ইপেপার । আজ বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারীরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:০৯:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক:
কোরবানিকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন চুয়াডাঙ্গার প্রায় ১১ হাজার খামারী। প্রতিবছরের মতো এবারও জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত কোরবানি পশু দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হবে। এছাড়া বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে প্রস্তুতকৃত পশু বিক্রি করে যৌক্তিক দাম পেয়ে লাভবান হবেন খামারীরা বলে আশা করা হচ্ছে। তবে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে দিশাহারা খামারীরা।

খামারীরা জানান, ১ বস্তা ক্যাটল ফিডের বর্তমান দাম ১ হাজার ৪ শ টাকা থেকে ১ হাজার ৮ শ টাকা, যা গত বছর বিক্রি হত ১ হাজার ৫০ টাকায়। এখন ১ বস্তা গমের ভূষি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮ শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়, যা পূর্বে বিক্রি হতো ১ হাজার ২৫০ টাকায়। ১বস্তা ভুট্টার গুড়া বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬ শ টাকা থেকে ১ হাজার ৮ শ টাকায়। যা পূর্বে বিক্রি হতো ৮ শ থেকে ৯ শ টাকায়। ১ বস্তা চালের কুড়া বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা থেকে ৮ শ টাকায়, যা আগে পাওয়া যেত ৫ শ টাকায়। ১ বস্তা খৈল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫ শ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায়, যা আগে বিক্রি হতো সাড়ে তিন হাজার টাকায়। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও জেলার চাহিদার তুলনায় কোরবানির যোগ্য গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া উদ্বৃত্ত বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

চুয়াডাঙ্গা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ছোট-বড় ১১ হাজার ৭১টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২ হাজার ৪৫১টি, আলমডাঙ্গায় ৩ হাজার ২০৫টি, দামুড়হুদায় ২ হাজার ২২০টি ও জীবননগর উপজেলায় ৩ হাজার ১৯৫টি খামার রয়েছে। এবার জেলায় কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৬৯২টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৮ হাজার ৭৯৭টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৪ হাজর ১৩০টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১৭ হাজার ৮৯৭টি ও জীবননগর উপজেলায় ৩২ হাজার ৮৬৮টি। এবার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৩৪ হাজার ৫৬২ কোরবানি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিহির কান্তি বিশ^াস। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ৬ হাজার ২৬৫টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১১ হাজার ৩৭৬টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ৫ হাজার ৯৬৫টি ও জীবননগর উপজেলায় ১০ হাজার ৯৫৬টি। উদ্বৃত্ত এসব পশু দিয়ে অন্যান্য জেলার চাহিদা মেটানো যাবে। এবার চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন খামারে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৫৪টি। এর মধ্যে ষাঁড় ৪৪ হাজার ৩১৭টি, বলদ ৬২৬টি, গাভী ২৯৭টি ও মহিষ ২৪১টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৪৬টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৯ হাজার ৮০৮টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ৪ হাজার ১৫৩টি ও জীবননগর উপজেলায় ১৬ হাজার ৪৭৪টি। জেলায় ছাগল ও ভেড়া মিলে কোরবানি যোগ্য পশু রয়েছে ৯২ হাজার ৭৭৩টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২০ হাজার ১৬টি, আলমডাঙ্গায় উপজেলায় ২৫ হাজার ৬৯৮টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১৯ হাজার ৭০৯টি ও জীবননগর উপজেলায় ২৭ হাজার ৩৫০টি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় তিন সহস্রাধিক পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়ি গ্রামের খামারী মহির উদ্দীন বিশ^াস জানান, কৃষিকাজের পাশাপাশি তিনি গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। গো-খাদ্যের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় খামারীরা হিমশিম খাচ্ছে। তিনি গত কোরবানির পর থেকে ৮টি গরু ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি আরও জানানি, পরিকল্পনা করে কেউ খামার পরিচালনা করলে লোকসান নেই। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর বাজারের খামারী নাজমুল হক জানান, তাঁর খামারে কোরবানিযোগ্য দেশি ২০টি গরু ছিল। ইতোমধ্যে ১টি গরু ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। বাকি গরু ঢাকায় পাঠাচ্ছেন। গরুগুলি বিক্রি করার পর বুঝা যাবে কী পরিমাণ লাভ হবে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার মাজহাদ গ্রামের খামারী হাজ্জাজ বিন তাহাজ জানান, গত কোরবানির পর থেকে এ পর্যন্ত ৪০টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। এসব গরুর প্রতিটির সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা। খামারে বর্তমান আমেরিকান ব্রাহমা ও নিলর, শাহিওয়াল, হোরস্টাইন ফ্রিজিয়ান, ব্রাহমা ক্রস (দেশি গাভির সঙ্গে শংকর) এবং দেশি জাতের ৭৩টি ষাড় ও গাভী রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিহির কান্তি বিশ্বাস বলেন, এবার চুয়াডাঙ্গার খামারীরা মোট ৪৪ হাজার ৩১৭টি ষাঁড়সহ ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৫৪টি পশু প্রস্তুত করেছে। চুয়াডাঙ্গার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় তিন হাজারের বেশি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। চুয়াডাঙ্গার ব্লাক-বেঙ্গল দেশ সেরা। ছাগল-ভেড়ার মাংশ কেজি প্রতি ১ হাজার টাকা হারে বিক্রয় করলে গড়ে বিকিকিনি হবে ১৩৯ কোটি ১৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। এমনিতেই এ বছর মাংসের দাম কেজিতে ২ শ টাকা বেশি। তাই প্রতিটি গরু যদি গড়ে ১ লাখ টাকায় বিক্রি হয়, তবে ৪৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা জেলার গরু বিক্রি হবে। প্রতিটি মহিষ গড়ে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করলে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকায় বিকিকিনি হবে। সব মিলিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ বছর কোরবানিতে ৭ শ কোটি টাকার পশু বিকিকিনি হতে পারে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারীরা

আপলোড টাইম : ১২:০৯:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদক:
কোরবানিকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন চুয়াডাঙ্গার প্রায় ১১ হাজার খামারী। প্রতিবছরের মতো এবারও জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত কোরবানি পশু দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হবে। এছাড়া বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে প্রস্তুতকৃত পশু বিক্রি করে যৌক্তিক দাম পেয়ে লাভবান হবেন খামারীরা বলে আশা করা হচ্ছে। তবে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে দিশাহারা খামারীরা।

খামারীরা জানান, ১ বস্তা ক্যাটল ফিডের বর্তমান দাম ১ হাজার ৪ শ টাকা থেকে ১ হাজার ৮ শ টাকা, যা গত বছর বিক্রি হত ১ হাজার ৫০ টাকায়। এখন ১ বস্তা গমের ভূষি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮ শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়, যা পূর্বে বিক্রি হতো ১ হাজার ২৫০ টাকায়। ১বস্তা ভুট্টার গুড়া বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬ শ টাকা থেকে ১ হাজার ৮ শ টাকায়। যা পূর্বে বিক্রি হতো ৮ শ থেকে ৯ শ টাকায়। ১ বস্তা চালের কুড়া বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা থেকে ৮ শ টাকায়, যা আগে পাওয়া যেত ৫ শ টাকায়। ১ বস্তা খৈল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫ শ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায়, যা আগে বিক্রি হতো সাড়ে তিন হাজার টাকায়। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও জেলার চাহিদার তুলনায় কোরবানির যোগ্য গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া উদ্বৃত্ত বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

চুয়াডাঙ্গা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ছোট-বড় ১১ হাজার ৭১টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২ হাজার ৪৫১টি, আলমডাঙ্গায় ৩ হাজার ২০৫টি, দামুড়হুদায় ২ হাজার ২২০টি ও জীবননগর উপজেলায় ৩ হাজার ১৯৫টি খামার রয়েছে। এবার জেলায় কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৬৯২টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৮ হাজার ৭৯৭টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৪ হাজর ১৩০টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১৭ হাজার ৮৯৭টি ও জীবননগর উপজেলায় ৩২ হাজার ৮৬৮টি। এবার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৩৪ হাজার ৫৬২ কোরবানি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিহির কান্তি বিশ^াস। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ৬ হাজার ২৬৫টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১১ হাজার ৩৭৬টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ৫ হাজার ৯৬৫টি ও জীবননগর উপজেলায় ১০ হাজার ৯৫৬টি। উদ্বৃত্ত এসব পশু দিয়ে অন্যান্য জেলার চাহিদা মেটানো যাবে। এবার চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন খামারে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৫৪টি। এর মধ্যে ষাঁড় ৪৪ হাজার ৩১৭টি, বলদ ৬২৬টি, গাভী ২৯৭টি ও মহিষ ২৪১টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৪৬টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৯ হাজার ৮০৮টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ৪ হাজার ১৫৩টি ও জীবননগর উপজেলায় ১৬ হাজার ৪৭৪টি। জেলায় ছাগল ও ভেড়া মিলে কোরবানি যোগ্য পশু রয়েছে ৯২ হাজার ৭৭৩টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২০ হাজার ১৬টি, আলমডাঙ্গায় উপজেলায় ২৫ হাজার ৬৯৮টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১৯ হাজার ৭০৯টি ও জীবননগর উপজেলায় ২৭ হাজার ৩৫০টি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় তিন সহস্রাধিক পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়ি গ্রামের খামারী মহির উদ্দীন বিশ^াস জানান, কৃষিকাজের পাশাপাশি তিনি গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। গো-খাদ্যের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় খামারীরা হিমশিম খাচ্ছে। তিনি গত কোরবানির পর থেকে ৮টি গরু ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি আরও জানানি, পরিকল্পনা করে কেউ খামার পরিচালনা করলে লোকসান নেই। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর বাজারের খামারী নাজমুল হক জানান, তাঁর খামারে কোরবানিযোগ্য দেশি ২০টি গরু ছিল। ইতোমধ্যে ১টি গরু ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। বাকি গরু ঢাকায় পাঠাচ্ছেন। গরুগুলি বিক্রি করার পর বুঝা যাবে কী পরিমাণ লাভ হবে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার মাজহাদ গ্রামের খামারী হাজ্জাজ বিন তাহাজ জানান, গত কোরবানির পর থেকে এ পর্যন্ত ৪০টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। এসব গরুর প্রতিটির সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা। খামারে বর্তমান আমেরিকান ব্রাহমা ও নিলর, শাহিওয়াল, হোরস্টাইন ফ্রিজিয়ান, ব্রাহমা ক্রস (দেশি গাভির সঙ্গে শংকর) এবং দেশি জাতের ৭৩টি ষাড় ও গাভী রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিহির কান্তি বিশ্বাস বলেন, এবার চুয়াডাঙ্গার খামারীরা মোট ৪৪ হাজার ৩১৭টি ষাঁড়সহ ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৫৪টি পশু প্রস্তুত করেছে। চুয়াডাঙ্গার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় তিন হাজারের বেশি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। চুয়াডাঙ্গার ব্লাক-বেঙ্গল দেশ সেরা। ছাগল-ভেড়ার মাংশ কেজি প্রতি ১ হাজার টাকা হারে বিক্রয় করলে গড়ে বিকিকিনি হবে ১৩৯ কোটি ১৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। এমনিতেই এ বছর মাংসের দাম কেজিতে ২ শ টাকা বেশি। তাই প্রতিটি গরু যদি গড়ে ১ লাখ টাকায় বিক্রি হয়, তবে ৪৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা জেলার গরু বিক্রি হবে। প্রতিটি মহিষ গড়ে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করলে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকায় বিকিকিনি হবে। সব মিলিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ বছর কোরবানিতে ৭ শ কোটি টাকার পশু বিকিকিনি হতে পারে।