছেলেরা ক্রিকেট খেলার সময় তাদের বল ঝোপের মধ্যে চলে যায়। বল খুজতে গেলে তারা রমা বাবুর্চির লাশ পড়ে থাকতে দেখে। ঘটনাটি জানতে পেরে নিহত রমার ছেলে ঝোপের মধ্যের ভেটুল তলায় গেলে পিতার লাশ খুঁজে পায়। এসময় স্থানীয় ব্যক্তিরা সেখানে ছুটে যায় ও পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌছে লাশেল সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

স্থানীয় আমির হানজালা নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘শনিবার সকাল থেকে রমা বাবুর্চি নিখোঁজ হন। তার ছেলে ও পরিবারের সদস্যরা সারাদিন ও রাতেও এলাকার বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে। রমা চাচা প্রতিদিনই এই বেনাগাড়ি মাঠের পাশ দিয়ে যাওয়া আসা করতেন। আজ (গতকাল) সকালে মাঠের এই ঝোপের ভেতরে এলাকার লোকজন তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে। এলাকার অনেকেই ধারণা করছেন কোন কারণে রমা চাচা এই ভেটুল গাঠের নিচে আসেন এবং স্টোক করে হয়তো সেখানেয় মারা গেছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, ‘প্রায়ই মাঠের এইদিকের ঝোপের পাশে রমা বাবুর্চিকে দেখা যেত। হয়তো গত শনিবার সকালেও বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি এই ঝোপের ভেতরে আসেন এবং স্ট্রোক করে এখানেই মারা যান।’

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ জানায়, গত শনিবার সকাল ১০টার দিকে রহমান হোসেন রমা চা খাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। বিকেলে বাড়িতে ফিরে বাবাকে না পেয়ে পাড়ার মোড়ে খোঁজ করে। কিন্তু কেউই কোনো খবর দিতে পারে না।

এদিকে, সন্ধ্যা হলে এলেও রমা বাবুর্চি বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পাইনা। পরবর্তীতে গতকাল সকালে রহমান হোসেন রমার পরিবারের পক্ষ থেকে সদর থানায় নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করে। দুপুর ১২টার দিকে এলাকার একটি ঝোপের ভেতর থেকে নিখোঁজ রমার মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আবু সাঈদ বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। লাশের সুরতাহল প্রতিবেদন সম্পন্ন হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নিহতের লাশের মৃত্যুর সঠিক কারণে নির্ণয়ে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলের পর নিহতের লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এ ঘটনা নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো মামলা হয়নি। মামলা হলে ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে, গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নিহত বৃদ্ধর ময়নাতদন্ত শুরু হয়। মেডিকেল বোর্ডে ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কার্ডিওলজি কনসালটেন্ট ডা. আবুল হোসেন, সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা. আফরিন ইসলাম, মেডিকেল অফিসার ডা. সোহরাব হোসেন, ডা. মার্ভিন অনিক চৌধুরী।

এছাড়াও মেডিকেল বোর্ড পরিচালনা সহযোগিতায় ছিলেন মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন। এদিকে বিকেল ছয়টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ দাফনের জন্য পরিবারে সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। গতকাল রাত নয়টার পড়ে জানাজা শেষে বুজরুক গড়গড়ি বনানীপাড়া কবরস্থানে লাশের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

নিখোঁজের পর মিলল বাবুর্চির লাশ!

আপলোড টাইম : ০৯:৪২:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ মে ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় বাড়ি থেকে চা খেতে বেরিয়ে নিখোঁজ হন বৃদ্ধ রহমান হোসেন রমা (৭৫)। নিখোঁজের একদিন পর পরিত্যক্ত স্থান থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ পৌর এলাকার বনানীপাড়ার বেনাগাড়ির মাঠ সংলগ্ন একটি ঝোপের ভেতর থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। নিহত বৃদ্ধ চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বনানীপাড়ার মৃত মোগবার আলীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন বাবুর্চি ছিলেন। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আবু সাইদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘গত শনিবার সকাল থেকে রমা নিখোঁজ হন। বিকেলে রমার ছেলে ও ছেলের বউ বাড়িতে ফিরে পিতাকে না পেয়ে তাঁকে এলাকার আশেপাশে ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। রাত হয়ে এলেও রমা নিখোঁজ থাকে। পরে গতকাল সকালে রমার নিখোঁজের বিষয়ে তার ছেলে আসান আলী চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এদিকে, দুপুর ১২টার দিকে বেনাগাড়ি মাঠে স্থানীয় ছেলেরা ক্রিকেট খেলার সময় তাদের বল ঝোপের মধ্যে চলে যায়। বল খুজতে গেলে তারা রমা বাবুর্চির লাশ পড়ে থাকতে দেখে। ঘটনাটি জানতে পেরে নিহত রমার ছেলে ঝোপের মধ্যের ভেটুল তলায় গেলে পিতার লাশ খুঁজে পায়। এসময় স্থানীয় ব্যক্তিরা সেখানে ছুটে যায় ও পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌছে লাশেল সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

স্থানীয় আমির হানজালা নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘শনিবার সকাল থেকে রমা বাবুর্চি নিখোঁজ হন। তার ছেলে ও পরিবারের সদস্যরা সারাদিন ও রাতেও এলাকার বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে। রমা চাচা প্রতিদিনই এই বেনাগাড়ি মাঠের পাশ দিয়ে যাওয়া আসা করতেন। আজ (গতকাল) সকালে মাঠের এই ঝোপের ভেতরে এলাকার লোকজন তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে। এলাকার অনেকেই ধারণা করছেন কোন কারণে রমা চাচা এই ভেটুল গাঠের নিচে আসেন এবং স্টোক করে হয়তো সেখানেয় মারা গেছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, ‘প্রায়ই মাঠের এইদিকের ঝোপের পাশে রমা বাবুর্চিকে দেখা যেত। হয়তো গত শনিবার সকালেও বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি এই ঝোপের ভেতরে আসেন এবং স্ট্রোক করে এখানেই মারা যান।’

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ জানায়, গত শনিবার সকাল ১০টার দিকে রহমান হোসেন রমা চা খাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। বিকেলে বাড়িতে ফিরে বাবাকে না পেয়ে পাড়ার মোড়ে খোঁজ করে। কিন্তু কেউই কোনো খবর দিতে পারে না।

এদিকে, সন্ধ্যা হলে এলেও রমা বাবুর্চি বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পাইনা। পরবর্তীতে গতকাল সকালে রহমান হোসেন রমার পরিবারের পক্ষ থেকে সদর থানায় নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করে। দুপুর ১২টার দিকে এলাকার একটি ঝোপের ভেতর থেকে নিখোঁজ রমার মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আবু সাঈদ বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। লাশের সুরতাহল প্রতিবেদন সম্পন্ন হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নিহতের লাশের মৃত্যুর সঠিক কারণে নির্ণয়ে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলের পর নিহতের লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এ ঘটনা নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো মামলা হয়নি। মামলা হলে ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে, গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নিহত বৃদ্ধর ময়নাতদন্ত শুরু হয়। মেডিকেল বোর্ডে ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কার্ডিওলজি কনসালটেন্ট ডা. আবুল হোসেন, সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা. আফরিন ইসলাম, মেডিকেল অফিসার ডা. সোহরাব হোসেন, ডা. মার্ভিন অনিক চৌধুরী।

এছাড়াও মেডিকেল বোর্ড পরিচালনা সহযোগিতায় ছিলেন মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন। এদিকে বিকেল ছয়টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ দাফনের জন্য পরিবারে সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। গতকাল রাত নয়টার পড়ে জানাজা শেষে বুজরুক গড়গড়ি বনানীপাড়া কবরস্থানে লাশের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।’