ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭২টি পশু

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন: কোরবানির ঈদকে সামনে রেথে ব্যস্ত সময় পার করছেন চুয়াডাঙ্গার খামারীরা। জেলায় যে পরিমাণ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত করা হয়, তা স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করে থাকে। এসব পশু স্থানীয় খামারী ও গৃহস্থরা লালন-পালন করে প্রস্তুত করেছেন। তবে জেলার চাহিদার তুলনায় কোরবানির যোগ্য গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া উদ্বৃত্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

চুয়াডাঙ্গা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১১ হাজার ১৬০টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৯৫টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৫ হাজার ১৯৫টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ২ হাজার ৫০৪টি ও জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ২৭০টি। এবার জেলায় কোরবানির চাহিদা রয়েছে ৮৭ হাজার ৭৯৬টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২০ হাজার ৭৪৫টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২২ হাজার ৮২৫টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১৭ হাজার ৭২৬টি ও জীবননগর উপজেলায় ২৬ হাজার ৫০০টি। এবার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৬২ হাজার ৭৭৬ কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৬২০টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২৪ হাজার ৪৫৭টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১১ হাজার ৩১৮টি ও জীবননগর উপজেলায় ১৯ হাজার ৩৪১টি। এসব পশু দিয়ে ঢাকা-চট্টগামসহ অন্যান্য জেলায়ও চাহিদা মেটানো যাবে। এবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় বিভিন্ন খামারে কোরবানি যোগ্য পশু রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭২টি। এর মধ্যে গরু ও মহিষ মিলে ৩২ হাজার ৯টি ও ছাগল ও ভেড়া মিলে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৩টি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ৬২ হাজার ৭৭৬টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।

জীবননগর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের খামারী আবুল বাশার বলেন, ‘১০টি গাভীসহ ৭০টি কোরবানি উপযুক্ত গরু ছিল আমার খামারে। ঢাকার খামারীদের কাছে ২০টি গরু ইতঃমধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি । এখনো আমার খামারে ৩০টি গরু আছে। এই গরুগুলো আরও সাইজে বড়। বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত বলতে পাচ্ছি না লাভ হবে না ক্ষতি হবে। গত বছর ৪০টি গরু কোরবানির সময় বিক্রি করতে না পারায় ঢাকা থেকে ফেরৎ এসেছিল। খাবারের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি। এলাকায় বিক্রির উপযুক্ত কোরবানির গরু গত বছরের তুলনায় কম। বিকিকিনিও গত বছরের তুলনায় কম  হবে।’ তিনি জানান, গরুগুলো বিকিকিনি করতে পারলে গত বছরের লোকশান কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

আলমডাঙ্গা উপজেলার হাজ্জাজ বিন তাহাজ বলেন, ‘গত কোরবানির পর থেকে এ পর্যন্ত ৬০টি গরু বিক্রি করেছি। ৪-৫টি গরু লোকসানে বিক্রি করেছি। বাকি গরু লাভে বিক্রি হয়েছে। চলতি বছর কত টাকায় গরু বিক্রি হয়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এভাবে হিসাব দেওয়া আমার জন্য অনেক কঠিন। তার কারণ সারা বছর আমি গরু বিকিকিনি করি। অনেক সময়ের ব্যাপার। তবে ২২টি গরু লাট ধরে একবারে বিক্রি করেছি ৯৯ লাখ টাকায়। তাছাড়া কখনো ৪টি কখনো ৫টি করে গরু বিক্রি করেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর কেজিতে খাবারের দাম ১৫-২০ টাকা বেশি। গরু ভেদে প্রতিটি গরুর পিছনে মাসে খাবার বাবদ ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া গ্রামের খামারী মাহফুজ বলেন, ‘আমার খামারে ২৬টি গাভী আছে। আমার খামারে পালা ৫টি গরু বিকিকিনি করার মতো আছে। গরু ৫টি দেড় লাখ থেকে ৫ লাখের মধ্যে বিকিকিনি হবে বলে আশা রাখি।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা জানান, জেলায় এবার কোরবানির জন্য প্রায় ৩২ হাজার ৯ শ গরু ও মহিষ মোজাতাজা করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার চাহিদা পূরণ করে প্রায় ৬২ শতাংশ গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাবে। এছাড়াও এবার ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৩টি ছাগল ও ভেড়া কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো রকম কীটনাশক বা ক্ষতিকর ছাড়ায় মাঠের ঘাস ও স্বাভাবিক খাবারে এসব গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে খামারীদের বিভিন্ন সময় প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। খামারীদের পোশা পশু ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাহিদা পূরণ করবে।

তিনি আরও জানান, ভারতের গরু যেন কোনোভাবেই আমাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে আমাদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি রয়েছে।  কোরবানির হাট যত জমে উঠবে, সেসময়ে নিরাপত্তা সহযোগিতায় পুলিশ, ব্যাংক ও প্রাণিজ কর্মকর্তাদের টিম ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সহযোগিতা করবে। জাল টাকা নিয়ে যেন খামারী ও ক্রেতাদেও প্রতারিত করতে না পারে। খামারীরা এবার কোরবানি পশুর ন্যায্যমূল্য পাবেন বলেও জানান তিনি ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গা জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭২টি পশু

আপলোড টাইম : ০৯:০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন: কোরবানির ঈদকে সামনে রেথে ব্যস্ত সময় পার করছেন চুয়াডাঙ্গার খামারীরা। জেলায় যে পরিমাণ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত করা হয়, তা স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করে থাকে। এসব পশু স্থানীয় খামারী ও গৃহস্থরা লালন-পালন করে প্রস্তুত করেছেন। তবে জেলার চাহিদার তুলনায় কোরবানির যোগ্য গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া উদ্বৃত্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

চুয়াডাঙ্গা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১১ হাজার ১৬০টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৯৫টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৫ হাজার ১৯৫টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ২ হাজার ৫০৪টি ও জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ২৭০টি। এবার জেলায় কোরবানির চাহিদা রয়েছে ৮৭ হাজার ৭৯৬টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২০ হাজার ৭৪৫টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২২ হাজার ৮২৫টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১৭ হাজার ৭২৬টি ও জীবননগর উপজেলায় ২৬ হাজার ৫০০টি। এবার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৬২ হাজার ৭৭৬ কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৬২০টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২৪ হাজার ৪৫৭টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১১ হাজার ৩১৮টি ও জীবননগর উপজেলায় ১৯ হাজার ৩৪১টি। এসব পশু দিয়ে ঢাকা-চট্টগামসহ অন্যান্য জেলায়ও চাহিদা মেটানো যাবে। এবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় বিভিন্ন খামারে কোরবানি যোগ্য পশু রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭২টি। এর মধ্যে গরু ও মহিষ মিলে ৩২ হাজার ৯টি ও ছাগল ও ভেড়া মিলে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৩টি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ৬২ হাজার ৭৭৬টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।

জীবননগর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের খামারী আবুল বাশার বলেন, ‘১০টি গাভীসহ ৭০টি কোরবানি উপযুক্ত গরু ছিল আমার খামারে। ঢাকার খামারীদের কাছে ২০টি গরু ইতঃমধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি । এখনো আমার খামারে ৩০টি গরু আছে। এই গরুগুলো আরও সাইজে বড়। বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত বলতে পাচ্ছি না লাভ হবে না ক্ষতি হবে। গত বছর ৪০টি গরু কোরবানির সময় বিক্রি করতে না পারায় ঢাকা থেকে ফেরৎ এসেছিল। খাবারের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি। এলাকায় বিক্রির উপযুক্ত কোরবানির গরু গত বছরের তুলনায় কম। বিকিকিনিও গত বছরের তুলনায় কম  হবে।’ তিনি জানান, গরুগুলো বিকিকিনি করতে পারলে গত বছরের লোকশান কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

আলমডাঙ্গা উপজেলার হাজ্জাজ বিন তাহাজ বলেন, ‘গত কোরবানির পর থেকে এ পর্যন্ত ৬০টি গরু বিক্রি করেছি। ৪-৫টি গরু লোকসানে বিক্রি করেছি। বাকি গরু লাভে বিক্রি হয়েছে। চলতি বছর কত টাকায় গরু বিক্রি হয়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এভাবে হিসাব দেওয়া আমার জন্য অনেক কঠিন। তার কারণ সারা বছর আমি গরু বিকিকিনি করি। অনেক সময়ের ব্যাপার। তবে ২২টি গরু লাট ধরে একবারে বিক্রি করেছি ৯৯ লাখ টাকায়। তাছাড়া কখনো ৪টি কখনো ৫টি করে গরু বিক্রি করেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর কেজিতে খাবারের দাম ১৫-২০ টাকা বেশি। গরু ভেদে প্রতিটি গরুর পিছনে মাসে খাবার বাবদ ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া গ্রামের খামারী মাহফুজ বলেন, ‘আমার খামারে ২৬টি গাভী আছে। আমার খামারে পালা ৫টি গরু বিকিকিনি করার মতো আছে। গরু ৫টি দেড় লাখ থেকে ৫ লাখের মধ্যে বিকিকিনি হবে বলে আশা রাখি।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা জানান, জেলায় এবার কোরবানির জন্য প্রায় ৩২ হাজার ৯ শ গরু ও মহিষ মোজাতাজা করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার চাহিদা পূরণ করে প্রায় ৬২ শতাংশ গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাবে। এছাড়াও এবার ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৩টি ছাগল ও ভেড়া কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো রকম কীটনাশক বা ক্ষতিকর ছাড়ায় মাঠের ঘাস ও স্বাভাবিক খাবারে এসব গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে খামারীদের বিভিন্ন সময় প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। খামারীদের পোশা পশু ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাহিদা পূরণ করবে।

তিনি আরও জানান, ভারতের গরু যেন কোনোভাবেই আমাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে আমাদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি রয়েছে।  কোরবানির হাট যত জমে উঠবে, সেসময়ে নিরাপত্তা সহযোগিতায় পুলিশ, ব্যাংক ও প্রাণিজ কর্মকর্তাদের টিম ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সহযোগিতা করবে। জাল টাকা নিয়ে যেন খামারী ও ক্রেতাদেও প্রতারিত করতে না পারে। খামারীরা এবার কোরবানি পশুর ন্যায্যমূল্য পাবেন বলেও জানান তিনি ।