ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

দর্শনা কেরুজ চিনিকলের ভেতর থেকে অভিনব কায়দায় রড চুরি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৭:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ ২০২২
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

দর্শনা অফিস:

দর্শনা কেরুজ চিনিকলের আধুনিকায়নের কাজ চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমএফ) নামে একটি প্রতিষ্ঠান এ আধুনিকায়নের কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মালামাল দীর্ঘদিন ধরে চুরি হচ্ছে বলে জনশ্রুতি ছিল। অবশেষে পাওয়ারট্রলিতে করে অভিনব কৌশলে রড চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়ল চিনিকল প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মীর হাতে। সুযোগ বুঝে নিরাপত্তাকর্মীর হাত থেকে ভৌ-দৌঁড় দিয়ে পালিয়ে যান পাওয়ারট্রলির চালক দর্শনা পৌর এলাকার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের রহিমের ছেলে হাবিব (২৫)। এদিকে, এ চুরির ঘটনায় ইনচার্জ নাসির উদ্দিন ও সুপারভাইজার রেজা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমএফ) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়নে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের আধুনিকায়নের কাজ চলছে। আর এ কাজের স্থলে প্রায় প্রায় বিভিন্ন মালামাল চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কেরুজ ক্যাম্পাসে আধুনিকায়ন কাজে মালামাল বহন কাজে ব্যবহৃত একটি পাওয়ারট্রলির পাটাতনের ওপর প্লেন শিড দিয়ে অভিনব কায়দায় তৈরি করা বক্সের মধ্যে প্রায় এক টন রড লুকিয়ে পাচারকালে কেরুজ নিরাপত্তা কর্মী কলিমুল্লাহর হাতে ধরা পড়ে পাওয়ারট্রলির ভর্তি মালামালসহ পাওয়ারট্রলি চালক দর্শনা পৌরসভাধীন ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের রহিমের ছেলে হাবিব (২৫)। এসময় নিরাপত্তা কর্মীর কবল থেকে চালক হাবিব কৌশলে ভৌ-দৌঁড় দিয়ে পালিয়ে গেলেও চুরিকৃত মালামালসহ রডভর্তি পাওয়ারট্রলিটি নেওয়া হয়েছে কেরুজ নিরাপত্তা বিভাগের দখলে।

এ ঘটনায় কেরুজ চিনিকলের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ তদন্ত কমিটি আটককৃত মালামালের পাশাপাশি কেরুজ চিনিশিল্প প্রতিষ্ঠানের ইতঃপূর্বে চুরি যাওয়াসহ অন্য কোনো মালামাল চুরি হয়েছে কি না, তা তদন্ত করবে। তদন্ত কমিটির প্রধান কেরুজ কমার্শিয়াল বিভাগের বদরুল আলমের নের্তৃত্বে অন্যরা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এ প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়ন চলমান কাজ বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির পক্ষে দেখভালে দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ নাসির উদ্দিন ও সুপারভাইজার রেজা নামের দুজন রয়েছেন। স্থানীয়দের ধারণা মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির পক্ষে দেখভালে ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা কুষ্টিয়ার নাসির উদ্দিন ও সুপারভাইজার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের বড় দুধপাতিলা (দর্শনা হঠাৎপাড়া সংলগ্ন) সবুর বাবুর্চির ছেলে রেজার যোগসাজসে এ সমস্ত চুরির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের দাবি, চুরি করে পালিয়ে যাওয়া পাওয়ারট্রলি চালক হাবিবসহ কর্মস্থলের শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই চুরির সাথে জড়িতদের নাম-পরিচয় উন্মোচন হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেরুজ চিনিকলের এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কেরুজ চিনিকলে আধুনিকায়ন কাজের সামগ্রী চুরি হচ্ছে। তবে এ চুরির কাজে কাজ দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ নাসির ও সুপারভাইজার রেজা জড়িত রয়েছেন।

তবে এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘চুরির ঘটনায় দর্শনা থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। তবে লিখিত কোনো অভিযোগ করা হয়নি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি কারা এ চুরির সাথে জড়িত রয়েছে।’ সুপারভাইজার রেজার নিকট পাওয়ারট্রলি চালকের নাম পরিচয় ও চুরির ঘটনা জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার নাম-পরিচয় জানানো যাবে না। তাকে বাঁচানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

কেরুজ চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শেখ মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটে থাকে কেরুজ ক্যাম্পাসে। আজ আমরা হাতে-নাতে মালামাল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে মালামালসহ একটি পাওয়ারট্রলি আটক করেছি। আটককৃত পাওয়ারট্রলির চালক পালিয়ে গেলেও তাতে অভিনব কায়দায় পাটাতনের ওপরে আরেকটি প্লেট লাগানোর মাঝখানে রাখা স্থানে অনেকগুলো রড রয়েছে। এ ঘটনায় আমরা চিনিকলের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত শেষ হলেই চুরির রহস্য উদ্ঘাটনসহ জড়িতদের শনাক্ত করতে পারব বলে আশা করছি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দর্শনা কেরুজ চিনিকলের ভেতর থেকে অভিনব কায়দায় রড চুরি

আপলোড টাইম : ০৯:২৭:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ ২০২২

দর্শনা অফিস:

দর্শনা কেরুজ চিনিকলের আধুনিকায়নের কাজ চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমএফ) নামে একটি প্রতিষ্ঠান এ আধুনিকায়নের কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মালামাল দীর্ঘদিন ধরে চুরি হচ্ছে বলে জনশ্রুতি ছিল। অবশেষে পাওয়ারট্রলিতে করে অভিনব কৌশলে রড চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়ল চিনিকল প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মীর হাতে। সুযোগ বুঝে নিরাপত্তাকর্মীর হাত থেকে ভৌ-দৌঁড় দিয়ে পালিয়ে যান পাওয়ারট্রলির চালক দর্শনা পৌর এলাকার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের রহিমের ছেলে হাবিব (২৫)। এদিকে, এ চুরির ঘটনায় ইনচার্জ নাসির উদ্দিন ও সুপারভাইজার রেজা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমএফ) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়নে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের আধুনিকায়নের কাজ চলছে। আর এ কাজের স্থলে প্রায় প্রায় বিভিন্ন মালামাল চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কেরুজ ক্যাম্পাসে আধুনিকায়ন কাজে মালামাল বহন কাজে ব্যবহৃত একটি পাওয়ারট্রলির পাটাতনের ওপর প্লেন শিড দিয়ে অভিনব কায়দায় তৈরি করা বক্সের মধ্যে প্রায় এক টন রড লুকিয়ে পাচারকালে কেরুজ নিরাপত্তা কর্মী কলিমুল্লাহর হাতে ধরা পড়ে পাওয়ারট্রলির ভর্তি মালামালসহ পাওয়ারট্রলি চালক দর্শনা পৌরসভাধীন ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের রহিমের ছেলে হাবিব (২৫)। এসময় নিরাপত্তা কর্মীর কবল থেকে চালক হাবিব কৌশলে ভৌ-দৌঁড় দিয়ে পালিয়ে গেলেও চুরিকৃত মালামালসহ রডভর্তি পাওয়ারট্রলিটি নেওয়া হয়েছে কেরুজ নিরাপত্তা বিভাগের দখলে।

এ ঘটনায় কেরুজ চিনিকলের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ তদন্ত কমিটি আটককৃত মালামালের পাশাপাশি কেরুজ চিনিশিল্প প্রতিষ্ঠানের ইতঃপূর্বে চুরি যাওয়াসহ অন্য কোনো মালামাল চুরি হয়েছে কি না, তা তদন্ত করবে। তদন্ত কমিটির প্রধান কেরুজ কমার্শিয়াল বিভাগের বদরুল আলমের নের্তৃত্বে অন্যরা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এ প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়ন চলমান কাজ বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির পক্ষে দেখভালে দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ নাসির উদ্দিন ও সুপারভাইজার রেজা নামের দুজন রয়েছেন। স্থানীয়দের ধারণা মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির পক্ষে দেখভালে ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা কুষ্টিয়ার নাসির উদ্দিন ও সুপারভাইজার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের বড় দুধপাতিলা (দর্শনা হঠাৎপাড়া সংলগ্ন) সবুর বাবুর্চির ছেলে রেজার যোগসাজসে এ সমস্ত চুরির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের দাবি, চুরি করে পালিয়ে যাওয়া পাওয়ারট্রলি চালক হাবিবসহ কর্মস্থলের শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই চুরির সাথে জড়িতদের নাম-পরিচয় উন্মোচন হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেরুজ চিনিকলের এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কেরুজ চিনিকলে আধুনিকায়ন কাজের সামগ্রী চুরি হচ্ছে। তবে এ চুরির কাজে কাজ দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ নাসির ও সুপারভাইজার রেজা জড়িত রয়েছেন।

তবে এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘চুরির ঘটনায় দর্শনা থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। তবে লিখিত কোনো অভিযোগ করা হয়নি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি কারা এ চুরির সাথে জড়িত রয়েছে।’ সুপারভাইজার রেজার নিকট পাওয়ারট্রলি চালকের নাম পরিচয় ও চুরির ঘটনা জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার নাম-পরিচয় জানানো যাবে না। তাকে বাঁচানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

কেরুজ চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শেখ মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটে থাকে কেরুজ ক্যাম্পাসে। আজ আমরা হাতে-নাতে মালামাল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে মালামালসহ একটি পাওয়ারট্রলি আটক করেছি। আটককৃত পাওয়ারট্রলির চালক পালিয়ে গেলেও তাতে অভিনব কায়দায় পাটাতনের ওপরে আরেকটি প্লেট লাগানোর মাঝখানে রাখা স্থানে অনেকগুলো রড রয়েছে। এ ঘটনায় আমরা চিনিকলের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত শেষ হলেই চুরির রহস্য উদ্ঘাটনসহ জড়িতদের শনাক্ত করতে পারব বলে আশা করছি।