ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

চাল নিয়ে চালবাজি, নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৬:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জুন ২০২২
  • / ২১ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন: জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিম্নমানের চাল ক্রয় করে ভালো চালের সাথে মিশিয়ে ভোক্তাদের মাঝে সরবরাহ করার অভিযোগের সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এ ঘটনার পর জীবননগর খাদ্যগুদাম পরিদর্শন করেছেন খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুবুর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে তিনি জীবননগর খাদ্যগুদাম পরিদর্শনে আসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এ কে এম শহিদুল হক।

সংশ্লিষ্ট মিলারদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কাওসার হোসেন, অফিস সহকারী রাকিব হোসেন যোগদানের পর থেকে নানা কৌশলে নাইটগার্ড মাসুদ আলমের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন মিলারদের জিম্মি করে তাঁদের নিকট থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলো। এবং টাকা নিয়ে নিম্নমানের চাল ভালো মানের চালের সাথে মিশিয়ে দিতো। ভেজালকৃত চাল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে ভিজিএফ, ভিজিডি কর্মসূচিতে বিতরণ করত। তাদের এই সিন্ডিকেটের কাছে শুধু মিলাররা নয়, জিম্মি হয়ে আছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ। ইউনিয়ন পর্যায়ে বরাদ্দকৃত চাল নিতে ও নাইটগার্ড মাসুদকে টাকা দিতে হত। মাসুদ নাইটগার্ড হিসেবে চাকরি করলেও তিনি প্রতিদিন সকালে অফিসে এসে মিলারদের নিকট থেকে চাল সংগ্রহ করতেন। অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে নাইটগার্ড মাসুদের গত ১৯ জুন জীবননগর থেকে খুলনায় বদলি করে কর্তৃপক্ষ। তারপরও মাসুদ খুলনায় যোগদান না করে জীবননগর খাদ্যগুদামে কর্মরত রয়েছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত সোমবারে যে চাল ভেজাল করেছিল, সেই চাল বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদে দেওয়া হয়েছে। আজ সেগুলো হতদরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে। সরেজমিনে দেখা যায়, জীবননগর খাদ্যগুদামে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গাড়ির সিরিয়াল। এসময় কথা হয় এক গাড়ি চালকের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি আজ দুইদিন ধরে চাল নিয়ে ঘুরছি। সকাল ৭টার সময় গুদামে আসি, আর সন্ধ্যা ৭টার সময় বাড়ি যায়। সন্ধ্যা হলেই বলে চাল ভালো না চলে যাও। গাড়িভর্তি চাল নিয়ে চলে যেতে হয়। আবার তারপরের দিন চাল নিয়ে গেলে সেই খারাপ চালগুলো তারা নামিয়ে নেয়। আমরা গরিব মানুষ, পেটের দায়ে কাজ করে খায়, মিল মালিকরা হাজিরা দেবে একদিনের, আর আমাদের শ্রম দিতে হয় দুই দিন। আমাদের এই কষ্টের দাম কে দেবে?’ এদিকে নাইটগার্ড মাসুদ সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে খাদ্যগুদাম থেকে সটকে পড়েন।

এ ব্যাপারে জীবননগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওবাইদুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং বলেন, ‘আপনারা সংবাদ প্রচার করেছেন, আপনাদের কাজ শেষ। এ নিয়ে কি হবে না হবে, সেটা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।’

এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, চালের ভেতরে কোনো ভেজাল দিতে পারবে না। যদি কোনো মিলার চালে ভেজাল দেয়, তাহলে সেই চাল ফেরত দেওয়া হবে। আর ভেজাল কাজের সাথে যদি আমার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকে, তাহলে তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর নাইটগার্ড মাসুদকে বদলি করা হয়েছে। খাদ্যগুদামে কোনো দুর্নীতিবাজ থাকবে না।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চাল নিয়ে চালবাজি, নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন

আপলোড টাইম : ০৯:০৬:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জুন ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন: জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিম্নমানের চাল ক্রয় করে ভালো চালের সাথে মিশিয়ে ভোক্তাদের মাঝে সরবরাহ করার অভিযোগের সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এ ঘটনার পর জীবননগর খাদ্যগুদাম পরিদর্শন করেছেন খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুবুর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে তিনি জীবননগর খাদ্যগুদাম পরিদর্শনে আসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এ কে এম শহিদুল হক।

সংশ্লিষ্ট মিলারদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কাওসার হোসেন, অফিস সহকারী রাকিব হোসেন যোগদানের পর থেকে নানা কৌশলে নাইটগার্ড মাসুদ আলমের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন মিলারদের জিম্মি করে তাঁদের নিকট থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলো। এবং টাকা নিয়ে নিম্নমানের চাল ভালো মানের চালের সাথে মিশিয়ে দিতো। ভেজালকৃত চাল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে ভিজিএফ, ভিজিডি কর্মসূচিতে বিতরণ করত। তাদের এই সিন্ডিকেটের কাছে শুধু মিলাররা নয়, জিম্মি হয়ে আছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ। ইউনিয়ন পর্যায়ে বরাদ্দকৃত চাল নিতে ও নাইটগার্ড মাসুদকে টাকা দিতে হত। মাসুদ নাইটগার্ড হিসেবে চাকরি করলেও তিনি প্রতিদিন সকালে অফিসে এসে মিলারদের নিকট থেকে চাল সংগ্রহ করতেন। অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে নাইটগার্ড মাসুদের গত ১৯ জুন জীবননগর থেকে খুলনায় বদলি করে কর্তৃপক্ষ। তারপরও মাসুদ খুলনায় যোগদান না করে জীবননগর খাদ্যগুদামে কর্মরত রয়েছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত সোমবারে যে চাল ভেজাল করেছিল, সেই চাল বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদে দেওয়া হয়েছে। আজ সেগুলো হতদরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে। সরেজমিনে দেখা যায়, জীবননগর খাদ্যগুদামে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গাড়ির সিরিয়াল। এসময় কথা হয় এক গাড়ি চালকের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি আজ দুইদিন ধরে চাল নিয়ে ঘুরছি। সকাল ৭টার সময় গুদামে আসি, আর সন্ধ্যা ৭টার সময় বাড়ি যায়। সন্ধ্যা হলেই বলে চাল ভালো না চলে যাও। গাড়িভর্তি চাল নিয়ে চলে যেতে হয়। আবার তারপরের দিন চাল নিয়ে গেলে সেই খারাপ চালগুলো তারা নামিয়ে নেয়। আমরা গরিব মানুষ, পেটের দায়ে কাজ করে খায়, মিল মালিকরা হাজিরা দেবে একদিনের, আর আমাদের শ্রম দিতে হয় দুই দিন। আমাদের এই কষ্টের দাম কে দেবে?’ এদিকে নাইটগার্ড মাসুদ সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে খাদ্যগুদাম থেকে সটকে পড়েন।

এ ব্যাপারে জীবননগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওবাইদুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং বলেন, ‘আপনারা সংবাদ প্রচার করেছেন, আপনাদের কাজ শেষ। এ নিয়ে কি হবে না হবে, সেটা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।’

এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, চালের ভেতরে কোনো ভেজাল দিতে পারবে না। যদি কোনো মিলার চালে ভেজাল দেয়, তাহলে সেই চাল ফেরত দেওয়া হবে। আর ভেজাল কাজের সাথে যদি আমার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকে, তাহলে তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর নাইটগার্ড মাসুদকে বদলি করা হয়েছে। খাদ্যগুদামে কোনো দুর্নীতিবাজ থাকবে না।’