ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

জীবন বাজি রেখেই হায়দার আলী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন

আওয়াল হোসেন, দর্শনা:
  • আপলোড টাইম : ০৭:১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১
  • / ৩৯ বার পড়া হয়েছে

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। আজ অবদি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি দর্শনা পরানপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী। জীবন বাজি রেখে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে তিনি এখন রংমিস্ত্রী। অতিকষ্টে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোনোরকমে সংসারের চাকা ঘুরিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার পরানপুরের কলিমুদ্দিনের বড় ছেলে হায়দার আলী ১৯৭১ সালে ৮ নম্বর সেক্টরে মাত্র ২১ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেসময়ের টগবগে তরুণ হায়দার ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জর উপজেলার বিষয়খালী অঞ্চলে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযোদ্ধা চলাকালীন সময়ের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মৃত ছাব্দার আলীর নেতৃত্বে ওই অঞ্চলের জিরাট গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা তমছের আলী ও আনিছুর রহমান, আক্কাস আলী, সিরাজুল ইসলাম, নওশের আলী ও হায়দার আলীসহ ১০ জনের একটি দল বিষয়খালী অঞ্চলে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময় হঠাৎ পাক-হানাদার বাহিনীর বিমান হামলা শুরু করলে এই ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা পিছু হঠে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে ফিরে আসে। এরপর ভারতের মাঝদিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল নিয়ে দৌঁড়াতে গিয়ে বা’হাতের কবজিও ভেঙে যায় হায়দার আলীর। সেময় প্রথমে তিনি রানাঘাটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। এরপরও তিনি থেমে থাকেননি, হাতের ব্যান্ডেস নিয়ে কমান্ডার ছাব্দার আলীর নির্দেশে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে চার মাসব্যাপী পাক-হানাদার বাহিনীর অবস্থানের খবরা-খবর ও সীমান্ত এলাকায় তাকে রেকি করার দায়িত্ব দেন বলে হায়দার আলী জানান। পরে যুদ্ধ শেষে তৎকালীন ৮ নম্বর সেক্টরের প্রধান আতাউল গনি ওসমানীর নিকট থেকে ভারতের মাঝদিয়া ক্যাম্প থেকে হায়দার আলী সার্টিফিকেট নেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী বলেন, ‘আমার যুদ্ধের সার্টিফিকেট থাকলেও আমি স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো স্বীকৃতি পায়নি। এছাড়া আমি আমাদের দামুড়হুদা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আছির আলীর সাথে দু-দুবার ঢাকায় গিয়ে ধার-দেনা করে নেওয়া প্রায় ২০ হাজার টাকাও খরচ করেছি। এরপরও ন্যায্য স্বীকৃতি মেলেনি। বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ খ ম মোজ্জাম্মেল হকের সাথেও দেখা করেছি। তিনি আমার কাগজপত্র দেখে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম দেওয়ার জন্য দামুড়হুদা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আছির আলীকে তিনি বলে দেন এবং একটি লিখিত কাগজ দেন। সে কাগজটিও আছির আলীর কাছে রয়েছে। সেটি আছির আলী আর আমাকে দেননি। এছাড়া আছির আলী আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে বলে ৫০ হাজার টাকা দিলে মুক্তিযোদ্ধোর তালিকায় নাম তুলে দেবে। আমি রংমিস্ত্রির কাজ করে কোনো-রকমে সংসারটা টেনে নিয়ে যাচ্ছি, অত টাকা কোথা থেকে দেব। এখন বুঝতে পারছি আমি রংমিস্ত্রী তাই যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারলাম না।

এবিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আছির আলীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হায়দার আলী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং ভারতে থাকাকালীন মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেটও আছে বলে শুনেছি এবং দেখেছি। কেউ তার পক্ষে স্বাক্ষী দিলে তবেই তাকে মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় নাম দেওয়া হবে।

এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা তমছের আলী বলেন, ‘আমি সাক্ষী দেব। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝেও আমি বলবো হায়দার আলী আমার সাথে বিষয়খালীর যুদ্ধে অংশ নিয়েছে।’ তখন তিনি বলেন, তাহলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম যাবে। এখন সকলের প্রশ্ন আর কতদিন হলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় হায়দার আলীর নাম উঠবে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও সে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এর উত্তর কে দেবে, এ প্রশ্ন থেকেই যায়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবন বাজি রেখেই হায়দার আলী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন

আপলোড টাইম : ০৭:১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। আজ অবদি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি দর্শনা পরানপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী। জীবন বাজি রেখে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে তিনি এখন রংমিস্ত্রী। অতিকষ্টে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোনোরকমে সংসারের চাকা ঘুরিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার পরানপুরের কলিমুদ্দিনের বড় ছেলে হায়দার আলী ১৯৭১ সালে ৮ নম্বর সেক্টরে মাত্র ২১ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেসময়ের টগবগে তরুণ হায়দার ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জর উপজেলার বিষয়খালী অঞ্চলে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযোদ্ধা চলাকালীন সময়ের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মৃত ছাব্দার আলীর নেতৃত্বে ওই অঞ্চলের জিরাট গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা তমছের আলী ও আনিছুর রহমান, আক্কাস আলী, সিরাজুল ইসলাম, নওশের আলী ও হায়দার আলীসহ ১০ জনের একটি দল বিষয়খালী অঞ্চলে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময় হঠাৎ পাক-হানাদার বাহিনীর বিমান হামলা শুরু করলে এই ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা পিছু হঠে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে ফিরে আসে। এরপর ভারতের মাঝদিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল নিয়ে দৌঁড়াতে গিয়ে বা’হাতের কবজিও ভেঙে যায় হায়দার আলীর। সেময় প্রথমে তিনি রানাঘাটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। এরপরও তিনি থেমে থাকেননি, হাতের ব্যান্ডেস নিয়ে কমান্ডার ছাব্দার আলীর নির্দেশে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে চার মাসব্যাপী পাক-হানাদার বাহিনীর অবস্থানের খবরা-খবর ও সীমান্ত এলাকায় তাকে রেকি করার দায়িত্ব দেন বলে হায়দার আলী জানান। পরে যুদ্ধ শেষে তৎকালীন ৮ নম্বর সেক্টরের প্রধান আতাউল গনি ওসমানীর নিকট থেকে ভারতের মাঝদিয়া ক্যাম্প থেকে হায়দার আলী সার্টিফিকেট নেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী বলেন, ‘আমার যুদ্ধের সার্টিফিকেট থাকলেও আমি স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো স্বীকৃতি পায়নি। এছাড়া আমি আমাদের দামুড়হুদা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আছির আলীর সাথে দু-দুবার ঢাকায় গিয়ে ধার-দেনা করে নেওয়া প্রায় ২০ হাজার টাকাও খরচ করেছি। এরপরও ন্যায্য স্বীকৃতি মেলেনি। বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ খ ম মোজ্জাম্মেল হকের সাথেও দেখা করেছি। তিনি আমার কাগজপত্র দেখে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম দেওয়ার জন্য দামুড়হুদা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আছির আলীকে তিনি বলে দেন এবং একটি লিখিত কাগজ দেন। সে কাগজটিও আছির আলীর কাছে রয়েছে। সেটি আছির আলী আর আমাকে দেননি। এছাড়া আছির আলী আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে বলে ৫০ হাজার টাকা দিলে মুক্তিযোদ্ধোর তালিকায় নাম তুলে দেবে। আমি রংমিস্ত্রির কাজ করে কোনো-রকমে সংসারটা টেনে নিয়ে যাচ্ছি, অত টাকা কোথা থেকে দেব। এখন বুঝতে পারছি আমি রংমিস্ত্রী তাই যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারলাম না।

এবিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আছির আলীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হায়দার আলী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং ভারতে থাকাকালীন মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেটও আছে বলে শুনেছি এবং দেখেছি। কেউ তার পক্ষে স্বাক্ষী দিলে তবেই তাকে মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় নাম দেওয়া হবে।

এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা তমছের আলী বলেন, ‘আমি সাক্ষী দেব। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝেও আমি বলবো হায়দার আলী আমার সাথে বিষয়খালীর যুদ্ধে অংশ নিয়েছে।’ তখন তিনি বলেন, তাহলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম যাবে। এখন সকলের প্রশ্ন আর কতদিন হলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় হায়দার আলীর নাম উঠবে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও সে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এর উত্তর কে দেবে, এ প্রশ্ন থেকেই যায়।