ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে লাভের আশায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:০০:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ২০ বার পড়া হয়েছে

সালিকিন মিয়া সাগর:
আমন ধানের বাম্পার ফলনের পর এবার ইরি-বোরো চাষে সোনালী স্বপ্ন নিয়ে বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। মৌসুমের শুরুতেই চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলার মাঠজুড়ে ইরি (বোরো) ধান আবাদের ধুম পড়েছে। বীজতলা থেকে চারা তোলা, চারা লাগানো ও জমি প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ভোরে কনকনে তীব্র শীত উপেক্ষা করেই ছুটছেন মাঠে। যদিও মাঘের মাসের মাঝামাঝি সময়ে শীতের তীব্রতা আসায় কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন চাষীরা। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মৌসুমে কৃষক ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। গত বছরের চেয়ে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বেশি ধান চাষ করা হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ধানের দাম বেশি হওয়ায় বেশির ভাগ কৃষকরা বোরো চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। সার ও সেচকাজের জন্য সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলে এ মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। কৃষি শ্রমিকের মজুরি, জমির খরচ, সার, কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও ধানের ভালো দাম পাওয়ার ব্যাপারে শঙ্কা রয়েছে তাদের। তবে বর্তমানে ন্যায় শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মরসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার চার উপজেলায় ৩৬ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৮১৫ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১২ হাজার ৪৬৪ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৯ হাজার ৯৩০ হেক্টর, জীবননগর উপজেলায় ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জেলায় ১ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে ধান রোপন কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলার নতুন গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ বছর ৬ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। এবছর সবকিছুরই দাম বাড়ার কারণে শ্রমিকের মজুরিও অনেক বেশি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের মতো এবারো লাভের মুখ দেখতে পারব।’ কুড়ুলগাছি এলাকার ধানচাষী জালাল উদ্দীন বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ায় পাওয়ার টিলার মেশিন দিয়ে হালচাষের খরচ বাড়ছে। কৃষিকাজই আমাদের পেশা, অন্য কাজ জানি না। কয়েক বছর ধরে লোকসান গুনছি, তবু আশায় বুক বেঁধে বোরো আবাদ করছি। বর্তমানে ধানের দাম ভালো। এ বছর লাভ হবে বলে আশা করছি।’ একই এলাকার জয়নাল আলী বলেন, এখন সব মাঠে ধানের চারা রোপণের প্রস্তুতি চলছে। অনেকের চারা লাগানো শেষ। ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলার কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। বীজতলার চারা হলুদ ও লাল হয়ে গেছে। এরপরও আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো লাভের আশা করছি।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, দামুড়হুদা উপজেলায় বোরো আবাদের কারণে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। কুয়াশা ঢাকা শীতের সকাল হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে কৃষকরা বোরো ধানের চারা রোপণের ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। মাঠজুড়ে বোরো আবাদের ধুম চলছে। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা, কোথাও গভীর নলকূপ থেকে চলছে পানিসেচ, ট্রাক্টর, পাওয়ারট্রিলার দিয়ে চলছে জমি চাষের কাজ, গরু মহিষ দিয়ে চলছে মাঠ সমান করার কাজ। আবার বোরো ধানের রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা। কৃষকের ব্যস্ততায় শীত যেন তাদেরকে স্পর্শ করছে না। এছাড়াও আমরা কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতিসহ সকল প্রকার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। উপজেলায় এবার ৯ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হওয়ার আশা করছি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এ বছর আমরা লক্ষ্যমাত্রার অধিক বীজতলা প্রস্তুত করেছি, যাতে ধানের চারার কোনো সংকট না হয়। তাই এ বছর বোরো চারার তেমন কোনো সংকট নেই। এ জেলার কৃষক এখন বোরো আবাদের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিছু চারার বয়স ১ মাসের বেশিও হয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনসহ অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী আমরা। গত মৌসুমে জেলায় ৩৬ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। কৃষকদের সকল ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের ধানের বীজতলা রক্ষায় সকালে চারার ওপর থেকে শিশির সরিয়ে দেওয়া এবং চারা রাতের বেলায় ঢেকে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বীজতলা লাল হয়ে গেলে জিপসাম ও ইউরিয়া সার দিতে বলা হচ্ছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে লাভের আশায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা

আপলোড টাইম : ০৮:০০:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩

সালিকিন মিয়া সাগর:
আমন ধানের বাম্পার ফলনের পর এবার ইরি-বোরো চাষে সোনালী স্বপ্ন নিয়ে বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। মৌসুমের শুরুতেই চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলার মাঠজুড়ে ইরি (বোরো) ধান আবাদের ধুম পড়েছে। বীজতলা থেকে চারা তোলা, চারা লাগানো ও জমি প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ভোরে কনকনে তীব্র শীত উপেক্ষা করেই ছুটছেন মাঠে। যদিও মাঘের মাসের মাঝামাঝি সময়ে শীতের তীব্রতা আসায় কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন চাষীরা। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মৌসুমে কৃষক ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। গত বছরের চেয়ে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বেশি ধান চাষ করা হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ধানের দাম বেশি হওয়ায় বেশির ভাগ কৃষকরা বোরো চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। সার ও সেচকাজের জন্য সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলে এ মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। কৃষি শ্রমিকের মজুরি, জমির খরচ, সার, কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও ধানের ভালো দাম পাওয়ার ব্যাপারে শঙ্কা রয়েছে তাদের। তবে বর্তমানে ন্যায় শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মরসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার চার উপজেলায় ৩৬ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৮১৫ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১২ হাজার ৪৬৪ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৯ হাজার ৯৩০ হেক্টর, জীবননগর উপজেলায় ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জেলায় ১ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে ধান রোপন কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলার নতুন গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ বছর ৬ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। এবছর সবকিছুরই দাম বাড়ার কারণে শ্রমিকের মজুরিও অনেক বেশি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের মতো এবারো লাভের মুখ দেখতে পারব।’ কুড়ুলগাছি এলাকার ধানচাষী জালাল উদ্দীন বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ায় পাওয়ার টিলার মেশিন দিয়ে হালচাষের খরচ বাড়ছে। কৃষিকাজই আমাদের পেশা, অন্য কাজ জানি না। কয়েক বছর ধরে লোকসান গুনছি, তবু আশায় বুক বেঁধে বোরো আবাদ করছি। বর্তমানে ধানের দাম ভালো। এ বছর লাভ হবে বলে আশা করছি।’ একই এলাকার জয়নাল আলী বলেন, এখন সব মাঠে ধানের চারা রোপণের প্রস্তুতি চলছে। অনেকের চারা লাগানো শেষ। ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলার কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। বীজতলার চারা হলুদ ও লাল হয়ে গেছে। এরপরও আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো লাভের আশা করছি।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, দামুড়হুদা উপজেলায় বোরো আবাদের কারণে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। কুয়াশা ঢাকা শীতের সকাল হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে কৃষকরা বোরো ধানের চারা রোপণের ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। মাঠজুড়ে বোরো আবাদের ধুম চলছে। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা, কোথাও গভীর নলকূপ থেকে চলছে পানিসেচ, ট্রাক্টর, পাওয়ারট্রিলার দিয়ে চলছে জমি চাষের কাজ, গরু মহিষ দিয়ে চলছে মাঠ সমান করার কাজ। আবার বোরো ধানের রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা। কৃষকের ব্যস্ততায় শীত যেন তাদেরকে স্পর্শ করছে না। এছাড়াও আমরা কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতিসহ সকল প্রকার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। উপজেলায় এবার ৯ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হওয়ার আশা করছি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এ বছর আমরা লক্ষ্যমাত্রার অধিক বীজতলা প্রস্তুত করেছি, যাতে ধানের চারার কোনো সংকট না হয়। তাই এ বছর বোরো চারার তেমন কোনো সংকট নেই। এ জেলার কৃষক এখন বোরো আবাদের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিছু চারার বয়স ১ মাসের বেশিও হয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনসহ অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী আমরা। গত মৌসুমে জেলায় ৩৬ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। কৃষকদের সকল ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের ধানের বীজতলা রক্ষায় সকালে চারার ওপর থেকে শিশির সরিয়ে দেওয়া এবং চারা রাতের বেলায় ঢেকে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বীজতলা লাল হয়ে গেলে জিপসাম ও ইউরিয়া সার দিতে বলা হচ্ছে।