ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গার নফরকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ

বর্তমান কমিটি থাকলেও আগের সভাপতির স্বাক্ষরেই ওঠে টাকা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৫৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৫১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহীন ফারহানার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসেবে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। পরিচালনা পরিষদ পরিবর্তন হলেও সাবেক সভাপতির নামেই ব্যাংক হিসেব রেখে টাকা উত্তোলন ও খরচে গড়মিলের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষিকার দাবি, সময় সুযোগের অভাবে তিন বছরেও পরিবর্তন করা হয়নি ব্যাংক হিসাবে সভাপতির নাম। তবে এলাকাবাসী বলছেন, তিন বছরেও সভাপতির নাম ব্যাংক হিসাবে পরিবর্তন না করা ভালো লক্ষণ নয়। বর্তমান ও সাবেক সভাপতির দাবি, ব্যাংক হিসাব সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, এ ধরনের কাজ বিধির বাইরে। আইন অনুয়ায়ী নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ডিঙ্গেদহ শাখায় নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেভিং অ্যাকাউন্ট। যার নম্বর ৩১০২১৩৪০০৬২৫৩। ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান এলাকার বিশিষ্ট অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল জলিল। সাবেক কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এলাকায় দন্ত্য চিকিৎসক হিসিবে পরিচিত আকবর আলী। ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বর্তমান এই কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে। মাঝখানে একটি কমিটি পূর্ণাঙ্গ সময় পার করলেও তিন বছরে পরিবর্তন করা হয়নি বিদ্যালয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য। আগের সভাপতি আকবর আলী ও প্রধান শিক্ষিকা শাহীন ফারহানার স্বাক্ষরেই এখনো ওঠে প্রতিষ্ঠানের অর্থ।
নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমাকে কিছুই বলা হয়নি। যদি কোনো অন্যায় কেউ করে থাকে, তাহলে প্রধান শিক্ষক করেছেন। তিন বছরেও তিনি সভাপতির নাম অ্যাকাউন্টে দিতে পারেননি। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার অনুমতিও নেওয়া হয়নি। আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। হেড মাস্টার যে কথা বলেছে, সেটা সম্পূর্ণ রং। আমি আকবরকে দিয়ে টাকা-পয়সা ওঠাতে হবে, এমন কোনো কথা বলিনি।’
সরেজমিনে সদর উপজেলার নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক শাহীন ফারহানা বলেন, ‘আমি ডিপিও স্যারকে বলেছি স্যার আমি অ্যাকাউন্টে সভাপতির নামটা এখনো চেঞ্জ করতে পারিনি। সময় সুযোগের অভাবে করা হয়নি।’ এসময় ‘তিন বছরের মধ্যেও সভাপতির নাম ব্যাংক হিসাবে পরিবর্তন করার সময় না পাওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদক জানতে চাইলে, প্রধান শিক্ষক শাহীন ফারহানা উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘সেটা কি আপনার হেডেক? আমার অফিসিয়াল বিষয়, এটিও, টিও, ডিপিও আমাকে কিছু বলেনি, তাদের আপত্তি নেই, যেখানে আমার সভাপতি রাগ করেনি, সেখানে আপনি হু আর ইউ? আপনার ইন্টারেস্ট কোথায়?’
প্রধান শিক্ষক শাহীন ফারহানা আরও বলেন, ‘বর্তমান সভাপতির অনুমতি নিয়েই আগের সভাপতির নাম রাখা হয়েছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। আগের সভাপতি টাকা তুলে আমার হাতে দিয়েছেন। উনি খরচ করেছেন আমি টাকা দিয়েছি। এখানে আমাদের কমিটির কোনো অবজেকশন নেই। নিয়মের অবজেকশন থাকলোই বা, আমি যেমন চেঞ্জ করি নাই, এবার করলাম, নো প্রবলেম। আমার বর্তমান সভাপতি, টিও স্যারের বললো, টিও স্যার চেঞ্জ করতে বলার পর এই যে আমি করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সভাপতি থাকতেও সাবেক সভাপতি মাতব্বারি করে। এ জন্য আমি গা লাগায়নি। সাবেক সভাপতি আকবর আলী ভালো। উনি কাজ করলে কাজ ভালো হয়।’
তবে নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আকবর আলী বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘আমি কমিটি থেকে আসার পর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি ওই স্কুলের একজন জমিদাতা। বর্তমান কমিটিতে আমি নেই। প্রধান শিক্ষিকা কীভাবে ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন, আমি জানি না। তবে ২০২৩ সালে উনি আমাকে জানান অ্যাকাউন্ট এখনো আমার নামেই নাকি আছে। উনার অনুরোধে আমি এই ২০২৩ সালে তিনটা চেকে স্বাক্ষর করেছি। বোধহয় তিনটা চেকে ২ লাখ টাকা মতো এ বছর তুলেছে। তবে বাকি সময়টা কীভাবে উনি টাকা তুলেছেন, আমার জানা নেই।’
যদিও নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দাবি করেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিষয়টি জানেন। তবে জেলা চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিসার তবিবুর রহমান বিষয়টি জানেন না, জানিয়ে দৈনিক সময়ের সমীকরণকে বলেন, ‘যদি ওই প্রধান শিক্ষক এমন কিছু করে থাকেন তাহলে অপরাধ করেছেন। এটি বিধির বাইরে। আমি এ ধরনের কিছু জানতাম না। আমাকে জানানোও হয়নি। আমি বিষয়টি জানলাম, এখন উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানাবো। এটার বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, অভিভাবক ও সচেতন মহলের মানুষরা বলছেন, একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষিকার এমন দুর্নীতির সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে তিন বছরেও সভাপতির নাম পরিবর্তন না করা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। ব্যাংক থেকে নিয়ম অনুযায়ী যার টাকা ওঠানোর কথা, তিনি কিছুই জানে না। আগের সভাপতি বা প্রদান শিক্ষিকার ইচ্ছামতো টাকা ওঠাবেন, এটার তদন্ত ও শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গার নফরকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ

বর্তমান কমিটি থাকলেও আগের সভাপতির স্বাক্ষরেই ওঠে টাকা

আপলোড টাইম : ১১:৫৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহীন ফারহানার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসেবে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। পরিচালনা পরিষদ পরিবর্তন হলেও সাবেক সভাপতির নামেই ব্যাংক হিসেব রেখে টাকা উত্তোলন ও খরচে গড়মিলের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষিকার দাবি, সময় সুযোগের অভাবে তিন বছরেও পরিবর্তন করা হয়নি ব্যাংক হিসাবে সভাপতির নাম। তবে এলাকাবাসী বলছেন, তিন বছরেও সভাপতির নাম ব্যাংক হিসাবে পরিবর্তন না করা ভালো লক্ষণ নয়। বর্তমান ও সাবেক সভাপতির দাবি, ব্যাংক হিসাব সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, এ ধরনের কাজ বিধির বাইরে। আইন অনুয়ায়ী নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ডিঙ্গেদহ শাখায় নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেভিং অ্যাকাউন্ট। যার নম্বর ৩১০২১৩৪০০৬২৫৩। ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান এলাকার বিশিষ্ট অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল জলিল। সাবেক কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এলাকায় দন্ত্য চিকিৎসক হিসিবে পরিচিত আকবর আলী। ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বর্তমান এই কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে। মাঝখানে একটি কমিটি পূর্ণাঙ্গ সময় পার করলেও তিন বছরে পরিবর্তন করা হয়নি বিদ্যালয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য। আগের সভাপতি আকবর আলী ও প্রধান শিক্ষিকা শাহীন ফারহানার স্বাক্ষরেই এখনো ওঠে প্রতিষ্ঠানের অর্থ।
নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমাকে কিছুই বলা হয়নি। যদি কোনো অন্যায় কেউ করে থাকে, তাহলে প্রধান শিক্ষক করেছেন। তিন বছরেও তিনি সভাপতির নাম অ্যাকাউন্টে দিতে পারেননি। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার অনুমতিও নেওয়া হয়নি। আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। হেড মাস্টার যে কথা বলেছে, সেটা সম্পূর্ণ রং। আমি আকবরকে দিয়ে টাকা-পয়সা ওঠাতে হবে, এমন কোনো কথা বলিনি।’
সরেজমিনে সদর উপজেলার নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক শাহীন ফারহানা বলেন, ‘আমি ডিপিও স্যারকে বলেছি স্যার আমি অ্যাকাউন্টে সভাপতির নামটা এখনো চেঞ্জ করতে পারিনি। সময় সুযোগের অভাবে করা হয়নি।’ এসময় ‘তিন বছরের মধ্যেও সভাপতির নাম ব্যাংক হিসাবে পরিবর্তন করার সময় না পাওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদক জানতে চাইলে, প্রধান শিক্ষক শাহীন ফারহানা উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘সেটা কি আপনার হেডেক? আমার অফিসিয়াল বিষয়, এটিও, টিও, ডিপিও আমাকে কিছু বলেনি, তাদের আপত্তি নেই, যেখানে আমার সভাপতি রাগ করেনি, সেখানে আপনি হু আর ইউ? আপনার ইন্টারেস্ট কোথায়?’
প্রধান শিক্ষক শাহীন ফারহানা আরও বলেন, ‘বর্তমান সভাপতির অনুমতি নিয়েই আগের সভাপতির নাম রাখা হয়েছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। আগের সভাপতি টাকা তুলে আমার হাতে দিয়েছেন। উনি খরচ করেছেন আমি টাকা দিয়েছি। এখানে আমাদের কমিটির কোনো অবজেকশন নেই। নিয়মের অবজেকশন থাকলোই বা, আমি যেমন চেঞ্জ করি নাই, এবার করলাম, নো প্রবলেম। আমার বর্তমান সভাপতি, টিও স্যারের বললো, টিও স্যার চেঞ্জ করতে বলার পর এই যে আমি করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সভাপতি থাকতেও সাবেক সভাপতি মাতব্বারি করে। এ জন্য আমি গা লাগায়নি। সাবেক সভাপতি আকবর আলী ভালো। উনি কাজ করলে কাজ ভালো হয়।’
তবে নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আকবর আলী বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘আমি কমিটি থেকে আসার পর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি ওই স্কুলের একজন জমিদাতা। বর্তমান কমিটিতে আমি নেই। প্রধান শিক্ষিকা কীভাবে ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন, আমি জানি না। তবে ২০২৩ সালে উনি আমাকে জানান অ্যাকাউন্ট এখনো আমার নামেই নাকি আছে। উনার অনুরোধে আমি এই ২০২৩ সালে তিনটা চেকে স্বাক্ষর করেছি। বোধহয় তিনটা চেকে ২ লাখ টাকা মতো এ বছর তুলেছে। তবে বাকি সময়টা কীভাবে উনি টাকা তুলেছেন, আমার জানা নেই।’
যদিও নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দাবি করেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিষয়টি জানেন। তবে জেলা চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিসার তবিবুর রহমান বিষয়টি জানেন না, জানিয়ে দৈনিক সময়ের সমীকরণকে বলেন, ‘যদি ওই প্রধান শিক্ষক এমন কিছু করে থাকেন তাহলে অপরাধ করেছেন। এটি বিধির বাইরে। আমি এ ধরনের কিছু জানতাম না। আমাকে জানানোও হয়নি। আমি বিষয়টি জানলাম, এখন উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানাবো। এটার বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, অভিভাবক ও সচেতন মহলের মানুষরা বলছেন, একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষিকার এমন দুর্নীতির সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে তিন বছরেও সভাপতির নাম পরিবর্তন না করা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। ব্যাংক থেকে নিয়ম অনুযায়ী যার টাকা ওঠানোর কথা, তিনি কিছুই জানে না। আগের সভাপতি বা প্রদান শিক্ষিকার ইচ্ছামতো টাকা ওঠাবেন, এটার তদন্ত ও শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।