ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

তেঁতুল শেখ কলেজের অধ্যক্ষকে সভাপতির গালিগালাজের ভিডিও ভাইরাল ও অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪৮:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২
  • / ৪৪ বার পড়া হয়েছে

সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে- সদর ইউএনও শামীম ভূঁইয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা তেঁতুল শেখ কলেজের অধ্যক্ষকে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি কর্তৃক গালিগালাজ করার ঘটনায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা এবং সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারে ও কলেজের সামনে এসব কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এর আগে, গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয় ওই কলেজের অধ্যক্ষ মারফুল হক ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখের ভিডিও। ৫ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে একাধিকবার অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে কলেজের অধ্যক্ষকে গালিগালাজ করছেন সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ। এরই প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সকাল থেকে সভাপতির পদত্যাগের দাবিতে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা এবং সড়ক অবরোধ করেন। দেড় ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে আসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিম ভূঁইয়া ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান। এরপর শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারের অদূরে অবস্থিত তেঁতুল শেখ কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন মারফুল হক। যোগদানের পর থেকে কলেজের অধ্যক্ষ ও সভাপতির মধ্যে অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় নিয়ে মতানৈক্য চলে আসছে। ওই কলেজে ১১ বছর ধরে সভাপতির পদে রয়েছেন আব্দুল্লাহ শেখ। গত মঙ্গলবার সকালে কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে অধ্যক্ষকে গালিগালাজ করেন সভাপতি। সে সময় গোপনে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, সভাপতি বেশ কয়েকবার অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে ‘কলেজ কি তোর বাবার সম্পত্তি, ননসেন্স, অযোগ্য, জ্ঞানহীন’ এ ধরণের বাক্য ব্যবহার করছেন। এ সময় তিনি বেশ কয়েকবার অধ্যক্ষকে বলেন ‘কলেজ কি তোর বাপের?’।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘তেতুল শেখ কলেজে টানা ১১ বছর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে আছেন অত্র কলেজের জমিদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ শেখ। যার কারণে তিনি নিয়োগ বাণিজ্য করে মোটা অংকের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দেন। এছাড়া কলেজের টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া কলেজ ফান্ডের টাকাও আত্মসাত করেছেন তিনি। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার চাই।’

এ বিষয়ে তেঁতুল শেখ কলেজের অধ্যক্ষ মারফুল হক বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমার সাথে কারণে-অকারণে বিবাদে জড়ান সভাপতি। সম্প্রতি কলেজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৬০ লাখ টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে কিছু বললেই আমার সাথে অশোভন আচরণ করেন। শুধু একদিনই নয়, প্রতিদিনই এ ধরণের বাজে আচরণ করেন তিনি।’

অপর দিকে, তেঁতুল শেখ কলেজের সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ দাবি করে বলেন, অধ্যক্ষ একজন অযোগ্য। তিনি কলেজের উন্নতি চান না। বরং প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করছেন। ২৪ বছরের শিক্ষক হলেও তাঁর অধ্যক্ষ হওয়ার যোগ্যতা নেই। তবে তাঁর সাথে উত্তেজনার বশে যে আচরণ করা হয়েছে, তার জন্য তিনি লজ্জিত।

তেতুল শেখ কলেজ

এদিকে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, চুয়াডাঙ্গা তেঁতুল শেখ কলেজের সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ প্রায়ই কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ করেন। এছাড়াও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে সভাপতির বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ সভায় শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য দেন বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম, বড়শলুয়া নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার, খাসকররা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল হান্নান প্রমুখ।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে শিক্ষকরা বলেন, ‘কলেজের অধ্যক্ষ মারুফুল হকের অফিসকক্ষে প্রবেশ করে সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ লাঞ্ছিত করেন। তিনি প্রায়ই এ কাজ করেন। সম্প্রতি অধ্যক্ষে গালিগালাজের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় নানা সমালোচনা। ওই ঘটনায় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ মারফুল হক। এদিকে কলেজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৬০ লাখ টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিয়েছেন কলেজের সভাপতি। কলেজের সেই টাকা তিনি নিজের স্ত্রী ও মেয়ের নামে ব্যাংকে রেখেছেন। এসব বিষয়ের সমাধান হওয়া উচিত।

প্রায় ঘণ্টাখানেক মিটিং শেষে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূঁইয়া বলেন, সভাপতিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতেও বলা হয়েছে। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

তেঁতুল শেখ কলেজের অধ্যক্ষকে সভাপতির গালিগালাজের ভিডিও ভাইরাল ও অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ

আপলোড টাইম : ০৯:৪৮:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২

সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে- সদর ইউএনও শামীম ভূঁইয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা তেঁতুল শেখ কলেজের অধ্যক্ষকে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি কর্তৃক গালিগালাজ করার ঘটনায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা এবং সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারে ও কলেজের সামনে এসব কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এর আগে, গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয় ওই কলেজের অধ্যক্ষ মারফুল হক ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখের ভিডিও। ৫ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে একাধিকবার অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে কলেজের অধ্যক্ষকে গালিগালাজ করছেন সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ। এরই প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সকাল থেকে সভাপতির পদত্যাগের দাবিতে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা এবং সড়ক অবরোধ করেন। দেড় ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে আসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিম ভূঁইয়া ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান। এরপর শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারের অদূরে অবস্থিত তেঁতুল শেখ কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন মারফুল হক। যোগদানের পর থেকে কলেজের অধ্যক্ষ ও সভাপতির মধ্যে অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় নিয়ে মতানৈক্য চলে আসছে। ওই কলেজে ১১ বছর ধরে সভাপতির পদে রয়েছেন আব্দুল্লাহ শেখ। গত মঙ্গলবার সকালে কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে অধ্যক্ষকে গালিগালাজ করেন সভাপতি। সে সময় গোপনে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, সভাপতি বেশ কয়েকবার অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে ‘কলেজ কি তোর বাবার সম্পত্তি, ননসেন্স, অযোগ্য, জ্ঞানহীন’ এ ধরণের বাক্য ব্যবহার করছেন। এ সময় তিনি বেশ কয়েকবার অধ্যক্ষকে বলেন ‘কলেজ কি তোর বাপের?’।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘তেতুল শেখ কলেজে টানা ১১ বছর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে আছেন অত্র কলেজের জমিদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ শেখ। যার কারণে তিনি নিয়োগ বাণিজ্য করে মোটা অংকের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দেন। এছাড়া কলেজের টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া কলেজ ফান্ডের টাকাও আত্মসাত করেছেন তিনি। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার চাই।’

এ বিষয়ে তেঁতুল শেখ কলেজের অধ্যক্ষ মারফুল হক বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমার সাথে কারণে-অকারণে বিবাদে জড়ান সভাপতি। সম্প্রতি কলেজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৬০ লাখ টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে কিছু বললেই আমার সাথে অশোভন আচরণ করেন। শুধু একদিনই নয়, প্রতিদিনই এ ধরণের বাজে আচরণ করেন তিনি।’

অপর দিকে, তেঁতুল শেখ কলেজের সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ দাবি করে বলেন, অধ্যক্ষ একজন অযোগ্য। তিনি কলেজের উন্নতি চান না। বরং প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করছেন। ২৪ বছরের শিক্ষক হলেও তাঁর অধ্যক্ষ হওয়ার যোগ্যতা নেই। তবে তাঁর সাথে উত্তেজনার বশে যে আচরণ করা হয়েছে, তার জন্য তিনি লজ্জিত।

তেতুল শেখ কলেজ

এদিকে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, চুয়াডাঙ্গা তেঁতুল শেখ কলেজের সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ প্রায়ই কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ করেন। এছাড়াও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে সভাপতির বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ সভায় শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য দেন বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম, বড়শলুয়া নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার, খাসকররা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল হান্নান প্রমুখ।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে শিক্ষকরা বলেন, ‘কলেজের অধ্যক্ষ মারুফুল হকের অফিসকক্ষে প্রবেশ করে সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ লাঞ্ছিত করেন। তিনি প্রায়ই এ কাজ করেন। সম্প্রতি অধ্যক্ষে গালিগালাজের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় নানা সমালোচনা। ওই ঘটনায় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ মারফুল হক। এদিকে কলেজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৬০ লাখ টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিয়েছেন কলেজের সভাপতি। কলেজের সেই টাকা তিনি নিজের স্ত্রী ও মেয়ের নামে ব্যাংকে রেখেছেন। এসব বিষয়ের সমাধান হওয়া উচিত।

প্রায় ঘণ্টাখানেক মিটিং শেষে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূঁইয়া বলেন, সভাপতিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতেও বলা হয়েছে। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।