ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

দর্শনা থানার ওসি লুৎফুল কবীরের বিরুদ্ধে মামলা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:২৯:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

দর্শনা অফিস:
দর্শনা থানার আলোচিত রাস্তায় গাছ ফেলে গণডাকাতি ঘটনার মামলার ২ মাস পার হলেও প্রকৃত ডাকাত সদস্যদের ধরতে পরেনি পুলিশ। এখনো উদ্ধার করতে পারেনি লুট হওয়া ৩৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর এই মামলায় ১৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। এর মধ্যে ৪ জন আসামিকে তিনি ৪৮ ঘণ্টা থানা হেফাজতে রেখে চরম নির্যাতন করে বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তাদের চুয়াডাঙ্গা আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে ডাকাতির ঘটনার মিথ্যা স্বীকারক্তি নিয়ে আদালতে জবানবন্দী দেওয়ার চেষ্টা করায় বলে অভিযোগ করেন আসামিরা। পরে তারা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দর্শনা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) এ এইচ এম লুৎফুল কবীরের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ কর্তৃক আসামি নির্যাতন মামলার শুনানি আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন চুয়াডাঙ্গা দায়রা জজ মো. জিয়া হায়দার।

মামলা এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুন ঝিনাইদহ শহরের মুরারি মোহন সাহার ছেলে ঠিকদার ব্যবসায়ী রনি সাহা তার ব্যবসায়িক পার্টনার ইকরামুল হক ও তাদের প্রাইভেট কার ড্রাইভার বিশ্বজিৎ কুমার সাহাকে নিয়ে ব্যবসায়িক কাজে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর থানাধীন শিয়ালমারি এলাকায় আসেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাজ শেষে ফেরার পথে দর্শনা থানাধীন গয়েশপুর-সড়াবাড়িয়া সড়কের শালিকচারা এলাকার ফাঁকা মাঠ এলাকায় পৌছায়। এসময় ১০-১৫ জনের হাফ প্যান্টপরা একটি ডাকাত দল রাস্তার পাশের একটি বড় গাছ কেটে রাস্তার ওপর ফেলে অস্ত্র ও ধারালো রামদা, হাসুয়া তাদের গলায় ধরে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে মোট ১৪ ভরি ওজনের ৫টি স্বর্ণের আংটি, দুইটি গলার চেইন, ১টি ব্রেসলাট ও নগদ ৫১ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এসময় সড়াবাড়িয়ার জামাল উদ্দিনের ছেলে ঠিকাদার ব্যবসায়ী ওয়াহেদের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা, আলমডাঙ্গার ব্যবসায়ী মৃত এলাহী বক্স মধুর ছেলে কুতুবের কাছ থেকে নগদ ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও স্থানীয় একাধিক পথচারীর নিকট থেকে আরও ৫০ হাজার টাকাসহ মোট ৩৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা সোনার গহনা ও টাকা নিয়ে ডাকাতি করে পারিয়ে যায়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রনি সাহা বাদী হয়ে পরদিন ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড-১৮৬০ ধারায় দর্শনা থানায় ১০-১৫ জন অজ্ঞাত সঙ্গবদ্ধ ডাকাত দলের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হয় দর্শনা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর। এ ঘটনার অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যায়ক্রমে সন্দেহভাজন ১৩ জনকে আটক করে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার আসামি নিশান আলী (২৫), সুজাত আলী (২৫), রিয়াজ হোসেন (২৪) ও নোইম হোসেন বাদী হয়ে সিনিয়র বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আমলি দর্শনা থানা, আদালতে ৭ আগস্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (ওসি) লৎফুল কবিরে বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে সূত্র জানায়, ২ জুলাই মো. সুজাত হোসেনকে আটক করে থানা হেফাজতে রেখে চরমভাবে শারীরিক নির্যতনের শেষে ২ দিন পর মো. সুজাত হোসেনসহ বাদীদেরকে ৪ জুলাই চুয়াডাঙ্গা আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এ অবস্থায় পুলিশ সুজাত হোসেনের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ২৩ আগস্ট তার ৩ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করে বিজ্ঞ আদালত। ২৪ আগস্ট তারিখ রিমান্ড শুরুর পর আবারও নির্যাতনের এক পর্যায়ে আসামি মো. সুজাত হোসেন (২৫) গুরুত্বর আহত হয়ে ২৫ তারিখে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ২৬ তারিখ ২য় দফায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয় হয়। মামলাটি সিনিয়র বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে নামঞ্জুর করলে চুয়াডাঙ্গা বিজ্ঞ দায়রা জজ আদালতে আপিল করে। বিজ্ঞ দায়রা জজ মো. জিয়া হায়দার মামলাটি গ্রহণ করে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

মামলার বাদীপক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী অ্যাড. মো. মশিউর রহমান পারভেজ বলেন, ‘এই মামলায় আমার বাদী পক্ষের নির্যাতনের করেছে তার যথেষ্ট প্রমাণাদি বিজ্ঞ আদালতে পেশ করেছি। আমরা আশা করছি, বিজ্ঞ আদালতে ন্যায়বিচার পাব। এতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে বলে মনে করছি।’
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর বলেন, আলোচিত ডাকাতির মামলাটি ডিবিতে রেফার্ড করা হয়েছে। ৪ জন আসামি আমার বিরুদ্ধে আদালতে নির্যাতনের মামলা করলে চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে মামলাটি নামঞ্জুর করেছে। চুয়াডাঙ্গা দায়রা জজ আদালতে মামলা গ্রহণ করে নথিভুক্ত করে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে শুনানির দিন ধার্য করেছে বিষয়টি আমার জানা নেই। এই অভিযোগটি ভিত্তিহীন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দর্শনা থানার ওসি লুৎফুল কবীরের বিরুদ্ধে মামলা

আপলোড টাইম : ০৭:২৯:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২২

দর্শনা অফিস:
দর্শনা থানার আলোচিত রাস্তায় গাছ ফেলে গণডাকাতি ঘটনার মামলার ২ মাস পার হলেও প্রকৃত ডাকাত সদস্যদের ধরতে পরেনি পুলিশ। এখনো উদ্ধার করতে পারেনি লুট হওয়া ৩৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর এই মামলায় ১৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। এর মধ্যে ৪ জন আসামিকে তিনি ৪৮ ঘণ্টা থানা হেফাজতে রেখে চরম নির্যাতন করে বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তাদের চুয়াডাঙ্গা আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে ডাকাতির ঘটনার মিথ্যা স্বীকারক্তি নিয়ে আদালতে জবানবন্দী দেওয়ার চেষ্টা করায় বলে অভিযোগ করেন আসামিরা। পরে তারা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দর্শনা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) এ এইচ এম লুৎফুল কবীরের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ কর্তৃক আসামি নির্যাতন মামলার শুনানি আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন চুয়াডাঙ্গা দায়রা জজ মো. জিয়া হায়দার।

মামলা এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুন ঝিনাইদহ শহরের মুরারি মোহন সাহার ছেলে ঠিকদার ব্যবসায়ী রনি সাহা তার ব্যবসায়িক পার্টনার ইকরামুল হক ও তাদের প্রাইভেট কার ড্রাইভার বিশ্বজিৎ কুমার সাহাকে নিয়ে ব্যবসায়িক কাজে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর থানাধীন শিয়ালমারি এলাকায় আসেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাজ শেষে ফেরার পথে দর্শনা থানাধীন গয়েশপুর-সড়াবাড়িয়া সড়কের শালিকচারা এলাকার ফাঁকা মাঠ এলাকায় পৌছায়। এসময় ১০-১৫ জনের হাফ প্যান্টপরা একটি ডাকাত দল রাস্তার পাশের একটি বড় গাছ কেটে রাস্তার ওপর ফেলে অস্ত্র ও ধারালো রামদা, হাসুয়া তাদের গলায় ধরে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে মোট ১৪ ভরি ওজনের ৫টি স্বর্ণের আংটি, দুইটি গলার চেইন, ১টি ব্রেসলাট ও নগদ ৫১ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এসময় সড়াবাড়িয়ার জামাল উদ্দিনের ছেলে ঠিকাদার ব্যবসায়ী ওয়াহেদের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা, আলমডাঙ্গার ব্যবসায়ী মৃত এলাহী বক্স মধুর ছেলে কুতুবের কাছ থেকে নগদ ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও স্থানীয় একাধিক পথচারীর নিকট থেকে আরও ৫০ হাজার টাকাসহ মোট ৩৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা সোনার গহনা ও টাকা নিয়ে ডাকাতি করে পারিয়ে যায়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রনি সাহা বাদী হয়ে পরদিন ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড-১৮৬০ ধারায় দর্শনা থানায় ১০-১৫ জন অজ্ঞাত সঙ্গবদ্ধ ডাকাত দলের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হয় দর্শনা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর। এ ঘটনার অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যায়ক্রমে সন্দেহভাজন ১৩ জনকে আটক করে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার আসামি নিশান আলী (২৫), সুজাত আলী (২৫), রিয়াজ হোসেন (২৪) ও নোইম হোসেন বাদী হয়ে সিনিয়র বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আমলি দর্শনা থানা, আদালতে ৭ আগস্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (ওসি) লৎফুল কবিরে বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে সূত্র জানায়, ২ জুলাই মো. সুজাত হোসেনকে আটক করে থানা হেফাজতে রেখে চরমভাবে শারীরিক নির্যতনের শেষে ২ দিন পর মো. সুজাত হোসেনসহ বাদীদেরকে ৪ জুলাই চুয়াডাঙ্গা আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এ অবস্থায় পুলিশ সুজাত হোসেনের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ২৩ আগস্ট তার ৩ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করে বিজ্ঞ আদালত। ২৪ আগস্ট তারিখ রিমান্ড শুরুর পর আবারও নির্যাতনের এক পর্যায়ে আসামি মো. সুজাত হোসেন (২৫) গুরুত্বর আহত হয়ে ২৫ তারিখে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ২৬ তারিখ ২য় দফায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয় হয়। মামলাটি সিনিয়র বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে নামঞ্জুর করলে চুয়াডাঙ্গা বিজ্ঞ দায়রা জজ আদালতে আপিল করে। বিজ্ঞ দায়রা জজ মো. জিয়া হায়দার মামলাটি গ্রহণ করে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

মামলার বাদীপক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী অ্যাড. মো. মশিউর রহমান পারভেজ বলেন, ‘এই মামলায় আমার বাদী পক্ষের নির্যাতনের করেছে তার যথেষ্ট প্রমাণাদি বিজ্ঞ আদালতে পেশ করেছি। আমরা আশা করছি, বিজ্ঞ আদালতে ন্যায়বিচার পাব। এতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে বলে মনে করছি।’
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এইচ এম লুৎফুল কবীর বলেন, আলোচিত ডাকাতির মামলাটি ডিবিতে রেফার্ড করা হয়েছে। ৪ জন আসামি আমার বিরুদ্ধে আদালতে নির্যাতনের মামলা করলে চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে মামলাটি নামঞ্জুর করেছে। চুয়াডাঙ্গা দায়রা জজ আদালতে মামলা গ্রহণ করে নথিভুক্ত করে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে শুনানির দিন ধার্য করেছে বিষয়টি আমার জানা নেই। এই অভিযোগটি ভিত্তিহীন।