ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

গাংনীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই প্রায় ৪০টি ইটভাটার কার্যক্রম চলছে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৪০:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতি বছর নতুন নতুন ইটভাটা গড়ে উঠছে। আর এ সকল ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইটভাটার কালো ধেঁায়ায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাই। আবার প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে আবাদি জমির টপসয়েল। ফলে নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমি। প্রশাসনিক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না থাকায় একের পর এক বাড়ছে ইটভাটার সংখ্যা।
তথ্য নিয়ে যানা যায়, গাংনী উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ৪০টি। যেখানে সেখানে ইটভাটা তৈরি হওয়ায় আবাদি জমিগুলো নষ্ট হচ্ছে। একটি ইটভাটা তৈরি করতে কমপক্ষে ৭—৮ একর জমির প্রয়োজন হয়। অনেক সময় মাটির প্রয়োজন হলে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে আবাদি জমির ওপরের এক থেকে দেড়ফুট মাটি কেটে নেওয়া হয়। ফলে ফসলি জমির উর্বর শক্তি নষ্ট হয়। শুধু তাই নয়, ইটভাটার নির্গত কালো ধোয়ায় এলাকার পরিবেশ পড়ছে চড়ম হুমকির মুখে। সকল ইটভাটাতেই অনুমতিপত্রের শর্ত ভেঙে কয়লার পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ফলজ ও বনজ বৃক্ষ।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮৯ ও ২০০১ সনের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদের ৪ ও ৫ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, আবাদি জমিতে কোনো ইটভাটা তৈরি করা যাবে না ও ১২০ ফুট চিমনি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও কাঠ পোড়ানো যাবে না। অথচ সকল ইটভাটায় কয়লার বদলে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন জরিমানা আদায় করলেও ইটভাটা বন্ধ করে না। ফলে প্রভাবশালীরা প্রতি বছর নতুন নতুন ইটভাটা তৈরি করছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভেকু মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। কোথাও কোথাও শুধু জমির উপরিভাগ কেটে নেওয়া হচ্ছে। ট্রাক্টরের মাধ্যমে এসব মাটি বহন করা হচ্ছে ইটভাটায়। অতিরিক্ত মাটি বহনের ফলে বিভিন্ন রাস্তা দেবে গেছে। ভেঙ্গে গেছে অনেক রাস্তা। তাছাড়া ধুলোবালি ও ইটভাটার কুন্ডলি পাকানো ধেঁায়ায় চলাচল দুঃস্বাধ্য হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী জানান, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার সঙ্গে বাতাসে মিশে যাচ্ছে কার্বন—ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন—ডাই অক্সাইড, সালফার—ডাই অক্সাইড, হাইড্রোকার্বনসহ নানারূপ বিপজ্জনক বিষাক্ত গ্যাস। ফলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পায় এবং কার্বনের নানাবিধ যৌগের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি এবং ফুসফুসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান আতু জানান, উপজেলার কোনো ইটভাটারই সনদ নেই। তারপরও ইটের প্রয়োজনীয়তায় এবং ব্যবসার খাতিরে ইটভাটা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিভিন্নভাবে প্রশাসনকেও ম্যানেজ করতে হয়। মাঝে মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান চলে ও জরিমানা করে বলেও স্বীকার করেন তিনি। তাছাড়া ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে এবং তা পরিবহনের কারণে রাস্তাঘাটের ক্ষতি হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
গাংনী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি অফিসার আব্দুর রউফ জানান, জমির টপসয়েল ইটভাটায় ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে উৎপাদন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এখনি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে জমির টপসয়েল কাটা বন্ধ করার আহ্বানও জানান তিনি। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রনি খাতুন জানান, আবাদি জমির টপসয়েল ও কাঠ ইটভাটায় ব্যবহার নিষিদ্ধ। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গাংনীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই প্রায় ৪০টি ইটভাটার কার্যক্রম চলছে

আপলোড টাইম : ০৪:৪০:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদন:
পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতি বছর নতুন নতুন ইটভাটা গড়ে উঠছে। আর এ সকল ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইটভাটার কালো ধেঁায়ায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাই। আবার প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে আবাদি জমির টপসয়েল। ফলে নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমি। প্রশাসনিক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না থাকায় একের পর এক বাড়ছে ইটভাটার সংখ্যা।
তথ্য নিয়ে যানা যায়, গাংনী উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ৪০টি। যেখানে সেখানে ইটভাটা তৈরি হওয়ায় আবাদি জমিগুলো নষ্ট হচ্ছে। একটি ইটভাটা তৈরি করতে কমপক্ষে ৭—৮ একর জমির প্রয়োজন হয়। অনেক সময় মাটির প্রয়োজন হলে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে আবাদি জমির ওপরের এক থেকে দেড়ফুট মাটি কেটে নেওয়া হয়। ফলে ফসলি জমির উর্বর শক্তি নষ্ট হয়। শুধু তাই নয়, ইটভাটার নির্গত কালো ধোয়ায় এলাকার পরিবেশ পড়ছে চড়ম হুমকির মুখে। সকল ইটভাটাতেই অনুমতিপত্রের শর্ত ভেঙে কয়লার পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ফলজ ও বনজ বৃক্ষ।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮৯ ও ২০০১ সনের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদের ৪ ও ৫ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, আবাদি জমিতে কোনো ইটভাটা তৈরি করা যাবে না ও ১২০ ফুট চিমনি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও কাঠ পোড়ানো যাবে না। অথচ সকল ইটভাটায় কয়লার বদলে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন জরিমানা আদায় করলেও ইটভাটা বন্ধ করে না। ফলে প্রভাবশালীরা প্রতি বছর নতুন নতুন ইটভাটা তৈরি করছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভেকু মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। কোথাও কোথাও শুধু জমির উপরিভাগ কেটে নেওয়া হচ্ছে। ট্রাক্টরের মাধ্যমে এসব মাটি বহন করা হচ্ছে ইটভাটায়। অতিরিক্ত মাটি বহনের ফলে বিভিন্ন রাস্তা দেবে গেছে। ভেঙ্গে গেছে অনেক রাস্তা। তাছাড়া ধুলোবালি ও ইটভাটার কুন্ডলি পাকানো ধেঁায়ায় চলাচল দুঃস্বাধ্য হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী জানান, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার সঙ্গে বাতাসে মিশে যাচ্ছে কার্বন—ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন—ডাই অক্সাইড, সালফার—ডাই অক্সাইড, হাইড্রোকার্বনসহ নানারূপ বিপজ্জনক বিষাক্ত গ্যাস। ফলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পায় এবং কার্বনের নানাবিধ যৌগের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি এবং ফুসফুসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান আতু জানান, উপজেলার কোনো ইটভাটারই সনদ নেই। তারপরও ইটের প্রয়োজনীয়তায় এবং ব্যবসার খাতিরে ইটভাটা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিভিন্নভাবে প্রশাসনকেও ম্যানেজ করতে হয়। মাঝে মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান চলে ও জরিমানা করে বলেও স্বীকার করেন তিনি। তাছাড়া ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে এবং তা পরিবহনের কারণে রাস্তাঘাটের ক্ষতি হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
গাংনী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি অফিসার আব্দুর রউফ জানান, জমির টপসয়েল ইটভাটায় ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে উৎপাদন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এখনি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে জমির টপসয়েল কাটা বন্ধ করার আহ্বানও জানান তিনি। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রনি খাতুন জানান, আবাদি জমির টপসয়েল ও কাঠ ইটভাটায় ব্যবহার নিষিদ্ধ। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।