ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় নারীসহ দুজন অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চুয়াডাঙ্গায় গরু ব্যবসায়ী, এক নারীসহ পৃথকস্থানে দুজন অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়ে হাপসাতালে ভর্তি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে ও বড় বাজার থেকে শিয়ালমারি পশুহাটে যাওয়ার সময় বাসের মধ্যে এ দুটি ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দুজনকেই উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়া দুজন হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভাণ্ডারদহ গ্রামের মৃত আব্দুল মতিনের স্ত্রী হাজেরা খাতুন (৬৫) ও চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাগানপাড়ার মৃত মুন্সি শেখের ছেলে গরু ব্যবসায়ী মইন উদ্দীন।

জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ শিশু নাতনীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন হাজেরা খাতুন। এসময় রোগীর স্বজন পরিচয়ে অপর একজন নারী হাজেরা খাতুনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করে। বিভিন্ন সময় হাজেরা খাতুন অজ্ঞাত ওই নারীর সঙ্গে হাসপাতালের বাইরেও ঘোরাঘুরি করেন। গতকাল দুপুরেও অজ্ঞাত ওই নারীর সঙ্গে হাজেরা বেগম হাসপাতালের বাইরে যান। এর এক ঘণ্টা পড়ে পরিবারের সদস্যরা হাজেরা খাতুনের মোবাইলে কল করলে জানতে পারেন তিনি অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। এসময় পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে জরুরি বিভাগে নেয়। পরে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করেন।

হাজেরা খাতুনের পরিবারের সদস্যরা জানান, অজ্ঞাত এক নারীর সঙ্গে গত দুই-তিন দিন ধরে হাজেরা খাতুনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। তাঁর সঙ্গে মাঝে মধ্যেই তিনি হাসপাতালের বাইরে হাঁটতে বের হন। আজও (গতকাল) ওই নারী শিশু ওয়ার্ডে এলে হাজেরা বেগম তাঁর সঙ্গে হাঁটতে জান। কিন্তু অনেকসময় পেরিয়ে গেলেও তাঁরা ফিরে না এলে হাজেরা খাতুনের মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে জানতে পারি তিনি অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের মেইন গেটের সামনে পড়ে আছেন। তাঁর কানের দুটি স্বর্ণের দুল ও গলার সিটি গোল্ডের চেইন খোয়া গেছে। পরিবারের সদস্যরা আরও জানান, অজ্ঞাত ওই নারী কৌশলে হাজেরা বেগমকে অচেতন করে তাঁর অলঙ্কার নিয়ে পালিয়েছে।

অপর দিকে, চুয়াডাঙ্গা থেকে শিয়ালমারি হাটে গরু কিনতে যাওয়ার সময় বাসের মধ্যে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন মইন উদ্দীন। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার থেকে শিয়ালমারি পশুহাটে যাওয়ার সময় বাসের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। বাসটি পশুহাটের সামনে পৌঁছালে তাঁর পরিচিত কয়েকজন ব্যক্তি তাঁকে বাসের মধ্যে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাঁকে উদ্ধার করে একটি পাখিভ্যানযোগে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেয়।

অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া মইন উদ্দীনের ভাতিজা আলাউদ্দীন বলেন, ‘চাচা গরুর ব্যবসা করেন। আমি বেলা ১১টার দিকেই শিয়ালমারি গরুর হাটে চলে যায়। দুপুর দুইটার দিকে সেখানে দুটি গরুও পছন্দ করি। চাচা গরু দুটি কেনার জন্য দুপুর দুইটার দিকে বড় বাজার অগ্রণী ব্যাংক থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করে বাসযোগে পশুহাটের দিকে আসছিল। বাসের মধ্যে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে অজ্ঞান করে তার নিকটে থাকা টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।’ এদিকে, বাসটি শিয়ালমারি পশুহাটে পৌঁছালে চাচার পরিচিত কয়েকজন তাঁকে বাসের মধ্যে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে চাচাকে পাখিভ্যানযোগে নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর চেতনা না ফিরলে সন্ধ্যার পরে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘প্রায়ই সদর হাসপাতালে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে অসুস্থ দু-একজন ভর্তি হয়। আজ (গতকাল) দুপুর ও সন্ধ্যার দিকে এক নারীসহ দুজনকে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। উভয় পরিবারের সদস্যদের থেকে জানতে পারি তারা অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছিলেন। জরুরি বিভাগ দুজনকেই তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি রাখা হয়েছে। তাঁদের চেতনা ফিরতে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, এ ধরণের ঘটনায় দেখা যায় অজ্ঞান পার্টি বা প্রতারক চক্র ভুক্তভোগীদের ওষুধ মেশানো খাদ্যদ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে। তারপর তাঁদের নিকটে থাকা সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যায়। গণপরিবহনে যাত্রীদের অজ্ঞান করতে একটি বিশেষ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে এ ধরণের দুষ্কৃতকারীরা। যাকে ট্রাঙ্কুলাইজার বা চেতনানাশক বলা হয়। এই ওষুধ দ্রুত কাজ করে। এতে গভীর ঘুম হয়, আর পরিমাণে কম লাগে। এর বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার আগের বা পরের ঘটনা মানুষ মনে করতে পারে না। তবে যাদের কিডনি বা যকৃতের সমস্যা আছে, তাদের ওপর এই ওষুধ মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ধারণা করা হচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা এই রোগীকেও খাবারে সঙ্গে মিশিয়ে ট্রাঙ্কুলাইজার জাতীয় ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে।’

       চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ফাতেহ আকরাম বলেন, ‘হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের এক শিশু রোগীর স্বজন হাসপাতালের প্রধান ফটকের বাইরে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন বলে জানতে পেরেছি। তিনি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় নারীসহ দুজন অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে

আপলোড টাইম : ০৯:৪৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চুয়াডাঙ্গায় গরু ব্যবসায়ী, এক নারীসহ পৃথকস্থানে দুজন অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়ে হাপসাতালে ভর্তি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে ও বড় বাজার থেকে শিয়ালমারি পশুহাটে যাওয়ার সময় বাসের মধ্যে এ দুটি ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দুজনকেই উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়া দুজন হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভাণ্ডারদহ গ্রামের মৃত আব্দুল মতিনের স্ত্রী হাজেরা খাতুন (৬৫) ও চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাগানপাড়ার মৃত মুন্সি শেখের ছেলে গরু ব্যবসায়ী মইন উদ্দীন।

জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ শিশু নাতনীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন হাজেরা খাতুন। এসময় রোগীর স্বজন পরিচয়ে অপর একজন নারী হাজেরা খাতুনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করে। বিভিন্ন সময় হাজেরা খাতুন অজ্ঞাত ওই নারীর সঙ্গে হাসপাতালের বাইরেও ঘোরাঘুরি করেন। গতকাল দুপুরেও অজ্ঞাত ওই নারীর সঙ্গে হাজেরা বেগম হাসপাতালের বাইরে যান। এর এক ঘণ্টা পড়ে পরিবারের সদস্যরা হাজেরা খাতুনের মোবাইলে কল করলে জানতে পারেন তিনি অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। এসময় পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে জরুরি বিভাগে নেয়। পরে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করেন।

হাজেরা খাতুনের পরিবারের সদস্যরা জানান, অজ্ঞাত এক নারীর সঙ্গে গত দুই-তিন দিন ধরে হাজেরা খাতুনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। তাঁর সঙ্গে মাঝে মধ্যেই তিনি হাসপাতালের বাইরে হাঁটতে বের হন। আজও (গতকাল) ওই নারী শিশু ওয়ার্ডে এলে হাজেরা বেগম তাঁর সঙ্গে হাঁটতে জান। কিন্তু অনেকসময় পেরিয়ে গেলেও তাঁরা ফিরে না এলে হাজেরা খাতুনের মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে জানতে পারি তিনি অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের মেইন গেটের সামনে পড়ে আছেন। তাঁর কানের দুটি স্বর্ণের দুল ও গলার সিটি গোল্ডের চেইন খোয়া গেছে। পরিবারের সদস্যরা আরও জানান, অজ্ঞাত ওই নারী কৌশলে হাজেরা বেগমকে অচেতন করে তাঁর অলঙ্কার নিয়ে পালিয়েছে।

অপর দিকে, চুয়াডাঙ্গা থেকে শিয়ালমারি হাটে গরু কিনতে যাওয়ার সময় বাসের মধ্যে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন মইন উদ্দীন। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার থেকে শিয়ালমারি পশুহাটে যাওয়ার সময় বাসের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। বাসটি পশুহাটের সামনে পৌঁছালে তাঁর পরিচিত কয়েকজন ব্যক্তি তাঁকে বাসের মধ্যে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাঁকে উদ্ধার করে একটি পাখিভ্যানযোগে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেয়।

অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া মইন উদ্দীনের ভাতিজা আলাউদ্দীন বলেন, ‘চাচা গরুর ব্যবসা করেন। আমি বেলা ১১টার দিকেই শিয়ালমারি গরুর হাটে চলে যায়। দুপুর দুইটার দিকে সেখানে দুটি গরুও পছন্দ করি। চাচা গরু দুটি কেনার জন্য দুপুর দুইটার দিকে বড় বাজার অগ্রণী ব্যাংক থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করে বাসযোগে পশুহাটের দিকে আসছিল। বাসের মধ্যে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে অজ্ঞান করে তার নিকটে থাকা টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।’ এদিকে, বাসটি শিয়ালমারি পশুহাটে পৌঁছালে চাচার পরিচিত কয়েকজন তাঁকে বাসের মধ্যে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে চাচাকে পাখিভ্যানযোগে নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর চেতনা না ফিরলে সন্ধ্যার পরে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘প্রায়ই সদর হাসপাতালে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে অসুস্থ দু-একজন ভর্তি হয়। আজ (গতকাল) দুপুর ও সন্ধ্যার দিকে এক নারীসহ দুজনকে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। উভয় পরিবারের সদস্যদের থেকে জানতে পারি তারা অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছিলেন। জরুরি বিভাগ দুজনকেই তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি রাখা হয়েছে। তাঁদের চেতনা ফিরতে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, এ ধরণের ঘটনায় দেখা যায় অজ্ঞান পার্টি বা প্রতারক চক্র ভুক্তভোগীদের ওষুধ মেশানো খাদ্যদ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে। তারপর তাঁদের নিকটে থাকা সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যায়। গণপরিবহনে যাত্রীদের অজ্ঞান করতে একটি বিশেষ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে এ ধরণের দুষ্কৃতকারীরা। যাকে ট্রাঙ্কুলাইজার বা চেতনানাশক বলা হয়। এই ওষুধ দ্রুত কাজ করে। এতে গভীর ঘুম হয়, আর পরিমাণে কম লাগে। এর বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার আগের বা পরের ঘটনা মানুষ মনে করতে পারে না। তবে যাদের কিডনি বা যকৃতের সমস্যা আছে, তাদের ওপর এই ওষুধ মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ধারণা করা হচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা এই রোগীকেও খাবারে সঙ্গে মিশিয়ে ট্রাঙ্কুলাইজার জাতীয় ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে।’

       চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ফাতেহ আকরাম বলেন, ‘হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের এক শিশু রোগীর স্বজন হাসপাতালের প্রধান ফটকের বাইরে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন বলে জানতে পেরেছি। তিনি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।’