ইপেপার । আজ সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

দাফতরিক কাজে ধীরগতি; প্রশাসন সচল করতে হবে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪৩:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • / ২ বার পড়া হয়েছে

৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতনের পর রাষ্ট্রের যে ভঙ্গুর দশা লক্ষ করা যাচ্ছে তাতে কেবল একটি প্রবাদবাক্যই মনে ভাসছে। তা হলো- ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেবো কোথা।’ বিগত প্রায় ১৬ বছরের শাসনে শেখ হাসিনার মাথায় শুধুই ছিল ক্ষমতা। আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে তিনি প্রশাসনকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন। তাদের দিয়েছেন নানা প্রকার সুযোগ-সুবিধা। পদ-পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে মেধার চেয়ে দলীয় পরিচয়ই ছিল মুখ্য বিবেচ্য বিষয়। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের শাসনকালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বেড়েছে প্রায় ৪০৬ শতাংশ। যে সময়ের মধ্যে বেতনভাতা বাড়ানোর এ ঘটনা ঘটেছে, তখন পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দলটির বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নিতে দেখা গেছে। এমনকি নির্বাচনের আগে নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চাইতেও দেখা গেছে।
একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনের দাফতরিক কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সরকার পতনের পর দুই মাস পার হলেও এই স্থবিরতা কাটছে না।
অনেক মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের তেমন কাজই নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সময়মতো অফিসে আসেন, সময় শেষে বেরিয়ে যান। এর কারণ হিসেবে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সিনিয়রদের থেকে কাজ নিচে গড়াবে। উপরের দিকে কাজ নেই, আমার টেবিলেও কাজ নেই। একজন অতিরিক্ত সচিব বলেছেন, অনেক মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বা সচিব নেই। অনেকে রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। আবার যারা সচিব হয়েছেন বা হচ্ছেন তারাও নানা ধরনের হিসাব করে কাজ করছেন। ফলে গতি কম।
প্রশাসনে যে পরিমাণ কাজ থাকার কথা তাতে স্থবিরতার সুযোগ নেই। কোনো গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারের অভিপ্রায়ে প্রশাসনের দাফতরিক কাজে কারো কোনো অবহেলা থাকলে তা খতিয়ে দেখা দরকার।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিষয়ে সরকারের শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁঁইয়া। তিনি বলেছেন, ‘আমলাদের অসহযোগিতার কারণে একটি স্থবিরতা কাজ করছে। আসলে তো এখানে একটি বিপ্লব হয়েছে। একটি বিপ্লবের পর কোনো কিছুই নিয়মমাফিক চলে না। আমরা তারপরও সিস্টেমটা বজায় রেখেছি। আশা করি, এই সিস্টেম বজায় রাখতে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। যদি সিস্টেম ভাঙার প্রয়োজন পড়ে, আমরা সিস্টেম ভাঙব। আমরা প্রয়োজনে নতুন নিয়োগ দিয়ে নতুনদের বসাব।’ তিনি আমলাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনাদের এত এক্সপারটাইজ, পড়াশোনা থাকার পরও যদি আপনারা কাজ করতে না পারেন, তাহলে আমরা নতুনদের নিয়ে আসি।’
বর্তমানে সরকারের তিন মন্ত্রণালয় ও পাঁচ বিভাগে কোনো সচিবই নেই। সচিব না থাকা মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোতে অতিরিক্ত সচিবরা দায়িত্ব পালন করছেন। কাজে কিছু বিড়ম্বনা দেখা দিচ্ছে। দ্রুত সচিব নিয়োগ দিয়ে এই বিড়ম্বনা দূর করা দরকার। একইভাবে দু’টি বিভাগে কমিশনার ও আটটি জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) নেই। এসব পদও দ্রুত পূরণ করা দরকার। জনপ্রশাসনের কাজের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়। সেখানে কাজের ধীরগতি হলে তার প্রভাব সারা দেশেই পড়বে। সেটি কোনোমতেই কাম্য নয়। জনপ্রশাসন উপদেষ্টাকে বিষয়টি নিয়ে আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দাফতরিক কাজে ধীরগতি; প্রশাসন সচল করতে হবে

আপলোড টাইম : ০৮:৪৩:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতনের পর রাষ্ট্রের যে ভঙ্গুর দশা লক্ষ করা যাচ্ছে তাতে কেবল একটি প্রবাদবাক্যই মনে ভাসছে। তা হলো- ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেবো কোথা।’ বিগত প্রায় ১৬ বছরের শাসনে শেখ হাসিনার মাথায় শুধুই ছিল ক্ষমতা। আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে তিনি প্রশাসনকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন। তাদের দিয়েছেন নানা প্রকার সুযোগ-সুবিধা। পদ-পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে মেধার চেয়ে দলীয় পরিচয়ই ছিল মুখ্য বিবেচ্য বিষয়। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের শাসনকালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বেড়েছে প্রায় ৪০৬ শতাংশ। যে সময়ের মধ্যে বেতনভাতা বাড়ানোর এ ঘটনা ঘটেছে, তখন পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দলটির বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নিতে দেখা গেছে। এমনকি নির্বাচনের আগে নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চাইতেও দেখা গেছে।
একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনের দাফতরিক কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সরকার পতনের পর দুই মাস পার হলেও এই স্থবিরতা কাটছে না।
অনেক মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের তেমন কাজই নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সময়মতো অফিসে আসেন, সময় শেষে বেরিয়ে যান। এর কারণ হিসেবে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সিনিয়রদের থেকে কাজ নিচে গড়াবে। উপরের দিকে কাজ নেই, আমার টেবিলেও কাজ নেই। একজন অতিরিক্ত সচিব বলেছেন, অনেক মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বা সচিব নেই। অনেকে রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। আবার যারা সচিব হয়েছেন বা হচ্ছেন তারাও নানা ধরনের হিসাব করে কাজ করছেন। ফলে গতি কম।
প্রশাসনে যে পরিমাণ কাজ থাকার কথা তাতে স্থবিরতার সুযোগ নেই। কোনো গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারের অভিপ্রায়ে প্রশাসনের দাফতরিক কাজে কারো কোনো অবহেলা থাকলে তা খতিয়ে দেখা দরকার।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিষয়ে সরকারের শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁঁইয়া। তিনি বলেছেন, ‘আমলাদের অসহযোগিতার কারণে একটি স্থবিরতা কাজ করছে। আসলে তো এখানে একটি বিপ্লব হয়েছে। একটি বিপ্লবের পর কোনো কিছুই নিয়মমাফিক চলে না। আমরা তারপরও সিস্টেমটা বজায় রেখেছি। আশা করি, এই সিস্টেম বজায় রাখতে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। যদি সিস্টেম ভাঙার প্রয়োজন পড়ে, আমরা সিস্টেম ভাঙব। আমরা প্রয়োজনে নতুন নিয়োগ দিয়ে নতুনদের বসাব।’ তিনি আমলাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনাদের এত এক্সপারটাইজ, পড়াশোনা থাকার পরও যদি আপনারা কাজ করতে না পারেন, তাহলে আমরা নতুনদের নিয়ে আসি।’
বর্তমানে সরকারের তিন মন্ত্রণালয় ও পাঁচ বিভাগে কোনো সচিবই নেই। সচিব না থাকা মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোতে অতিরিক্ত সচিবরা দায়িত্ব পালন করছেন। কাজে কিছু বিড়ম্বনা দেখা দিচ্ছে। দ্রুত সচিব নিয়োগ দিয়ে এই বিড়ম্বনা দূর করা দরকার। একইভাবে দু’টি বিভাগে কমিশনার ও আটটি জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) নেই। এসব পদও দ্রুত পূরণ করা দরকার। জনপ্রশাসনের কাজের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়। সেখানে কাজের ধীরগতি হলে তার প্রভাব সারা দেশেই পড়বে। সেটি কোনোমতেই কাম্য নয়। জনপ্রশাসন উপদেষ্টাকে বিষয়টি নিয়ে আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে।